সোমা মজুমদার
আমি হেঁটে যাই
আমি হেঁটে যাই শুনশান রাজপথ ধরে ভোরের গন্ধ শুঁকে...
একা একটা মাঠ চিবুক পেতে দিয়েছে শিশিরের আবদারে।
আমি হেঁটে যাই মাটির গন্ধ মেখে, সকালের আকাশ খোঁপায় গুঁজে।
নিঃসঙ্গ ঘুঘুটি ডানার ভাঁজে জমিয়ে রাখা ওম পথপ্রান্তরে ছড়িয়ে দিয়ে কালো পিচের রাস্তায় এখনও তার রাজত্ব কায়েম রাখতে পেরেছে।
এমন যদি একটা পথ থাকতো, যে পথের ধূলিকণায় সম্পূর্ণ পাখির রাজত্ব। আমি এই পথ দিয়েই নিরুদ্দেশের ঠিকানা পেতে হেঁটে যেথাম অন্তহীন...
পথের একপাশে ভাঁটফুলের বন ধুলো জমা ঠোঁটে এখনও যেন ধরে রেখে আগের দিনের বেলা শেষের নরম রোদের আলগোছে ছোঁয়া।
নামজানিনা গাছের ডাল আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে বেড়ে উঠা শিমঝাড়ের ফুলে লেগে থাকা লাল সাদা হাসি মনে করিয়ে দেয় শৈশবের ছুটাছুটি, দামাল মেয়েবেলা, বিকেলের আকাশ, ছোট ছোট আবদারে আহ্লাদে জমে থাকা মায়ের আঁচলের গন্ধ, এই গন্ধের মায়ায় আমার যাবতীয় পিছুটান, আজও ঢলে পড়া বিকেলের একাকী সূর্য টা সুযোগ পেলেই স্মৃতির ক্যানভাসে হলুদ আবিরে এঁকে যায় আজন্ম কৈশোর, পাতা উড়া বিকেলের হইচই, প্রথম প্রেমের বসন্ত সুবাস হাওয়ার কপালে গোলাপি টিপ পরিয়ে দেওয়ার থোকা থোকা আবেশ, প্রজাতির ডানার আবেগ লেগে থাকা জলোচ্ছ্বাসে ঢেউ...।
সদ্য ঘুম ভাঙা সকালের কাছে চুপকথাদের গচ্ছিত রেখে আমি হেঁটে যাই ভোরের শুনশান রাজপথ ধরে...
ধীরে ধীরে বেলা বাড়ে, রাজপথ ভরে উঠে ব্যস্থ জীবনের পদচিহ্নে, গাড়ির হর্ণ, বিষাক্ত ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ পাখিটাও তার রাজপাট সাঙ্গ করে কোন নিবিড় বনানীর আঁচলে গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে। কেবল আমি'ই বিষ গিলছি অমরিত ভেবে, এই বেঁচে থাকার ভান করা যেদিন সত্যি শেষ হবে সেদিনই আমি মুক্তির ফানুস উড়াবো মহাশূন্যে।
===============
সোমা মজুমদার
আসাম হাইলাকান্দি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন