Featured Post
২১ জন বীরাঙ্গনা স্বাধীনতা সংগ্রামী ।। পরিচয় গুপ্ত
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
২১ জন বীরাঙ্গনা স্বাধীনতা সংগ্রামী
পরিচয় গুপ্ত
Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.
Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi.
Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra.
[এই প্রতিবেদনটি মৌলিক কোন রচনা নয়। এটি একটি সংগৃহীত সংকলন। প্রতিবেদক এক্ষেত্রে একজন সংকলকমাত্র। ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তিতে কয়েকজন বীরাঙ্গনা স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনই এই সংকলনের উদ্দেশ্য। আগ্রহী পাঠক এঁদের সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে উৎসাহী হলেই প্রতিবেদকের উদ্দেশ্য সার্থক হবে।]
প্রফুল্লনলিনী ব্রহ্ম : (২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৪ - ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৭) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী। প্রফুল্লনলিনী যখন কুমিল্লা ফৈজননেসা গার্লস হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তখন সহপাঠী শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরীকে তিনিই প্রথম বিপ্লবের পথ দেখান। ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে গুলি করায় শান্তি-সুনীতি বন্দী হন এবং পুলিস ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৩১ তারিখে তাকেও গ্রেপ্তার করে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় তাকে ২২ মার্চ ১৯৩২ তারিখে ডেটিনিউ হিসেবে জেলে ও বন্দীনিবাসে রেখে দেয়। এই সময় আই.এ.ই. ও বি.এ. পাশ করেন। কুমিল্লা শহরে অন্তরীণ থাকাকালে রোগাক্রান্ত হয়ে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান এই মহিলা বিপ্লবী।
শান্তি ঘোষ (ইংরেজি: Shanti Ghosh) (২২ নভেম্বর, ১৯১৬-২৭ মার্চ, ১৯৮৯[১]) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী। শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরীকে তাদের সহপাঠী প্রফুল্লনলিনী ব্রহ্ম প্রথম বিপ্লবের পথ দেখান। কুমিল্লার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. স্টিভেন্সকে ১৯৩১ সালে ১৪ ডিসেম্বর বিপ্লবী সুনীতি চৌধুরী ও শান্তি ঘোষ হত্যা করেন। বিচারে শান্তি ও সুনীতি চৌধুরীর দ্বীপান্তর দণ্ড হয়। তারা হাসিমুখেই কারাবরণ করেন। তিনি হিজলি বন্দি নিবাসে কিছুদিন বন্দি ছিলেন।[২]
সুনীতি চৌধুরী ঘোষ (ইংরেজি: Suniti Choudhary Ghosh) (২২ মে, ১৯১৭-১২ জানুয়ারি, ১৯৮৮) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী বিপ্লবী।
শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী দুজনেই কুমিল্লার ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। তাদের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলায়।
শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরীকে তাদের সহপাঠীনী প্রফুল্লনলিনী ব্রহ্ম প্রথম বিপ্লবের পথ দেখান। কুমিল্লার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. স্টিভেন্সকে ১৯৩১ সালে ১৪ ডিসেম্বর বিপ্লবী সুনীতি চৌধুরী ও শান্তি ঘোষ হত্যা করেন। নাবালিকা এই দাবীতে বিচারে শান্তি ও সুনীতি চৌধুরীর দ্বীপান্তর দণ্ড হয়। তারা হাসিমুখে কারাবরণ করেন। যদিও মেদিনীপুর জেলে তাদের তৃতীয় শ্রেনীর কয়েদি করে রাখা হয়েছিল। তার পিতার সরকারি পেনশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার পরিবারকে অবর্ণনীয় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তার দুই দাদার জেল হয়। ছোট ভাই অনাহারে ক্ষয়রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান।
তিনি হিজলি বন্দি নিবাসে বন্দি ছিলেন। সেখান থেকে গান্ধীজির চেষ্টায় মুক্তি পান শান্তি ঘোষের সাথেই ১৯৩৯ সালে। পড়াশোনা করে এম.বি পাশ করেন এবং ডাক্তার হিসেবে জনদরদী কাজে আত্মনিয়োগ করেন। নিঃস্বার্থ ভাবে দুস্থ ও দরিদ্র মানুষের সেবা ছিল তার ব্রত। ১৯৪৭ সালে শ্রমিক নেতা প্রদ্যোত কুমার ঘোষের সাথে তার বিবাহ হয়। সুনীতি চৌধুরী মারা যান ১২ জানুয়ারি, ১৯৮৮ সালে।
বীণা দাস (২৪ আগস্ট ১৯১১ - ২৬ ডিসেম্বর ১৯৮৬) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিকন্যা।
বীণা দাস ১৯১১ সালে নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তাদের আদি বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম। তার পিতা ছিলেন ব্রাহ্মসমাজী পণ্ডিত ও দেশপ্রেমিক বেণী মাধব দাস ও মাতার নাম সরলা দাস। তার দিদি ছিলেন বিপ্লবী কল্যাণী দাস। পিতার আদর্শে প্রভাবিত হয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী যতীশ ভৌমিকের সাথে তার বিবাহ হয়।বীণা দাসের পরিবার রাজনৈতিক পরিবার। অসহযোগ ও জাতীয় আন্দোলনের যোগ দেওয়ার কারণে তার দাদা কারাবরণ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি রাজনৈতিক মনস্ক হয়ে ওঠেন। সে সময় যুগান্তর দল এর কতিপয় সদস্যের সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশন বয়কট করার জন্য বেথুন কলেজের ছাত্রীদের নিয়ে উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। ১৯৩০ সালে ডালহৌসির অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য ছোট ছোট দলের নেতৃত্ব দেন এবং গ্রেপ্তার হন। বীণা দাস ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবের নেত্রী ছিলেন এবং ১৯৩২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর সমাবর্তনে বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনের উপর পিস্তল দিয়ে গুলি চালান। এইসময় জ্যাকসনকে রক্ষা ও বীণা দাসকে ধরে ফেলার কৃতিত্ব অর্জন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার হাসান সোহরাওয়ার্দী। এই হত্যা প্রচেষ্টা চালানোর কারণে ৯ বছর কারাবরণ করেন বীণা দাস। নোয়াখালির দাঙ্গার পরে সেখানে তিনি রিলিফের কাজ করতেন। স্বাধীনতার পরেও সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজে নিজেকে ব্যপ্ত রাখেন।
বীণা দাসের শেষ জীবন বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। স্বামীর মৃত্যুর পরে তিনি হরিদ্বার চলে যান। ১৯৮৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঋষিকেশে সহায় সম্বলহীন হয়ে পথপ্রান্তে মৃত্যুবরণ করেন।
কমলা দাশগুপ্ত (১১ই মার্চ ১৯০৭ – ১৯শে জুলাই ২০০০) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী ও সাহিত্যিক।
এম.এ শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় তিনি রাজনৈতিক মনস্ক হয়ে ওঠেন। সে সময় যুগান্তর দল এর কতিপয় সদস্যের সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। তিনি বিপ্লবী দীনেশ মজুমদারের কাছে লাঠিখেলা শিখতে আরম্ভ করেন। ১৯২৯ সালে যুগান্তর দলের নেতা রসিকলাল দাসের প্রেরণায় গান্ধীর অহিংসবাদ ছেড়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য যুগান্তর দলে যোগ দেন। সহপাঠী হিসাবে ছিল কল্যাণী দাস। তিনি বীণা দাসকে রিভলবার সরবরাহ করেন যা দিয়ে তিনি ফেব্রুয়ারি ১৯২২ সালে গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টা করেন। তিনি বোমা হামলার সাথে জড়িত থাকার কারণে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন কিন্তু প্রমাণের অভাবে প্রত্যেক সময় মুক্তি পান। ১৯৩২-৩৮ তিনি প্রেসিডেন্সি ও হিজলী বন্দী নিবাসে আটক থাকেন। হিজলি বন্দি নিবাসে বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন।
১৯৩০ সালে তিনি বাড়ি ছেড়ে দরিদ্র নারীদের জন্য একটি হোস্টেলের ম্যানেজার হিসেবে চাকরি নেন। সেখানে তিনি বিপ্লবীদের জন্য বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংরক্ষণ করতেন এবং বহন করে আনতেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়েও কারাবাস করেছেন তিন বছর (১৯৪২-৪৫)। দাংগা বিধ্বস্ত নোয়াখালী তে ত্রানের কাজ করেছেন এই বিপ্লবী।
কমলা দাশগুপ্ত ২০০০ সালের ১৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
সুহাসিনী গাঙ্গুলী (৩ ফেব্রুয়ারি ১৯০৯ - ২৩ মার্চ ১৯৬৫) ছিলেন একজন ভারতীয় মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
কলকাতায় অবস্থানকালে প্রাণচঞ্চল
তরুণী সুহাসিনী
বিপ্লবী দলের মহিলা নেত্রী কল্যাণী দাস ও কমলা দাশগুপ্তের সংস্পর্শে আসেন। তারাই তাকে যুগান্তর পার্টির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। কল্যাণী দাস এবং কমলা দাশগুপ্ত পরিচালিত ছাত্রী সংঘের সদস্য হন এবং রাজা শ্রীশচন্দ্র নন্দীর বাগানে সাঁতার শেখাতেন। সেখানে তিনি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী রসিক দাসের সাথে পরিচিত হন । ব্রিটিশ সরকার তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারায় তিনি ফরাসি শাসনের চন্দননগরে আশ্রয় নেন।
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার অভিযানের পর, বিপ্লবী সংঘের নেতাদের নির্দেশে, শশধর আচার্য এবং সুহাসিনী স্বামী-স্ত্রী সেজে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে অনন্ত সিং, লোকনাথ বল, আনন্দ গুপ্ত, জীবন ঘোষাল তথা মাখনলালকে তাদের চনন্দনগরে আশ্রয় দেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পুলিশ কোনরকমে জানতে পেরে বাড়ি ঘুরে ফেললে এক সংঘর্ষে জীবন ঘোষাল বন্দুকযুদ্ধে মারা যান এবং অন্যান্যদের সঙ্গে সুহাসিনী গ্রেফতার হন। কিন্তু পরে তারা সকলেই মুক্তি পান।
সুহাসিনী কল্যাণী দাসের ভগিনী
বীণা দাসের সঙ্গে
যুক্ত ছিলেন। বীণা দাস ১৯৩২ খ্রিস্দাব্দে
বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তারই সূত্র ধরে বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট ( BCLA) অ্যাক্টের অধীনে, সুহাসিনী ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ
থেকে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ
পর্যন্ত হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকবন্দী ছিলেন। মুক্তির পর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট দলের সমর্থক হন। তিনি ভারতের কমিউনিস্ট অংশের মহিলা শাখার সাথে যুক্ত ছিলেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের
কর্মী হেমন্ত তরফদারকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে তিনি ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পুনরায় জেলে আটক ছিলেন । ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের পশ্চিমবঙ্গ নিরাপত্তা আইনে কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হওয়ায় এবং
তার কমিউনিস্টদের সঙ্গে সংযোগ থাকার কারণে
১৯৪৮
এবং ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের বেশ কয়েকমাস তাকে কারারুদ্ধ থাকতে হয়েছিল।
সুহাসিনী গাঙ্গুলী সারা জীবন বিদ্যালয় ও সংগ্রামের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে এক সড়ক দুর্ঘটনার কারণে তাকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তিনি চিকিৎসা বিভ্রাটে টিটেনাসে আক্রান্ত হয়ে ২৩ মার্চ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (জন্ম: মে ৫, ১৯১১; মৃত্যু সেপ্টেম্বর ২৪, ১৯৩২)-এর ডাকনাম রাণে এবং ছদ্মনাম ছিল ফুলতারা। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী শহীদ ব্যক্তিত্ব। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং জীবন বিসর্জন করেন। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের সময় তিনি ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দল পরিচালনা করেন। এই ক্লাবটিতে একটি সাইনবোর্ড লাগানো ছিলো যাতে লেখা ছিলো "কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ"।প্রীতিলতার দলটি ক্লাবটি আক্রমণ করে এবং পরবর্তীতে পুলিশ তাদেরকে আটক করে। পুলিশের হাতে আটক এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
সরোজিনী নায়ডু (চট্টোপাধ্যায়) (১৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৯ - ২ মার্চ ১৯৪৯) ছিলেন স্বনামধন্য ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিশিষ্ট বাগ্মী ও ইন্দো-অ্যাংলিয়ান কবি। তিনি ভারতীয় কোকিল (দ্য নাইটেঙ্গেল অফ ইন্ডিয়া) নামে পরিচিত। সরোজিনী নায়ডু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম (ভারতীয়) মহিলা সভাপতি নির্বাচিত হন।
সরোজিনী নায়ডু ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সক্রিয় যোদ্ধা। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তিনি যোগ দেন ডান্ডি পদযাত্রায়। গান্ধী, আব্বাস তয়েব ও কস্তুরবা গান্ধী গ্রেফতার হলে তিনি ধারাসন সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাগ্মী এবং ইংরেজি ভাষার যশস্বী কবি। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীনতার পর সরোজিনী নায়ডু যুক্তপ্রদেশের (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ) রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। তিনিই ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল। ১৯৪৯ সালের ২ মার্চ কার্যকালেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তার।আভা মাইতি (আ. ২২ এপ্রিল ১৯২৩ — ৩ জুলাই ১৯৯৪) ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। এছাড়াও তিনি সাংবাদিক, বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সম্পাদক, একাধিক সংগঠনের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। রাজনৈতিক কৃতিত্ব এবং সামাজিক অবদানের জন্য তাঁকে "অগ্নীকন্যা" বলে অভিহিত করা হয়। তিনি বতর্মান পূর্ব মেদিনীপুর জেলার, খেজুরী থানার কলাগেছিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর শিক্ষক পিতা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী নিকুঞ্জ বিহারী মাইতি এবং মাতা অহল্যা দেবী দুজনেই ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সারাজীবন অবিবাহিতা ছিলেন।
সুচেতা কৃপালনী (মজুমদার) (২৫ জুন ১৯০৮ - ১ ডিসেম্বর ১৯৭৪)] ছিলেন একজন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তিনি তার সমসাময়িক অরুণা আসফ আলি এবং ঊষা মেহতা সাথে সামনের সারিতে আসেন এবং গ্রেফতার হন। পরবর্তীকালে ভারতভাগের সময় সংগঠিত দাঙ্গায় মহাত্মা গান্ধীর সহযোগী হন। ১৯৪৬ সালে দাঙ্গাপীড়িত নোয়াখালী যাত্রা করেন। তিনিই ভারতের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী (উত্তর প্রদেশ)।
লীলা নাগ (অক্টোবর ২, ১৯০০ -জুন ১১ ১৯৭০) (বিবাহের পরে নাম হয় লীলা রায়) একজন বাঙালি সাংবাদিক, জনহিতৈষী এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী ছিলেন। তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সহকারী ছিলেন।
লীলা রায় ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন নেত্রী ছিলেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ‘দীপালী ছাত্রী সংঘ’ নামে ছাত্রী সংগঠন গড়ে ভারতে প্রথম তার মাধ্যমে ছাত্রীদের মধ্যে রাজনীতি চর্চা শুরু করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মহিলাদের আবাস ‘ছাত্রীভবন’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনের সময় তার উপর নারী আন্দোলনের ইতিহাস রচনার দায়িত্ব অর্পিত হয়। ফরোয়ার্ড ব্লক গঠিত হলে তিনি এই সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে কারারুদ্ধ হন। কারামুক্তির পর সুভাষচন্দ্রের নির্দেশে ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ সাপ্তাহিকের সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে নেতাজীর অন্তর্ধানের পর তিনি ও তার স্বামী অনিল রায় উত্তর ভারতে ফরওয়ার্ড ব্লক সংগঠনের দায়িত্ব নেন।
আভা গান্ধী ১৬ এপ্রিল ১৯৩১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর আদি পৈতৃক নিবাস উজিরপুরের শোলকে। জেলর পিতা অমৃতলাল চট্টোপাধ্যায়ের কর্মস্থল রংপুরে তাঁর জন্ম। মাতার নাম শৈলবালা। গান্ধীজির একান্ত ভক্ত পিতার আগ্রহে বারো বছর বয়সে গান্ধীজির কাছে আসেন। গান্ধীজির শেষ আট বছরের নিত্যসঙ্গিনী ও সেবিকা, বিবাহ হয় গান্ধীজির পৌত্র কানু গান্ধীর সঙ্গে (১৯৪৪)। গান্ধীজির জীবিতাবস্থায় তাঁর সঙ্গেই সবসময় থাকতেন। দেখাশোনা করতেন। গান্ধীজির মৃত্যুর পর স্বামীর গঠনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় সর্বোদয়ের আদর্শে ‘রাষ্ট্রীয়শালা’ নামে গান্ধীজি রাজকোটে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন সেখানেই তাঁর শেষজীবন কাটে।আভা গান্ধীর মৃত্যু ৯ মে ১৯৯৫ সালে।
ইন্দুসুধা ঘোষ (১৯০৫ — ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী।
ইন্দুসুধা ১৯২৬ সালে যুগান্তর দল এর কর্মীদের প্রভাবে রাজনীতিতে এসেছেন। তাঁর পিসতুতো দাদা কিরণ রায় ইন্দুসুধাকে বিপ্লবী দল ‘যুগান্তর’-এর সাথে পরিচয় করান। নিষিদ্ধ পুস্তক রাখা, রিভলভার রাখা এবং সংগঠন করার দায়িত্ব ছিলো তার উপর। শান্তিনিকেতন তার পক্ষে নিরাপদ স্থান ছিল। ১৯৩২ সালে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ১৯৩৭ সালে মুক্তি পান। ১৯৪৮ সালে 'নারীসেবা সঙ্ঘ' এর সুপারিনটেন্ডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন।
কল্পনা দত্ত (জন্ম: ২৭ জুলাই, ১৯১৩ - মৃত্যু: ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি চট্টগ্রাম বিপ্লবের একজন অন্যতম বিপ্লবী নেত্রী। অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলা -এর শ্রীপুর গ্রামের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম হয়। তার বিপ্লবী মনভাবের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে 'অগ্নিকন্যা' বলেছেন।
বেথুন কলেজে পড়তে পড়তে তিনি নানা ধরনের বিপ্লবী কর্মকান্ডে জরিয়ে পরেন। শহীদ ক্ষুদিরাম এবং বিপ্লবী কানাই লাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বেথুন কলেজ-এ গড়ে ওঠা ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন।
১৯৩০ সালে কল্পনা দত্ত আবার চট্টগ্রামে ফিরে যান। এই সময় পুর্নেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তিনি মাস্টার দা সূর্য সেনের সাথে পরিচিত হন এবং মাস্টার দা প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখা-য় যোগদান করেন। তখন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নেতৃবৃন্দ গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল প্রমুখ বিচারাধীন বন্দী। সেই সময় মহিলাদের বিপ্লবী দলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু মাস্টার দা এই সমস্ত নিয়ম নীতি শিথিল করে কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-কে তার দলে গ্রহণ করেন।
কলকাতা থেকে ফেরার সময় তিনি গোপনে কিছু বিষ্ফোরক নিয়ে আসেন, এছাড়াও গোপনে গান কটনও তৈরী করেছিলেন। এই সময় বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের বিচার ও সাজা রুখতে তিনি বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি কোর্ট এবং জেলে ডিনামাইট দ্বারা বিষ্ফোরনের পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ পালাতে সক্ষম হন।
কিন্তু তার পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। ফলে তার বিপ্লবী কর্মকান্ডের উপর কিছু প্রতিবন্ধকতা আসে। যাই হোক এই সময় তিনি প্রায়ই মাস্টার দার সাথে তার গ্রামে ঘুরে গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখের খবর নিতেন। এরই সাথে সাথে তিনি ও তার সহযোদ্ধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রত্যহ গুলি চালনার প্রশিক্ষন নিতেন।
১৯৩১ সালে সূর্য সেন, কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে চট্টগ্রামের ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব দেন। নির্দিষ্ট দিনের এক সপ্তাহ আগে পুরূষের ছদ্মবেশে একটি সমীক্ষা করতে গিয়ে তিনি ধরা পরেন ও গ্রেফতার হন। জেলে বসে তিনি অপারেশন পাহারতলী এবং বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মহত্যার খবর শোনেন।
জামিনে মুক্তি পেয়ে মাস্টার দার নির্দেশে তিনি কিছু দিন আত্মগোপন করে থাকেন। ১৯৩৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাদের গোপন ডেরা ঘিরে ফেলে। কল্পনা এবং মনিন্দ্র দত্ত পালাতে সক্ষম হলেও মাস্টার দা বন্দী হন। কিছুদিন পর কল্পনা এবং তার কিছু সহযোদ্ধা পুলিশের হাতে ধরা পরেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলায় মাস্টার দা ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করা হয়। কল্পনা দত্ত যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।
পরবর্তী জীবন১৯৩৯ সালে মুক্তি লাভের পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে সাম্মানিকসহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তারপর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৪৩ সালে C.P.I নেতা পূরণচাঁদ যোশীর সাথে তার বিবাহ হয়। এর পর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে যান এবং দলের মহিলা ও কৃষক সংগঠনকে চাঙ্গা করেন। ১৯৪৬ সালে C.P.I প্রার্থী হয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেন নি। স্বাধীনতার পর তিনি ভারতে চলে আসেন। ১৯৫০ সালে ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে চাকরি নেন। পরে দিল্লী থাকতেন। সেখানে নারী আন্দোলনে মুখ্যভূমিকা নেন। ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার মৈত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অবদান ছিল। ‘অল ইণ্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ রাশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ‘চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান’ তার প্রণীত গ্রন্থ। ১৯৯৫ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি নয়া দিল্লী তে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
অরুণা আসফ আলী (১৯০৯-১৯৯৬) ছিলেন মুক্তি সংগ্রামের পুরোধা। বিশেষ করে বিয়াল্লিশের আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। অরুণা আসফ আলী ৯ আগস্ট বোম্বাই (মুম্বাই) গোয়ালিয়া টেংক ময়দানে ইউনিয়ন জেক নামিয়ে এনে তার জায়গায় ত্রিরঙা পতাকা উড়িয়ে সংগ্রামী সকলের মাঝে উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলেন। তাকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কয়েকবার জেলে যেতে হয়েছিল। পরে তিনি কংগ্রেসের প্রতি আস্থা হারিয়ে জাতীয় কংগ্রেস ত্যাগ করে সোসিয়ালিস্ট দলে যোগদান করেন।বিয়াল্লিশের যুগান্তকারী সংগ্রামী অরুণা আসফ আলীর মৃত্যু হয় ১৯৯৬ সালের ২৯ জুলাই।
মাতঙ্গিনী হাজরা (১৭ নভেম্বর ১৮৭০–২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪২) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক মহান বিপ্লবী নেত্রী। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কংগ্রেস সদস্যেরা মেদিনীপুর জেলার সকল থানা ও অন্যান্য সরকারি কার্যালয় দখল করে নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল জেলা থেকে ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ করে এখানে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধানত মহিলা স্বেচ্ছাসেবকসহ ছয় হাজার সমর্থক তমলুক থানা দখলের উদ্দেশ্যে একটি মিছিল বের করে। এই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৭৩ বছর বয়সী মাতঙ্গিনী হাজরা। শহরের উপকণ্ঠে মিছিল পৌঁছালে ব্রিটিশ রাজপুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশ ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই আদেশ অমান্য করে মাতঙ্গিনী অগ্রসর হলে তাঁকে গুলি করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও মাতঙ্গিনী এগিয়ে চলেন এবং পুলিশের কাছে আবেদন করেন জনতার ওপর গুলি না-চালাতে।
তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের মুখপত্র বিপ্লবী পত্রিকার বর্ণনা অনুযায়ী, ফৌজদারি আদালত ভবনের উত্তর দিক থেকে মাতঙ্গিনী একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। পুলিশ গুলি চালালে তিনি অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের পিছনে রেখে নিজেই এগিয়ে যান। পুলিশ তিনবার তাঁকে গুলি করে। গুলি লাগে তার কপালে ও দুই হাতে। তবুও তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন।
এরপরেও বারংবার তার ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। কংগ্রেসের পতাকাটি মুঠোর মধ্যে শক্ত করে উঁচিয়ে ধরে বন্দেমাতরম ধ্বনি উচ্চারণ করতে করতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি 'গান্ধীবুড়ি' নামে পরিচিত ছিলেন।[১][২][৩]
বাসন্তী দেবী (২৩ মার্চ ১৮৮০ - ৭ মে ১৯৭৪) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ কারাগারে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী। ১৮৯৬ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে বিবাহ হয়। ১৯২০ সালে চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি ১৯২১ সালে নারীদের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্ভূত করেন। ১৯২১ সালে চিত্তরঞ্জন দাশ যখন গ্রেপ্তার হন তখন তিনি আইন অমান্য ও হরতালের ঘোষণা দেন। এর পরে তিনিও গ্রেপ্তার হন বড়বাজার এলাকায় হরতাল করার সময়। তাদের গ্রেপ্তারে সারা বাংলা জুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু তাকে 'মা' সম্বোধন করতেন। তিনি ও চিত্তরঞ্জন দাশ মিলে সম্পাদনা করতেন বাঙলার কথা পত্রিকা। ১৯২২ সালে এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামে যে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে তিনি সভানেতৃত্ব করেন এবং দেশবন্ধুর নতুন কর্মপন্থা ইঙ্গিত করেন। দেশবন্ধু তখনও জেলে ছিলেন। তিনি দেশবন্ধুর সাথে সংগঠন গড়ে তোলা ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন জন্য কাজ করেছেন। ১৯২২ সালে চট্টগ্রামে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে সভানেত্রী ছিলেন।
রেণুকা রায় (1904-1997) ছিলেন ভারতের একজন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজকর্মী এবং রাজনীতিবিদ। তিনি ষোল বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধীর সংস্পর্শে আসেন এবং তাঁর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। ব্রিটিশ ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা বয়কট করার জন্য গান্ধীজির আহ্বানে সাড়া দিতে তিনি কলেজ ছেড়েছিলেন।
যদিও পরে তিনি লন্ডনে পড়াশোনা করেছিলেন। ভারতে ফিরে, তিনি অল ইন্ডিয়া উইমেনস কনফারেন্সে
যোগ দেন এবং পিতামাতার সম্পত্তিতে মহিলাদের অধিকার এবং উত্তরাধিকার অধিকারের জন্য কঠোর
পরিশ্রম করেন। 1932 সালে তিনি অল ইন্ডিয়া উইমেনস কনফারেন্সের সভাপতি হন। তিনি
1953-54 সাল পর্যন্ত এর সভাপতি ছিলেন।
ফুলরেণু গুহ (দত্ত) (১৩ আগস্ট ১৯১১ - ২০০৬) একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন। বরিশালে থাকাকালীন তিনি জঙ্গিবাদ জাতীয়তাবাদে জড়িত, যুগান্তর পার্টির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সেখানেই দেখা হয় ডঃ বীরেশচন্দ্র গুহর সঙ্গে, যিনি আরও কম বয়সে যুগান্তর পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।১৯৪০ এর দশকের গোড়ার দিকে গুহরা অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দান করেন। ১৯৪১-৪৩-এর বাংলার দুর্ভিক্ষ চলাকালীন সময়ে তিনি এই বিপর্যয়কে রুদ্ধ করতে সহায়তা করেছিলেন এবং নোয়াখালীর অংশীদারিত্ব পুনরুদ্ধার করতেও সক্ষম হন।
1939 সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। নামমাত্র দলীয় স্টাইপেন্ড-এ জীবনযাপন করে, 1942 সাল থেকে মণিকুন্তলা সেন দেশ ভ্রমণ শুরু করেন, ছোট ছোট গ্রামে থাকতেন এবং জনগণের জীবন পর্যবেক্ষণ করেন। 1943 সালে বার্মিজ চালের ক্ষতি এবং বিশ্বযুদ্ধের কারণে বাংলায় একটি বিধ্বংসী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। একটি ঘূর্ণিঝড় মেদিনীপুর জেলার অংশেও বিধ্বস্ত করেছ। সেন সেখানে ত্রাণ কাজ শুরু করেন এবং যুদ্ধের বেশিরভাগ বছর অসহায় মহিলাদের সাহায্য করার জন্য জেলাগুলিতে ভ্রমণ করেন। 1947 সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে; কয়েক মাস পরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে বেআইনি ঘোষণা করা হয় এবং সেনকে 1948 সালে জেলে পাঠানো হয়। তিনি 1951 সাল পর্যন্ত জেল হেফাজতে ছিলেন।
কল্যাণী দাস (২৮ মে ১৯০৭ - ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী।
কল্যাণী দাস ১৯০৭ সালে কৃষ্ণনগরে এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু পিতৃভূমি ছিল চট্টগ্রাম। তার পিতার নাম বেণী মাধব দাস ও মাতার নাম সরলা দাস। তার বোন বীণা দাসও সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন । পিতার আদর্শে প্রভাবিত হয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। এছাড়া কল্যাণী দাসের ছিল মায়ের মতোই সংগঠনী ক্ষমতা।
কলকাতায় তিনি কটকে র্যাভেশন কলেজিয়েট স্কুল পড়াশুনা করেছেন। ১৯২৮ সালে বি.এ. পাস করবার পর তিনি ইউনিভার্সিটিতে এম.এ. পড়তে যান। ছাত্রাবস্থায় কলিকাতার স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের নিয়ে এই ‘ছাএীসংঘ' গঠিত হয়। এর সভানেত্রী ছিলেন সুরমা মিত্র ও সম্পাদিকা ছিলেন কল্যানী দাস।
কল্যাণী দাসের পরিবার ছিল রাজনৈতিক পরিবার। অসহযোগ ও জাতীয় আন্দোলনের যোগ দেওয়ার কারণে তার মেজদাদা কারাবরণ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি রাজনৈতিক মনস্ক হয়ে ওঠেন। সে সময় যুগান্তর দল এর কতিপয় সদস্যের সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। ১৯৩০ সালে ডালহৌসির অত্যাচারের বিরুধে প্রতিবাদের জন্য আইন অমান্য করে আন্দোলন ছাত্রীদের যোগদানের জন্য নেতৃত্ব দেন। ১৯৩২ সালে 'আইন অমান্য আন্দোলন'এ অংশ নেন এবং গ্রেপ্তার হন। তিনি সমাজ সেবা ও বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। তিনি ছাত্রী সংঘের উদ্যোক্তা এবং ব্রিটিশ বিরোধী রাজনীতির জন্য কারাবরণ করেন। সহপাঠী হিসাবে ছিল কমলা দাশগুপ্ত।
১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে নির্মলেন্দু ভট্টাচার্যের সঙ্গে কল্যাণী দাসের বিবাহ হয়। বিয়ের পরও রাজনৈতিক কাজের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪০ সালে কল্যাণী ভট্টাচার্য বোম্বে চলে যান স্বামীর কর্মস্থলে। ১৯৪২ সালের ‘ভারত ছাড়' আন্দোলনে যোগদান করে তিনি বোম্বেতে তিন মাসের জন্য কারাবরণ করেন।
১৯৩৮ সালে বিয়ের পরে তিনি নারী রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ে 'মন্দিরা' নামে মুখপত্র প্রকাশ করেন। 'জীবন অধ্যায়' নামক আত্নচরিত প্রকাশ করেন। যেখানে নিজের নানা অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন। কল্যাণী দাসের ১৯৮৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয়।
=========
তথ্য সংগ্রহঃ উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য সাইট।
চিত্রঋণঃ ময়ূখ বিশ্বাসের টুইটার পোস্ট
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন