Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

কোভিড সংকটকালে স্বেচ্ছা মৃত্যুর প্রাসঙ্গিকতা ।। রণেশ রায়




আজ দেড় বছর ধরে কভিড ১৯ এর আক্রমণ সারা বিশ্বের সমাজ জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। মৃত্যু মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আক্রান্তের হার আকাশ ছোঁয়া, অল্প কিছুদিনের সোয়াস্তির পর ব্যাপক উদ্বেগ আর আতংক ছড়িয়েছে, তা ভয়ঙ্কর মাত্রা পেয়েছে। অর্থনীতি তলানিতে। সমাজ জীবন স্তব্ধ, মানুষ হারিয়েছে গতিশীলতা। সে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন একা। সামাজিক দূরত্বের নামে এক অস্পৃশ্যতার মনন আমদানি করা হয়েছে। একজন আরেকজন থেকে বিচ্ছিন্ন।স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কার্যত রাস্তায় রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে, সৎকারের ব্যবস্থা নেই। অথচ অব্যাহত আছে যুদ্ধের প্রস্তুতি নির্বাচনের জমায়েত ধর্মীয় সভা আর অব্যাহত আছে তথাকথিত অর্থনৈতিক সংস্কার যা দেশকে কর্পোরেট হাতে বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া কিছুই না। আর অব্যাহত আছে প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা আর ঘৃণা। ধর্ম বর্ণ নিয়ে বিভেদের খেলা। চিত্র তারকার মার। লাশ ফেলার হুমকি। মারবে এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে। আন্তর্জাতিক এক সংকটের মুখে ভারতের প্রথম হওয়ার দৌড়। আয় বৈষম্য যুদ্ধে সে প্রথম, স্বাস্থ্য শিক্ষার  অভাবের দৌড়ে সে প্রথম হওয়ার দৌড়ে। আর এখন কভিড ছড়ানোর হারে কভিড মৃত্যু ও সংক্রমণ সংখ্যায় বিশ্বে প্রথম। কভিড চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে বেড নেই ওষুধ নেই টিকা নেই অক্সিজেন নেই। করোনা চিকিৎসার যেমন বেহাল অবস্থা তেমনি অন্যান্য রোগের চিকিৎসা লাটে উঠেছে। এরই মধ্যে মিথ্যা প্রচার আতংক সৃষ্টি। করোনা পরীক্ষার ফল নিয়ে সন্দেহ চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে ভয়। এই সংকট কালেও সরকার জনগণের পয়সায় কিনে চলেছে যুদ্ধ জাহাজ অস্ত্র। আর বিক্রি করে দিচ্ছে দেশের সম্পদ। অনিশ্চিত হয়ে চলেছে জীবন জীবিকা। নিশ্চিত হচ্ছে একে কাজে লাগিয়ে কর্পোরেট দুনিয়ার মুনাফার সুযোগ। জন্ম হচ্ছে আদানি আম্বানি নীরব সরবরা যাদের প্রযুক্তি আর পুঁজি বিদেশি কর্পোরেটের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা।


আজের কভিড আক্রান্ত ভারতের বাস্তব অবস্থাটা কেমন?


ঢেউ তোল ঢেউ

ঢেউ তোল নির্বাচনের

ঢেউ তোল জমায়েতের

ঢেউ তোল হাহাকারের

ঢেউ তোল ধর্মের

ঢেউ তোল ধর্ষণের।


ঢেউ ওঠে অস্পৃশ্যতার,

ঢেউ ওঠে করোনার,

ঢেউ ওঠে কান্নার

ঢেউ ওঠে ক্ষমতার

ঢেউয়ে ঢেউয়ে হুঙ্কার।


ঢেউ তোল লাশের

ঢেউ তোল আতঙ্কের

ঢেউ তোল বিভেদের

ঢেউ তোল ধান্দার

ঢেউ তোল লুঠেরার

ঢেউ ওঠে চিতার আগুনে

লাশ পড়ে  ঘরের উঠানে।


তোমরা দেখ এ ধরায়

ক্ষমতার অলিন্দ ধরে

ওরা মত্ত লাশ নিয়ে খেলায়

ঢেউ বয়ে যায়,

বসে ঢেউয়ের মাথায় 

ক্ষমতা চোখ রাঙায়,

সংস্কারের ঢেউয়ে

দেশ ভেসে যায়

মানুষ মরে করোনার থাবায়

তবু নির্বাচনের ঢেউ বয়ে যায়,

ঢেউয়ে ঢেউয়ে লাশ ডিঙিয়ে

কে আসবে ক্ষমতায়!


কেন আজ এই কভিড সংকট? প্রকৃতির জগতে ভাইরাস নতুন কিছু নয়। বার বার এসেছে গেছে। মানুষের শরীরের প্রতিষেধক ক্ষমতা. যা মানুষ প্রকৃতির সহযোগিতায় অর্জন করেছে, তা  তাকে ভয়ঙ্কর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করেছে। মানুষের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সে জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ জয়যুক্ত হয়েছে। একসময়  পুঁজিবাদী ব্যবস্থাতেও রাষ্ট্র  গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে। আর আজ নয়াউদারনীতিবাদের যুগে রাষ্ট্র দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছে শিক্ষা স্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ন বিভাগেও। সবটাতেই কর্পোরেট অনুগ্রহের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর কর্পোরেট দুনিয়ার আজ সব থেকে লাভজনক বিভাগগুলো হলো শিক্ষা স্বাস্থ্য জল অস্ত্র ফ্ল্যাট বাড়ি আর তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ । এই তথ্য প্রযুক্তি আজ প্রযুক্তির জগতে এক বিস্ময়। যাকে কেন্দ্র করে শুধু উৎপাদন নয় মানুষের সামাজিক জীবন ব্যক্তিগত জীবনটাকে বদলে দেওয়া হচ্ছে। যাকে বলা যেতে পারে জীবনের নম্বরীকরণ বা digitisation of life।


আমরা জানি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ঐক্য ও সংগ্রামের। প্রকৃতি মানুষের বন্ধু। সে তার জীবন ধারণের মৌলিক উপাদানের যোগান দেয়। মানুষ শ্রম ব্যবহার করে প্রকৃতির দানকে (জল, জমি, বাতাস) কাজে লাগিয়ে বেঁচে থাকে। নিজের প্রতিষেধক ক্ষমতা বাঁচিয়ে রাখতে পারে। প্রযুক্তির উন্নতি এর সহায়ক হতে পারে। কিন্তু একই সঙ্গে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রামে লিপ্ত থাকে। সে প্রকৃতিকে নিজের স্বার্থে যেমন ব্যবহার করে তেমনি প্রকৃতিকে রক্ষা করার দায়িত্ব মানুষের ওপর বর্তায়। কিন্তু আজের কর্পোরেট দুনিয়ায় প্রকৃতিকে ব্যবহার করা হচ্ছে কেবল লাভের স্বার্থে। প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে প্রকৃতি ধ্বংস করে ভোগবাদ সমরবাদকে মদত করার জন্য। স্বাস্থ্য শিক্ষায় সরকারি বাজেট নিমিত্ত মাত্র। আজ প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও সে প্রযুক্তি কাজে লাগছে ভোগবাদ সমরবাদের জন্য, প্রকৃতিকে ধ্বংস করে, মানবতার স্বার্থে নয়। মদত করা হচ্ছে ধর্মীয় গোড়ামীবাদকে মানুষে মানুষে বিভেদনীতিকে। সেজন্যই আজ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো শত্রু রাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ সামরিক যুদ্ধ। আর দেশের অভ্যন্তরে ভোগবাদ। প্রযুক্তি উন্নতিকে মানুষ অস্বীকার করতে পারে না। তা  মানব জীবনের উন্নতিতে কাজে লাগলে তার লাগামহীন ব্যবহারকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস না করলে মানুষের মননকে বিকৃত না করলে প্রযুক্তিকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু বাস্তবে কি হচ্ছে তা নিয়ে দু একটা কথা বলে নেওয়া দরকার। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে প্রযুক্তির অভাবনীয় শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যুদ্ধে বানিজ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যের জন্য শিক্ষার জন্য সরকারি বাজেট নয় বাজেট সৈন্য বাহিনী অস্ত্র তৈরী অস্ত্র কেনার জন্য। প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে জল জমি জঙ্গল ধ্বংস করে আধুনিক শহর গড়ে তোলার জন্য। আর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে মানুষের মননকে বদলে দেওয়ার জন্য। এপার্টমেন্ট নামে একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে তাকে দীপান্তরিত করার জন্য। শিশুরা একাকিত্বের মধ্যে বড় হচ্ছে। পরিবারের বন্ধন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। শিশুদের কম্পিউটারে মোবাইলে এক মাদকতার আবহে মন তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত পরিবারে যার চুঁইয়ে পড়া প্রভাবে গরিব ঘরের শিশুরাও বাদ পড়ছে না। এমন সমস্ত ছবি গল্প দেখানো হচ্ছে যা শিশুরদের মনে যৌন বিকৃতি ঘটিয়ে চলেছে জুয়ায় তাদের আসক্ত করছে আর ইউ টিউবে বা হোয়াটসএপে এমন মিথ্যে সস্তা খবর প্রচার হচ্ছে যা শিশুমনকে দুষিয়ে তুলছে। আজ প্রযুক্তির দৌলতে উষ্ময়ন ঘটাবার মত মানব সমাজের জন্য এটা আত্মঘাতী। আগামী দিনের যে ছবি আমি প্রত্যক্ষ করছি সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম:


কেমন যেন সব থমথমে

ভয়ংকর এক নিস্তব্ধতায়

ডানা কাটা পাখি

নিশ্চিন্তে ঘুমায় খাঁচায়,

আমি বসে নিরালায়,

অস্থির চিত্ত আমার

মুক্তির খোঁজ আমার ভাবনায়।


সভ্যতা, আজ তুমি আত্মঘাতী

তুমি উন্মাদ তুমি বর্বর

নিভতে চলেছে তোমার অহংবাতি,

খুড়েছ নিজের কবর

বিপর্যস্ত তুমি আজ, করোনার হানা,

প্রকৃতির ওপর আঘাত হেনে

হারিয়েছ নিজের প্রতিরোধ ক্ষমতা

আজ এই বিপর্যয়ে কি করবে নেই জানা।


আরও বড় এক বিপর্যয়

দিন গোনে তোমার অপেক্ষায়,

জঙ্গল পাহাড় ভেঙে

বিলাসবহুল জীবনের কামনায়

গড়ে তুলেছ বহুতল প্রাসাদ,

প্রযুক্তির অপব্যবহারে অন্ধকার ঘনায়

তোমার সন্তানেরা বিকলাঙ্গ আজ

না জানি ভূকম্পন এক 

ভয়ংকর কোন এক বারবেলায়

এ পৃথ্বীতে আঁধার নামায়

অনিবার্য সেদিন পতন তোমার,

কে রক্ষা করবে তোমায়?


বাঁচবে না সমতল সমুদ্র তট

গরমে ঘেমে নেমে আসছে তুষার ঝর,

যদি জলোচ্ছাস সমুদ্র নদ 

রোম সাম্রাজ্যের মত

কত না নগর রাজধানী যত

তলিয়ে যাবে তোমার সাধের নগরী,

অপেক্ষায় থাক, কবে আসে সে দানব

পালাবে সেদিন তোমার প্রহরী।

হবে তোমার সমাধি এ ধরণী গর্ভে,

সভ্যতা, তোমার ধ্বংসস্তুপের ওপর

গড়ে উঠবে নতুন সভ্যতা এ গর্ভগৃহে।


আজ ভারতের এই পরিস্থিতিতে একটা অনালোচিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যেটা এই সংকট মোকাবিলার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক আর বয়স্ক মৃত্যুপথযাত্রীদের মুক্তির পথ বলে আজ আমার মনে হয়েছে। প্রসঙ্গটা আমি আগে আমার একটা লেখায় তুলেছিলাম। বিষয়টা হলো স্বেচ্ছা মৃত্যুর অধিকার। প্রকৃতির নিয়মে জন্ম মৃত্যু জীবনের দুটো সম্পর্কযুক্ত দুই মেরুতে অবস্থিত  বিন্দু। জন্ম হলো শুরুর বিন্দু আর মৃত্যু শেষ বিন্দু। প্রকৃতির মানুষের চাপ গ্রহণ করার ক্ষমতার সীমা আছে। আর মানুষের জীবনে জন্ম জরা ব্যাধি মৃত্যু প্রকৃতির নিয়ম। উন্নত স্বাস্থ্য বিধি চিকিৎসা মৃত্যুকে বিলম্বিত করতে পারে কিন্তু তাকে রোধ করতে পারে না।  সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন পুরানো হয় অন্তর্নিহিত হয় আবার নতুনকে জায়গা করে দেয়। এই অবস্থায় অনাকাঙ্খিত অসময়ে মৃত্যু কাম্য নয়। চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে রোগীকে বাঁচাতে হয়। সেটা মানবিকতা। কিন্তু যদি রোগীর এমন অবস্থা হয় যে তার রোগভোগ মৃত্যু যন্ত্রনা থেকেও ভয়ংকর এবং এর ফলে শুধু রুগী মৃত্যুপথ যাত্রীই নয় তাঁর প্রিয়জনরাও ধ্বংসের কবলে তখন তাদের রক্ষা করার জন্য রোগী নিজের মৃত্যুকে শ্রেয় বলে ভাবতে পারে। তার স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে সসম্মানে বিদায় জানানো জোর করে বাঁচিয়ে রাখার থেকে বেশি কাম্য। সেজন্য আমরা দেখি মা ছেলের রোগ্যন্ত্রনা ভোগ থেকে তাঁর ছেলের মৃত্যুই কাম্য বলে ভাবতে বাধ্য হন। তিনি আদালতের দ্বারস্ত হন। কিন্তু নিয়মের প্যাঁচে পড়ে বিচারক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। অমানবিক ভাবে তাকে বাঁচিয়ে রাখার বিধান দেওয়া হয়।


এবার আসা যাক আজকের করোনা সংকটকালে এই স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকারের দাবির প্রাসঙ্গিকতা প্রসঙ্গে। আজ শুধু ভারতে নয় উন্নত পশ্চিমি দেশও এই কোভিদের মুখে টাল মাতাল হয়ে গেছিল স্বাস্থ্য কাঠামোর দুর্বলতার জন্য। আর এ এক অজানা ভাইরাস যার প্রতিষেধক ওষুধ নেই। এর সংক্রমণের হার বেশি হলেও মৃত্যু হার বেশি নয়। সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে ইতালির মত দেশে চিকিৎসায় ট্রায়াজ নামে একটি শব্দ যুক্ত হয়। চিকিৎসা সুযোগ সীমিত বলে রোগীদের কার কতদিন বাঁচার সম্ভাবনা তার কর্মক্ষমতা কি  এইসব বিচার করে ভাগ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার আইনত বলবৎ নয়। তাই উপরোক্ত মাপকাঠিতে কাকে আগে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হবে তা ঠিক করে রোগীদের ভাগ করা হয়। দেখা যায় বয়স্ক বিভিন্ন রোগে ইতিমধ্যে আক্রান্ত কোমর্বিড এ আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসার সুযোগ থেকে বাদ পড়ে। অর্থাৎ তার মৃত্যুটা সমাজের কাছে কাম্য বলে মেনে নিতে হয় যাদের বাঁচানো সম্ভব যারা বেঁচে থাকাটা জরুরি বলে মনে করা হয় তাদের স্বার্থে। আপাতদৃষ্টিতে এটা অমানবিক, বয়স্ক মানুষের প্রতি অবিচার বলে মনে হতে পারে কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। ধরুন আমার বাড়িতে সাতাত্তর বছরের ক্যান্সার আক্রান্ত বা সুগার রোগীর আর তরতাজা চল্লিশ বা পঁয়তাল্লিশ বছরের ছেলে এক সঙ্গে কভিড হলে আর একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলে কার চিকিৎসাটা আগে করা বাঞ্ছনীয়? আমার মতে অবশ্যই ছেলের। আমি স্বাভাবিক নিয়মে দুচার বছর পর মারা যাব। কিন্তু ছেলের জীবন পরে আছে। ওর বাঁচাটা বেশি জরুরি। এই অবস্থায় স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার থাকলে ট্রায়াজ পদ্ধতি ব্যবহার করার দরকার হত না। আর এই নিয়ম কার্যকরী থাকলে আমাদের মনন সেভাবে তৈরি হতো যেখানে আমি মৃত্যুকে হাসিমুখে গ্রহণ করতে পারি। যেটা স্বেচ্ছামৃত্যু। এই প্রসঙ্গে  দার্শনিক কবি  কাহলিল জীবরানের  একটা ছোট্ট কবিতা তুলে ধরলাম:


The Grave-Digger BY KAHLIL GIBRAN 


Once, as I was burying one of my dead selves, the grave-digger came by and said to me, "Of all those who come here to bury, you alone I like."


Said I, "You please me exceedingly, but why do you like me?"

 

"Because," said he, "They come weeping and go weeping—you only come laughing and go laughing."



কেন তাঁকে কবর  খননকারী ভালোবাসে? কারণ সবাই কবরখানায় আসে কাঁদতে কাঁদতে আর ফেরেও কাঁদতে কাঁদতে কিন্তু এই আমি হাসতে হাসতে আসি আর হাসতে হাসতে ফিরি। কবর খননকারীর এটাই ছিল উত্তর।


ইতালি যখন এই ট্রায়াজ পদ্ধতি ব্যবহার করে তখন ভারতে ধিক্কার পরে যায় এটা এক অমানবিক কাজ বলে। তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী আর তার চ্যালারা থালা বাজিয়ে মিছিল করে গোমূত্র সেবন করে একুশ দিনের মধ্যে কভিডকে বিতাড়িত করার কর্মসূচি গ্রহণ করে। ভারতে আক্রান্তের হার মৃত্যু হার জনসংখ্যার তুলনায় কম বলে বগল বাজায়। দিল্লিতে মুসলিম ধর্ম সমাবেশ কে বন্ধ না করে তাকে হতে দিয়ে সরকারী দল মুসলিমরা কভিড ছড়াচ্ছে বলে প্রচারে নামে। আর আজ কুম্ভ মেলা বা নির্বাচনে প্রচারে অসংখ্য মানুষের সমাবেশ প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে। তারপর একবছরে জল অনেক গড়িয়েছে। কিছুদিন কিছুটা স্বস্তির পর আজ ভারতে প্রতি ঘন্টায় সংক্রমণের হার মৃত্যুর হার রেকর্ড করে চলেছে। শব দাহের ব্যবস্থা নেই অক্সিজেন নেই টিকা নেই হাসপাতালে বেড নেই। সব কিছুর জন্য ভারত বাইরের দুনিয়ার অনুগ্রহের পাত্র। বৃদ্ধ বৃদ্ধারা নির্জনে ঘরে মরে পরে থাকছেন। তাদের ছেলে মেয়ে দূরে চাকুরীরত। যাতায়াত প্রায় বন্ধ। তারা ইচ্ছে থাকলেও আসতে পারছে না। আর কতজন ঘরে অসুস্থ অবস্থায় মরণ যন্ত্রনা ভোগ করছে তার কোন হিসাব থাকে না। এর সঙ্গে আর্থিক সমস্যা। এম্বুল্যান্স অক্সিজেন টেস্ট নিয়ে ব্যবসা। এ এক নরক যন্ত্রনা। আমার প্রশ্ন এই অবস্থাটা কোন রোগীর পক্ষে কাম্য না স্বেচ্ছামৃত্যুটাই তার কাছে সম্মানজনক?


আমি স্বেচ্ছা মৃত্যুর অধিকার নিয়ে কথা বললে অনেকে বলে এরকম কোন আইন হলে সেটা ব্যবহার করবে ছেলেমেয়েরা সম্পত্তির লোভে। তারা স্বেচ্ছা মৃত্যুর নামে বাবা মাকে মেরে ফেলবে। পরপ্রজন্মের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গি আমার মতে ভুল ও নীচ মনের পরিচয়। নিয়মের অপব্যবহার! এমন কোন আইন আছে কি ভারতে যেখানে তার অপব্যবহার হয় না। সংরক্ষণ আইনের কথা ধরা যাক। কোন হিসেব আছে কি কত উচ্চ বর্গের মানুষ পয়সা খরচ করে প্রভাব খাটিয়ে সংরক্ষণ সার্টিফিকেটে জোগাড় করে। আর আমাদের সন্তানরা এখনও এই হীনমন্য মানসিকতা পোষণ করে না। এর মধ্যে ব্যতিক্রম একটা আধটা হতেই পারে। আর সেটার জন্য যদি স্বেচ্ছা মৃত্যুর অধিকার স্বীকৃতি না পায় তবে কোন আইনই বলবৎ করা উচিত নয় কারণ সব আইনের  অপব্যবহার সম্ভাবনা থাকে।



==============


মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩