Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

নিবন্ধ ।। খিদে ।। দীপঙ্কর বেরা

খিদে

দীপঙ্কর বেরা 

                                        
পৃথিবীতে এমন কোন মা আছে যে তার শিশুর কাঁদা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর তাকে খেতে দেয়, না হলে দেয় না? এমন কোন মা আছে কি? 
আমার তো মনে হয় কেউ নেই।
তাহলে শিশু না কাঁদলে মা স্তন্যপান করায় না। কথাটা মা শিশুকে নিয়েই কি?
একটু সাধারণ মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত প্রতিটি বাবা মা আপ্রাণ চেষ্টা করে তার শিশুটি যেন আর কিছু হোক বা না হোক খাওয়ার কষ্টে যেন না থাকে। এই ভাবনা ভেবে বেশিরভাগ বাবা মা শিশুকে খিদে কি জিনিস বুঝতেই দেয় না।
আজকালকার শিশুরা অনেকেই খিদে কি জিনিস ভাল করে জানেই না। বরং মুখে গুঁজে একটু বেশি আর একটু বেশি খাওয়াবেই। 
ডাক্তারবাবুর কাছে কোন শিশুকে দেখাতে নিয়ে গেলে শিশুর বাড়ির লোকের প্রথম আবদার - ডাক্তারবাবু, দেখুন না, সারাদিন কিছুটি খেতে চায় না। কিংবা ডাক্তারবাবু, এর খিদের জন্য একটা ভিটামিন বা হজমের ওষুধ লিখে দিন। ডাক্তারবাবু, দেখুন না কেমন রোগা হয়ে গেছে। 
অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় সারাদিন শিশুটির খাওয়া নিয়ে বাড়ির সবাইয়ের ব্যস্ততা। ফলে শিশুটির খিদে পাওয়া পর্যন্ত শিশুকে অপেক্ষা করতেই হয় না। তার আগেই তার মুখের কাছে খাওয়ার চলে আসে। সারাদিন বাড়ির লোক টুকটাক খাওয়াতেই থাকে। ফলে সারাদিনে মোট তিন বা চার বার আসল (ব্রেকফাস্ট/লাঞ্চ/ডিনার) খাওয়ার সময় সে তো একটু তো কম খাবেই।   
তার মানে এই নয় যে খিদে পাক বা খিদের জন্য কাঁদুক তারপরে খেতে দেব। তা তো নয়। তবু খিদে বা কষ্ট করে পাওয়ার আনন্দের জন্য সময় দিতে হয়।   
যাদের একেবারেই সংস্থান নেই তারাও যে করেই হোক প্রথমে শিশুটির খাওয়ার বন্দোবস্ত করে। এবং সেটাই নিয়ম। আগামী প্রজন্মের জন্য সেটাই আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য। 
তবু আমাদের কর্তব্য হল প্রজন্মের কাছে খিদে লাগা এবং তাকে কষ্ট সাধনের মাধ্যমে নিবারণের যে পরিতৃপ্তি তা বুঝতে দেওয়া উচিত। 
যে শিশু খিদের মর্ম, খিদের উপলব্ধি, খিদে নিবারণের যে আকুতি তা যদি না বুঝতে পারে তাহলে পরবর্তীতে সে যখন সমাজ জীবনে একা প্রবেশের ছাড়পত্র পাবে তখন সে বুঝতে চাইবে না এই কষ্ট, এই খিদে ও তার উপলব্ধি। ফলে সমাজ চিত্রে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ফোকটে পাওয়া নিয়ে মেতে থাকবে। 
খিদে সহ্যের অবস্থান তার জানা নেই। তাই সে 'পাবো না মানে?' এই ভাবনায় যা কিছু করে ফেলতে পারে তা কখনই সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়। 
আমরা প্রত্যেকে চাইব আমাদের প্রজন্মকে ভালোবাসতে। সেই সাথে চাইব ভালোবাসার মর্যাদা বোঝাতে, উপলব্ধ করাতে। এই মর্যাদা বা উপলব্ধি প্রজন্ম তখনই বুঝতে পারবে যখন সে খিদের (সে পেটের হোক কিংবা মনের) সঙ্গে কিভাবে কষ্ট জড়িয়ে থাকে তা বুঝতে পারবে। এবং কষ্টের পরিতৃপ্তি উপলব্ধি করতে পারবে। 
'জানেন, আমার ছেলে আটার রুটি একদম খেতে পারে না', 'আমার মেয়ে ভাজাভুজি ছাড়া একদম খেতে পারে না', 'আমার মেয়ে আবার খুব বিরিয়ানির ভক্ত', 'আমার ছেলে একটু চিকেন পেলে আর কিছুটি চায় না' - এই যে বক্তব্যগুলো ভেবে দেখুন এইসব ছেলে মেয়ে কি পেট থেকে এসব শিখে আসে? নাকি জন্মের পরেই খাদ্যের সব স্বাদ বুঝে যায়? বাড়িতে যে খাবার কোনদিন হয় নি, হোটেলে রেস্ট্রুরেণ্টে কোনদিন যে খাবার খায় নি সেই খাবারের জন্য কি সে আবদার করে? 
তা নয়। বাড়ির পরিবেশ, বাবা মায়ের খাওয়া উঠা বসা সংস্কারে এসব গড়ে ওঠে। বিশেষ করে মায়েদের খাওয়ানোর পদ্ধতিগত ভাবনায় ছেলে মেয়েদের এই ন্যাচার গড়ে ওঠে। তাকে ভোলানোর জন্য, খাওয়ানোর জন্য যে ভাজাভুজি যে বিরিয়ানি ইত্যাদি বারবার খাইয়েছি সেটাই সে খেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।  
আরে বাবা, খিদে পেলে খাদ্যের গুণ বিচারের দরকার পড়ে না। যার পেটে খিদে নেই, যে মনের খিদের খবর রাখে না সে বলে, 'না বাবা, আমি কুমড়ো পুঁইশাক খাই না', 'ইলিশমাছের কেমন একটা গন্ধ' 'তোমরা রোজ রোজ শাক খাও কেন গো', 'এমা, তুমি উচ্ছে খাও কি করে?'।  
আবার উল্টো দিকে আছে। খাওয়ার যোগাড়ের কষ্ট চিন্তায় যদি জীবন কেটে গেল তো ভাল কিছু ভাবব কখন? যে কাজ করছি তাতে মনঃসংযোগ করব কি করে? আমি যদি জানি আমার খাওয়ার রেডি আছে তাহলে কাজে মন বসবে। তাই খাওয়ারের সংস্থান ঠিক ভাবে করে দেওয়া উচিত।
না হলে খিদে ভরাতেই জীবন শেষ তো প্রগতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? আবার বহু মানুষ সারাদিন খিদে নিয়ে ঘুরছে ফিরছে। খিদের কি কষ্ট বহু শিশু জানে। বহু মা শিশুর খিদে নিবারণের মত কিছু পায় নি। কেঁদে কেঁদে সারা তবু মা খাওয়ার দেয় নি। দিতে পারে নি। তারা তো সবাই জানে খিদের মর্ম খিদের উপলব্ধি খিদের পরে খাওয়ার সারবত্তা। তাহলে তারা কি কিছু করতে পেরেছে? মনুষ্যত্বের অবস্থানে উঠতে পেরেছে? না পারে নি।
কেন না তারা খিদের পেছনে শুধু দৌড়ে গেছে জীবনবভর। তারা বেঁচে থাকাকে খাওয়া ছাড়া আর কিছু বোঝে না। সেখানে খিদে মানেই বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা।
পেটের খিদের মর্মই মনের খিদের তৃষ্ণাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এক একজনের মনের খিদে সার্বজীনন সৃষ্টির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সৃষ্টির মূলসূত্র খিদে নিবারণ। পেটের খিদে মনের খিদে এবং এই খিদের নিবারণে পেটের মাপকাঠি ছাড়িয়ে ঈর্ষার ভিন্নরূপ ভিন্ন বিন্দুতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সার্বজনীন মনের খিদে নিবারণের দিক উন্মোচিত হয়। সৃষ্টির দিক খুলে যায়।

 
DIPANKAR BERA 
AMAR BARI 
71 BAGUIPARA ROAD 
P. O. - NARENDRAPUR
KOLKATA - 700103

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩