স্বাধীনতার ৭৫ বছরে আমরা
শেফালী সর
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্টে ভারত স্বাধীন হয়েছিল। সেদিন বর্ণে গন্ধে আমোদিত হয়েছিল ভারতের আকাশ ,বাতাস-জল-মাটি।আরও আমোদিত হয়েছিল ভারতবাসীর অন্তর। সেই স্বাধীনতা আজ এক পা দু পা করে ৭৫ এ পা রেখেছে।বয়স যথেষ্ট পরিপক্ব হয়েছে।কিন্তু ভারতবাসীর অন্তর আজ খাঁ খাঁ করছে। তারা বিরলে বসে ভাবে এই স্বাধীনতা কী আমরা আশা করেছিলাম! যেখানে চাপা পড়ে যায় নির্ভয়াদের আর্তনাদ,চাপা পড়ে যায় কৃষকের ন্যায্য দাবি,চাপা পড়ে যায় গরীব, অসহায় দলিত, আদিবাসী,সংখ্যালঘু মানুষের অধিকার।
উত্তর থেকে দক্ষিণ,পূর্ব থেকে পশ্চিম ,শোষক-শাসকের চোখে জ্বলন্ত চোখ রেখে আরও একবার এদেশের মানুষ গর্জে উঠুক, আবারও স্বাধীনতার জন্য নতুন করে জাগরণের দরকার।বিদেশীদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু দেশের মানুষের কাছে আজও আমরা পরাধীন। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে পা দিচ্ছি আমরা। এটা একটা মাইলফলক। অর্থাৎ একটা শতাব্দীর তিন-চতুর্থাংশ।কী পেয়েছি আর কী পাইনি তার হিসাব করতে বসলে অতীতে পিছিয়ে যেতে হবে। দেশভাগের দগদগে ঘা-টা আজও শুকায়নি।একমাত্র শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্যই পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব আজও বজায় আছে। তা-নাহ'লে বাঙালির অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যেতো। এবার দেখি কী পেয়েছি। ভারত হিন্দু প্রধান দেশ। আর এই হিন্দু প্রধান দেশ বলেই এখানে এখনও হিন্দু -মুসলিম একসঙ্গে আছি। এটা নিঃসন্দেহে বড় প্রাপ্তি। যদিও স্বাধীনতার জন্ম আমি দেখিনি, তবে দিনটা যে বড় বর্ণময় ছিল তা বেশ বুঝতে পারি। যাইহোক,ঐ দিনটির জন্য মনে মনে বেশ গর্ব বোধ করি একজন ভারতবাসী হিসাবে।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা,মহারাষ্ট্র ও পাঞ্জাবের ভূমিকা ছিল অগ্রগন্য।গান্ধীজীর নেতৃত্বে অহিংস আন্দোলন, অন্যদিকে সশস্ত্র আন্দোলন।নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বিনয় -বাদল-দিনেশ এই আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।নেতাজীই প্রথম স্বাধীন ভারতের পতাকা তুলেছিলেন কোহিমায়।কিন্তু স্বাধীনতার এতবছর পরেও দেশ জুড়ে জাতপাত ও আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর হয়নি। এটা আমাদের কাছে খুবই দুঃখের।স্বাধীনতা উদযাপনের ৭৫ বছরে দাঁড়িয়ে ভাবছি - আমাদের সমাজে এখনো তো লিঙ্গ বৈষম্য দূর হয়নি। এখনও তো খেটে খাওয়া মানুষের স্বাধীনতা আসেনি।আমরা মেয়েরা আজও স্বাধীনতা পাইনি। আজও আমাদের মেয়েদের বাঁচার জন্য,ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য অহরহ লড়াই করতে হচ্ছে। আজও আমরা মেয়েরা প্রতিবছর ৮ই মার্চ এই দিনটিতে ফেস্টুন হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করি নারী -পুরুষের সমানাধিকারের দাবিতে। এজন্য আমরা মেয়েরা সত্যি খুবই লজ্জিত। এখনো মেয়েদের ধর্ষিতা হতে হয়।প্রশ্ন জাগে মনে,-প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার,মাতঙ্গিনী হাজরা,সিস্টার নিবেদিতা কী এই দিনগুলো দেখার জন্য লড়াই করেছিলেন? তাই আমরা মেয়েরা আজ স্বাধীনতার এই পুণ্য মুহূর্তে মেয়েদের সম্মানের সঙ্গে বাঁচার স্বাধীনতা চাই,মত প্রকাশের স্বাধীনতা চাই-,চাই মেয়েদের বাক্-স্বাধীনতা।
------------------:---------------------
শেফালি সর
জনাদাঁড়ি
গোপীনাথপুর
পূর্বমেদিনীপুর
৭২১৬৩৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন