google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re ভ্রমণকাহিনি ।। চাপড়ামারির জঙ্গলে ।। শংকর লাল সরকার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১

ভ্রমণকাহিনি ।। চাপড়ামারির জঙ্গলে ।। শংকর লাল সরকার

চাপড়ামারির জঙ্গলে

শংকর লাল সরকার




 ঘন জঙ্গল, চা বাগান, নদী আর দূর দিগন্তে নীল পাহাড়ের উদ্ভাস-- সমগ্র ডুয়ার্স প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকের স্বর্গরাজ্য। অরণ্য আর চা বাগানের আনাচে কানাচে অথবা কোন নদীর ধারে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়লেই মনে হবে এটা কোন অপরূপ ট্যুরিস্ট স্পট। কটাদিন কাটানো যায় সবুজ প্রকৃতি, জানা অজানা অসংখ্য পাখি আর বন্যজন্তুদের সাহচর্যে ।

 

            সুযোগ পেয়েছিলাম চাপড়ামারির জঙ্গলে একদিন থাকার। ১৯১৭ সালে সাহেবদের নির্মিত চাপড়ামারি জঙ্গলের ভিতরের বনবাংলোটি সংস্কার করে ২০০৫ সাল থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ঈগল নামে একটা  নজর মিনারও তৈরী করা হয়েছে বন্যজন্তু দেখার সুবিধার জন্য। তবে বনবাংলোয় বুকিং পাওয়া প্রায় লটারি পাওয়ার মতো শক্ত। সবসময়েই ভিভিআইপিদের ভিড় লেগে থাকে। দুতলা বনবাংলোর একতলায় বসার ঘর, রান্নাঘর। দুতলার ছোট ডাইনিংহলের দুপাশে দুটো ডবল বেডরুম। মোট চারজন রাতকাটাতে পারেন এই অপূর্ব সুন্দর বনবাংলোয়। দুটো ঘর বসন্তবৌরি আর বড়দিঘর, সামনে চওড়া বারান্দা। বাংলোর সামনে ছোট্ট একটা লনের ওপাশেই শুরু হয়েছে চাপড়ামারির ঘন অরণ্য। টলটলে জলের একটা সরোবরকে ঘিরে ঘন অরণ্য রয়েছে বন্যজন্তুদের সল্টলিক। বাইসন হাতি গণ্ডারের অবাধ চারণক্ষেত্র। তার পিছনে হালকা নীল, ধূসর রঙের পাহাড়ের সারি আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঘরের দুপাশে দেওয়াল জোড়া বিশাল বিশাল কাচের জানলা, আর জানলার ওপাশে চোখ গেলে মনে হবে যেন এক একটা রঙিন ক্যালেণ্ডার। চোখ সরাতে পারা যায় না এমনই অত্যাশ্চর্য সে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

 

     চালসা থেকে খুনিয়া মোড়, তারপর ঘন জঙ্গল পার হয়ে দুপুর বারটার পর যখন বনবাংলোতে প্রবেশ করলাম তখন দেখি সামনের চারন ক্ষেত্রে তিনটি বাইসন। বারান্দায় একটা চেয়ার টেনে বসে গেলাম। বনবাংলোর পাশের নজর মিনার থেকে পুরো প্রান্তরটা আরও ভালো ভাবে দেখা যায়। 


     কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই দেখলাম একটা চিতল হরিণ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আমাদের দিকে ভীরু চোখে তাকাচ্ছ ক্যামেরা বার করতে করতেই চট করে পাশের ঝোপে লুকাল তারপর একছুটে ওপাশের জঙ্গলে। একজোড়া পানকৌড়ি জলাশয়ের চারপাশে গোল হয়ে উড়ছে আর মাঝেমাঝেই ঝাঁপ দিয়ে মাছ ধরে উড়ে যাচ্ছে। জলাশয়টার চারপাশেই যত পাখির আনাগোনা। মাছরাঙাই বা বাদ যায় কেন। যেসব পর্যটক দিনের বেলায় নজর মিনারে আসেন বনবাংলোয় বুকিং না থাকলে তাদের ভিতরে প্রবেশ নিষেধ। কাছের ড্র-ব্রিজ টেনে যাওয়াআসার রাস্তা বন্ধ করা থাকে। ধীরেধীরে দিনের আলো কমে আসতে থাকে। তখন চারদিকে অন্ধকার বেশ ঘন হয়েছে, বাংলোর কেয়ারটেকার তথা আমাদের লোকাল গাইড পরিতোষবাবু দূরে ধুসর রঙের একটা জিনিষ দেখিয়ে বললেন হাতি, কিন্তু আমাদের অনভ্যস্ত চোখে আলাদা করে চিনতে পারলাম না।

     রাত যত গভীর হতে লাগল চারদিকের নিস্তব্ধতা আমাদের ঘিরে ফেলল। জঙ্গলের একটা নিজস্ব শব্দ আছে চুপ করে কিছুক্ষন বসলেই তা টের পাওয়া যায়। আকাশ ঘন মেঘে ছাওয়া তায় অমাবস্যাচারদিকে নিকশ কালো সূচিভেদ্য অন্ধকার, সামনে বিস্তৃত জঙ্গল, তার ওপাশে চুপকরে দাড়িয়ে থাকা পাহাড়। কিছুক্ষন পরেই বৃষ্টি নামল। মেঘমল্লার নয় এযেন মেঘমুষল। বাংলোর টিনের চালে তার প্রবল শব্দ। এএক অন্যরকমের অভিজ্ঞতা। একসময়ে জঙ্গলের মাথার ওপাশের পাহাড়ে বিন্দু বিন্দু আলো জলে উঠল। অন্ধকার আকাশের বুকে সেই আলোকমালা মানুষের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।

 

     সকালে ঘুম ভাঙতেই কাচের জানলা দিয়ে চোখে পড়ল অপরূপ প্রকৃতি। জলাশয়টার পাড়ে দুটো বক বসে আছে। গতকালের বৃষ্টির পর সবুজ প্রকৃতি সদ্য স্নান করে উঠেছে। আরও রূপসী, আরও ঝলমলে। বারান্দায় বসে আছি সামনে দিয়ে উড়ে গেল একজোড়া ধনেশ। পাখার গুন গুন শব্দে যেন আমাদের ডাক দিয়ে গেল। একটা একাকী হাতি আমাদের দেখা দেবার জন্যই বোধহয় জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এল উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে। চারপাশে কয়েকটা বককে সঙ্গী করে কিছুক্ষন কচি সবুজ ঘাসের স্বাদ নিয়ে আবার ঢুকে পড়ল পাশের ঘন জঙ্গলে। আমাদের বনবাংলোয় থাকার মেয়াদ শেষ। চাপড়ামারির বনবাংলো কে বিদায় দিয়ে কিছুটা বেদনা আর একরাশ ভালো লাগা বুকে নিয়ে ফিরে চললাম চালসার দিকে। 

 

*******

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শংকর লাল সরকার

8637852643

E Mail. shankarlalsarkar@gmail.com

34, Mearber (Sil Bagan)

Chinsurah, Hooghly

Pin 712101

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন