গল্প: অনিরুদ্ধ ঘোষাল - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Monday, April 15, 2019

গল্প: অনিরুদ্ধ ঘোষাল

জীবন কেনো এমন


                                
     সুখবর.....আপনার ছেলে হয়েছে একথা শুনে সমগ্র ঘরের লোকের মধ্যে দিয়ে একটা চিন্তার ঢেউ বয়ে গেলো।
  অমলা যে তার প্রথম সন্তান গঙ্গাসাগরে বিসর্জন দেবে বলেছে। ডাক্তার বাবু একথা শুনে অবাক, এখনও এরকম ঘটনা ঘটে থাকে?
 চিন্তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিসর্জন দেওয়া হলোনা। শিশুর বাবা ধীমান, কয়লা ডিপুতে কাজ করে দিন কাটালেও সন্তানকে
 লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার ইচ্ছা প্রবল। এবার পালা আসে শিশুর নাম ঠিক করার। অনেক গবেষণার পর ছেলটির নাম
 ঠিক করা হল, মানষ।                     
কীরে বুবুন স্কুল যাবিনা ?? হ্যাঁ মা যবো। মানষের ডাকনাম বুবুন। মানষ পড়াশোনায় মেধাবী না হলেও মোটামুটি বটে।
 বুবুন এখন উচ্চমাধ্যমিক দেবে, বুবুন বাড়ির একমাত্র শিক্ষিত ছেলে তাকে বাড়ির সবাই খুব আদরে রাখে। 
ধীমানও এখন বেশ ভালোই আছে ছেলের মুখ চেয়ে। ছেলে তার দুঃখ কষ্ট সব দূর করবে। ধীমানের শুধুমাত্র তার একটি কষ্ট
 তার বউ। ধীমানকে তার বউ অমলা যা সামনে পায় তা দিয়েই মারে, কিন্তু ধীমান তার বউয়ের মারের প্রতীবাদ গায়ে
 হাত তুলে দেয়নি বরং চুপচাপ মুখ বুজে সহ্য করে।                  
এই নাও দাদা মিষ্টি খাও, আমার ছেলে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছ,এবার কলেজে পড়বে। আমার সব কষ্ট আজ সার্থক।
 ধীমান সবাইকে মিষ্টি খায়িয়ে বাড়ি ফিরলো। বাড়ি ফিরতেই বুবুনের প্রশ্ন বাবা তুমি আজ কাজে যাওনি???
 নারে আজ তোর রেজাল্ট যে মিষ্টি খায়িয়ে এলাম সব্বাইকে। ওমনি কোনো কথা না শুনে বুবুন পাশে পড়ে থাকা চপ্পলটা দিয়ে
 বাবাকে বিরাট মারলো। আর বললো, মা এই লোকটা কাজে না গেলে একদম খেতে দিবিনা। সঙ্গে সঙ্গে পাশের থেকে কতকগুলো
 লোক ছুটে এলো, ধীমান তোর ছেলে তোকে এতো মারলো তোবুও তুই একটা কথা পর্যন্ত বললি না। 
ধীমান ও আমার শিক্ষিত ছেলেরে ও শিক্ষার আলোয় আমার অন্ধকার মিটিয়ে দিবে। ও তো ছোট  বোঝে না অবুঝ কী আর করবি।
                    বুবুনের ডাক্তার হওয়ার খুব শখ, কিন্তু এই সময়ে ডাক্তার হতে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ লাগে যে ওরা
 পাবে কোথায। একথা ধীমান জানার পর তার সব কিছু বিক্রি করে দিলো। তাতেও কম পড়ায় তার খেটে খাওয়া শরীরটা থেকে
 একটা কিডনিও বেচে দিলো। তারপর আবার ছেলের চার বছরের খরচা চালানোর জন্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খাটা-খাটনি তো
 আছেই।                     
বছর-চারেক পর, কীরে ধীমান তোর ছেলে কী করছে? ধীমান গর্বিত হয়ে বলে উঠল
 এখন ও ডাক্তার হয়ে গেছে। আজকেই ডিগ্রী পেয়েছে, বাড়ি ফিরছে আমি তো ওকেই আনতে এসেছি। 
এই....এইতো ট্রেন এসেগেছে। ওই দেখ দেখছিস চেনাই যাচ্ছেনা। চলরে বুবুন ঘর চল। তোমার সাহস কী করে হয় আমার
 নাম ধরে ডাকার। আমি একজন ডাক্তার সন্মান দিয়ে কথা বলুন। চলো বেয়াড়া জিনিস পত্র তোল। ধীমান এখনও এই ছেলেকে
 ভালোলাগে তোর?  যার জন্যে সব দিয়ে দিলি সে আজ তোকে এইদিন দেখালো। 
তবুও ধীমানের মুখে ছোট্ট হাসি কী করবি বল ছোট তো!!! 
=====================