Featured Post
অণুগল্প ।। ভূতের থাপ্পর ।। শংকর ব্রহ্ম
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ভূতের থাপ্পর
শংকর ব্রহ্ম
নিঝুম সন্ধ্যায় নিরালায় এসে বসেছি ছাদের চিলেকোঠার ঘরে, একটা ভূতের গল্প লিখব বলে। চিলে-কোঠায় দরজা জানলা বন্ধ করে দিয়েছি। কাগজ নিয়ে, কলম খুলে লিখতে বসেছি।
পরিবেশটাকে ভৌতিক করে তোলার জন্য, লেখার আগে মনে মনে ভূতের কল্পনা করছি, ভূতের আকৃতি ভাবছি। প্রকৃতি ভাবছি। চাল-চলন, তার হাব-ভাব, আর ভয় দেখাবার ভঙ্গি নিয়ে ভাবছি। মানে তার অঙ্গ-ভঙ্গীর কথা ভাবছি। আর তার উপস্থিতি এই ঘরের মধ্যে মনে মনে কল্পনা করছি। গল্পটা লেখার আগে, গায়ে কাঁটা-দেওয়া একটা শিরশিরানি ভাব আনতে চাইছি মনে। কিন্তু ভূতের গল্প লিখতে বসে স্বচক্ষে ভূত দেখব, তা কখনও আশা করিনি। স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।
এমন সময় মনে হল কে যেন জানলায় টোকা মারছে। ভাবলাম ভুল শুনেছি। একটু পরে আবার মনে হলো, সত্যিই এবার কেউ জানলায় টোকা মারছে। জমিয়ে লিখতে বসেছি। তাই আর উঠতে ইচ্ছে করছে না। আবার টোকা পড়ল জানলায় । এবার অনিচ্ছায় উঠতে যাব ভাবছি।
সেইসময় আচমকাই লাইটটা হঠাৎ নিভে গেল। দরজাটা খুলে গেল একা একাই।
দরজা দিয়ে কে একজন এসে ঢুকলো আমার চিলে-কোঠার ঘরের ভিতর। কে এলো, কিছুই দেখতে পারছি না, ঘুরঘুট্টি অন্ধকার ঘরটা ।
সে নাকি সুরে খ্যানখ্যানে গলায় বলল, ব্যাঁটা লেঁখক, আঁমাদের নিঁয়ে গঁল্প লিঁখবি? কিঁ জাঁনিস তুঁই আঁমাদের সঁম্পর্কে ?
আমি আমতা আমতা করছি ভয়ে , মানে...
- মাঁনে কিঁ, বঁলবি তোঁ ,আঁমরা হিংঁস্র, মাঁনুষের ঘাঁড় মঁটকে রঁক্ত খাঁই, নাঁকি সুঁরে কঁথা বঁলি - এঁইসব তোঁ?
আমি কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বললাম, তাই তো জানি। লোকে তাই বলে।
সজোরে এক থাপ্পর পড়ল আমার গালে।
- আঁমাদের নিঁয়ে মিঁথ্যের বেঁসাতি। আঁমরা মাঁনুষের ঘাঁড় মঁটকে রঁক্ত খাঁই? নাঁকি, তোঁরা নিঁজেরাই নিঁজেদের ঘাঁড় মঁটকে রঁক্ত খেঁয়ে, আঁমাদের নাঁমে চাঁলাস?
- তবে, লোকে যে বলে?
- লোঁকে আঁমাদের নাঁমে দোঁষ চাঁপিয়ে নিঁজেদের অঁপরাধ আঁড়াল কঁরে রাঁখে।
- তা কি করে হবে?
- হ্যাঁ তাঁই হঁয়। আঁর এঁকটা মিঁথ্যে বঁললে আঁমাদের নাঁমে, মাঁরব আঁর এঁক থাঁপ্পর। ঘাঁড় মঁটকে দেঁবো তোঁর।
এক থাপ্পরেই গালটা জ্বলছে, আর একটা
থাপ্পর খাওয়ার কোন ইচ্ছেই নেই আমার মনে। তাই আমি চুপ করে রইলাম। তারপর ঘাড় মটকে দিলে তো আর কথা নেই।
হঠাৎ আলোটা জ্বলে উঠল, দেখলাম ঘরে কেউ কোথাও নেই, শুধু দরজাটা হাট করে খোলা।
এরপর আর ভূতের গল্প লেখার সাহস হয়নি আমার। ভয়ে ভয়ে নীচে নেমে এসে দেখি, গিন্নি ছোট ছেলেকে ভূতের গল্প বলে ঘুম পারাবার চেষ্টা করছে।
আমি বললাম, চুপ কর, চুপ কর ,ছাদে ভূত আছে, শুনতে পাবে।
ছাদে ধুপ ধুপ করে, কারও চলাফেরা করার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। গিন্নি তা শুনে ভূতের গল্পটাকে - গভীর গহন নির্জন অরণ্যে শিয়াল আর কুমিরের গল্পে বদল করে ফেললো, কায়দা করে।
ছেলে ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।
তারপর গিন্নি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার গালে ওটা কিসের দাগ গো?
আমি তাকে তখন সব কথা খুলে বললাম।
ছাদে ততক্ষণে ভূতের দাপাদাপি কিছুটা কমেছে বলে মনে হলো আমার।
ভূতের উপদ্রপের কারণে, আমার আর ভূতের গল্পটা লেখা হলো না এবার ।
----------------------------------
SANKAR BRAHMA.
8/1, ASHUTOSH PALLY,
P.O. - GARIA,
Kolkata - 700 084.
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন