Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

গল্প ।। শেষ শব্দ ।। প্রসূন রায়

 

শেষ শব্দ

প্রসূন রায় 


স্কুল থেকে ফিরে ব্যাগপত্র বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে দিয়েই খেলতে যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল সুমন । স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় সে দেখতে পেয়েছে, তার সমস্ত বন্ধুরা দল বেঁধে নেমে পড়েছে মাঠে । তাদের একজন সুমনকে দেখতে পেয়ে ডাকও দিয়েছে,- " এই সুমন তাড়াতাড়ি আয়, আজ কিন্তু আমাদের জিততেই হবে বলে দিলাম। "
কিন্তু তাড়াহুড়ো করলে কি হবে , চৌকাঠ পেরানো কি এত সোজা ! ক্রিকেটের ব্যাটটাকে হাতে ধরে যেই না বেরোতে যাবে, অমনি পড়ল বাধা । 

-" বাবু আগে জামা প্যান্ট ছেড়ে, হাত পা ধুয়ে খেতে বস্। খেলতে যাবি পরে ।" 

কিন্তু কে কার কথা শোনে ! " এসে খাবো মা, এখন খিদে পায়নি আমার । " - এই বলেই দে দৌড় । 

" কি বললি খিদে পায়নি ! কোন সেই সকলবেলা দুমুটো ভাত খেয়ে বেড়িয়েছে, খিদে পায়নি! চুপচাপ খেতে বস আগে । তারপর যাবি খেলতে..." - কথাটা বলতে বলতে রান্নাঘর থেকে ভাত বেড়ে যতক্ষণে ঘরে ঢুকেছে মা, ততক্ষণে ছেলে হাওয়া । বাইরের দিকে তাকিয়ে জোর গলায় একবার চেঁচিয়ে বলে ওঠে, - " দাঁড়া, আসুক আজ তোর বাবা, দেখবি কি করে…!" 

কথাগুলো সেদিন সুমনের কানে গিয়েছিল বটে কিন্তু তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিলনা তার । বরং সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরেই নালিশ জুড়ে দিয়েছিল মায়ের কাছে ,- " ধুর !  যাবার সময় তুমি পিছু ডেকেছিলে বলেই জিততে পারলাম না আজকের ম্যাচটাও ।" 

হ্যাঁ সেদিনও জেতা হয়নি ম্যাচটা তাদের । এভাবেই একের পর এক দিন পার হতো সুমনের । পাড়ার নিত্যদিনের ক্রিকেট ম্যাচে কোনোদিন জিততো আবার কোনোদিন হারতো । বেশিরভাগ দিনই স্কুল থেকে ফিরেই খেলতে চলে যেত সে । মা খুব রেগে থাকতো যেদিন, সেদিন মারও খেত খুব।  সেদিন আর খেলতে যাওয়া হয়ে উঠতো না তার । খুব রাগ হতো তখন । বন্ধ ঘরের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো সে মাঠের দিকে ।‌

হাসপাতালের  জানালা সংলগ্ন বেডটিতে  বসে বাইরের মাঠটির ভিতর খেলতে থাকা বাচ্চা ছেলেগুলোর খেলা দেখতে দেখতে ছেলেবেলার পুরাতন স্মৃতিগুলির কথা আবছা মনে পড়ছিল সুমনের ।  নিজের অজান্তেই দুই ঠোঁটের মাঝে খুশির রেখা টেনে দিয়েছিল একটি মিষ্টি হাসি।

মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিলেও "মধ্যবিত্ত" শব্দটির অর্থ বুঝতো না সে তখন । যুগের নিয়মে যত বড়ো হয়ে উঠতে থাকে সে,  সাথে নিয়ে বেড়ে ওঠে নিজের দায়িত্ববোধ । পড়াশুনা শেষ হতে না হতেই একটি প্রাইভেট কম্পানীতে চাকরিও যোগার হয়ে যায় তার ।  কিন্তু যোগার হলেই কি হবে ! ভাগ্যের নির্মম চক্রব্যুহে আটকে পড়েছিল তার জীবন যাপন । সামাজিক ভাবে বড়ো হয়ে উঠতে থাকার পাশাপাশি নিজের অজান্তে  মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়তে থাকে সে ধীরে ধীরে। সেই কোন কলেজ লাইফে আসক্ত হয়ে পড়া নিকোটিনের উষ্ণ ছোঁয়া, আজ‌ও নিজের কারাগারে বন্দী করে রেখেছে সুমনকে । ক্যান্সার ধরা পড়ার পর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে কথা দিয়েছিল, সিগারেটের নেশা ছেড়ে দেবে সে চিরদিনের জন্য। পারেনি । 
" এটাই শেষ। আর না ।" - কথাটা প্রতিটি সিগারেটের শেষটান দিয়ে ফেলে দেবার পর প্রতিশ্রুতি দিত নিজের শরীরকে ‌‌।  কিন্তু ক্ষনিক পড়েই সে প্রতিশ্রুতির কথা একপ্রকার ভুলেই যেত সে । ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে ধরিয়ে ফেলত আরও একটি  সিগারেট ।  এমনিভাবে দিনের পর দিন অতিবাহিত হতে হতে আজ জীবন তাকে টেনে এনেছে সেই স্থানে, যে স্থানে জীবন-যন্ত্রনা উপলব্ধি করানো হয়  মৃত্যুআলয়ে । 

প্রায় দেড় মাস যেন বন্দী দশায় বসবাস করে চলেছে সে । আশেপাশের অগুনতি অসুস্থ মানুষজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও প্রীয়জন বলতে কেবল নিত্যদিন দুবেলা নিয়ম মাফিক পনেরো মিনিটের জন্য  আত্মীয়স্বজনের দর্শন লাভ ছাড়া আর কেউ ই ছিলনা সেই কারাগারে।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কোনো এক স্মৃতির অতলে হারিয়ে গিয়েছিল সুমন । সম্বিত ফিরল সেবিকার কন্ঠস্বরে - 
" নিন, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন ওষুধটা । আজ রাতে আপনার অপরেশন । তৈরি থাকবেন।"
কোনো কথার উত্তর না দিয়ে, সেবিকার হাত থেকে চুপচাপ ওষুধটা নিয়ে মুখে পুরে দিল সুমন । হাত বাড়ালো জলের গ্লাসটি লক্ষ করে।

 গোধূলি বেলায় অস্তগামী সূর্যের শেষ কিরনটুকু এসে পড়ছে তার বেডের উপর । কিছুটা মিঠেল বাতাস‌ও বয়ে আসছে জানালা বেয়ে । 
জলের গ্লাসটি সুমনের হাত থেকে নিয়ে পাশের টেবিলে রেখে দিয়েই সেবিকাটি এগিয়ে গেল জানালা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ।
বেডের উপর চুপচাপ বসে থাকা সুমনের চোখের সামনে বন্ধ হতে থাকা জানালার পাল্লার সাথে মুহূর্তের জন্য সুমনের চোখে ভেসে এল তার সমগ্র অতীত ।  চোখের সামনে হারিয়ে যাওয়া সূর্যের সাথে সাথে সমগ্র পৃথিবীর কাছে হারিয়ে যাবে তার কন্ঠস্বর ও চিরকালের জন্য ।

" কেমন আছিস‌ বাবু! " 

মাথায় উপর একটা ভালোবাসায় পূর্ণ তালুর স্পর্শ পেয়ে পিছনে ঘুরে তাকায় সুমন । 

" ডাক্তারের কাছে শুনলাম আজ‌ রাতেই নাকি অপারেশন টা করবে তোর ‌। আর তো কটাদিন ! একটু কষ্ট করে নে, তারপর‌ আর চিন্তা নেই বাড়ি চলে যাবি ।"

ছলছল চোখে মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুমন । চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে তার মায়েরও । দুজনেই জানে এটাই শেষবার । 

মিনিট পনেরো পার হতেই সেবিকা এসে জানিয়ে দেয় ভিজিটিং এর সময় সমাপ্ত হয়েছে । বহু অনিচ্ছার সত্বেও ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে হয় তাঁকে ।

 মৃত্যুদণ্ডের আগের শেষ মুহূর্তে আসামি  জানিয়ে যায় তার শেষ ইচ্ছাটুকু । ঠিক তেমনি বেডের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সেবিকাটির কানে ভেসে আসে, মায়ের চলে যাওয়াকে অনুসরন করে সুমনের কন্ঠ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে আসে তার বলা শেষ শব্দটি । "Love You মা ।"
     
                         ______সমাপ্ত_____




 
 
প্রসূন রায় 
 গ্রাম- মধুপুর, পোষ্ট - শিয়াখালা, থানা- চন্ডিতলা, জেলা - হুগলি। পিন- ৭১২ ৭০৬

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩