ছেলেবেলা
সম্পা মাজি
আজ সকাল থেকে খুব বৃষ্টি হচ্ছে , নিজেকে খুব একা লাগছে কিছুই ভালো লাগছে না।অনেক দিন বাড়ি যাওয়া হয়নি,কেন জানি না এখন আগের মতো বাড়ি যেতেও খুব একটা ভালো লাগে না। ছেলেবেলার বন্ধুদের পাওয়া যায় না সবাই যেন কেমন হারিয়ে গেছে কাজের চাপে সময়ের ভিড়ে। পাড়ার বন্ধু অয়ন আর প্রলয় বছরে একবার আসে কিন্তু সময়ের পাকে তাদের সাথেও দেখা হয় না,আর একজন সে যে কোথায় কাছে জানি না।আজ এই মেঘলা দিনে তাকে খুব খুব মনে পড়ছে, জানি না সে এখন কি করছে আদেও বেঁচে আছে কিনা ভগবানই জানেন। যাকে ছাড়া ছেলে বেলার একটা দিনও কাটতো না, সে আমার জীবন থেকে এই ভাবে হারিয়ে যাবে স্বপ্নে ও ভাবিনি।
আমাদের ছেলে বেলার প্রিয় বন্ধু ইন্দ্র , যদিও আসল নাম শুভজিৎ । কিন্তু ওকে কেউ ওর আসল নামে ডাকতো না, ইন্দ্র নামটা বাংলা স্যারের দেওয়া ,ও চরিত্র টা ছিল "শরৎচন্দ্রের" সেই ইন্দ্রনাথের মতো ।অদম্য সাহসের ভরা গ্রাম বাংলার এক দূরন্ত ছেলে।বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো ,গাছ থেকে মৌচাক ভাঙ্গা,পাখির বাসা থেকে পাখির ছানা চুরি করা , সাপ ধরা নয়তো নৌকো নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ,এই সবই করতো খুব ভালো বাসতো , প্রকৃতি ছিল ওর প্রান।এর জন্য ওর বাবার হাতে খুব মারও খেয়েছে বহুবার, তবুও কারো কথা শুনতো না ।সব সময় নিজের মনে মতো চলতে ভালো বাসতো।
একটা দিনের ঘটনা আমার খুব মনে পড়ে,তখন স্কুলে গরমের ছুটি চলছে। ওই সময় আমরা প্রায় দিন নদীতে স্নান করতে যেতাম । একদিন শুভ , আমি,অয়ন নদীতে স্নান করতে গিয়েছি হঠাৎ শুভ বলে ,কালকে নৌকো নিয়ে ঘুরে যাবি। এখন নদীতে জল খুব কম , খুব মজা হবে , তাছাড়া বাকিরা নেই তারা মামা বাড়ি গিয়েছে,সবাই থাকলে যেতেও পারতাম না। আসলে আমার বাবা দুদিন বাড়িতে থাকবে না, নৌকো নিয়ে গেলে কিছু বলবে না।
আমাদের ওর ইচ্ছে ছিল নৌকা নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার, তাছাড়া এখন স্কুল ছুটি সারাদিন বাড়িতে থাকি, এখন পড়ার চাও কম আছে তাই ওর কথায় রাজি হয়ে তাই। ঠিক হয় সকাল ১০ টার সময় নদীর ঘাটে আসতে হবে , ওখানে শুভ ডিঙি নিয়ে অপেক্ষা করবে । আসলে শুভ একটা খামখেয়ালি ছেলে যখন যেটা ভাবতো সেটাই করতে চাইত আর করতেও পারত । আমরা জানতাম যদি ওর সাথে আমরা নাও যাই, ও যখন যাবে ঠিক করেছে ও একাই চলে যাবে, ও একা যাক আমরা চাই না এই জন্য আমরাও রাজি হয়ে গেলাম ।
পরের দিন টিউশনি থেকে ফিরে তাড়াতাড়ি কিছু খেয়ে, কিছু খাবার পকেটে নিয়ে নিলাম তৈরি চলাচল ঘাটের উদ্দেশ্য।আগের দিন বাড়িতে বলে ছিলাম,তাই মা যাওয়ার সময় বলল, সাবধানে যাবি ,বেশি দেরি করবি না যেন ।
নদীর ঘাটে এসে দেখি,শুভ আগেই এসে গেছে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। অয়ন আর প্রলয় এই মাত্র এসেছে। প্রলয়কে দেখে শুভ একটু রেগে গেল।
শুভ অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে– অয়ন ,প্রলয় কি করে জানলো আমরা নৌকা নিয়ে যাবো।
অয়ন-- প্রলয় আমাদের বাড়ি এসেছি, যখন শুনলো আমরা যাবো, ও বেড়িয়ে চলে এসেছে,আমি কিন্তু ওকে যাওয়ার জন্য একবার ও বলিনি।
শুভ-- প্রলয় কে কিন্তু নিয়ে যেতে পারি একটা শর্তে, ওকে আমাদের সঙ্গে নৌকা চালাতে হবে আর ভয় লাগছে বলে আমাদের বিরক্ত করা চলবে না।
অয়ন -- হ্যাঁ আমি নৌকো বাইতে পারি, আমি এখন আর আগের মতো ভয় করি না।
শুভ-- ঠিক আছে তাহলে চল।
চারজনে নৌকো নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম। খুব মজা লাগছে, এই ভাবে নৌকা নিয়ে নিজেরা কখনো যায়নি, যতবার গিয়েছে প্রতি বারেই বড়রা সঙ্গে ছিল। কিন্তু আজকে আমরাই একাই যাবো , শুভ থাকলে আমাদের কোনো ভয় নেই ওর নিজের যেমন সাহস আমাদের কেও সাহস যোগান দেয় । আমি আর প্রলয় বাড়িতে বলে এসেছি শুধু অয়ন বলে আসেনি , শুধু বলেছে শুভদের বাড়িতে থাকবে ফিরতে দেরী হবে।
সে যাই হোক, বদলা বদলি করে নৌকা দাঁড় বাইছি , আর চারি দিক দেখছি, খুব আনন্দ হচ্ছে।
প্রলয়-- এই নদীতে কুমীর আছে।
অয়ন- নদীতে আবার কুমীর থাকবে না তা কখনো হয়।
প্রলয়-- ওরে বাবা! যদি চলে আসে।
শুভ - 'তোকে খেয়ে নেবে কড়মড়িয়ে 'বিরক্ত হয়ে, এই জন্যই তোকে আনতে চাই ছিলাম না।
প্রলয়- তোদের ভয় করছে না।
অয়ন- কেন ভয় করবে, খেতে আসলে তোকে দেখিয়ে দেব ,বলব এর মাংস খাও খুব সুস্বাদু আর খুব নরম হবে , তোকে খেলেই পেট ভরে যাবে, আমাদের কে আর খেতে হবে না।
প্রলয়- তুই আমাকে সব সময় ভয় দেখাস ,এই জন্য ভালো লাগে না।
অয়ন - তোকে কে আসতে বলেছিল।
আমি - কুমিরে কি খাবার কম পরেছে যে , তোর মতো চর্বি ওলা মানুষ খায়ে শরীর খারাপ করবে ।
এই রকম হাসি ঠাট্টা করতে করতে নৌকা নিয়ে এগোতে লাগলাম, নদীর স্রোত ছিল তাই খুব কষ্ট হলো না নৌকা এমনি চলতে লাগলাম। নদীর দুই পারে গাছ, অনেক গাছ উল্টে গেছে,আবার কয়েকটা গাছ নদীতে ঝুঁকে পরেছে, দেখে মনে হচ্ছে বর্ষার সময় জলের তোড়ে শিকড় সমেত উপড়ে পড়েছে ।কিছুটা যাওয়ার পর অয়ন কয়েকটা নারিকেল গাছ দেখতে পেল।
অয়ন -- শুভ দেখ কেমন ডাব হয়ে আছে গাছে, চল পারবি , আমার কাছে ছুরি আছে।
প্রলয়-- গাছের মালিক যদি জানতে পারে তাহলে বকবে।
শুভ -- তুই একটা ভিতুর ডিম, তোকে খেতে হবে না, আমরা খাবো ।
প্রলয়-- তোরা গেলে আমিও যাবো , তবে আমি গাছে উঠতে পারবো না।
অয়ন-- তুই গাছে উঠলে গাছ ভেঙ্গে যাবে , তোর চলার শব্দে মালিক চলে আসবে তার থেকে তুই বয়ে আনার কাজ করবি।
নৌকাকে একটা গাছের সাথে বেঁধে আমরা নারকেল গাছে কাছে যাই চারিদিক টা খুব ভালো করে দেখে নেই, গাছ গুলো খুব বড় নয়, তাই ঠিক হয় দুজন দুটো গাছে উঠবে তাড়াতাড়ি হবে, একটা গাছে শুভ আর একটা গাছে অয়ন ওঠে। আর আমি চারিদিক দেখতে থাকি ,কেউ আসছে কিনা।১২-১৪ টার মতো ডাব ও নাড়িকেল পারা হয় আর প্রলয় দৌড়ে তাড়াতাড়ি নৌকোতে রেখে আসে।
ডাব পেরে নিয়ে আমরা নৌকা নিয়ে আবার চালাতে লাগলাম, মনের আনন্দে গান গাইছে শুভ,আর নৌকা এগিয়ে নিয়ে চলেছে, কিন্তু আমার অসাবধানতা বসত নৌকা চড়া বালিতে আটকে যায়। কিছুতেই আর সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি না। অনেক চেষ্টা করেও নৌকা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।
অয়ন- আমি নেমে নৌকাটাকে ঠেলার চেষ্টা করছি।
শুভ - না নামিস না, তুইও ওখানে ওই চড়া বালিতে আটকে যাবি,আর উঠতে পারবি না।
প্রলয়- তাহলে এখন কি হবে।
শুভ - দুটো ডাবকে বড় করে ফুটো করতো। তারপর দেখছি কি করা যায়।
দুটো বড় ডাবের জল খেয়ে ডাব টার উপরের দিকটা বড় করে ফুটো করে, যাতে করে দাঁরের লম্বা দিকটা ডাবের ভেতর পুরে ওই চড়া বালিতে চাপ দিলেও ডাবের খোলাটা বালির ভেতরে সহজে বসে যাবে না।কিছু ক্ষন ওই ভাবে জোর করে ঠেলা ঠেলি করতেই নৌকোটা এগতে লাগল। সবাই আনন্দে হো হো করতে লাগলাম, আমরা বিপদ থেকে বেড়াতে পেরেছি, খুব ভালো লাগছে ,এই জন্যই শুভ কে এতো ভালো লাগে ,সব সমস্যার সমাধান ওর কাছে থাকে ।আসলে ভুলটা আমার ছিল, কিন্তু শুভ আমাকে কিছুই বলেনি,শুভ আমাকে সব সময় প্রোটেক্ট করতে চায়।
আমাদের পাস দিয়ে একটা নৌকো যাচ্ছিল , আমাদের কে দেখে থেমে যায় , নৌকোয় একটা লোক শুভকে ডাকে ।শুভ ওদের নৌকোয় চলে যায় ,কি সব কথা বলে আমাদের নৌকোয় ফিরে আসে। আমাদের খিদেও পাছে না, তাই বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ভুলেই গেয়েছিলাম। শুভ আর অয়ন নৌকা বাইছে আর আমি ও প্রলয় চারিদিক দেখছি , হঠাৎ শুভ বলে - চল বাড়ি ফিরে যাই।
অয়ন- এতে তাড়াতাড়ি,এইতো এলাম ।
শুভ - না আজকে আর যাবো না , অন্য আর এক দিন আসবো।
আমরা কেউ কথা বাড়ালাম না ,কারন শুভ যখন বলেছে তখন ফিরতেই হবে ও কারো কথা শুনবে না।তবে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ,শুভ এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাইছে কেন , নিশ্চয়ই অন্য কারণ আছে। যাইহোক আমরা খুব তাড়াতাড়ি নদীর ঘাটে ফিরে এলাম সবে দুপুর হয়েছে ।অয়ন আর প্রলয় একটু এগিয়ে যেতেই শুভ আমায় বলল, এই অভি , আজকে রাত্রিতে আমাদের বাড়িতে থাকবি ।
আমি বললাম,দেখি মাকে বলবো।
শুভ- দেখি বললে হবে না ,তোর মাকে আমাদের বাড়িতে থাকার কথা বললে কাকিমা বারন করবে না ,আর তুই যদি না বলতে পারিস ,তাহলে আমি তোর বাড়িতে গিয়ে বলব তোর মাকে ।
- না তোকে যেতে হবেনা , আমি মাকে রাজি করিয়ে, সন্ধ্যেবেলা চলে আসবো। আর কথা না বাড়িয়ে যে যার বাড়ি চলে যায়।
সন্ধ্যেবেলা শুভদের বাড়িতে গিয়ে দেখি শুভ বসে বসে কি যেন ভাবছে , কারন জিজ্ঞাসা করতে ,
শুভ- তেমন কিছু না, তুই আসবি শুনে মা তোর জন্য রান্না করছে , আমরা আজকে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়বো। আচ্ছা তুই ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠতে পারবি।
- কেন বলতো।
শুভ- তোকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।
- কোথায়।
শুভ- এখন বলবো না , নিয়ে গেলেই দেখতে পাবি।
- আরকে যাবে আমাদের সাথে ।
শুভ- তুই আর আমি। এই ব্যাপারে মাকে কিছু বলবি না কিন্তু।
- আচ্ছা, কাউকে কিছু বলবো না।
তখন ও ভোর হয়নি,রাত বাকি আছে, আমার চোখ ঘুমে আচ্ছন্ন এমন সময় শুভ আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে চুপিচুপি বাড়ির বাইরে নিয়ে আসে ।
শুভ ফিস ফিস করে বলে, জোরো কথা বলবি না মা উঠে পরবে ,আমরা এখন যেই জায়গাটায় যাবো।
- এখন তো গভীর রাত্রি , এখন কি করে যাবি ।
শুভ- এখন না গেলে কিছুই দেখতে পাবো না।
- কিন্তু এই অন্ধকারে চারিদিকে কিছু দেখা যাচ্ছেনা ,কি করে নৌকা নিয়ে যাবি ।
শুভ-আমরা নৌকো নিয়ে যাবো না।
- তাহলে কিসে যাবি।
শুভ - হেঁটে হেঁটে যাবো,নদী ঘাটের পাস দিয়ে যে বনটা আছে আমরা ওই বনের পথ দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাবো।
- এই অন্ধকারে এই বনের মধ্যে দিয়ে যাবি , রাস্তা জানিস।
শুভ - হ্যাঁ আমি রাস্তা জানি , বাবার সাথে একবার এসেছিলাম, মনে আছে পথটা।
ঘুম জরানো চোখে শুভ সাথে হাঁটতে লাগলাম বনের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছি সঙ্গে একটা টিম টিমে লাইট ,তাতে কোনো রকমে পথ দেখা যাচ্ছে । ঘন জঙ্গল কোথায় কি আছে দেখা যাচ্ছে না,শুনেছি এই বনে ভূত থাকে , আমার খুব ভয় লাগছে কিন্তু বলতে পারছি না ,ভয়ে মনে মনে ভগবানকে ডেকে যাচ্ছি । শুভর ভয় ডর নেই সে দিব্যি আগে আগে চলছে ,এই জন্যই ওকে সবাই নিশাচর বলে । আমার ভয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ার জোগাড় ,
বিরক্ত হয়ে, কোথায় চলেছিস বলতে।
শুভ- সকালে হাবু কাকুর সাথে দেখা হয়ে ছিল ,সেই বলেছে ভোর বেলায় মোহনায় যাবে মাছ আনতে আমাকে ও নিয়ে যাবে বলেছে ।
- আসার সময় কাকিমাকে বলে আসা হল না , চিন্তা করবে ।
শুভ- মাকে বললে আসতে দিত না। তুই এসব ভাবিস না , সকালে ঠিক বাড়ি পৌঁছে যাবো ।আর মা জিজ্ঞেস করলে বলবি সকালে হাঁটতে গিয়ে ছিলাম।
কোনো রকমে ঘাটে এলাম ,দেখি সেখানে একটা লোক নৌকো নিয়ে অপেক্ষা করছে , যার সাথে কালকে শুভর কথা বলেছিল।আমরা তাড়াতাড়ি ওদের নৌকায় গিয়ে উঠলাম । ইঞ্জিনের নৌকো তাই খুব তাড়াতাড়ি চলতে লাগলো , ভোর হওয়ার আগেই আমরা মোহনায় পৌঁছে গেলাম , তখন ও সূর্য ওঠেনি,চারিদিক শুধু জল জল আকাশ জুড়ে লাল সূর্য ,কি ভাবে না লাগছে আমার , আমাকে এতো আনন্দ দেখে ,শুভ বলে , কিরে কেমন লাগছে ।
- খুব ভালো , তোকে বোঝাতে পারবো না।
আসলে নৌকাতে মাছ তোলার জন্য ওদের লোক কমছিল তাই শুভ আসবে বলতেই রাজী হয়ে যায় আমরা সঙ্গে আসলে ওদের সাহায্য হবে ,আর শুভ এইসব কাজে খুব পটু , তাই ওরা না করে নি।এই প্রথম আমি মোহনা দেখলাম সত্যি খুব সুন্দর লাগছে । শুভ যে এই পরিকল্পনা করছে আমি বুঝতেও পারিনি ,ভেবেছি ওর বাবা বাড়িতে নেই তাই আমাকে রাত্রিতে থাকতে বলেছে ,এবার বুঝলাম কেন শুভ কালকে তাড়াতাড়ি নদী থেকে ফিরে এসেছিল ,যাতে করে আজকে আসতে পারে ,তাই ভাবছিলাম হঠাৎ কেন শুভ নৌকো ঘুরিয়ে বাড়ি চালে এল। যাই হোক আমার কিন্তু খুব আনন্দ হচ্ছে।শুভ আমাকে কাজে হাত লাগাতে দেয়নি ,ও একাই কাজ করেছে ,আর আমি মনের আনন্দে প্রকৃতি সৌন্দর্য দেখেছি।এটা ছিল আমার জীবনের সব থেকে আনন্দের দিন,বাবা মায়ের সাথে ঘুরতে আসলে এতোটা আনন্দ হতো না ,যতোটা আনন্দ বন্ধু সাথে লুকিয়ে আসায় হয়েছে ।
আজ এতো বছর পরও আমি ওই দিন টা কিছুতেই ভুলতে পারি না, চোখ বন্ধ করলেই আমি সেদিনের সেই সকালের পৌঁছে যাই। ওই দিনের পরেও কয়েক বার গিয়েছিলাম কিন্তু প্রথম দিনটা একে বারে অন্য রকম ছিল।শুভ ছড়া আমার ছোট বেলার একটা দিনও কাটতো না , প্রায় দিনই হয় ও আমাদের বাড়ি চলে আসতো নয় তো আমি ওদের বাড়িতে চলে যেতাম । কিন্তু আজ ৫ বছর হল ওর সাথে দেখা হয়নি । শ্রীকান্তের ইন্দ্র নাথের মতোই হারিয়ে গেছে। ও যে হঠাৎ করে এই ভাবে হারিয়ে যাবে আমি ভাবিনি।
মাধ্যমিক দেওয়ার পর আমি কলকাতায় মামার বাড়িতে চলে যাই , ওখানে থেকে পড়াশুনা করব বলে।আর শুভ পড়া ছেড়ে দিয়ে কাজে লেগে যায় ।নদী ছিল ওর প্রান তাই ট্রলারে কাজ নেয় । দিন গুলো ভালোই কেটে চলে যাচ্ছিল , আমি গ্রামে গেলেই ওর সাথে ঘুরতে যেতাম, যতদিন থাকতাম ততদিন শুভ কাজের ছুটি নিয়ে নিতো আমার সাথে ঘুরবে বলে । একবার পরীক্ষার জন্য অনেক দিন গ্রামের যাওয়া হয়নি, তখন হঠাৎ একদিন বাবা এসে খবর দেয় , শুভ সমুদ্রে হারিয়ে গেছে।শুভ যেই ট্রলারে থাকতো সেই ট্রলার মাঝ সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়েছে , সেই ঝড়ে ওদের ট্রলার নিখোঁজ হয়ে যায় , কাউকে উদ্ধার করা যায়নি,আর কারও দেহ পাওয়া যায়নি । শুভ যে কোথায় হারিয়ে গেল কেউ খুঁজে পেল না।ওর মা এখনো ওর ফেরার আসায় দিন গুনছে , আমি বাড়িতে গেলেই বলে শুভ কে খুঁজে আনার জন্য , ওর মায়ের কথার আমি কি উত্তর দেব খুঁজে পাই না । হয়তো আর কোনো দিন ও আসবে না ফিরে তবুও ফিরে আসবে ভেবে মনকে সান্তনা দেই । কিছু মানুষ অল্প দিনের মধ্যে মনের এমন জায়গা করে নেয় যে তাকে কোনো দিন ভোলা যায় না, শুধু তার কথা ভেবে মন ভালো করে তে হয়।তবে আমার বিশ্বাস শুভ বেঁচে আছে, শুভর মতো মানুষ মরতে পারে না, হয়তো সমুদ্রে ভেসে ভেসে অন্য কোনো দেশে পৌঁছে গেছে , সেখান থেকে , আমাদের কথা মন করেছে আর বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছে।
Sampa Maji
Vill- Soyla
P. O- Sonakhali
P. S - Daspur
Dist- Paschim medinipur
Pin-721146
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন