google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re নিবন্ধ ।। বাঙালির মহালয়া ও দুর্গোৎসব ।। পাভেল আমান - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩

নিবন্ধ ।। বাঙালির মহালয়া ও দুর্গোৎসব ।। পাভেল আমান

 

নিম্নচাপের ঘনঘটা পেরিয়ে শরতের আগমনে হিমেল পরশ। প্রকৃতি সেজে উঠেছে নব রূপে উদ্ভাসিত সৌন্দর্যে।চারদিকে মাঠে মাঠে কাশফুল হাওয়ার তালে মাথা দোলাচ্ছে, আগমনীর সুরে সুরে। মা আসছেন বছরকার প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে। তাই তো মাঠে ঘাসের ওপর শিউলি ফুলের আল্পনা এঁকেছে প্রকৃতি। দুর্গাপুজো কে ঘিরে কত আনন্দ, উদ্দীপনা- আমাদের সংস্কৃতি আর বাঙালিয়ানার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ দুর্গাপুজো। আর এই দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িত বাঙালির আরেক চিরায়ত ঐতিহ্য-মহালয়া।

 

বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপূজা। সমগ্র বিশ্ব জুড়েই বাঙালিরা আনন্দে মেতে ওঠে। এমন বৃহৎ আনন্দোৎসব বাঙালির সংস্কৃতিতে কমই আছে। এই আনন্দেই যুক্ত হয়ে মহালয়া বিষয়টি। মহালয়া থেকেই ধরে নেওয়া হয় উৎসবের আরম্ভ। পুরাণ অনুযায়ী মহিষাসুর নামক অসুর কে বধ করার দায়িত্ব দেবতারা ওই দিনই দিয়েছিল। দীর্ঘ নয়দিন যুদ্ধ শেষে অসুর বধের এই কাহিনির সাথে যুক্ত হয়েছে বাঙালির দুর্গা- আরাধনা। আসলে অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠাই এখন প্রতীক হয়ে বাঙালি মননে সঞ্চারিত হয়েছে।

 

আশ্বিনের শারদপ্রাতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অনির্বচনীয় কণ্ঠস্বর রেডিওতে বেজে উঠলেই বাঙালির জীবনে সূচিত হয় মহালয়া ।এক অনন্য ধ্রুপদী মাত্রা তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। বলা বাহুল্য, বাঙালির সংস্কৃতিতে এ যেন একটা মিথ হয়ে উঠেছে। পিতৃ পক্ষের শেষে পূর্ব পুরুষদের জল দিয়ে তুষ্ট করে বাঙালি মেতে ওঠে মাতৃ আরাধনায়। এই সন্ধিক্ষণকে চির উজ্জ্বল করে রেখেছেন তিনি, বাঙালির আইকন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। "বাজলো তোমার আলোর বেনু" মা আসছেন, রেডিওয়ে সকাল বেলায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জলদগম্ভীর গলায় শোনা যায় মাতৃ বন্দনা। সেই গলা, আপামর বাঙালির কাছে যা চিরকালীন। মহালয়ার সকালে গোটা পশ্চিমবঙ্গ জেগে ওঠে তাঁর গলায় দেবী দুর্গার বন্দনা শুনে। শুধু বাংলা নয়, পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিরা আজও এক সুতোয় বাঁধা এই মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বাঙালির কাছে এই মহালয়া অন্যতর তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়।

 

পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনালগ্নটি মহালয়া হিসেবে চিহ্নিত। এই সন্ধিক্ষণ মানব জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মহালয়া অর্থাৎ মহান যে আলয়, এই কথাটির ব্যাখ্যা নানা ভাবে করেছেন প্রাজ্ঞজনেরা। যেহেতু মহালয়া থেকেই দেবী দূর্গার আবাহন মুহূর্তটি চিহ্নিত হয়ে যায়, তাই অনেকের মতে দেবী স্বয়ং হলেন এই আলয় বা আশ্রয়। ভিন্নমতে, এই মহান আলয় হল পিতৃলোক। যেহেতু এটি পিতৃপক্ষের অবসান চিহ্নিত করে। ঠিক এর পরদিন থেকে দেবীপক্ষের সূচনা।বাঙালির কাছে অবশ্য পিতৃপক্ষের এই শেষ দিনটি আলাদা তাৎপর্য বহন করে। দেবীপক্ষের সূচনা চিহ্নিত হওয়া মানেই বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো এসে পড়া।

 

বাঙালির কাছে মহালয়া যত না ধর্মীয় আচার, তার চেয়ে অনেক বেশি অতীতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের রাস্তা। অতীতকে নিয়ে, পরম্পরা মেনে উৎসবে উদযাপনে শামিল হওয়ার দিন।মহালয়ার ভিতর যে মহামিলনের ইঙ্গিত তা বৃহত্তর সম্প্রীতি আর মেলবন্ধনের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তর্পণের মধ্য দিয়েও সর্বভূতের সঙ্গে মানবের একাত্মতার তত্ত্বটিই প্রকাশিত। এই তাৎপর্যয়ই মহালয়াকে গরিমা দান করেছে।প্রচলিত রীতি মেনে এ দিনেই হয় দেবী দুর্গার চক্ষুদান।

 

আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে যে দুর্গাপুজো শুধুই একটি ধর্মীয় উৎসব নয়। বাঙালি জীবনের অন্যতম সাংস্কৃতিক এবং পারিবারিক মিলনোৎসব ও। বাংলার অর্থনীতি আবর্তিত হয় দুর্গোৎসব কে ঘিরে। কয়েক কোটি মানুষের রুটিরুজি নির্ভর করে পুজোর ওপর। মৃৎশিল্পী থেকে ঢাকি, সবারই সম্বৎসরের রোজগার হয় পুজো থেকে।কোনো উৎসব সার্থক হয় যখন তাতে ধর্ম জাত পাত নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করেন। দুর্গাপুজোও তেমনি এক উৎসব। পরিশেষে বাঙালির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শারদোৎসব হয়ে উঠুক সর্বজনীন। উৎসবের দিনগুলোতে বাঙালিরা জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ভাতৃত্বের বন্ধনে জাগ্রত হোক। 

=============


পাভেল আমান- হরিহরপাড়া -মুর্শিদাবাদ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন