গল্প ।। তরল ওষুধ ।। লিপিকর - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Wednesday, September 20, 2023

গল্প ।। তরল ওষুধ ।। লিপিকর


তরল ওষুধ

লিপিকর


আমি জানি, আমার বক্ষে এখ্ন যে দারুণ প্রদাহ হইতেছে, তাহা হৃদযন্ত্র-ঘটিত কোনো সমস্যা নহে। আমি জানি ইহাকে ভুলিবার প্রকরণ, ইহার মারণবাণ আছে আমারই গোচরে। গৃহে পৌঁছাইয়া দ্বারে ব্যস্ত করাঘাত করিলাম। গৃহিনী কবাট উন্মোচন করিয়াই সহাস্যে আমাকে প্রাত্যহিকের ধারাবিবরণী পেশ করিতে উদ্যোগ করিতেছিলেন, তাঁহার হস্তে দ্রুত নিজ আপিশের ব্যাগখানি ন্যস্ত করিয়া পাদুকা খুলিয়া দ্বিতলের সেই কামরায় চলিলাম যেখানে আমার প্রাণদায়ী সর্ব ঔষধ পেটিকাবদ্ধ থাকে।

অর্ধাঙ্গিনী পশ্চাৎ হইতে প্রশ্ন করিলেন, "চা এর সঙ্গে কী খাবে?"

গম্ভীরস্বরে "কিছু না" শব্দদ্বয় তাঁহার উদ্দেশ্যে ভাসাইয়া কাঙ্খিত শিশিটি খুঁজিতে লাগিলাম। সামান্যই তলানি পড়িয়া আছে, তাহা হৌক, উহাতেই আপাততঃ খানিক নিবৃত্তি মিলিবে। একটি পেয়ালা বাগাইয়া তাহাতে শিশিটি উপুড় করিয়া ঢালিলাম।

গৃহিনী সামান্য কুন্ঠিত উৎকন্ঠায় আমার অনুগমন করিয়া আসিয়াছিলেন, এবার তাঁহার কন্ঠঝঙ্কার শ্রুত হইল, "অফিসে লাঞ্চ নিয়ে যাও নি যখন, তখনই জানি, দুপুরে আমার হাবি হাবিজাবি গিলতে যাবে! সয় না, তবু..."

ইশারায় তাঁহাকে নিঃশব্দ করিয়া জাগ হইতে জল ঢালিয়া পেয়ালা পূর্ণ করিলাম। আহ! বর্ণটি কিন্তু বেশ মনোরম হইয়াছে! অপ্রীতিকর কর্মটির পূর্বে ক্ষণিক পেয়ালার দিকে তাকাইয়া রহিলাম। তাহার পরে সেই হাল্কা বাদামী বর্ণের তরলটি এক চুমুকে গলাধঃকরণ করিলাম। ঘনত্ব কিছু কম হইয়াছিল বলিয়া সেটি গমনপথে আজ অগ্নিবিক্ষেপ ঈষৎ কমই করিল। তা বলিয়া তাহার জ্বালা কি একেবারেই নাই? তা নহে, তবু দ্রুত সুস্থিত হইতে হইল, কারণ গৃহিনী হাস্যমুখে আমার আনন অবলোকন করিতেছেন। একটি উদ্গার ত্যাগ করিয়া একটু ধাতস্থ লাগিল। 

গৃহিনী পুনরায় ঝামটার সূচনা করিলেন, "নোলা আর গেলো না। চপ-কাটলেট না গিললে ওঁর জীবন বৃথা যায়..."

সত্যের খাতিরে তাঁহাকে জানাইতে হইল, আজ ছাগ-বিরিয়ানী খাইয়াছি। তাঁহার প্রিয়তম খাদ্যটি তাঁহার প্রিয়তম মানুষটি খাইয়াছে, এই সংবাদদানে তিনি আশানুরূপ প্রীত হইলেন, এমন বোধ হইল না।

"আমিও তো রোজ চাকরি করতে যাই, আমাকে তো কেউ এরকম বিরিয়ানি খাওয়ায় না.." ইত্যাদি আক্ষেপের সঙ্গে তিনি নিম্নতল গমনের পথ ধরিলেন।

সহধর্মিনীর যেটুকু পরিচয় জানি, আশঙ্কা করিতেছিলাম এক হৃদয়হীন মন্তব্য আসিয়া আমার সম্মান ধূলায় মিশাইবে। তিনি হতাশ করিলেন না, নিম্নতল হইতে তাঁহার উচ্চকন্ঠ বাজিল, "ওতে ব্যামো না গেলে বোলো, জোয়ানের আরকের নতুন বোতলটা রান্নাঘরের তাকে আছে, যেখানে রিজার্ভের তেল-টেল রাখা হয়।" তাঁহার ও অন্যন্য গৃহবাসিনীদের অনুচ্চ হাস্য কর্ণে আসিল।


পাঠক, আপনার পাপচেতনাকে ধৌত করিতে জোয়ানের আরকের ঐ নতুন বোতলটি উৎসর্গ করিলাম।

No comments:

Post a Comment