Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

ছবি
  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

দুটি অণুগল্প ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল

 

দুটি অণুগল্প ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল

 

পাষাণ ভারী


----  রাজীব বাবুর সঙ্গে দেখা হলো ? ছন্দার গলায় চিন্তা আর অস্বস্তির কালো মেঘ । পতিতপাবন ব্যাগ হাতে নিয়ে  বলল , তোমার জন্য জারদৌষি কাজের লেহঙ্গা পেলাম না;  বলল -- কলকাতার শপিংমলে ছাড়া পাওয়া যাবে না  । উজ্জ্বল ফুসিয়া পিঙ্ক লেহঙ্গা বললাম-- তাও না।
-----  আমি বলেছিলাম তো পাবে না । যখন ওগুলো আনব তখন কুন্দন হারও এক সঙ্গে নেব।  কিন্তু যে কথাটা বলেছিলাম আগে সেটার খবর কি বলো?
-----  তা আমি কি ব্যাগ হাতে করে দাঁড়িয়ে থাকব?
-----  সেটার কোনো উত্তর দিচ্ছ না, তাই ধরছি না।
-----  বাহ -সত্যি পারো ! ধরো, বলছি । উফ্ এত ভারী যে বয়ে আনতে পারি  ? 
----- সংসারে যেটা ভারী সেটা নিয়ে আমি নাস্তানাবুদ খাচ্ছি ! আর উনি সামান্য এই ব্যাগটা নিয়ে ঘেমে উঠেছেন ? সত্যিই তুমি পুরুষ !
----- তুলে দেখো না আমি মিথ্যে বলছি কিনা ?            
----- তোমার কথা শুনে ঘোড়ায় হাসবে। বাৎলা তো -   
----- কি বলতে চাও বলো তো ?
----- কাগজটা কি পকেট থেকে চলে যাচ্ছে ?           
-----  হ্যাঁ ।  ওর জন্যই ভাবছি । তোমাকে বাজারে পাঠালাম । এক সপ্তাহ পরে মহালয়া । হুঁশ আছে ?  একটা ওয়ার্থলেস । পূজার আগেই ----
---- উফ্  কি গরম ! কেন যে -- কালি পটকা না কে জানে ? জামা প্যান্ট স্খলনের সময় বলল ।
----- দেখো,  বেশি বাজে বকো না  ?
----- বাবা ,আমার কিন্ডার গার্ডেন এনেছ?  সে বলে পতিতপাবনের প্যান্টের পকেটে হাত গলিয়ে কাগজের টুকরো সমেত বের করে কি কাগজ দেখছে । ততক্ষণে ছন্দা গজগজ  করতে ব্যস্ত।  পতিতপাবন বাথরুমে ঢুকে হাত মুখ ধুচ্ছে ।
---- মৌরসি পাট্টা ! কোথাও যেতে পারলাম না ।  জীবনটা কয়লা করে ছাড়বে।
----  মনা প্যান্টের পকেটে কাগজটা তোর মাকে বের করে দে তো  ।
----- ওমা আমি পাইনি। আমি তো কিন্ডার নিলাম ।  পতিত প্যান্টের সব পকেট মানিব্যাগ সহ জামার পকেটে  খুঁজছে।  কিন্তু পাচ্ছে না ।
----- তুমি এনেছ এই কথাটা বললেই তো হতো  ?    
---- বললে ?  তুমি মাথায় করে নাচাতে ?
----- বাজে কথা বলো না তো । সংসারে ভারবাহী  ঝামেলা হটাও । টাকা রোজগার করো ব্যয় করতে শেখো?
-- অ‍্যায় মনা কাগজটা কোথায় পড়ল রে  ?         
--  জানিনা।  কি আছে তাতে  ?
-- বৃদ্ধাশ্রমের ফোন নম্বর,  পার হেড কত দিতে হবে তার একটা কাগজ  । তারিখটাও লেখা ছিল।
--  তোমার মনে নেই লিখে আনতে হল?
-- ওটা কি আমি লিখেছি ?  সাদেক ভাই অনেক গুলোর নাম ঠিকানা ফোন নম্বর দিয়ে একটা নাম বলে দিয়েছিল নামটা পেটে আসছে মুখে আসছে না।  কাগজটা পেলে -- তাছাড়াও সেটা খুলিনি।
-- ফ্যান চলছে উড়ে গেল নাকি দেখো ?
মনার ঠাকুরদা ঠাকুরমা পাশে খাটে বসেছিলেন ।  চোখ যেন শরৎ শিশির স্নাত তৃণের মতো।  ফোঁটা পড়ছে না ডগায় ধরে আছে।  চিকচিক করছে।
--  অ‍্যায়  মনা, তুই তো সাদা কাগজটা নিলি দাদুভাই  ?
-- না দাদু আমি ওটা দেবো না   ।  মনা বলল ।        
-- কেন ? দু'ঘা দিলে টের পাবি ? ছন্দা বলল ।
-- না আমি ওটা লুকিয়ে রেখেছি। আমার ওটা লাগবে । 
-- আরে ওটা দে তোর মাকে । বাঁদরামো করিস না। 
--  না বাবা,  আমি দেব না । তোমরা যখন বৃদ্ধাশ্রমে  যাবে তখন আমি ঠিকানা পাব কোথায়? আমি ওটা আলমারিতে প্রোগ্রেস রিপোর্টের সাথে রাখব । আমি দেবোই না।
ছন্দা কালকেউটের মতো ফুঁসছে ।

 

পথ ও নিঃস্বতা


       হন্যে হয়ে মেয়েটা ঘুরছে  ! আজ তিন মাস গত হলো  দাদা বৌদি ঘর ছাড়া । এখানে কোনও জীবিকার পথ না পেয়ে বাধ্য হয়ে কোলের একমাত্র পুত্র ছোটনকে নিয়ে ভিন দেশে পাড়ি দিয়েছে । কখনও গাছ তলায়- নদীচরে- মাঠে -বাজারে ঘুরে মন স্থির করতে পারছে না কি করবে ।  মা শয্যাশায়ী । বাবা গত বছর কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের পেটে । খাল -বিল- নদী- নালায় ভরা সুন্দরবনের জনজীবনের ভাগ্য লিপি বড়ই বৈচিত্র্যময় । বাবা গত হওয়ার পর দাদা সুরৎ সংসারে অর্থনৈতিক কারণে বেকায়দায় পড়েছে । বউকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে কিছু অর্থ জোগাড় করে মা বোনের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে অপেক্ষা করেনি ।
     একটা সোমত্ত  বিবাহযোগ্যা মেয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় কখন পেটে জুটছে -কখনও নেই এই অবস্থায় সুযোগ সন্ধানী বিকাশ -মথন - নটবরদের চোখ এড়িয়ে যায়নি।  ফাউ খেতে অসুবিধা কোথায়? কাঁহাতক প্রতিবেশীরা সহৃদয়তা  দেখাবে । উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা  মেয়েটাকে কে কি ভাষায় বোঝাবে ? অভাব সম্বন্ধে নতুন কোন সংজ্ঞা  তার জানা নেই । কেবল প্রতিকারের পথ অনুসন্ধান ছাড়া।
           সুলুক সন্ধানের দল মাছ ধরার মতো বঁড়শিতে আধার দিয়ে নাচায় । না হলে নটবর কেন বলে,  দাদা বলেছিল একটা  আনকোরা নতুন জিনিস উপহার দিলে আমার ঘরের লোনটা পাস করিয়ে দিবে । মথনও উপযাজকভাবে জুয়ার জেতা টাকা থেকে করকরে একশ' টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল , কথা শুনলে আরও পাবি   ; পাঁচশ' হাজার কি লাগবে ! সোনায় সোহাগা বানিয়ে দেব ।
     একটা রোজগার পাইয়ে দেবার হাতছানি । মনে মনে ভাবে এটাও তো উপকার !  মানুষের অসহনীয় বিপদে ভদ্রভাবে বাঁচার জন্য পথ দেখানোয় ক'জন এগিয়ে আসে ? কিন্তু ওরা তো সেই সহৃদয়  ব্যক্তি নয় ।           
       নটবরের দাদা বলতে নির্বাচিত স্থানীয় দাপুটে নেতা । কীইবা  ওর রুচি !  বয়সে যথেষ্ট বড়  এবং বিবাহিত । আসলে ক্ষমতায় থাকলে তার স্বাদ চেটেপুটে খায় যারা তারাই তো দেশসেবার নামে শপথ নিয়েছে । মিনতিকে  একদিন নটবর ডেকে নিয়ে বলল ; ---  যাবি ? চল্  দাদার কাছে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কত মানুষের না উপকার করে !  মিনতি সম্মতি দিলে নিয়ে গেল দাদার চেম্বারে ।  দাদা নির্বিঘ্নে একাকে  বসিয়ে রেখে সবাইকে চেম্বার থেকে বেরিয়ে যেতে বলল।  নামধাম জিজ্ঞেস করার পর মিনতি বলল , আমায়  কাজ দিন যাতে অসুস্থ মাকে নিয়ে থাকতে পারি ।     
-----  নটবর কি তোমাকে  আমি চাকরি দেবার এক্সচেঞ্জ অফিসার বলেছে ? আমি তো তা নয়  । অস্থায়ী কাজ দেবো।
----- কি কাজ?
------ নো ওয়ার্ক নো পে । যেদিন কাজ করবে সঙ্গে সঙ্গে প্রেমেন্ট করে দেব । আমি যেদিন বলব সেদিন আমার সঙ্গে সময় দিতে হবে । ব্যস।
সে কেমন গোঁতা মেরে বলল , কাজটা যখন জানতে পারলাম না বুঝবো কি করে যে ওটা ভালো কাজ?
-----  তোমাকে ব্যবসায় নামিয়ে দেব । প্রথম প্রথম আমার সঙ্গে যেখানে যেতে বলব-- যাবেই।  তারপর --  ও লাইনে টাকা উড়ছে । শুধু ধরতে পারলে হয়।          
----আমাকে এই কাজে না লাগিয়ে অন্য কোনও কাজ দিন না বাবু । বুঝেছি ওই  কাজে টাকা আছে মান নেই।
----- ঠিক আছে  । ভেবে দেখো কেমন ? যদি সম্মতি থাকে আগামী দিনের জন্য পথ খোলা আছে  । ফোন নম্বর দেবো নাকি?
----- ঠিক আছে দিতে হবে না ।  আসছি । প্রয়োজন মনে হলে ফোন করে জানাব।
সে উঠে চলে আসল। বাড়িতে  এসে শয্যাশায়ী  মাকে জড়িয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছে ।

================

সুদামকৃষ্ণ মন্ডল
গ্রাম: পুরন্দর পুর (অক্ষয় নগর)
পোস্ট : অক্ষয় নগর
থানা : কাকদ্বীপ
জেলা : দঃ চব্বিশ পরগণা
পিন কোড :743347

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল