Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

উপন্যাসিকা ।। মুদ্রার উল্টো পিঠ ।। সুদীপ পাঠক

 


 উ প ন্যা সি কা

মুদ্রার উল্টো পিঠ 


সুদীপ পাঠক 

পর্ব : ১

বুক ভরা ভালোবাসা 

অঞ্জনা তার দুই ছানাপোনা নিয়ে বাপের বাড়ী এসেছে । মেয়ে বড় ছেলে ছোট । অন্নপ্রাশন হয়ে গেছে, সব ধরণের খাদ্যগ্রহণে অভ্যস্ত, মুখে বোল ফুটেছে, হাঁটতে পারে তবু তাদের দুগ্ধপোষ্য বললে ভুল হবে না । ওদের দিদিমার জিম্মায় দিয়ে ক'টা দিন হাত পা ছড়িয়ে থাকার মজাই আলাদা । বাচ্ছারাও দিম্মাকে পেয়ে আহ্লাদে আটখানা । 

তবে মিসেস অমিতা বর্ধন ডাকসাইটে মহিলা । কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ শুল্ক দপ্তরে উচ্চপদে চাকুরিরতা । স্বামী যতোটাই ব্যক্তিত্বহীন উনি ততোটাই রাশভারী । নইলে সংসার কবেই ভেঙেচুরে খানখান হয়ে যেতো । জীবন সংগ্রামে বহু উত্থান পতনের সাক্ষী তাঁর গুরুগম্ভীর মুখাবয়ব । মেয়ে স্কুলে পড়ার সময় পূর্বতন  কমপ্লেক্সের এক বখাটে ছোকরার হাত ধরে বাড়ী থেকে পালিয়ে যায় । অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে মায়ের বুকে এসে আছড়ে পড়ে । অমিতা দেবী সস্নেহে লালন পালন করতে থাকেন নিজ সন্ততিকে । আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, সহকর্মী ও পরিচিত জনের বহু কটূক্তি, ঠাট্টা তামাশা সহ্য করে বা উপেক্ষা করে সেই মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে উচ্চশিক্ষিতা করে সমাজের উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন এবং যথা সময়ে পাত্রস্থ করেন । একমাত্র পুত্র সন্তান সস্ত্রীক আমেরিকার বোষ্টনে সেটেল্ড । উভয়েই আই টি সেক্টরের কর্মী । সহপাঠী থেকে জীবনসঙ্গী হয়েছে তারা । আগের সরকারী আবাসন পরিত্যাগ করে নতুন জায়গায় উঠে এসেছেন । এটি ফোর বি এইচ কে এ্যাপার্টমেন্ট । প্রশস্থ, প্রভূত আলো বাতাস যুক্ত, সর্ব সুবিধা সম্পন্ন ও অত্যাধুনিক সাজ সজ্জায় সজ্জিত । এ ব্যাপারে যথেষ্ট শ্লাঘা বোধ করেন মিমেস বর্ধন ।  

আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ গৃহবধূর মতো আচরণ করেন না তিনি সে কথা বলাই বাহুল্য । নাতি নাতনীকে নিয়ে দেখনদারি আদিখ্যেতা তাঁর ধাতে নেই । জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া বা অর্থহীন কথাবার্তায় ছেলে ভুলোনো এসবের ধারকাছ দিয়েও ঘেঁসেন না তিনি । সব কিছুতেই শিক্ষা রুচি ও আভিজাত্যের ছাপ বজায় রাখতে তিনি বদ্ধ পরিকর । দুপুরে খাওয়ার টেবিলে বাচ্ছাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময়েও সে অভ্যাস বাদ যায় না । ওদের জিজ্ঞাসা করলেন
- তোমাদের মাকে নিয়ে তিনটে ভালো কথা বলতো শুনি । মায়ের এমন তিনটে জিনিস যা তোমাদের খুব পছন্দ । 
কুঁড়ি-ঋভু তৎক্ষণাৎ একবাক্যে সমস্বরে চিৎকার করে বলে উঠলো
- মাম্মামের বুবু...
সেই সঙ্গে তাদের সরল নিষ্পাপ মুখে হাসি ফুটেছে ! 
অমিতা অঞ্জনা উভয়েই লজ্জায় অধোবদন হয় । কোনো প্রকারে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন । পরে অবশ্য বাচ্ছারা ঘুমিয়ে পড়লে মা মেয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে হেঁসে কুটপাটি যাওয়ার যোগাড় । 

অঞ্জনা তার মামার বাড়ীর ধারা পেয়েছে, খর্বাকৃতি ও পৃথুলা । গায়ের রঙ না ফর্সা না কালো ; হাল্কা গম রঙ্গা । কোমর পর্যন্ত লম্বা কুঞ্চিত ঘন কালো চুল ও আড়ম্বরহীন মুখমন্ডল । হাঁটলে গুরু নিতম্বের দোলা ও সর্বপরি তার সুডৌল স্তনযুগল সুতীব্র যৌন আকর্ষণ উদ্রেক করে । গোল-নিটোল ও ডাটো ; যেনো পাকা বেলফল । যেমন ভারী তেমনই নরম তুলতুলে । এক অদ্ভুত বৈপরীত্য ও সৌন্দর্যের মিশেল ।

বাচ্ছারা এখনো পর্যন্ত আদর কাঁড়ায়, স্তনবৃন্ত মুখে পুরে চুষতে থাকে । আশ্চর্যের ব্যাপার দুগ্ধ নিঃস্বরণ হয় যথারীতি ! অঞ্জনা নিজেই বুঝতে পারে না এর উৎস কি ? অবাক লাগে তার ! মনে পড়ে প্রথম সন্তান প্রসবের পর স্তন্যপান করানোর অভিজ্ঞতা । খেতে খেতে শিশুটা যেনো দিশাহারা হয়ে যেতো । হাঁপিয়ে উঠে পরক্ষণেই আবার আকঁড়ে ধরে কচি দুই হাতে । ওর কাছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি, আকারে আয়তনে ও দুধের পরিমাণে । ফলে ও যেনো থৈ পায় না । দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি । অঞ্জনা বর্ণনাতীত আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় । পুলকানুভূতি ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে । নারীত্বের পূর্ন মহিমায় আজ সে ভাস্বর । বিকশিত দুই স্তন থেকে বিন্দু বিন্দু অমৃতধারা ঝরে পড়ে ; তার দেহ মন আত্মা বিবশ হয়ে যায় ।  

রাত প্রায় ন'টার কাছাকাছি অনুপম এলো । সঙ্গে ঝকঝকে ব্র্যান্ড নিউ এ্যান্ড্রয়েড ফোন ।  শ্বশুরমশাইয়ের  আদ্যিকালের কি-প্যাড ওয়ালা হ্যাণ্ডসেট তার ব্যঙ্গের খোরাক যোগায় । দীর্ঘ দিন টোন টিটকিরি কাটার পর আজ সে শ্বশুরকে দান করছে । তার বীরের দর্প ঠেকায় কার সাধ্য ? ইতিপূর্বে সে শ্বশুরমশাইকে একাধিক ভোগ্যপণ্য দান করেছে, যথা এল ই ডি টিভি, রিস্ট ওয়াচ, ব্লাড প্রেসার ও সুগার মাপার ইলেকট্রনিক যন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি । বৃদ্ধ মানুষটি কৃতজ্ঞতায় আনত হয়ে থাকে । অনুপম সেটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে । তার মতে শ্বশুরকে তার শাশুড়ী ও তাঁর মেয়ে অর্থাৎ তার বৌ 'শৃঙ্খলিত কুত্তা' বানিয়ে রেখেছে । বেচারা নিজের ঘরেই বন্দি জীবনযাপন করছেন । যেহেতু তার একার পক্ষে এর সম্পূর্ন প্রতিকার করা সম্ভব নয় তাই সান্তনা পুরস্কার স্বরূপ এই সব উপঢৌকন প্রদান । 

আজ শনিবার রাত্রিবাস ও আগামীকাল রবিবার গোটা দিনরাত শ্বশুর বাড়ীতে অবস্থান করবে অনুপম । অঞ্জনার কাছে এটা খুব চেনা ছক । যখনই তার স্বামী সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু বা বাচ্ছাদের জন্য কিছু বা তার জন্য শাড়ী গয়না জুতো প্রসাধনী সামগ্রী কিনে দিয়েছে সেই রাতে সে তার শরীর ছিন্নভিন্ন করেছে । পর্বত আরোহীগণ তুঙ্গশীর্ষে পৌঁছলে চিহ্ন স্বরূপ যেমন ঝাণ্ডা গেঁড়ে দেয় এও ঠিক তেমনি । বলপূর্বক অধিকার কায়েম করা, পৌরুষের নিদর্শন । কখনো জানার চেষ্টা করেনি তার স্ত্রী আগ্রহী কিনা ! তার দেহ মন আজ যৌনমিলন চাইছে কিনা । নিদেন পক্ষে স্ত্রী সুস্থ আছে কিনা । অন্য দিনের তুলনায় তখন বেশি হিংস্র হয়ে ওঠে অনুপম । অঞ্জনা সব থেকে বেশি বিড়ম্বনায় পড়ে বাপের বাড়ীতে এলে । মানা করা সত্ত্বেও সে পিছু ধাওয়া করে । যদিও এখানে স্থান সংকুলানে কোনো বাধা নেই । কোনো কিছুই অপ্রতুল নয় ; তবু বাবা মা তো সবই বুঝতে পারেন । ছি ছি কি লজ্জা ! কুঁড়ি ঋভু দিম্মার কোল ঘেঁষে অঘোরে ঘুমোয় । তাদের দাদু থাকে নিজের মতো এক কোণে । দক্ষিণ খোলা এ্যাটাচ্ বাথরুম যুক্ত ঘরটা বিশেষ পছন্দ অনুপমের । নৈশাহার শেষ হলেই সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়ে আর ধূমপান করতে করতে ঘন ঘন কাশতে থাকে । এটা হলো সিগনাল "বলি আর কতক্ষন লাগবে ?" লজ্জার মাথা খেয়ে অঞ্জনা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় । 

মাষ্টার ডিগ্রী কমপ্লিট করে অঞ্জনা তখন ছোটখাটো যে কোনো ধরণের একটা চাকরীর জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । প্রতিবারের মতো এবারও বিপদতারণ ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলো সেই সুবুদ্ধ, তার বেস্ট বাডি । প্রকৃত অর্থে ফ্রেণ্ড ফিলোসফার গাইড । সময় ভালো অথবা খারাপ সর্বদা যাকে পাশে পাওয়া যায় । সুবুদ্ধ ততোদিনে জুনিয়ার ক্যাটাগরিতে ন্যাশানাল ফেলোশীপ পেয়ে কলকাতার ফটোগ্রাফির জগতে একটা প্রতিষ্ঠিত নাম । সে হাতে ধরে নিয়ে গেল শম্ভুর অফিসে যে কিনা একদা তার ফটোগ্রাফি ক্লাসের ব্যাচমেট এবং চার্টাড এ্যাকাউটেন্সি নিয়ে পড়াশোনা করে বর্তমানে একজন সফল ট্যাক্স কনসালটেন্ট । অঞ্জনা কিছুদিন কাজ করলো সেখানে, তারপর শম্ভুর পরামর্শে শিফ্ট করলো অনুপমের অফিসে । কমার্স না জানলে শম্ভুর অফিসে কাজের সুবিধা হয় না উল্টো দিকে অনুপমের অফিসে সে সবের বালাই নেই । মূলত ফ্রন্ট অফিস জব । একই বিল্ডিংয়ে একই ফ্লোরে অফিস । যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে থাকে অঞ্জনা । তবে অনুপম যে সেলারি দিতো সেটা কহতব্য নয় । তবু মুখ বুঝে সব মেনে নিয়েছিল সে । লক্ষ্য সরকারী চাকরী । তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো যথারীতি । কিন্তু ললাটের লিখন বলে একটা কথা আছে না ? মাস চারেক যেতে না যেতেই অনুপম বেধড়ক প্রপোজ করে বসলো । মেয়েটার বুক কেঁপে উঠলো । অপরিনত বয়েসে হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে যে ভুল সে করেছে তার পুনরাবৃত্তি আর করবে না কিছুতেই । এ দিকে অনুপম নাছোড়বান্দা । অনন্যপায় হয়ে ফেলে আসা জীবনের অতীত ইতিহাস উজাড় করে দিলো অঞ্জনা । প্রত্যাশা এই যে যদি অনুপম সত্যিই একজন আধুনিক মানুষ হয় তবে সব কিছু জেনে বুঝে নিঃসংকোচে নির্দ্বিধায় সহজ সুন্দর ভাবে তাকে গ্রহণ করবে । অনুপম একবাক্যে রাজী ! অঞ্জনা ততোধিক বিস্মিত ! তবে অনুপমের ইচ্ছে আগে কিছুদিন রোম্যান্স পর্ব চলুক, বেশ একটা আশনাই আশনাই ভাব তারপর না হয় বাড়ীতে বলা যাবে খন । কিন্তু অঞ্জনা বেঁকে বসলো, অসম্ভব । ঐ পথে সে আর পা বাড়াবে না । সে শর্ত দিলো যা বলার তার মাকে বলে গোটা বিষয়টা অফিসিয়াল করতে হবে ও রিলেশনে শীলমোহর দিতে হবে, তবেই সে এগোনোর কথা ভাববে নচেৎ নয় । অনুপম কুইনাইন গিললো, বছর ঘোরার আগেই ছাদনাতলায় চার চক্ষুর মিলন ও সাতপাক ঘোরা সম্পূর্ন হলো তাদের ।

বিয়ের দিন যতো এগিয়ে আসতে থাকে অনুপমের অকপট স্বীকারোক্তি অঞ্জনার হৃদয়ে যুগপদ ভালোলাগা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে । মূলত শরীরী আকর্ষণের জন্যই নাকি অঞ্জনাকে তার এতো ভালোলাগে । সুতীব্র কামনা বাসনা তাকে ধাবিত করে তার প্রতি । প্রথম প্রথম শুনতে মন্দ লাগে না । নিজের রূপযৌবন, শরীরী সৌন্দর্য্যের প্রশংসা শুনতে কোন মেয়ের না ভালো লাগে ? কিন্তু বিয়ের পর ছবিটা পরিষ্কার হতে থাকে ধীরে ধীরে । ফুলশয্যার রাতে অনুপম যখন কামড় বসায় তার দুই বুকে সে তখন যন্ত্রণা অস্বীকার করে প্রেমজ শিহরণ সন্ধান করে । মধুচন্দ্রিমায় একই জিনিষের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে অনুপম বলে এতো "রসালো ডাঁসা মাগী" তার কপালে ছিলো সে কল্পনা করতে পারেনি । তখনো অঞ্জনা উপেক্ষার প্রশ্রয় দেয় । যুক্তি তৈরী করে এসব ক্ষেত্রে স্ল্যাং যৌন মিলনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে । এটা সাময়িক ব্যাপার, ভিতরের মানুষটা নিশ্চই মন্দ নয় ? প্রথম প্রথম তার স্তন নিয়ে অনুপমের আগলপাগল হওয়া, উন্মাদের মতো আদর করার ভঙ্গি যথেষ্ঠ উপভোগ্য ছিলো অঞ্জনার কাছে । তার বক্ষদ্বয় "পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য্যের প্রতীক" আখ্যা দিয়ে ফ্যান্টাসি রচনা করতো সে আর অঞ্জনা মোহিত হয়ে ডুবে যেতো সেই কল্পসাগরে । কিন্তু অচিরেই তার ভুল ভাঙ্গে । প্রথম সন্তানের জন্মের আগেই সে উপলদ্ধি করে প্রকৃতপক্ষে অনুপম একটি সেক্স ম্যানিয়াক । আদ্যন্ত নারীমাংস লোভী, বিকৃতকাম, নিম্নরুচির পুরুষ । সাংঘাতিক পরশ্রীকাতর, হিংসুটে ও সন্দেহবাতিক । যে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সে অনুপমের প্রস্তাবে সম্মতি ও গলায় পুষ্পমাল্য দিয়েছিলো সেটা বাইরে থেকে এক প্রকার সত্যি বলে মনে হয় বটে তবে আদতে সেটা ভয়ঙ্কর চোরাবালির ফাঁদ । অঞ্জনার পায়ের তলায় মাটি টলে ওঠে, মাথা ঘুরতে থাকে । প্রেমিক পুরুষ তো দূরস্থান এই প্রাণীটিকে লিগ্যাল হাসব্যান্ড বলতেও জিভে আটকায় । কিন্তু ফেরার আর কোনো পথ নেই, নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মেরেছে । ততোদিনে সে অন্তঃসত্ত্বা ।  

প্রজনন অঙ্গ সংক্রান্ত কিছু সমস্যার কারণে বিয়ের বেশ কয়েক বছর পর মাতৃত্বের স্বাদ পায় অঞ্জনা । সেই সময়টা যথেষ্ঠ কঠিন গেছে তার । এ হেন ব্যক্তি নেই যে কৌতুহলী প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে কসুর করেছে । সেই সঙ্গে ন্যায্য পাওনা হিসাবে শ্বশুর বাড়ীর গঞ্জনা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় । স্বামীর মানসিক সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ তো দূরস্থান উল্টে 'বাঁজা মাগী' তকমা সেঁটে বসেছিলো কপালে । সেই সঙ্গে রেগুলার 'ম্যারিটাল রেপ' চলেছে । তবে সব বাধা অতিক্রম করে মা হওয়ার পর জীবনের নতুন অর্থ ও সার্থকতা খুঁজে পেয়েছে মেয়েটা । সুখী গৃহবধূ রূপে সমাজে নিজের পরিচয় তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে । বাড়ীতে বসেই বুটিক চালায় । নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বরের সঙ্গে তার কথা হয় না । অনুপম রুটিন মাফিক তার শরীর ধামসায় । প্রেমহীন মৈথুন, না আছে সুখ আর না আছে পরিপূর্ণতা । এখন শুধু সন্তানের মুখ চেয়ে বাকি জীবনটা অতিবাহিত করা ছাড়া গত্যান্তর নেই । আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি । সম্পূর্ন উলঙ্গ করে খাটে চিৎ করে ফেলে লোকটা ওপরে চড়ে বসেছে । সজোরে চেপে ধরেছে তার ভারী বক্ষযুগল । উদ্দাম দলাইমালাই করছে, পিষে ফেলতে চায়, যেনো নিংড়ে জল বের করতে চায় । অঞ্জনার দুই হাত মাথার পিছনে, আত্ম সমর্পনের ভঙ্গি । তার নিরাসক্ত ভাবলেশহীন মুখ  অনুপমকে রাগিয়ে তোলে । দৃঢ় ও উদ্ধত সিষ্ণু যেনো কিঞ্চিৎ নরম হয়ে নেতিয়ে পড়ে । ঠিক এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলো মেয়েটা । খুব মৃদু স্বরে অঞ্জনা বললো 
- আচ্ছা তোমার একঘেঁয়ে লাগে না ? ক্লান্তি আসে না ? দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর...
অনুপমের চোয়াল শক্ত হলো । স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অল্প সময় । তারপর অঞ্জনার স্তনবৃন্ত দাঁত দিয়ে কামড়ে টেনে ধরে উচ্চারণ করে নয় সে বরং মনে মনে বললো "তোর মতোন ডিভোর্সী এঁটো মাগীর কাছে আমার আর চাওয়ার কি থাকতে পারে শুনি ?" 
অঞ্জনা জিজ্ঞাসা করলো 
- কিছু বললে ? 
অনুপম চমকে উঠলো ! শুনতে পেলো না কি ? কিন্তু তা কি করে সম্ভব ? অপ্রস্তুত ভাব কাটিয়ে উঠে কোনো মতে 'না' বলে পুনরায় স্তনে মনোনিবেশ করলো । 
বালিশের নীচে থেকে মোবাইল বের করে অঞ্জনা বললো
- একটা জিনিষ দেখো ...
- এখন আবার কি ? 
অঞ্জনা তার চোখের সামনে মোবাইল স্ক্রীনে একটা ছবি মেলে ধরেছে । অনুপম দেখছে ম্যালনিউট্রিশনে আক্রান্ত এক মহিলা ; অতি শীর্ণকায়, হাড় পাঁজরা সার । ততধিক শুষ্ক তার দুই ঝুলন্ত স্তনের বোঁটা মুখে পুরে চুষছে দুই শিশু । তিনজনেরই মুখে অনাবিল সুখের হাসি । হাসছে, ওরা খিলখিল করে হাসছে । অনুপম সম্পূর্ন হতবাক হয়ে গেছে ! বললো 
- এসবের মানে কি ? 
- ওরা কি নিয়ে এতো খুশী আছে বলতে পারো ? 
- কথ্যেকে পেলে ? 
- রেকি স্টিল । এবার ডকুমেন্টারি শ্যুট হবে । 
- মানে ? 
- বিহার ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে এই ছবিগুলো তুলেছে সুবুদ্ধ । একটা এনজিওর অ্যাসাইনমেন্ট বেজড প্রজেক্ট । 
অনুপম এবার দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ঝাঁঝালো গলায় বললো 
- রাতে স্বামীর সঙ্গে বিছানায় শুয়ে পর পুরুষের কথা চিন্তা করিস ? তুই তো দেখছি পাক্কা খানকি ! 
নির্লিপ্ত কণ্ঠে অঞ্জনা বললো
- সুবুদ্ধ কাজ করে, মানুষের জন্য কাজ করে...
অনুপম সাংঘাতিক উত্তেজিত হয়ে বললো 
- আর আমি ! আমি কি সারাদিন বসে বসে বাল ছিঁড়ি ? 
- বলাই ষাঠ ! তুমি তো খুব বড় কাজের লোক । এই যেমন এখন কাজ করছো । থামলে কেনো ? চালিয়ে যাও ...
দ্বিগুণ জোরে অনুপম তার ন্যুব্জ পুরুষাঙ্গ অঞ্জনার যোনিপথে প্রবেশ করাতে সচেষ্ট হয় । অঞ্জনা হাসি চাপতে না পেরে ফিক করে হেসে ফেলে । মনে মনে বলে "শুয়োরের বাচ্চা একটা" । অনুপম জিজ্ঞাসা করে
- কিছু বললে ? 
-  কৈ না তো ! 
- মনে হলো যেনো । 
- মনের ভুল । 
- ঐ শয়তানটা এখনো তোমার ব্রেন নিয়ে খেলছে ! 
- আর তুমি খেলছো আমার শরীর নিয়ে । 
অনুপম পুনরায় নিষ্পেষণ শুরু করলো । হাসতে হাসতে ক্রমশঃ আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে অঞ্জনা । বুটিক হাউসটাকে আরও সিরিয়াসলি নিতে হবে, অনেক বড় করতে হবে । স্বনির্ভর তাকে হয়ে উঠতেই হবে । যেমন ভাবে মা তাদের দুই ভাই বোনকে বুকে আগলে রেখেছিলো সেও তেমনি নিজের সন্তান সন্ততিকে রাখবে । 
... আর তার বড় বুকের সুখ্যাতি তো ভুবনবিদিত তাই না ? দু' চোখের পাতা ঘুমে ভারী হয়ে আসে । 

পর্ব : ২ 

অর্ধসত্য 

রহস্য ! 
শব্দটা লিখিত , পঠিত বা উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে গণ্ডায় গণ্ডায় দেশী বিদেশী গোয়েন্দা চরিত্র ভিড় জমায় । তারা সবাই সাহিত্যের কাল্পনিক চরিত্র ; এদের মধ্যে কেউ কেউ বইয়ের পাতা থেকে জলজ্যান্ত রক্ত মাংসের রূপ ধারণ করে মঞ্চে অবতীর্ণ হন আবার কেউ বা রূপোলী পর্দা জুড়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটান ! আমজনতা সে সব পড়তে পড়তে দেখতে দেখতে বলা ভালো গিলতে গিলতে এক সময় নিজের অজান্তে কখন যেন তাদের সত্যি বলে ধরে নেয় ! তাদের বাস্তব অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করে না । একেই বলে সার্থক শিল্পসৃষ্টি , বিদেহী আত্মার সাকার রূপ লাভ ! 

রহস্য বললেই খুন জখম রাহাজানি আরো হাজারো অনৈতিক , অসামাজিক ও বেআইনি কার্যকলাপের কথা সর্বাগ্রে মনে আসে । কিন্তু ব্যাপারটা কি সত্যিই তাই ? জীবন দেবতা মনুষ্য জীবন সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষকেই তা উপহার দিয়েছেন । শুধু তাই নয় রহস্য রোমাঞ্চ সবই দিয়েছেন পূর্ন মাত্রায় । যার যতটুকু দরকার ঠিক ততটাই ; স্রষ্ঠার পরিমিতি বোধ অকল্পনীয় ! ঢিমে আঁচে জ্বাল দিচ্ছেন তরল রস , জীবন আয়ুধ । সুনিপুণ দক্ষতায় নির্ভুল অনুপাতে মিশিয়ে দিচ্ছেন সব কয়টি উপাদান । থ্রিল অফ্ লাইফ লুকিয়ে আছে সেখানেই । খুঁজে নেওয়ার দায়িত্ব যার যার নিজের । তবে এই অনুসন্ধান ব্যাপারটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঝুঁকি পূর্ন । অনেকটা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইনভেস্টমেন্টের মতো , সাবজেক্ট টু মার্কেট রিস্ক । লাগে তুক , না লাগে তাক ! ফাটকা খেলায় যেমন চোখের পলকে আশাতীত লাভ আবার পর মুহূর্তেই নেংটাফকির । রবি ঠাকুরের সেই ডিটেকটিভ গল্পের মতো , নায়কের কি পরিণতি হয়েছিলো তা আর কারোর অজানা নয় । সেও এমনি আঁতিপাতি করে সর্বত্র রহস্য খুঁজে বেড়াতো । সাধারণ মানুষের এই মামুলি জীবন তার কাছে বড়ই পানসে জোলো আলুনি বলে ঠাওর হতো । তারপর একদিন কি জানা গেলো ? ওরে বাপরে বাপ ! বাঘের ঘরে ঘোঘের বাসা । 

অঞ্জনার বিয়ে হয়েছে নয় নয় করে বিশ বছর হলো । তাও যখনই বাপের বাড়ী আসে সময় সুযোগ পেলেই সুবুদ্ধ কে একবার ডাকে । সুবুদ্ধ প্রতিবারেই যে সাড়া দিতে পারে এমন নয় । তখন আবার মেয়ে অভিমানে ঠোঁট ফোলায় । সেই কবে কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পা রেখে দু'জনার সাক্ষাৎ হয়েছিলো । প্রায় তিন দশক হতে চললো । সম্পর্ক ক্রমশ ক্ষীণতর হলেও সম্পূর্ন ছিন্ন হয় নি । অঞ্জনা খাটের ওপর হাত পা ছড়িয়ে বসে মনের সাধ মিটিয়ে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি-ননদ-দেওর সকলের নিন্দে করে আর সুবুদ্ধ ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হুঁ হাঁ করে ঠেকা দিয়ে যায় । অথচ প্রেম করে বিয়ে করেছে , কথাটা ভেবে বেশ অবাক লাগে বৈকি ! শেষটা কত তম ছিলো সেটা ওই ভালো বলতে পারবে । কলেজে তিন বছরে অন্ততঃ হাফ ডজন তো বটেই । তারপর বিয়ের আগে পর্যন্ত সংখ্যায় বেড়ে কতো হয়েছে সে খবর সুবুদ্ধর জানার কথা নয় । কিছু কিছু অঞ্জনা নিজেই বলেছে অবশ্য । এমন কি সম্পর্কের গভীরতা বা ঘনিষ্ঠতা কতো দূর গড়িয়েছে তাও । অর্থাৎ সোজা কথায় ফিজিক্যাল রিলেশনের অনুপুঙ্খ বর্ণনা না হলেও আভাসে ইঙ্গিতে যতটুকু বলা যায় আর কি । একবার তো বিস্ময় দমন করতে না পেরে সুবুদ্ধ জিজ্ঞাসা করে বসলো 
- আচ্ছা তুই যে আমাকে এসব বলিস তোর লজ্জা করে না ? 
- না , এক ফোঁটাও না ! 
- কিন্তু কেনো করে না ? 
- কেনো করবে বল ? 
- কারণ করা উচিৎ তাই ! 
- দুনিয়ায় একমাত্র তুই আছিস যার কাছে আমি নির্লজ্জ বেহায়া হতে পারি নির্দ্ধিধায় । বুঝিস না ? 
- বেশ সে না হয় বুঝলাম কিন্তু কেনো বলিস ? কি লাভ হয় বলে ?
- জানি না , তবে খুব ভালো লাগে তাই বলি । 
- মানে ? 
- একটা ছেলের কাছে অন্য একটা ছেলের ব্যাপারে বলার মধ্যে আলাদা মজা আছে , দারুন সুখ ! ওসব তুই বুঝবি না । 
- হুম্ ... 

বছর পাঁচেক আগের কথা ...  
দুই সন্তানের জননী চর্বি ভারাক্রান্তা সুখী গৃহিণী সেবারেও এসেছে পিত্রালয়ে এবং যথারীতি ডাক পড়েছে 'বেষ্ট বাডির' । আশ্চর্য্যের বিষয় হলো সেবার পিএনপিসির জন্য শ্বশুরকুল নয় বরং বেছে নিলো নিজের ভাই ও নব বিবাহিতা ভ্রাতৃবধূকে । তার আগে অবশ্য একপ্রস্থ বাক্যবাণ বর্ষণ করার পালা । কারণ কি ? কেনো সুবুদ্ধ বাবাইয়ের বিয়ে এ্যাটেন্ড করে নি তাই ? যতোই বলে বোঝাবার চেষ্টা করা হোক না কেনো যে সে সময় তার শ্যুটিং স্কেডিউল ছিলো , সে রামোজী ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলো । প্রফেশনাল কমিটমেন্ট , জীবিকার প্রশ্ন কিন্তু কে কার কথা শোনে ! ভবি ভোলবার নয় । অগত্যা সুবুদ্ধ হাল ছেড়ে দিয়ে চায়ের কাপে মনোনিবেশ করলো । কিছুক্ষণ গুম মেরে থাকার পর অঞ্জনা টপিক চেঞ্জ করলো । তাকে ছেড়ে দেবাঞ্জলীকে নিয়ে পড়লো । সপ্রতিভ ঝকঝকে মেয়েটি নিজে থেকেই আলাপ পরিচয় করে গেলো একটু আগে । যে চায়ে সে চুমুক দিচ্ছে সেটাও তারই বানানো । কৈ তার তো কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়লো না ! দেবতনু অর্থাৎ বাবাই ও দেবাঞ্জলি উভয়েই আই টি প্রফেশনাল । কলিগ থেকে লাইফ পার্টনার ; মেট্রো জেন এক্সদের চেনা ছক । 
- তুই ঘোড়ার ডিম বুঝিস্ আর বুঝবিটাই বা কি করে শুনি ? যে কে সেই ব্যাচেলরই তো রয়ে গেলি । 

মুখ বুঁজে খোঁচাটা সহ্য করে নেয় সুবুদ্ধ । সে জানে প্রত্যুত্তর দিয়ে কোনো লাভ নেই । অঞ্জনা বিষোদগার করেই চলেছে । ওর অভিযোগ বিস্তর । বাবাই নাকি সম্পূর্ন বদলে গেছে ! বৌয়ের চাকর হয়ে গেছে । এখন নাকি সকলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ! ওদের জ্বালায় তার বাপের বাড়ী আসা ডকে ওঠার জোগাড় । বাবাই স্পষ্ট মানা করেছে , বলেছে "দিদি তুমি এলে আমাদের খুব অসুবিধা হয় , বোঝো না কেনো ? দয়া করে তুমি আর এসো না" । এসব কি সত্যি ? সুবুদ্ধ হিসাব মেলাতে পারে না ! সেই বাবাই , যাকে অল মোস্ট ন্যাংটাপুটুস দেখেছে ! দিদি অন্ত প্রাণ ভাই , ছেলেবেলায় খুব নেওটা ছিলো তার । 
মনে পড়ে অগুন্তি প্রেম করার পর চূড়ান্ত ক্লান্ত হয়ে অঞ্জনা তখন বিয়ের জন্য ডেসপারেট হয়ে উঠেছিলো । একদিন প্রবল সোহাগ জড়ানো আবেগ মথিত কণ্ঠে বললো 
- জানিস বাবাই কি বলেছে ? 
- কি ? 
- বললো দিদিভাই তুমি সুবুদার কথা ভেবে দেখতে পারো ; আর যাই হোক সুবুদা তোমায় কখনো কষ্ট দেবে না । বুঝে দেখ ... 
অর্থাৎ 'একবার ডাকিলেই যাইবো' । সুবুদ্ধ মনে মনে ভেবে হেঁসে কূলকিনারা পায় না । ওরে সে গুড়ে বালি । আমি ঘুঘুও দেখেছি ফাঁদও চিনি । কিন্তু সেই বাবাইয়ের এতোটা পরিবর্তন ! এবং সেটাও সদর্থক নয় নঞর্থক দিকে । 'স্মৃতি সতত সুখের' এই প্রবাদ সর্বদা কার্যকর হয় না , কখনো কখনো তা পীড়াদায়ক হয় । কাঁটার মতো বেঁধে । 


কাট টু : ২০২১
নির্বাচন , পুনরায় লক ডাউন এবং কোভিদ বিধিকে সম্পূর্ন বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুজোর বেপরোয়া হৈ হুল্লোড় কেটে যাওয়ার পর পরিস্থিতি যখন কিছুটা শান্ত তখন একদিন সুবুদ্ধ সল্টলেক সিটি সেন্টারের কাছে শম্ভুর অফিসে এসে হাজির হলো । সেই পঁচানব্বই সালে দু'জনে একসাথে স্টিল ফটোগ্রাফির ক্লাস জয়েন করেছিলো । কালক্রমে শম্ভু হলো ট্যাক্স কনসালটেন্ট আর সে ফিল্ম মেকার । বিনামূল্যে প্যান কার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্তি সেরে বেরিয়ে টালিগঞ্জগামী বাসের সন্ধান করছিলো সে ; এমন সময় সেন মহাশয়ের সঙ্গে মুখোমুখি । অনুপম , অঞ্জনার বর । অবশ্য বর্বর বললেও অত্যুক্তি হবে না । নির্লজ্জ সেক্স ম্যানিয়াক , ওর বৌয়ের মুখেই শোনা । ব্যাপারটাকে অত্যাচারের পর্যায়ে নিয়ে যায় । সুবুদ্ধ তাকে চরম ঘেন্না করে । কারণ শুধু মাত্র ওটাই নয় , লোকটা কাঠ গোঁয়ার , বিভৎস টাকার গরম , ভয়ঙ্কর অসামাজিক । দেখা হতেই দন্ত বিকশিত করে সে কি হাসির ছিরি ! আহা চক্ষু জুড়িয়ে যায় , প্রাণ ভরে যায় , হাড় জ্বলে যায় , শালা । তারা পরস্পরকে চূড়ান্ত অপছন্দ করে উভয়েই বোঝে নিঃসন্দেহে ? 

কথা নেই বার্তা নেই হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে চললো নিকটবর্তী কফিশপে । বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই । গায়ের জোরে এই পাষন্ডর সঙ্গে সে এঁটে উঠতে পারবে না নিশ্চিৎ । ওদের বিয়ের পর প্রথম প্রথম এই প্রাণীটি খুব হেঁক্কাড় দেখাতো , সাংঘাতিক গেরেম্ভারি চাল । ভাবখানা এমন "কি হে বাছাধন আশেপাশে অনেকের সঙ্গে তুমিও তো ছিলে লাইনে ? কিন্তু ঘুরঘুর কি লাভ হলো ? আল্টিমেটলি অঞ্জনাকে হাশিল করলাম তো আমি ! তোমরা সবাই বুড়ো আঙুল চুষবে এবার । কিম্মজা কিম্মজা" ! এটা অনুমান করতে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় কি ? অনুপমের ব্রেন রিডিং করে সুবুদ্ধ মনে মনে হেঁসে কুটোপাটি যাবার জোগাড় । বিশ বছরে ক্রমশঃ মুড়কির পাক মরে এসেছে । আগের সেই ঝাঁঝ আর নেই তবে ওপর চালাকি বজায় আছে ঠিকই । 

চেয়ারে বসে কফির অর্ডার দিয়েই প্যাঁচাল পাড়তে শুরু করলো । অঞ্জনার সম্পর্কে অনর্গল কুৎসা । সুবুদ্ধ এতক্ষণ অসীম ধৈর্য্য ধারণ করে ছিলো , মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে দেখে টেবিল চাপড়ে বলে ওঠে 
- প্লীজ স্টপ ইট । তোমার লজ্জা করে না ? আমার কাছে বৌয়ের নামে নিন্দেমন্দ করছো ! 
- নিজের বৌয়ের নিন্দে করবো না তো কি পরের বৌয়ের করবো ? হা হা হা ... 
- ছিঃ , এই জন্য আমাকে টেনে আনলে ? যে মহিলা তোমার দু' দুটো বাচ্চা পেটে ধরেছে ও জন্ম দিয়েছে তার সম্পর্কে ...! বিশ বছরের বিবাহিত জীবন তোমাদের , তারপরও এই সব ? 
- আরে থামো থামো , আমি হাতেনাতে পাকড়াও করেছি । সে খবর রাখো ? 
- মানে ? কিসের কথা বলছো ? 
- রেগুলার ক'জন ছেলের সঙ্গে চ্যাট করে জানো ? 
- না জানি না আর জানতেও চাই না । 
- হুঁ তা জানবে কেনো ? তাতে যে তোমার মুখ পুড়বে । 
- কি যা তা বকছো ? 
- যা তা ? বিয়ের আগে থেকে কতো জনের সঙ্গে ওর লটঘট ছিলো সব তুমি জানো খুব ভালো মতন । অস্বীকার করতে পারবে ?
- তুমি কি আমাকে ধীরে ধীরে ব্লাইন্ড লেনের দিকে ঠেলে নিয়ে যেতে চাইছো ? তাতে কিন্তু তোমার বিশেষ সুবিধা হবে না অনুপম । 
- আমি তো তোমায় কিছু বলছি না !
- আলবৎ বলছো , ডাইরেক্টলি নয় ইনডাইরেক্টলি । 
- কি রকম ?
- কচি খোকা , আমার কাছে অন্যদের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করছো । আমার অনুপস্থিতিতে ঠিক এই একই কাজটা করবে অন্যদের কাছে আমার নামে । কি তাই তো ? 
- আরে না না , কি যে বলো ? তোমার ব্যাপারে আমি ক্লিয়ার । 
- ওহ্ রিয়েলি ! কি ভাবে শুনি ? 
- তুমি জেন্টলম্যান , আমি জানি । সেটা প্রথম দিন তোমাকে দেখেই বুঝেছি । 
- আমার পরম সৌভাগ্য , বাঁধিয়ে রাখার মতো সার্টিফিকেট বটে ।  
- বাদ দাও ।
কফির পেয়ালায় দু'য়েক সিপ্ দিয়ে সে পুনরায় গজরাতে লাগলো 
- রান্নার মাসী , বাসন মাজার ঠিকে ঝি এছাড়াও ঘরদোর টয়লেট সাফ করার আলাদা লোক । কটা মিডিল ক্লাস ফ্যামিলিতে আছে শুনি ? বৌ আমার কি করে ? না শুধু শাড়ী কিনছেন আর সারাদিন পায়ের ওপর পা দিয়ে বসে তাইতে আল্পনা আঁকছেন , ফুঃ ।
- ওর বুটিক চালানোটা কে তুমি সিরিয়াসলি নিতে পারছো না কেনো ?  
- রাখো তোমার বুটিক । এই শর্মা না থাকলে অনেক আগেই ফুটিক হয়ে যেতো । যতো ঢং আর ন্যাকামো । ইনভেস্টমেন্ট আমার আর প্রফিট সমস্তটা ঐ মাগীর ট্যাঁকে । 
- মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ । 
- খুব তো বান্ধবীর হয়ে এ্যাডভোকেসি করছো , বাবাইয়ের খবর কিছু জানো ? 
- যতটুকু জানার ততটুকুই জানি । ওরা স্বামী স্ত্রী বোষ্টনে সেটেল্ড । দুটো পিঠোপিঠি বাচ্ছা হয়েছে । আমার ফ্রেন্ড লিষ্টে আছে । 
- ওসব এফ বি মারিয়ে কিস্যু হবে না । বাবাই যে সুইসাইড এটেম্পট করেছিলো সে খবর রাখো ? দেবাঞ্জলী ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলো সে খবর রাখো ? কি মারাত্মক ডমিনেটিং নেচার তোমার বান্ধবী আর তার মা আই মিন তোমার সো-কল্ড কাকীমা মিসেস অনিমা বর্ধনের তুমি তার কিছুই জানো না । নিজের স্বামীকে চিরকাল ভেড়ুয়া বানিয়ে রেখেছে ঐ মহিলা , এবার মেয়েকে দিয়ে আমার ওপর সেই একই জিনিষ এ্যাপ্লাই করতে চায় । এমনকি নিজের ছেলে-বৌয়েরও রেহাই নেই ।

সুবুদ্ধু স্তম্ভিত , বাকরুদ্ধ । কোনো মতে অস্ফুটে বলে
- তারপর ?
সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে অনুপম নাগাড়ে বলে চলে 
- তারপর আর কি , তখন এই নন-ইন্টেলেকচুয়াল ব্যবসাদার জামাই ভরসা । হসপিটাল থেকে শুরু করে থানা পুলিশের হুজ্জুতি সামাল দিলো কে ? মিডিয়ার মুখে ধামা চাপা দিলো কে ? কোথায় গেলো বর্ধন পরিবারের সফিষ্টিকেশিন ? আরে কোথায় গেলো মিসেস অনিমা বর্ধনের হাইলি ডিগনিফায়েড ইমেজ ? কোথায় গেলো সোশ্যাল স্ট্যাটাস ? কোথায় গেলো প্রেস্টিজ ? সব কি পোঁদের মধ্যে ঢুকে গেলো না কি ? বাবাই সুস্থ হয়ে ওঠার পর ওকে আর ওর বৌকে আলাদা করে ডেকে বলেছিলাম "তোরা দুটোতে বাঁচতে যদি চাস তবে এখান থেকে কেটে পড় , চিরকালের মতো" । 

এঁড়ে বাছুর যেমন হঠাৎ অকারণে খুঁটি উপড়ে দৌড়ে পালায় ঠিক তেমন করে এক ছুটে বাইরে এসে হাজির হলো সুবুদ্ধ । তার বুকটা ধড়ফড় করছে । ভীষণ সাফোকেটিং লাগছে । খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে খুব জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে সে । তারপর যতো দ্রুত সম্ভব এ্যাপ ক্যাব ডেকে উঠে পড়ে । গাড়ী এগোচ্ছে , বাতাস বইছে সাঁই সাঁই করে , এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার মাথার চুল । ভাবনা গুলো ক্রমশঃ ক্রিস্টাল আকার ধারন করছে । ছেঁড়া ছেঁড়া টুকরো গুলো জোড়া লেগে তৈরী হচ্ছে একটা আস্ত ছবি । অনুপম একটু আগে যা বললো তা যদি সত্যি হয় তবে এতোকাল সে মূর্খের স্বর্গে বাস করেছে । পাঁচ বছর আগে সে যা জেনেছে বলা ভালো তাকে যা জানানো হয়েছে সেটা কয়েনের এক পিঠ । উল্টো পিঠটা সম্পূর্ন ভিন্ন । সেখানে একেবারে অন্য গল্প ঘাপটি মেরে বসে আছে ! 

হলিউডি ব্লকবাস্টার মুভির ক্লাইম্যাক্সে যেমনটা দেখা যায় ! ইন্ডিয়ানা জোন্স , জুমানজি , হ্যারি পটার , পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান , ন্যাশনাল ট্রেজার্স , সাং চি এ্যাণ্ড দ্য লেজেন্ড অফ্ দ্য টেন রিংস্ ...তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে পারে । তবে সর্বত্রই স্ক্রিপ্টের একটা কমন ফ্যাক্টর রয়েছে ; হিরোর কাছে তালা আছে চাবি নেই অথবা উল্টোটা চাবি আছে তালা নেই । কোথাও বা পুরনো কারেন্সী নোটের আধখানা রয়েছে পকেটে বাকি আধখানার সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে গোটা দুনিয়া । গুপ্তধনের অসমাপ্ত নক্সা অথবা দুর্লঙ্ঘ্য রহস্যপুরীর অসম্পূর্ণ মানচিত্র । কিছু মিসিং নিউমেরিক অথবা অ্যালফাবেট ; সে গুলো একবার হস্তগত হলে বা জোড়া লাগাতে পারলেই কেল্লা ফতে । চিচিং ফাঁক , চোখের সামনে খুলে যায় গুহার রুদ্ধ দ্বার । জমাট বাঁধা অন্ধকারময় পাপ দেহের ওপর সত্যের আলোকরশ্মি এসে পড়ে আর ঠিকরে ওঠে । তখনই ধাঁধিয়ে যায় চোখ , ঝলসে যায় মুখ , মস্তিষ্কে ধূসর কোষের স্থিতিস্থাপকতা বিনষ্ট হয় । 

"কতখানি মানসিক নির্যাতনের শিকার হলে তবে বাবাইয়ের মতো হাসিখুশি তরতাজা ইয়াংম্যান এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় ? মা মেয়ে কতখানি নির্মম নির্দয় নিষ্ঠুর হতে পারে তা কল্পনার অতীত !" টেবিল ছেড়ে ওঠার সময় চিৎকার করে বলতে থাকা অনুপমের শেষ কথা গুলো এখনো কানে বাজছে ।  

এই সমাজজীবন কলুষ ক্লেদ ও পঙ্কিলতায় আকীর্ণ ! বুকের ভেতর থকথকে গরল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রত্যেকে । ঠিক যেনো এক একটা সুপ্ত আগ্নেয়গিরি , হঠাৎ নিজের অজান্তে জেগে উঠে লাভা উদগীরণ করে দেয় । ছারখার করে দেয় আশেপাশের সব কিছু । সুবুদ্ধ মনে মনে কোনো এক অদৃষ্ট অজ্ঞেয় ঊর্ধতনের প্রতি প্রার্থনা জানায় "দয়া করে আমাকে অসূয়াপ্রবণ করে তুলো না । আমায় ক্ষমা করো , হে প্রভু নষ্ট হয়ে যাই ..."   

সমাপ্ত  


SUDIP  PATHAK

Swapno Neer Apartment , 
 Purba Sinthee Road , Madhugarh ,
DumDum , Kolkata -700030. 





মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩