Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

একগুচ্ছ কবিতা ।। বিদ্যুৎ ভৌমিক

একগুচ্ছ কবিতা ।। বিদ্যুৎ ভৌমিক



 ১)  আজনবী অশরীর মৃত্যু


মুক স্তব্ধ হলে নিজস্বী স্মৃতি স্তবকেরা ছায়ার ভেতর পায়ে পায়ে কাছে চলে এলে ; ইথার ভাষ্যে আজনবী শিতারিষ্ট যন্ত্রের কান মোলে নিপুন প্রণয়ে !

রোজ যাকে দেখি চেনা রাস্তায় ; চোখের মধ্যে রাখি সঞ্চিত পাপ , তাপ , মায়াবী অভিমান , এসব ভেতরেই চুপ একই অদৃশ্যতায় বিশ্রামহীন ; অপটু আদর্শে দর্পণের কাছে ঋণস্বীকার করে !
মৃত্যুর পর অন্য এক অদেখা অশরীর ছদ্মবেশ ; এই চেনা চৌরাস্তায় আমাকেও অচেনা দেখি গল্পের ফাঁদে ব্যথাতুর বিবর্ণ পাঁচালি নিয়ে এপাড়া - ওপাড়া অজ্ঞাত অবিচল শূন্যতায় ক্লেডিয়াস ঢেউয়ের ভেতর !

বহুদিন পর নিজে নিজেই নিখোঁজ হলাম ,----- এই ঘরে আমার আত্মগোপনের হদিশ পায়নি নিজের প্রিয়জন এবং স্ত্রী ও সন্তান ; তবুও এভাবেই মৃত্যু মৃত্যু উদাস অন্তরে ভিজে ওঠে মনের দু'চোখ ! 


কথা হয়েছিল এক যুগ আগে ; তোমার সাথে ! তখন কবিতার ভেতর দূর্দান্ত মুগ্ধতায় আগুনের কথা ভুলেই গেছি ,----- সময়টা আপাদমস্তক উড়ণচন্ডি ছিল ; প্রেম ছিল , প্রার্থনা ছিল , সুগন্ধ ছিল চারপাশ ঘিরে .....  তবুও এই মন ভালোবাসার দৃশ্যমানতা প্রত্যন্তে কতবার হিসেবহীন এঁকেছে স্বযত্নে ; সেটা মন বোঝেনি !
এভাবেই কতবার তোমার জন্য সখ করে মিথ্যেই মরেছি, সেটাও নাবুঝে এ-ভা-বে-ই নবনীতা! 
এই যে এই ঘরে আমার উচ্ছ্বিষ্ট অতীত ; তারাও অবিবেচক , তা না হলে কেনোইবা ওরা মৃত্যুর পর স্মৃতিস্বপ্ন মেলে ধরে কথা না বাড়িয়ে ,-----  
শ্মশান থেকে ওরা ফিরে এসে ছিল আমাকে দাহ করে ! নিম পাতা - লোহা - আগুন ছুঁয়ে এ বাড়ির চৌকাঠ ডিঙিয়ে ছিল ; ওদের ঠিক পিছন পিছন আমিও চলে এসেছিলাম এই ঘরে অযান্ত্রিক একক ! অথচ প্রিয় মুখগুলোর বিমূর্ত নাটক দেখে সব হারানো রাত রাত গন্ধে অনির্দিষ্ট মোচড় খেলাম .....  ! 
যখন এই শরীরটা পুড়ে উঠছিল ; স্মৃতিবাস স্বপ্ন গুলো  একবার বাঁচার ইচ্ছাতে চিৎকার করে আমার অভ্যন্তরে তোমার নাম করে কেঁদে উঠেছিল নবনীতা !

সেদিনের সন্ধ্যায় শিলাবৃষ্টির ভেতর এই ঘরে প্রথম স্পর্শের ছোঁয়ায় আঁধার বিগ্রহের বুকে ফাঁটল দেখেছিলাম ! 
তুমি তোমার হাত এগিয়ে দিয়েছিলে ভালোবাসতে,---- অথচ আজ হঠাৎ বাতাসে উড়ে গেল কবিতার খাতার শেষ তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতা ; নবনীতা !
কতদিন কেটেছে এভাবে তুমিহীন দহনে - পীড়ণে - দুঃখে ও জ্বালায় ,-----  এই ঘরে স্বপ্নরা এসে খোঁজ নিয়ে গেছে ; আমি আর ফিরবো না কোন ভাবে !!


________________________________________

২ স্মৃতি দর্পণে হাত এগোলাম

           

কিছু একটা অন্য রকম লাগছিল ; তাই শরীরের বিপরীতে মন পিছিয়ে রয়েছে ! কথা গুলো কাঁপছে ভীষণ ভীরুতায়, ---- তবু যেন উল্টো হয়ে অন্য সময় ধরে আমার রাস্তা পাড় হওয়া..... 

যদিও তোর শরীর ছুঁয়ে কতবার বলেছি ; তোর নদীতে বুকসাঁতার দেবার গল্প , যদিও না -  না করে লাজুক গাম্ভীর্যে চেখেতে মিথ্যে এঁকেছি ভয় ; কতবার !
ওধারের তারা ফোঁটা আকাশটায় অন্য রকম রঙ মেখে ছিল ,----  দূরে অকৃপণ জিজ্ঞাসায় চোখ ছিল স্থির ! এভাবেই উল্টো পৃষ্ঠায় আবছা - আবছা শব্দগুলো প্রতিদিনের দুর্ভাবনায় আরও অস্পষ্ট হয়ে চোখের ভিতর কপালমন্দ হয়েছিল !

তোর চোখের মধ্যে যেই রেখেছি চোখ ; অন্য রকম সতর্ক হয়ে ছিল মন ! যদি তুই সহজ আচ্ছিল্যে মুখ ঘুরিয়ে নিস ,----- 
অন্তরালে দুঃখ পোড়া হাসি স্নান ঘরের দর্পণে আমাকে প্রত্যন্তে জ্বালায় - পোড়ায় ! যদি ভাসি হারিয়ে যাবার ঘুশিতে , মৃত্যুর মত অবুঝ কিছু নিঃশব্দ আমাকে চারপাশ থেকে ঢেকে রাখে অথৈ নির্জনে ! 
অন্য এক আঁধার করা নির্জনতা বারমাসের গল্প গুলো গুছিয়ে রেখেছে সুকৌশলে ,----- এর পরেও হাত এগিয়ে দিয়েছি ব্যাকুল আবেগে ; একমাত্র তোকেই ভালোবেসে !

নতুন কিছু স্বপ্ন ; ঘুমন্তে আদিগন্ত ভালোবাসা ছাড়া ভীষণ কাঙল ,----  বৃষ্টির গন্ধ মেখে আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিল নিজেদের ; কতবার কতভাবে ..... 
এই একবার হারিয়ে যেতে যেতে আড়াল করতে চেষ্টা করছিলাম ; আমাকে নিজেই !  একই রাস্তায় অপার্থিব হয়ে চলতে চলতে যোগ - ভাগ - গুণের শেষে জেগে ওঠে তোর ভালোবাসা না পাওয়ার কঠিন ব্যর্থতা ,----- 
অদূরে পুড়ছি আমি নির্ঘুম একক ! মুগ্ধ কিছু স্মৃতির ভিতর ধূসরতায় ঢাকা আমার সবটুকু আমিত্ব ; সেটাও নিস্পৃহতার আভরণে ঢাকা ......  অথচ পরবর্তী রাস্তাটা পেরিয়ে যেতে স্বরচিত সময় কিছুটা দেরি করতেই ; এক হুতাশ দীর্ঘশ্বাস বুক ভেঙে বেরিয়ে এলো স্বপ্নভ্রষ্ট স্মৃতি গুলোকে নিয়ে ! 

শেষ বারের মত পুড়ছি শ্মশানে ! অন্য এক চিতার মধ্যে নিভৃতে ডুবে যাওয়া আমিটা নীরব চোখের জলে ভেসেছে অন্য এক স্বপ্ন দেখে !!

________________________________________

৩  )  অনুপস্থিত উচ্চারণ 

         
শব্দের ইমোশনে অবসেশন না থাক ; একটু গুছানো স্বপ্নে ভুল হয়ে গেছে দৃশ্যের ঘ্রাণ ছড়াতে ! যেটুকু মনন ; হারিয়ে পাওয়া হঠাৎ দুঃখ ভোগ ,---- 
কথা ছুঁয়ে মন পাব বলে অলীক ভাষ্কর্যে রূপ খোলে অদেখা আবেগ ...... তাই অদূরের রিলেশন দিয়েছি কলাপস করে অপছন্দের দোষে !

উদ্ভিন্ন চেনা সময়ে স্নায়ুতে ঈর্ষা জমে ; তবুও বৃষ্টি নামেনি বলে কথা হাসে আমার নগ্নতা দেখে !
ওদিকে অক্ষর গুলো শব্দ তৈরি করে নিছক বর্ণে বর্ণে ; শুক্রাণু ঝরে পড়ে মানচিত্র জুড়ে , ------ কবিতায় আমিতো সত্য ! তবু সর্বনাশের ভেতর দর্পণ স্বভাব নষ্ট করে বেমালুম শ্রাবণে ! এইতো পুনশ্চ হদয় এগিয়ে দিতেই নির্বাসিত স্মৃতিগুলো জন্ম লজ্জায় আব্ছা ভাসমান ; যদিও আমার মতন করে নীরবতা ছড়াই স্বপ্নকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ! 

এই চিরকালীন না ভালোবাসায় নানাবিধ অভিমান গুলো গুপ্ত অথচ একক একত্রিত ৷ এক রাস্তায় নিষ্ঠুর অতীত বহুকালের ব্যাথার দাগ নিয়ে অনির্দিষ্ট শবীর রচনা করে আমার আড়ালে !

সঙ্গোপনে ব্যর্থ নিশ্বাস শিশির শব্দে বেমালুম নির্বাক ; একান্ত প্রতীক্ষায় সিগারেট নিভে যায় প্রত্যন্তে বিষজ্বলায় , ----- রোজ এই ঘরের দেওয়ালে কতকালের বিচ্ছেদ গুলো ব্যক্তিগত অন্তহীন ! যদিও এই ঘরেতে সঙ্গোপনে ঝুলন্ত ক্যালেন্ডার দোলে সাতাশটা বছর একইভাবে .....  !
এই হাতের মুষ্ঠিতে একটা আকাশ ধরে রেখেছি ; তুমি যদি চাও শরীর থেকে শ্মশানের চিতা নিবিয়ে দেব প্রত্যন্ত আভরণ খুলে ..... তুমি যদি সখ করে আমাকে মারবে  বলে নতুন কেন আয়নার প্রতিবিম্বে অর্ধনগ্ন হও ; তাহলে আকন্ঠ অন্ধকার নিয়ে রোজ মরতে পারি !

কেউ দেওয়ান বিহীন অন্তর্গত নিঃসঙ্গ থাকে ; এই অলীক ছদ্মবেশ বাতাসেও অশরীরী ..... দিনরাত পোশাকের ভেতর মধ্যরাতের চাঁদ খেলা করে অবশেষ কৃষ্ণপক্ষে !

যদি এভাবেই পুরুষ হয়ে জন্মাই অন্তহীন তপস্যায় ; তাহলে না ফেরার পথে সর্ত রাখবো অন্যমনা মেঘেদের কাছে ! শেষটুকু চোখের মধ্যে ঠিকঠাক বিবর্ণ ধোওয়াময়  অপার্থিব অসহবাসে !!

________________________________________

৪ )   অভ্যন্তরে ডেকেছে পথ 



পথ থেকে মধ্যরাতের পংক্তি ; স্তবকের সরণিতে শব্দের  বীজমন্ত্রের ব্রহ্মধ্যান বৃষ্টিপাতে  পঞ্চভূত একক এভাবেই চেয়েছে আদরিনী বাতাস ! প্রশ্ন বান্ডিল ছিঁড়ে মৃদু পরিবর্তন ; তথাপি শরীরে কিশোরী স্পর্শ ছুঁয়ে নিতে চায়  জন্মের প্রার্থনা !
বয়ঃসন্ধি যেখানে অক্ষর মনে ডুবে ছিল ; সেই পথে রোদ্দুর বেলায় স্বপ্নের উড়নচন্ডি ঘুড়িটা বেমালুম তথাকথিত ঢঙে আকাশ হারিয়ে ফেলেছে অকাল প্রয়াণে !

রাস্তা ধরবো বলে যাবতীয় সমৃতি গুলো দূষণের আকাশে  সোপে দিলাম ! 
কিছু একটা নিরর্থক চলায় সুতরাং নামক প্রাচীরটা দৃশ্য আটকে গেলে ; নীরবতা মাখা শহরের ফুল গুলো দেবতার কাছে নির্দ্বিধায় বলেছে পয়ার ছন্দের ইতিহাস !
এভাবেই রাস্তা ধরে চলে যেতে যেতে দীর্ঘশ্বাসের ভেতর মাটি হারানোর দুঃখ অরণ্যচারিনীর শাড়ির আঁচলে গিঁট বেঁধে দেয় ! তবু এই চৌকাঠে অনেকখানি রাত্রি এসে মিশেছে বহুবার ,------ শেষ একবার সমস্ত অসুবিধা পেরিয়ে চিরকালীন স্তব্ধতাকে মননে নদী হতে বলি ; যদিও ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে গেছে গোপনে গোপনে !

মন , এভাবে চাঁদের আলো মেখে ছিল ! ঘুম হারিয়ে সেও স্মৃতিসঙ্গী ; তবুও এই পথে হেঁটে ছিল তিন জন্মের মৃত্যু ! ঘোরতর দুঃখে হতাশ নীরবতায় বিছানার চাদর শরীর ও দেহের কাছে শেষ বারের মত কবিতাকে রেখে গেছে ,----- যেভাবে চেয়েছি প্রেম ; সহপাঠীর কাছে চাঁদের আলোতে অসবাসের জ্বালা স্বপ্নাতুর আর্তরব করে !

এই হাতের মুঠিতে দুঃখ পোড়া ভাগ্য সমস্ত মননে চোখ পেতে চেয়ে নেয় নতুন জন্ম ! রোজ এই পথে ভিখারী হয়ে ঘুরি ..... ! রোজ অন্য এক আমির মধ্যে ভালোবাসার ভুল উচ্চারণ ; পরতে পরতে সময় শূন্য হয় !

যদিও শেষ বারের মত রাস্তা ধরে চলার সময় ; জন্মের দরজা রাখি বন্ধ ! এই পথ দিয়ে অন্য আমিটার কথা সব    ভুলে গেলে প্রাচীন জন্মের স্মৃতি আমাকে স্পর্শ করে উল্টো দর্পণের না ভালো লাগার মধ্যে ! যদিও এভারেই প্রতিবার মরণের পর আমার কবিতারা না ফেরার কথা ভুলে যায় ; অভিন্ন জীবন পেতে ৷ সাদা পৃষ্ঠার ভেতর প্রতিবার আমার নতুন নাম লিখি !!


________________________________________

  ৫ )  মেঘ পালক ও বৃষ্টি ধ্বনি 


চোখ বিছিয়ে অন্তর্হিত ; হাত এগিয়ে যেইনা ধরতে যাব , স্বপ্ন যেন সাদা পৃষ্ঠায় এ'ভাবেই কুপোকাত্ ! তবুও যেন এই ঘুমন্তে শ্রবণ দেখা ; নেহাতি হাজার কথার বর্ণিত আঁকিবুকি ,----  

আকাশটা ঠিক আগের মতোই  এক শারীরীক রঙ বদলে ঐতিহাসিক ! মনের ভেতর মন রাঙিয়ে আনন্দে ডুবু-ডুবু ,---- 
আকাশটা সে-ই পদ্য পাড়ায় ইচ্ছে করেই বুক পেতেছে সোহাগ দিতে আমার কাছে ! ও-ই আকাশের সুদূর থেকে বৃষ্টি ঝরে একই ধারায় ; হঠাৎ যেন কি হচ্ছিল সেই ধ্বনিতে মন ডুবিয়ে এই আমিটার অতলান্তে !

মেঘ পালকে ভাসছি আমি ; অতীত এবং ভবিষ্যতে ! অন্য কোন ইচ্ছা গুলো ভরদুপুরে  তোর এঁকেছে জ্যোৎস্না শরীর , এই জন্যেই ভেতরশুদ্ধ ঋণী রইলাম প্রিয়ংবদা ; সবটুকুই পাগল আবেগে !
কতবারযে তোকে পেয়েছি মেঘ সরিয়ে ; গভীর থেকে স্বভাবতই এভাবে ঠিক মন পুড়েছে ,-----   অসুখটা যে পরমুখোপেক্ষী ; এটাওতো আগে বুঝিনি !

বৃষ্টি বৃষ্টি চোখ খানি তোর ; বেশি বললে বিশ্বব্যাপী ! ওই চোখেতে সারা বছরই আমার কাছে আষাঢ় - শ্রাবণ ,---- যদিও ঠিক এই সময়ে বাতাস হতে ইচ্ছা করে ; একমাত্র তোর জন্যে প্রিয়ংবদা !

 এইতো আমার ভিতরশুদ্ধ তুই ছাড়া কেউ নেই ,-----  আমার যত দোষগুলোকে আকাশ তারায় গুণন্তি করে মিলিয়ে নিলাম ; হেয়ালী নয় , সত্যি বলছি প্রিয়ংবদা ! এবার আমায় ক্ষমা করে দে ; তোর শরীরে ভাসার জন্য পুণ্যবান হতে দে !

গোটা রাতটা আমার মতোই অর্ধেক অবিশ্বস্ত ; তবু আমায় ক্ষমা করিশ ঘুম হারানো নির্ঘুমেতে এমনি ভাবে ,----- মেঘ যেন সেই তেপান্তরে উড়তে উড়তে অনেকটা দূ-র প্রেম প্রবাহে ; অস্পষ্ট কুমারী ! এই ঘরেরই এই বিছানায় অহরাত্রি তোরই স্মৃতি ; কি করে যে ভুলতে পরি প্রিয়ংবদা ? বন্ধ চোখের ভেতর থেকে ক্রমাগত একই ধ্বনি ; সঙ্গী কিম্বা সহপাঠী ,---- 

যদিও আমার এই চিঠিতে আসা যাওয়ার চেনা পথটা বৃষ্টির শব্দে শব্দে কি ভাবে যে দুঃস্বপ্নের ভেতর মুছে গেল ! একমাত্র তুই সাক্ষী থাকলি ওরে পাগলী !!


________________________________________
             

    ৬ )  এবং নির্বাসন 

 

শেষটুকু শব্দশ্বাস ফেলে তবেই  শরীর ছেড়ে আমার আত্মগোপন; এহেন এক্ষণে জোনাক প্রহর! সমস্ত সস্তা বৈভব, কিছু কিছু উল্টো সময়ের বিমূর্ত ধ্বনী; জরুরী মনে করে ফেলে আসা সন্ধ্যার ওই রাস্তাতে রাতটাকে কাছে টেনে নিতে , ----- অশরীর এভাবে !

এই ঘরে আমার তেইশটা বছর ; একই নিঃসঙ্গ যাপন   .... তবুও সহজ সত্য নিরবতায় প্রাচীন দর্পণ থেকে অবশেষ নিঃশব্দে আমার ইচ্ছাকৃত নির্বাসন !

দু'চোখে ডুবে আছে যাবতীয় স্বপ্নের স্মৃতি; মৃত্যুর প্রত্যন্ত গভীরে চেনা মুখগুলো এই নীরবতামাখা দেহটাকে কতযে  আবেগ শৈলী দিতে চারপাশ ছেঁয়ে ফেলে !
বহু কালের কথার চেহারা গুলো এভাবেই দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে দেয় ফুল-চন্দন বৃত আমার শরীরে ----

সব সত্য এভাবেই মেনে নিতে নিতে ভোরের আজানে আমি শ্মশানে জ্বলি বহতী নীরবতায় ! 
যদিও আত্মঘাতী কিছু স্মৃতি ; যাদের জন্য আমি মৃত্যুর পরবর্তী সময়েও সতত যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুর ভেতর থেকে চড়ম  অস্থিরতায় নতুন করে বেঁচে উঠি ! 

এভাবেই শরীরহীন অদ্ভুত শিহরণ ওঠে অপছন্দের কিছু ছদ্ম আদর্শ দেখে ; নিজের জ্বলে ওঠা শরীরের উপর বসে  স্বপ্নে ভাসা দূরে মিলিয়ে যাওয়া অতীত গুলোকে নিঃশব্দ মাখা মৌন চিৎকারে বলি ; বিদায় বন্ধু , শেষ হোক প্রাণহীন অন্তরে যাবতীয় স্তব্ধতা ! দূরে ব-হু  দূ--রে আয়নার তেপান্তর  ; অথবা স্মৃতিশূন্য হোক আমার নির্নিমেষ নির্বাসন ! !


________________________________________

৭ )  শব্দ পোকাদের দেহ মিছিল


ফাঁদ পেতেছে চাঁদ 
সে-ই অতিরিক্ত আকশে ; অন্য এক অজ্ঞাত শূন্যে নিছক ডাবলবেডে ,----- লালন প্রহর হয়তো কিছু রাত জল বিলাসি দর্পণ , গান গাওয়া ফেরিওয়ালা নির্জন নাবালক বাতাস নিয়ে যাচে !

ওধারে মেতেছে স্বপ্নবিরোধী কথাহীন অপটু সময় ; নষ্ট নিঃশ্বাস থেকে ক্লোরিয়াস ঢেউ , ----  কেউ কেউ সারস্বত সৃজনে সিড়ি বেয়ে উঠে চলে যায় সমবেত তারাদের পাসে !

চেহারা লুকিয়ে অভ্যন্তরে আত্মহারা জিন্দা লাশেরা ! নীচে আরও তলায় বাইপাস দিয়ে হেঁটে চলে যায়  কন্ফুসিয়াস প্রজাতির কিছু প্রচীন শয়তান, ----- শহরের শেষ সীমান্তে  ভবঘুরে এক মাতাল "ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর এখনি অন্ধ বন্ধ"---  বলে চিৎকার করে ২৫ শে বৈশাখের স্তবগান করে ! এই ভাবে জ্বলছে সময় ; তবু ভষ্ম হয়ে ঝরে যায় মান-অভিমান , প্রীতি-সম্প্রীতি , অথবা অন্য পৃথিবীর  নিহত ইতিহাস ! চোখেরে ভেতর থেকে ডেকে ওঠে ব্যর্থ কিছু পথ ; বিবর্ণ বৃষ্টিরা দিনরাত দলছুট হলে স্বরচিত স্বপ্নের মধ্যে আমিও ফেরার একজন !

সেই; সেই যে কালনিসিন্দা গাছের নিচে নিখোঁজ হয়ে ধ্যান সমাধিতে কতকালের জীবন ছেড়ে যাওয়া আমার কঙ্কাল; সেও চিরনিদ্রায় এভাবেই সাধক গম্ভীর ! 

রোজ এভাবেই আঁকি কতশত নারীর শরীর,----  রোজ এই অতলান্তে ডুবে যেতে যেতে রাতটাকে মাখাই পীড়ণের জ্বালা ! 

হঠাৎ দুয়ার খুলে দেখি ঘুম হারানো আমার সর্বনাশ,----- এইটুকু যদি ছুঁয়ে বেঁচে ওঠে ; শেষবার বৃষ্টিবিন্দুদের সাথে কথা বলি !

এই ঘুম মৃত্যুর দরজায় জেগে বসে আছে ; কিছু কিছু সুখ সমৃতিসঙ্গী , তবুও কবিতার আলো ঢেলে চাঁদ ভাসে অন্য বিছানায় !

এভাবেই পুণ্যবান হব ; এভাবেই নিজের শরীর থেকে ছায়া সরিয়ে রেখে সাদা পৃষ্ঠায় আঁকবো অন্তরীক্ষ্য ! কথা শেষ হলে চোখের পাতায় ভরে ছিঁড়ে যাওয়া প্রেমের স্মৃতি সোহাগ ,----- 
গর্ভের ভেতর থেকে অন্য এক আমির ভবিষ্যৎ উকি মারে ..... ! 

শেষের কবিতা পড়ে কতশত ভূত-প্রেত ; কতশত রাতের মধ্যে বিছানায় নগ্ন হয়ে বসে থাকে বঙ্কিমের কপালকুণ্ডলা ! 



             স-মা-প্ত 

                
________________________________________



কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক : 

বাংলা কাব্য সাহিত্যকে যিনি ৪১ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সাথে সেবা করে চলেছেন , তিনি দু'ই বাংলার প্রখ্যাত কবি ব্যক্তিত্ব বিদ্যুৎ ভৌমিক ৷ যিনি ২০২২ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্য সম্মান"-  লাভ করেন ৷ অনেকটা পথ একমাত্র কবিতার রাস্তায় চলতে - চলতে হিসেব থাকেনা অনেক কিছুরই  .......  এই ঈশ্বর সত্য আমোঘ অনুভূতি কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক'- এর জীবনকে আদ্যোপান্ত অহর্নিশ ঘিরে রেখেছে ! সেই অতীত থেকে বহতা বর্তমান নিয়ে কবির কবিতা যাপন , কবিতার সাথে সহবাস ৷ সব মিলিয়ে আমিত্বভরা কবিতা বলা যেতে পারে ৷  ১৬ ই জুন ১৯৬৪ হুগলী জেলার ঐতিহাসিক শহর শ্রীরামপুর আমাদের প্রিয় কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক'- এর জন্ম!  এই কবিতাগুলি ৮০ র শেষ এবং ৯০ এর শুরুতে কবির কলমে রচিত হয় ৷ 

ঠিকানা:
ছায়ানীড়
ফিরিঙ্গি ডাঙা রোড, মল্লিকপাড়া , সূচক ৭১২২০৩ শ্রীরামপুর, হুগলি,
ভারত, পশ্চিমবঙ্গ 

________________________________________

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩