কবি ও প্রাবন্ধিক কালিদাস রায় ।। রমলা মুখার্জী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Wednesday, June 16, 2021

কবি ও প্রাবন্ধিক কালিদাস রায় ।। রমলা মুখার্জী

কবি কালিদাস রায়ের জন্মভিটে – খবরাখবর
 
 

কবি ও প্রাবন্ধিক কালিদাস রায়

রমলা মুখার্জী


কবিশেখর কালিদাস রায় ১৮৮৯ সালের বর্ধমান জেলার কাটোয়ার করুই গ্রামে বাইশে জুন জন্মগ্রহণ করেন। আমার তাঁর ভিটেতে যাবার সৌভাগ্য হয়েছিল "কালিদাস রায় স্মৃতি কমিটি" কতৃক প্রদত্ত "কালিদাস রায় স্মৃতি পুরস্কার" গ্রহনের সুত্রে। কবির বাবা যোগেন্দ্রনাথ রায় কাশিমবাজার রাজ এস্টেটে চাকরি করতেন। কথিত আছে বৈষ্ণব কবি লোকদাস ঠাকুরের তাঁরা উত্তরাধিকারী ছিলেন। 
       কালিদাস রায় সংস্কৃত শিখেছিলেন কাশিমবাজারের আশুতোষ চতুস্পাঠী থেকে এবং পড়াশোনা করেছিলেন ঐ কাশিমবাজারেরই লন্ডন মিশনারী স্কুলে। ১৯১০ সালে কবিশেখর স্নাতক হন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে। তারপর স্কটিশচার্চ কলেজে ফিলোজফি নিয়ে এম.এ-তে ভর্তি হন কিন্তু পরীক্ষা দেবার আগেই ১৯১৩ সালে রংপুরে উলিপুর মহারাণী শ্যামাময়ী হাইস্কুলে শিক্ষকরূপে যোগদান করেন। তারপর তিনি ১৯২০ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত ২৪ পরগণার ব্রিটিশ হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। তারপর তিনি কলকাতার ভবানীপুর শাখার মিত্র ইন্সটিটিউশনে প্রধান শিক্ষক রূপে অবসর নেবার আগে পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ছিলেন। 
         শিক্ষক কবি কালিদাস রায় মোট উনিশটি কাব্যগ্রন্থ লেখেন। তাঁর প্রথম গ্রন্থ 'কুন্দ' ১৯০৭ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল- 'পর্ণপুট(১৯১৪)', 'ঋতুমঙ্গল(১৯১৬)', 'রসকদম্ব(১৯২৩)', 'বজ্রবেনু(১৯৪৫)' প্রভৃতি। তাঁর লেখা কবিতাগুলি মাধুর্য ও চিত্রময়তায় সত্যই অপূর্ব। প্রাচীন সংস্কৃত ও মধ্যযুগের বাংলা এই দুই ধারারই সংমিশ্রণ আমরা তাঁর কবিতায় পাই। কাব্য সাধনা ছিল তাঁর নেশা। এই নেশাই কালক্রমে তাঁর জীবনের ব্রত হয়ে দাঁড়ায়। শুধু কবিতাই নয় প্রবন্ধ, সাহিত্য সমালোচনা ও হাস্যরস সৃষ্টিতেই তাঁর ছিল অতুলনীয় দক্ষতা। কবি কালিদাস রায় কবি হিসাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অনুসরণ করেছিলেন। তিনি তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির জন্য অনেকগুলি পুরষ্কার ও উপাধি পেয়েছিলেন।   
১) তিনি কবিশেখর উপাধি পেয়েছিলেন ১৯২০ সালে রংপুর বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে।
২) ১৯৫৩ সালে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছিলেন। 
৩) স্বরজিনী স্বর্ণপদকও পেয়েছিলেন ঐ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। 
৪) ১৯৬৩ সালে আনন্দবাজার সংস্থা থেকে তিনি আনন্দ পুরষ্কার পান।
৫) ১৯৬৮ সালে তিনি পূর্ণাহুতি কাব্যের জন্য সরকার থেকে রবীন্দ্র পুরষ্কার পান। 
৬) বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে দেশিকোত্তম উপাধি লাভ করেন। 
৭) ১৯৭২ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.লিট সম্মান প্রদান করেন।
৮) ১৯৭৬ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট সম্মান লাভ করেন। 
           কালিদাস রায়ের লেখা প্রবন্ধগুলিও যথেষ্ট বলিষ্ঠ। প্রাচীন বঙ্গ সাহিত্য পরিচয়, পদাবলী সাহিত্য, শরৎ সাহিত্য, সাহিত্য প্রসঙ্গ প্রভৃতি তাঁর প্রবন্ধ গ্রন্থ। তিনি মহাকবি কালিদাসের সংস্কৃত ভাষায় লেখা কুমারসম্ভব, মেঘদূত ও শকুন্তলা কাব্যের বঙ্গানুবাদ করেছিলেন।
    'রসচক্র' নামে একটি 'সাহিত্য সমিতি' তিনি গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৭৫ সালে ২৫শে অক্টোবর কবি দেহত্যাগ করেন, কিন্তু তাঁর অপূর্ব সাহিত্যসৃষ্টির জন্য তিনি আজও অমর। 

==================================

ডঃ রমলা মুখার্জী
বৈঁচী, বিবেকানন্দপল্লী, জেলা হুগলী, পিন 712134
ফোন 7003550595
হোয়াটসঅ্যাপ 9474462590



No comments:

Post a Comment