google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। মিথোজীবিতা ।। সুমন সরকার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১

অণুগল্প ।। মিথোজীবিতা ।। সুমন সরকার

মিথোজীবিতা

সুমন সরকার

লকডাউনে পৃথিবীর সামগ্রিক চিত্রটাই বদলে গিয়েছিলো গত বছরের এই সময়। মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছিলো সম্পূর্ণ লকডাউন।
সামান্য পুঁজি আর স্বল্প বিদ্যাকে সম্বল করে বর্ধমান-হাওড়া মেন লাইন শাখার ট্রেনে হকারী করতো কাঞ্চন। বাড়ীতে বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী ও একমাত্র পুুুুত্র পিন্টুকে নিয়ে টানাটানির সংসার। 
তবুও টক, ঝাল তেল,মশলার সাথে মুড়ি মিশিয়ে নিপুণ হাতে ঝালমুড়ি বানানো আর মজাদার বাক্যে তা পরিবেশনার মধ্যে ও যে শিল্প-সত্ত্বা থাকে, তার অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন মণিশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় বা মণিবাবু ।

বৈদ্যবাটীর মণিবাবু ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার, পোষ্টিং হাওড়ায়। একমাত্র মেয়ে ঝিনিকে আদরে, আব্দারে আলালের ঘরের দুলালী করেছেন। মণিবাবু প্রায়ই কাঞ্চনের কাছে ঝালমুড়ি কিনে খান, মাঝেমাঝে সুখ-দুঃখের কথাবার্তা হয়। দিনান্তে যা উপার্জন করতো, তাতে কোনরকমে কেটে যাচ্ছিলো কাঞ্চনের।  ঝালমুড়ির কৌটোয় চামচের চক্রাকার ঘূর্ণন সময়ের দ্যোতনা দেয়-- কখনো ভালো তো কখনো খারাপ...

আর গ্রীষ্মের প্রাক্কালেই কোভিড-19 এর সৌজন্যে হঠাৎ শুরু লকডাউন । ট্রেন বন্ধ, রোজগারপাতিও বন্ধ । অভাবের সংসারে তেমন পুঁজি ও নেই, শেষ হয়ে আসা কলসীর জল হেলিয়ে আর ক'দিন চলে...

এদিকে ঝিনির বিয়ে হয়েছে হুগলীর বিখ্যাত রায় পরিবারে । আভিজাত্য ও কৌলিন্যে 'রায়বাড়ী' এখনো শহরে বেশ নামজাদা । ইংরেজ আমলের 'রায়বাহাদুর' উপাধি পাওয়া ব্যারিস্টার বিমল শঙ্কর রায়কে সবাই একডাকে চিনতেন । সেই পরিবারে ঐতিহ্যমন্ডিত  দুর্গাপুজোয় বর্তমানে দশমীতে সিঁদুরখেলা সাবেকিয়ানার সাথে নতুনত্বের মিশেল ঘটায়।
এখন অবস্থা আগের  মতো ভালো না হলেও নাকউঁচু ভাবটা থেকেই গেছে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে । এহেন বিমলবাবুর নাতি মনীশের সাথে ঝিনির বিয়ে হয়েছে গত ফাল্গুন মাসে । ঝিনি ছোটবেলা থেকেই ছটপটে, বয়সের তুলনায় বেশ অপরিণত । সেই মেয়ের ওই বনেদী রায়বাড়ীর সংস্কার মানতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো । ভোরে উঠে স্নান সেরে গরদের শাড়ী পরে মন্দিরে পুজো দিয়ে,রান্নায় সাহায্য করতে হতো ঝিনিকে। চেষ্টার ত্রুটি ছিলোনা, তবুও শাশুড়ি মায়ের গঞ্জনা লেগেই থাকতো । ''কোনো কাজই তো গুছিয়ে করতে শেখোনি'', ''এইবয়সে ও ঘরকন্নার কিছুই  জাননা'',  শাশুড়ীমায়ের এহেন তির্যক মন্তব্যে বিদ্রোহী হয় ঝিনির মন কিন্তু কথা ঠোঁটে এসেও আঁটকে যায় । নির্জন দুপুরে বনেদীবাড়ীর চওড়া থামে হেলান দিয়ে উদাসী চোখে আকাশে উড়ে যাওয়া পাখি দেখে সে...

একদিন মোবাইলের ওপার থেকে মেয়ের কান্না চেপে কথা বলার মধ্যেই অশনি সংকেত পান মণিবাবু । লকডাউন একটু শিথিল হতেই একদিন সকালে গাড়ী করে সটান রায়বাড়ীতে উপস্থিত হন । একি অবস্থা হয়েছে ঝিনির !! সোহাগীকে যেন ভুতে পেয়েছে-- শঙ্কিত চেহারা, বিবর্ণ রঙ, উস্কোখুস্কো চুল, মলিন পোষাক...., কয়েক মাসের মধ্যেই একি পরিবর্তন !! নির্জনে বাবাকে নিয়ে গিয়ে ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গে ঝিনির। নিজের অপটু হাতে রান্নার অক্ষমতা, শাশুড়ী মায়ের নিত্যদিনের গজ্ঞনা, নতুন পরিবেশে মানাতে না পারা হাপুস নয়নে ব্যক্ত করে সে....,
মণিবাবু রেগে গেলেও মেয়ের খামতির কথা জেনে সংযত করেন নিজেকে । তবে এর তো একটা বিহিত করতেই হবে...

মণিবাবুর ফেরার পথে হঠাৎ দেখা কাঞ্চনের সাথে, নিজের ব্যবসা তো লাটে উঠেছে পেট বাঁচাতে শিখাকে রাঁধুনীর কাজে লাগানোর জন্য কাজ খুঁজতে বেরিয়েছে l এ যে একেবারে 'মণি-কাঞ্চন' যোগ !!

গাড়ী ঘুরিয়ে মণিবাবু কাঞ্চন আর শিখাকে নিয়ে আবার রায়বাড়ীতে উপস্থিত হন ।
বেয়ানকে বললেন, ''আপনাদের ও ঝিনির তত্ত্বাবধানের জন্য শিখাকে দিয়ে গেলাম, আর আপনারা ও একটু সংবেদনশীল হোন, বাড়ীর  বউও তো আপনাদেরই এখন মেয়ে,  নতুন গাছ মাটিতে বসালে সঙ্গে সঙ্গেই কি ফুল-ফল দেয়?''

গাড়ীতে উঠে কাঞ্চনকে মণিবাবু বলেন,   ''বুঝলে, কাঞ্চন যতদিন শিখা ঝিনির সাথে থাকবে, তোমাদের ভরণপোষণের সমস্ত দায়িত্ব আমার, লকডাউন উঠে গেলেই  ট্রেন চলবে, তুমি আবার ব্যবসার প্রস্তুতি নাও।''

কাঞ্চনের দু'চোখে তখন জল.., বাড়ী গিয়েই সবকথা বাবাকে জানাবে...,

গাড়ীর পিছনের সিটে হেলান দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে মণিবাবু ভাবলেন, 'দুটো পরিবার যদি এভাবেই বেঁচে যায়, তবে ক্ষতি কী..??'

===================================


সুমন সরকার
রাধানগর শিবতলা
মো- 7384156703


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন