বহাল
সুদামকৃষ্ণ মন্ডল
----- আরে রঞ্জন না ! এসো - এসো- বসো।
------ হ্যাঁ দাদা । বসছি -- এসেছিলাম---
------ একটু অপেক্ষা করো । কিছু বলবে তো ? বলে ব্যস্ত এম,এল,এ, সুধীরচন্দ্র পাশের রুমে গেল। বাঁসা ঘর হলেও দোতলা নিরাপদ । সর্বক্ষণ লোক থাকে। দু'বেলা রান্না এবং টুকটাক কেনাকাটার জন্য একজন ঝি- অপয়া- বিধবা । অফিসে দু'জন সামাল দেয় । পাশে মহিলা পুরুষ মিলে ছয়- সাত জন পাঁশুটে মুখে বসে। দু'জন কাস্ট সার্টিফিকেট, একজন ডিভোর্সি মহিলা, তিনজন পঞ্চায়েত গঠন নিয়ে তোষামোদ সুপারিশ ইত্যাদি নিয়ে অপেক্ষারত। রঞ্জন পাশের টুলটায় বসে। দেহরক্ষী সুধীরের দরজার সামনে সজাগ দৃষ্টিতে লক্ষ্য রাখছে । ফোনটা রিং হতেই সুধীর ধরে বলল , আরে-- আমি তো বলছি ফিতে দিয়ে সবাইকে সমান করে মেপে দাও । কত ? সে আমি পরে বলছি । অ্যামাউন্টে রাজি থাকে তো বসবে। না হলে দেওয়া যাবে না । ট্রাফিক ! ধরে নাও -- দশ পনেরো তো হবেই ।
হ্যাঁ । প্রতাপ রায় ফোন করে জানল । সে ফুটপাত ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি । ফুটপাত দখল নিয়ে ব্যবসা করতে স্থানীয় মানুষদের থেকে টাকা নেওয়া হবে । ফুট প্রতি সাত থেকে দশ হাজার । পার্সেন্টেজে ভাগ বাঁটোয়ারা হবে । প্রতাপ যা পাবে তাই লাভ । অধিকাংশ আত্মসাৎ সুধীরই করবে। এটা কোন অবাস্তব নয় ।
---- বলো, কার কি আছে? পঞ্চায়েত সার্টিফিকেট ---
---- হ্যাঁ, আছে সুখময় বলল। সে ছাপানো প্যাডে লিখে প্রস্তুত করে রেখেছে। শুধু স্বাক্ষর করতে বাকি।
ওদের ছাড়ার পরেই হঠাৎ এক ছাত্রী এসে হাজির । ---- স্যার একটা ডিসটেন্স সার্টিফিকেট লাগবে।
---- আসা মাত্রই বলে দিলে ? এরা যে সকাল থেকেই বসে আছে ।
---- স্যার আমার ট্রেনের সময় -- ওই জন্যেই। ---- তাহলে বলো ।
---- আমি যাতে সরকারি ছাত্রী নিবাস পাই । আমার বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব একশ' তিরিশ কিলোমিটার ।
---- পঞ্চায়েত সুপারিশ এনেছ ?
---- নাতো! আমার আইডেন্টি কার্ড দেখাচ্ছি। বাবার ঠিকানা স্থায়ী বাসিন্দা সার্টিফিকেট দেখাচ্ছি ।
----- হবে না । সবেতেই সদস্য সুপারিশ করবে। সঙ্গে আমাদের বুথ সভাপতির চিঠি।
সে হতাশ হয়ে চলে গেল ।
তারপর একে একে কিছু বলার আগে বিষয় বিবেচনা করে রঞ্জনকে বলল , বলো তোমার কি করতে পারি?
----- ওদিকের খবর কি ? চাকরির খবরের ইশারা করল ।
----- না না সে এখনও কোর্টে আটকে আছে।
---- হবে তো? অনেকদিন হয়ে গেল ।
---- এক কাজ করো, তোমাকে একটা কাজ দিতে পারি আপাতত চালাও । তারপর ---
---- অনেকগুলো টাকার সুদ দিতে হচ্ছে ।
মানে ঘাবলা । টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ার নামে বঁড়শির কাঁটায় গেঁথেছে।
---- না হলে কি করব ? এক কাজ করো --- ফুটপাতে যারা বসেছে রোজ ওদের থেকে তিরিশ টাকা করে তোলো।
---- ঠিক হলো?
--- না হলে ভুলে যাও । প্রমাণ কি আছে, দিয়েছ ?
----- ঠিক আছে, করব । রশিদ দিতে হবে না ?
----- না । কিসের রসিদ ? বলবে এম,এল,এর সোস্যাল ওয়েলফেয়ার ফান্ডে , থানা পুলিশ ,পার্টি ফান্ডে দিতে হবে । ব্যস ।
রঞ্জন উঠে চলে আসল।
গত বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই রঞ্জন সুধীরের সাথে অষ্টপ্রহরের সঙ্গী । এলাকা চষে বেড়িয়েছে তার প্রতিদান স্বরূপ সৌজন্যতা না দেখিয়ে পারেনি । রঞ্জনের থেকে সাড়ে আট লাখ নিয়েছিল প্রতিপক্ষের প্রার্থীসহ কর্মীদের জব্দ করার জন্য । বিরোধীপক্ষের দু'জন যুবনেতাকে খুনের বরাতে গেছে ছয় লাখ । সেই টাকাটা তো রঞ্জনের। সে জানেনা। এম, এল,এ, হওয়ার আগে ভাড়াটে খুনির টাকা নগত দিতে হয়েছে । ওরা ধার বাকিতে কাজ করে না । আর বিরোধীদলের যুবনেত্রীকে ধর্ষণ কেসে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে নির্দোষ প্রমাণ করতে থানা ও ডাক্তারের মুখ বন্ধ করতে গেছে দু 'লাখ । যুবনেতা খুনের কেসে নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বের অজুহাত দিয়ে বিরোধী শিবিরে চমক দিয়েছে।
রঞ্জন প্রত্যেকদিন সকালবেলায় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায় ফুটপাতে সবজি বিক্রেতা , ফল বিক্রেতা থেকে যতজন যাই বেচুক না কেন সে হাত পেতে টাকা নেয়। কেউ রা কাড়তে পারে না ।
যে অসহায় মেয়েগুলো সম্বলহীন- স্বামীহারা- পুত্র পরিত্যক্তা নানান শাক সব্জি বেচে, গাড়ির তলা থেকে চেয়ে আনে , ছোঁ মেরে আড়াল করে , যে বাচ্চা বাচ্চা ছেলে - মেয়ে গাঁয়ের তালতলা থেকে তাল নারকেল কুড়িয়ে এনে বেচতে যায় তাকেও ছাড়ে না । না দিলে উৎখাতের হুমকি।
সেও ভাবেনি এমন একটা চাকরি তার কপালে অপেক্ষা করেছিল । সে জেনেও কাউকে কিছু বলেনি । আর কাউকে কোনওদিন বলবেও না।
=======================সুদামকৃষ্ণ মন্ডল
গ্রাম: পুরন্দর পুর (অক্ষয় নগর)
পোস্ট : অক্ষয় নগর
থানা : কাকদ্বীপ
জেলা : দঃ চব্বিশ পরগণা
পিন কোড :743347
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন