Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

পিরিতের তথা সৌহার্দের পুঁজিবাদ (Crony Capitalism) ও ভারত ।। রণেশ রায়

পিরিতের তথা সৌহার্দের পুঁজিবাদ (Crony Capitalism) ভারত

 রণেশ রায়


আগের সংখ্যায় আমরা ভারতে স্বাধীনতার স্বরূপ আলোচনা প্রসঙ্গে ভারতের অর্থনীতির চরিত্রটা আলোচনা করেছি (পড়ুন: ঔপনিবেশিকত্তোর ভারতের অর্থনীতি ও ভারতের স্বাধীনতার স্বরূপ ।। রণেশ রায় ) এই প্রসঙ্গে আজকের ভারতে অনুগ্রহ তথা খয়রাতি অর্থনীতির বিষয়টা উঠে এসেছে আজকের প্রতিবেদনে আমরা সারা পৃথিবী জুড়ে পুঁজিবাদ যে নতুন স্বরূপ গ্রহণ করেছে যাকে পিরিতের অর্থনীতি (crony capitalism) বলে সেটাই ভারতের  পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আলোচ্য বিষয় এই প্রসঙ্গে আগের আলোচনার কিছু বিষয় এসে পড়বে

অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে সামন্তবাদ ভেঙে বাণিজ্যবাদের কাল পেরিয়ে পুঁজিবাদের  বিকাশ ঘটে প্রাথমিক পর্যায়ে এই পুঁজিবাদ ছিল প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাদ যা সামন্তবাদকে  বর্জন করে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায় পুঁজিবাদের সবচেয়ে তীব্র সমালোচক কার্ল মার্কস   ফ্রেডরিক এঞ্জেলসও কমিউনিস্ট মেনুফেষ্টতে এই প্রাথমিক  পর্যায়ের পুঁজিবাদকে প্রগতিশীল ব্যবস্থা  বলে উল্লেখ করেন তাঁদের মতে ইতিহাসে বুর্জোয়া শ্রেণী খুব বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেছে  উৎপাদনের উপকরণের অবিরাম বিপ্লবী বদল না এনে বুর্জোয়া শ্রেণী বাঁচতে পারে না তাঁরা  বলেন:

‘‘বুর্জোয়া শ্রেণী বিশ্ববাজারকে কাজে লাগাতে গিয়ে প্রতিটি দেশেরই উৎপাদন  উপভোগকে একটা বিশ্বজনীন চরিত্র দান করেছে প্রতিক্রিয়াশীলদের ক্ষুব্ধ করে তারা শিল্পের পায়ের তলা থেকে কেড়ে নিয়েছে সেই জাতীয় ভূমিকা যার ওপর শিল্প আগে দাঁড়িয়েছিল  সমস্ত সাবেকি জাতীয় শিল্প হয় ধ্বংস পেয়েছে নয় প্রত্যহ ধ্বংস পাচ্ছে তাদের স্থানচ্যুত করছে এমন নতুন নতুন শিল্প যার প্রচলন সকল সভ্য জাতির পক্ষেই মরাবাঁচা প্রশ্নের সামিল ; এমন শিল্প যা শুধু দেশজ  কাঁচামাল নিয়ে নয় দূরতম অঞ্চল থেকে আনা কাঁচামালে কাজ করছে; এমন শিল্প যার উৎপাদন  স্বদেশেই শুধু  নয় ভূলোকের সর্বাঞ্চলেই ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের উৎপন্নে যা মিটত তেমন সব পুরনো চাহিদার বদলে দেখছি নতুন চাহিদা , যা মেটাতে দরকার সুদূর বিদেশের নানা আবহাওয়ায় উৎপাদনআগেকার স্থানীয় জাতীয় বিচ্ছিন্নতা স্বপর্যাপ্তির বদলে পাচ্ছি সর্বক্ষেত্রেই আদান প্রদান, জাতিসমূহের বিশ্বজোরা পরস্পর নির্ভরতাবৈষয়িক উৎপাদনে যেমন,তেমনি মনীষার ক্ষেত্রেও এক একটা জাতির মানসিকতা সৃষ্টি হয়ে পড়ে সকলের সম্পত্তি জাতিগত একপেশেমি সংকীর্ণচিত্ততা ক্রমেই অসম্ভব হয়ে পড়ে ; অসংখ্য জাতীয় স্থানীয় সাহিত্য থেকে জেগে ওঠে একটা বিশ্বসাহিত্য (কমিউনিস্ট পার্টির ইন্তাহার, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো  ) ‘‘

কিন্তু একই সঙ্গে পুঁজিবাদের মধ্যেই তার ধ্বংসের বীজ নিহিত আছে বলে তাঁরা মনে করেন এই স্তরের পরে প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাদ একচেটিয়া পুঁজিবাদের যুগে প্রবেশ করে সাম্রাজ্যবাদের বিকাশ ঘটে লেনিন  সাম্রাজ্যবাদকে পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ রূপ বলে চিহ্নিত করেন পুঁজিবাদী অর্থনীতি পরিচালিত হতো বাজারের নিয়মে যেখানে ক্রেতা বিক্রেতারা এক ধরনের বাজারের সার্বভৌমত্বের সুবিধা ভোগ করত তবে একচেটিয়া পুঁজিবাদের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিযোগিতার পরিসর  কমতে থাকে তা সীমিত হয়ে পড়ে মুষ্টিমেয়র মধ্যে প্রতিযোগিতায়

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুঁজিবাদের সংকট ঘনীভূত হয় যুদ্ধ ভোগবাদ আর সমরবাদকে মদত করে পুঁজিবাদ টিকে থাকে বার বার বাজার সংকটে জর্জরিত হয়েও পৃথিবীর বাজার দখলকে কেন্দ্র করে উপনিবেশকে টিকিয়ে রাখার জন্য  একদেশের সঙ্গে আরেক দেশের মধ্যে যেমন যুদ্ধ শুরু হয় তেমনি ঔপনিবেশিক দেশের মুক্তিকামী  মানুষের সাথে পুঁজিবাদী দেশের যুদ্ধ হতে থাকে একের পর এক দুটি বিশ্বযুদ্ধ ঘটে যায় আবার বিভিন্ন দেশের মুক্তিকামী মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় পায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পিছু হঠে সাম্রাজ্যবাদ উপনিবেশ ছেড়ে  আসতে বাধ্য হয় তবে ভারতের মত উপনিবেশগুলি থেকে অবিরাম সম্পদ লুঠ হয়ে যাওয়ায় সে সব দেশে স্বাধীন পুঁজিবাদের তেমন বিকাশ ঘটে না দেশগুলো স্বল্প পুঁজির দেশ হয়ে ওঠে ভারতের পুঁজি একধরনের আমলা পুঁজি হয়ে ওঠে যা বিদেশি বৃহৎ পুঁজির সঙ্গে গাঁট ছড়া বাঁধতে বাধ্য হয় পুঁজির স্বল্পতার জন্য আর বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতার জন্য ক্ষমতার হস্তান্তর হয় ১৯৪৭ সালে কিন্তু ভারত আত্মনির্ভর অর্থনীতি হয়ে উঠতে পারেনি আজও

আজকের দুনিয়ায় ঔপনিবেশিকতা নয়া ঔপনিবেশিকতায় রূপান্তরিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালের পরবর্তী সময় থেকে, সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে উপনিবেশগুলো বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রণের অর্থনীতি চালু হয় পুরোপুরি বিদেশি পুঁজির শৃঙ্খল থেকে আমলাপুঞ্জি নিজেদের মুক্ত করতে না পারলেও নিয়ন্ত্রণের অর্থনীতির মধ্যে বিদেশি পুঁজির অবাধ প্রবেশ থাকে না বলে দেশীয় আমলা পুঁজির বাঁধন কিছুটা আলগা হয় বিদেশি বহুজাতিক সংস্থাগুলো তাদের প্রাধান্য পরোক্ষে রাখলেও ভারতের মাটিতে তাদের সংস্থাগুলি কিছুটা ভারতীয় হয়ে ওঠে যেমন ইউনিলিভার ভারতে তার নাম বদলে হিন্দুস্থান লিভার হয়নতুন বিদেশি পুঁজির তেমন অনুপ্রবেশ না থাকায় ফেরা আইনের মধ্যে এখানে শ্রম আইনের মধ্যে থেকে তাদের কর্পোরেট সংস্থা চালু রাখে ব্রিটানিয়া মারুতি বা এম্বাসেডর কোম্পানির মত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য কিন্তু আজ বিশ্বায়নের কবলে পড়ে বিদেশী পুঁজির অবাধ আগ্রাসন শুরু হয় সাবেকি আমলাপুঁজিও বিদেশি পুঁজির আগ্রাসনের সন্মুখীন হয় কিন্তু  আমলা পুঁজির কোমর ভাঙ্গা বলে পরিবর্তিত অবস্থায় নিজেদের আবার বিদেশি পুঁজির সঙ্গে গাঁট বন্ধনকে আরও শক্ত করতে হয় বিদেশ থেকে আসা নতুন পুঁজির মুখে তারা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে আমলা পুঁজিকে নতুনভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হয় দেশে রাষ্ট্রের সঙ্গে এক অশুভ আঁতাতে আসতে হয় রাষ্ট্র বিশ্বস্তরে কর্পোরেটের অনুপ্রবেশ অবাধ করে দেয় বলে তারাও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গাঁট বেঁধে রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের স্বার্থ বজায় রেখে চলে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলকে অর্থ নানা সাহায্য দিয়ে প্রযুক্তির ওপর দখল রেখে সেই কাজ আরও সহজ হয় শিল্প ব্যবসা বানিজ্যে তাদের ঝুঁকি বাড়ে সাধারণ মানুষের জমা টাকায় এক ঋণ পুঁজি গড়ে ওঠে যা সরকারি ব্যাংকে সামাজিক পুঁজি হিসেবে বেড়ে ওঠেএটা অর্থনীতির পক্ষে ব্যাংক জাতীয়করণের একটা সদর্থক দিক ছিল সন্দেহ নেই  কর্পোরেট দুনিয়া ইতিমধ্যে ভারতে সাধারণ মানুষের সরকারি ব্যাংকে জমানো টাকার মধ্যে বিশাল ঋণপুজির গন্ধ পায় নতুন আর্থিক নীতিতে ব্যাংক ইন্সুরেন্স কোম্পানির বেসরকারিকরণ ঘটে চলে দেশী বিদেশী পুঁজি আর্থিক উদারীকরণের নীতির সুযোগ গ্রহণ করে বিশ্বায়নের দৌলতে সরকারি ব্যাংকের অবাধ ঋণনীতি তাদের পুঁজি যোগানের উৎস হয়ে দাঁড়ায় রাজনীতির সঙ্গে কর্পোরেট সংস্থার এক অনৈতিক বন্ধনে গড়ে ওঠে একধরনের নতুন পুঁজিবাদ যাকে আমরা পিরিতের বা সৌহার্দের পুঁজিবাদ বলছি এর দৌলতে একধরনের লুম্পেন পুঁজি গড়ে ওঠে ব্যাংকের টাকা তথা সাধারণ মানুষের টাকা লুঠ করে কারণ এই অবাধ ঋণ নীতির ফলে কর্পোরেটের ঋণ ফেরতের তাগিদ থাকে না পুঁজি খাটানোর ঝুঁকি বাড়ে বলে তারা নিজেদের পুঁজির ঝুঁকি যা নিত তাও কমাতে থাকে ঋণ নির্ভর হয়ে পড়ে আরও বেশি মাত্রায় নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনায় আসব এই লুম্পেন পুঁজির বিকাশ পুঁজিবাদের সংকটেরই একটা দিক যা প্রগতির পথ রুদ্ধ করে, পুঁজিবাদের মধ্যে থেকেই যে গণতন্ত্র মানবতার দাবি ওঠে তা অস্বীকার করে বাজার অর্থনীতিতে গড়ে ওঠা নীতিকেও অগ্রাহ্য করে উৎপাদনকে নয় ব্যবসাকে বেশি গুরুত্ব দেয় বাজারে চাহিদা যোগানের মধ্যে কেনসিও ধারায় চাহিদাকে গুরুত্ব দেয় উৎপাদন বাড়িয়ে যোগান বাড়িয়ে চাহিদা বাড়ানোর ক্রিয়াকে গুরুত্ব দেয় না বরং এক ধরনের অনুগ্রহের অর্থনীতি গড়ে তোলে যা শ্রমের মর্যাদাকে উপেক্ষা করে অনুদানের ওপর বেঁচে থাকার মনন তৈরী করেবাজারে এক ধরনের কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করতে সাহায্য করে কেইন্সের অর্থনীতির অনুকরণে যা এই পিরিতের অর্থনীতির সঙ্গে খাপ খায় পিরিতের পুঁজিবাদকে কেতাবী ভাষায় সৌহার্দের পুঁজিবাদ বলা যেতে পারে ইংরেজিতে একে বলে Crony Capitalism এবার আমরা এর ওপর আলোচনা কেন্দ্রীভূত করব


উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বাজার ব্যবস্থার দুটি দিক নিয়ে আলোচনা করব যা আমাদের মূল আলোচনাকে বুঝতে সাহায্য করবে আজের অর্থনীতির স্বরূপ যাতে ফুটে উঠবে দুটি দিকের মধ্যে একটি হল যোগানের দিক আর একটি হল চাহিদার দিক বাজার ব্যবস্থা মনে করে দেশে যদি উৎপাদন বাড়ে তবে কলে কারখানায় ব্যবসা বাণিজ্যে নিয়োগ বাড়বে কর্মে নিযুক্ত মানুষের হাতে টাকা আসবে কেনাকাটা বাড়ে কেনাকাটা বাড়ে মানে চাহিদা বাড়ে সরকারের বিশেষ সাহায্য ছাড়াই অর্থনীতির চাকা ঘুরতে থাকে উৎপাদন হওয়া মানে যোগান বাড়া আবার চাহিদার দিক দিয়ে বলা হয় চাহিদা বজায় রেখে তাকে বাড়িয়ে চলতে পারলে উৎপাদকের ক্ষিদে বজায় থাকে সে পুঁজি নিয়োগে উৎপাদনে উৎসাহ পায় শ্রম নিয়োগ বাড়ে উৎপাদন বাড়েফলে যোগান বাড়ে আবার নিয়োগ বাড়ে বলে আয় বাড়ে চাহিদা বাড়ে সরকারের তেমন অংশগ্রহণ দরকার হয় না অর্থনীতি নিজ গতিতে চলে এইভাবে বাজার ব্যবস্থার কার্যকারিতাকে যোগানের দিক থেকে আবার চাহিদার দিক থেকে দেখা হয় কিন্তু বাস্তবে পুঁজিবাদী বাজার ব্যবস্থা এত মসৃণ ভাবে চলে না শ্রম বাঁচানোর প্রযুক্তির উদ্ভব দেশের আর্থিক বৈষম্য যাদের বেশি টাকা আছে তার সবটা খরচ না করার তথা টাকা হাতে রাখার তাগিদ দেখা দেয় বলে যোগান যতটা চায় ততটা চাহিদা থাকে না ফলে মাল বিক্রিতে  টান পরে বাজার সংকট দেখা যায় এই সংকট কাটাবার জন্য অনেক অর্থনীতিবিদ চাহিদা যে ভাবেই হোক বাড়িয়ে বাজার তাজা রেখে সংকট কাটাবার কথা বলেন এই চাহিদা উৎপাদন নিয়োগ বাড়াবার দিক থেকে না এলে কৃত্রিম উপায়ে মানুষের হাতে টাকা দিয়ে দরকারে চাহিদা বাড়াতে হয় তাতে উৎপাদন বাড়ুক বা না বাড়ুক বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ কেইনস চাহিদা সৃষ্টি করে অর্থনীতিকে বাঁচাবার কথা বলেন দরকারে রাস্তা খুঁড়ে  তা বন্ধ করে দেওয়া হোক তাতে যে টাকা শ্রমিকের পকেটে আসে তা চাহিদার সৃষ্টি করেআর টাকার যোগান দেবে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি বাজেটে আয়ের থেকে খরচ বেশি দেখিযে ঘাটতি রেখে চাহিদা বাড়িয়ে তোলার তাগিদে এই নিদান একে ঘাটতি ব্যয় নীতি বলা হয় উন্নত পুঁজিবাদী দেশে চাহিদা সংকট কাটাবার তাগিদে এই নীতি অবলম্বন করা হয়েছিল উন্নত পুঁজিবাদী দেশে বাজার সংকটের সময় যোগান দেওয়া পণ্য অবিক্রিত থেকে যায় বলে অর্থনীতির মন্দার সময় এই নীতি গৃহীত হয় কেইনসের নিদান অনুযায়ী একে কেইনসের অর্থনীতি বলে যা উৎপাদনশীল কাজে শ্রমের ব্যবহারের কথা বলে না সরকারের সহযোগিতায় টাকার যোগান বাড়িয়ে মাটি খুঁড়ে বন্ধ করার মত অনুৎপাদনশীল কাজে শ্রমের ব্যবহারের কথা বলে এও একধরনের অনুদান অর্থনীতিকে সমর্থন করে যা আজ পশ্চিম বঙ্গ সহ সব রাজ্য চালু করেছে কেন্দ্রের আনুকূল্যেতামিল নাদুতে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয় ললিতা এই ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করে নিজের জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছিলেন এই অনুৎপাদনশীল কর্মবিমুখ অর্থনীতিই আজ পশ্চিম বঙ্গের মমতা অর্থনীতি যাকে আমরা অনুৎপাদনশীল অনুদানের অর্থনীতি বলেছিকেন্দ্রীয় সরকারও বিভিন্ন প্রকল্পে এই নীতি গ্রহণ করে চলেছে এতে সত্যিকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে না স্বল্পকালীন জোড়াতালির ব্যবস্থা হয় কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে বাজার অর্থনীতিতে উৎপাদন বাড়িয়ে মানুষের কর্মংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করে টাকার যোগান বাড়িয়ে চাহিদা বাড়িয়ে এইভাবে অর্থনীতিকে চালানোকে আমরা অনুৎপাদনশীল খরচ বলে মনে করি যা সত্যিকারের অর্থনীতির কাজ নয়  সেখানে যোগানের দিক থেকে শ্রম নিয়োগের দিক থেকে বাজার ব্যবস্থার গুরুত্ব কমে যায় আজ পুঁজিবাদের এই চাহিদা  সংকট একটা স্থায়ী সংকট  কিন্তু ভারতের মত দেশে এই নীতি ভয়াভয় এক মুদ্রাস্ফীতি ঘটায় অর্থনীতির নিশ্চলতা বজায় রাখে যাকে ইংরেজিতে stagflation বলা হয়

ওপরের আলোচনা প্রসঙ্গে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় চাহিদা সংকটের কারণটা তুলে ধরতে পারি পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সংকটকালীন সময়ে চাহিদার অভাবে কলে কারখানায় উৎপাদনক্ষমতা অব্যবহৃত রয়ে যায় এই অবস্থায় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয় না কারণ পণ্যের বাজার নেই বাজারে চাহিদার অভাব দেখা যায় চারটি কারণেআয় বণ্টন বৈষম্য যা ব্যাপক সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়তে দেয় না দ্বিতীয়ত ধনী মানুষদের ভোগ প্রবণতা প্রয়োজনের তুলনায় কম সেটা তেমন হারে বাড়ে না তাদের আয় বাড়তে থাকলেও অতিরিক্ত আয়ের স্বল্পাংশ খরচ হয়ফলে চাহিদা সেই হারে বাড়ে না তৃতীয়ত যাদের হাতে টাকা থাকে শেয়ার বাজারে ডামাডোল দেখা দেয় বলে তারা টাকা হাতে ধরে রেখে অপেক্ষা করে যা নিষ্ক্রিয় বা অলস অর্থ বলে বিবেচিত হয়, চাহিদা সৃষ্টি করতে পারে না এই অবস্থায় উৎপাদন বাড়িয়ে শ্রম  নিয়োগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো মালিকদের স্বার্থ সিদ্ধি করে না কারণ বাজারের সংকট তাই ঘাটতি ব্যয় নীতি অনুসরণ করা হয়রাস্তা খুড়ে ভরাট করার মত অনুৎপাদনশীল খাতে খরচের নিদান দেওয়া হয় যাতে উৎপাদন বৃদ্ধি নয় শ্রম নিয়োগ বৃদ্ধি নয়, শুধু চাহিদা বাড়ে যাতে দেশের অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার বাড়ানো যায়কিন্তু আজকের ভারতে এই নীতি অনুসৃত হওয়া উন্নয়নের স্বার্থবিরোধী কারণ তাতে দেশের উৎপাদন বাড়তে পারে না শ্রম নিয়োগ বাড়ে না ভারতে উন্নত দেশের মত পুঁজির বিকাশ ঘটে নি পুঁজি উদ্বৃত্তের সৃষ্টি হয় নি এটা স্বল্প পুঁজি স্বল্প উৎপাদনের দেশযদিও এই সব দেশেও একক কোন উৎপাদন সংগঠন ব্যষ্টি অর্থনীতির দিক দিয়ে  চাহিদার অভাবে অতিউৎপদন ক্ষমতার সংকটে নিমজ্জিত হয়তাই বলে সামগ্রীক অর্থনীতির জন্য মাটি খুড়ে আবার গর্ত বন্ধ করার নীতি উৎপাদন স্বল্পতার মুখে ঘাটতি ব্যয় নীতি  অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ নীতি কার্যকরী হয় না বরং মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করে মানুষের দুরবস্থা বাড়ায় একে আমরা খয়রাতি অর্থনীতি বলিকিন্তু এই নীতি ব্যষ্টিস্তরে কর্পেরেট দুনিয়ার চাহিদা রক্ষা করতে পারে বলে মনে করা হয় আর সস্তায় গরীব মানুষকে ক্ষমতাসীন দলের তাবেতে রাখা যায় একধরনের সস্তা জনপ্রিয়তার নীতির কল্যাণে একেই আমরা অনুদানের অর্থনীতি তথা খয়রাতি অর্থনীতি বলি যা পিরিতি পুঁজিবাদের ভারতীয় রূপ চতুর্থত আজকে বাজারে চাহিদার সংকট দেখা দেয় কারণ  আজকের পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে শ্রম সঞ্চয়ী প্রযুক্তির ব্যাপক অনিয়ন্ত্রিত ব্যাবহারের দরুন শ্রম নিয়োগ কমে

দেখা যায় যে পিরিতের পুঁজিবাদের উদ্ভব ঘটে অর্থনীতির প্রভাবশালীদের সঙ্গে রাজনীতির জগতে ক্ষমতায় থাকা প্রভাবশালীদের মধ্যে এক ধরনের আঁতাতের ফলে আর এই আঁতাতের অঙ্গুলি হেলনে চলে অর্থনীতি রাজনীতি এতে অর্থনীতির প্রভুরা যেমন লাভবান হয় তেমনি রাজনীতির কর্তাব্যক্তিরা অর্থনীতিতে লুঠের রাজ প্রতিষ্ঠিত হয় সম্পদের নির্গমন ঘটে পুঁজি উৎপাদনশীল খাতে প্রবাহিত হতে পারে না শিল্প সংকট যেমন নেমে আসে তেমনি কৃষিতে নেমে আসে ধ্বংসলীলা জল জমি জঙ্গল লুঠ হয়ে যায় আর্থিক দুরাবস্থার জন্য শ্রমজীবী মানুষের শহরমুখী গমনের হার বাড়ে অথচ শিল্পের বিকাশ ঘটে না সেখানে চাকুরীর সুযোগ সংকুচিত হয় অসংগঠিত ক্ষেত্রে ঠিকা কাজ করে মানুষকে বেঁচে থাকতে হয় রাষ্ট্রের আনুগত্যের মুখাপেক্ষী হয়ে ওঠে শ্রমজীবী মানুষ একধরনের অনুগ্রহের অর্থনীতি তৈরি হয় যা মানুষকে শিরদাঁড়া সোজা রেখে বাঁচতে দেয় না পুরো সমাজটাই হয়ে দাঁড়ায় ক্লীব পরনির্ভর অফলা কৃষি উৎপাদন মানুষের জীবন ধারণ থেকে সরে যায় একধরনের খাদ্য শিল্পে যা অসংগঠিত ক্ষেত্রে উৎপাদিত হয় যার ওপর অন লাইনে প্রভুত্ব করা আমাজনের মত বহুজাতিক ব্যবসা সংস্থার কর্তৃত্ব স্থাপিত হয় কৃষি পণ্য আমদানি বাড়ে জমি বিকল্প ব্যবহারে বাড়ে তার মধ্যে রিয়েল এস্টেট প্রধান পুঁজিবাদী অর্থনীতির ধরনটাই বদলে যায় যা এই পিরিতের পুঁজিবাদকে মদত করে এটা হলো ভারতের মত দেশগুলোর বর্তমান অবস্থা একদিকে কর্পোরেট দুনিয়া ব্যাংক লুঠ করে চলে আরেকদিকে রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় স্তরে লুঠের যাত্রারথের সারথী হয়ে দাঁড়ায় রাজনীতির মাতব্বরেরা পশ্চিম বঙ্গে যেটা আজ প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে এর সঙ্গে যুক্ত হয় আর্থিক বৈষম্যের ঘনঘটা বিদেশী ঋণের ভারে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয় ভোগবাদের সংস্কৃতি সৃষ্টি হয় যা কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে কর্পোরেট দুনিয়াকে টিকিয়ে রাখতে চায় যুদ্ধবাজকে মদত করা হয়

আমরা দেখি যে পিরিতের পুঁজিবাদে অর্থনীতি আর রাজনীতি আলাদা সত্তা থাকে না, একে অপরের পরিপূরক হয়ে যায় আর এর সুবিধা গ্রহণ করে কর্পোরেট দুনিয়া আর রাজনীতির  ব্যবসাদারেরা ব্যাংককে লুঠ যেমন করা হয় তেমনি শ্রমের মর্যাদা হরণ করে মানুষের শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়ে সমাজটাকে করে তোলা হয় বন্ধ্যা পরনির্ভর রাষ্ট্র এই ধরনের পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষক আইন চালু করে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলো দ্বংস করে এটা করা হয় বিচার বিভাগ আইন বিভাগ প্রশাসন সংবাদ যোগাযোগ সব কিছুকে কাজে লাগিয়ে এই ব্যবস্থার কার্যকর মঞ্চ তৈরি হয় প্রতিবাদের কণ্ঠ রোধ করা হয় রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতি রাজনীতির এই মিশ্রণ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে ভেবেই বহুদিন আগে প্লেটো বলেছিলেন:

Those who exercise political power  should have no economic motives and those who are engaged in economic activities should have no share in political power”.

আজ পিরিতের পুঁজিবাদ একটা ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বরাবরই ক্ষতিকর দিক আছে তার মধ্যেও তার একটা মানবিক মুখের প্রয়োজন স্বীকার করা হয় মানুষের অধিকারবোধকে অস্বীকার করা হয় না কিন্তু পুঁজিবাদের ধ্বংসাত্মক দিকটাকে স্বীকার করেও অর্থনীতিবিদ  জোসেফ সুম্পিতার পুঁজিবাদের ধ্বংসের কাজকে Creative Destruction বলে উল্লেখ করেন (Capitalism, Socialism, Democracy (1942) কারণ পুঁজিবাদের আবির্ভাব ঘটে সামন্তবাদকে ধ্বংস করে যে সামন্তবাদ ছিল প্রগতির পরিপন্থীকিন্তু পিরিতি পুঁজিবাদের জন্ম হওয়ায় পুঁজিবাদ তার সদর্থক দিক হারিয়েছে পিরিতি অর্থনীতি মানুষের স্বার্থে উদ্ভাবনের পথে বাধা, মানব সভ্যতার পথে প্রতিবন্ধী রাষ্ট্রকে অমানবিক কাজে মদত করে লুঠের পথ খুলে দেয় রাজনীতি আর অর্থনীতির মধ্যে আঁতাত শুধু লোভ আর লাভের পথ প্রশস্ত করে আর এই লাভ বাজার ব্যবস্থার ক্রিয়াশীল প্রক্রিয়ার ফসল নয় লাভ লুঠের ফসলসাধারণ মানুষের টাকায় ব্যাংকে যে সামাজিক পুঁজি গড়ে ওঠে তা লুঠ করাই হলো এই লাভ আজ যে ঋণ উন্নয়নের নামে দেওয়া হয় তা ফেরত দেওয়ার দায় থাকে না ব্যাবসায়ী শিল্পপতিদের তাদের আত্মীয় রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজনীতিবিদরা তাদের আড়াল করে উদারীকরণের নামে এমন নীতি বানায় যার ফাঁকে এরা বেঁচে যায় আমরা জানি সাম্প্রতিক কালে লক্ষ্য কোটি টাকার লুঠের ঘটনার সঙ্গে  যে ক্ষমতা গোষ্ঠী যুক্ত তা বলার অপেক্ষা রাখে না

 

আজকের ভারতে পিরিতের অর্থনীতি:


আজকের ভারতে ভোট সর্বস্ব এই পিরিতের অর্থনীতির জন্ম হয় বিশ্বজুড়ে আধিপত্যে থাকা সাম্রাজ্যবাদের যুগের পুঁজিবাদের গর্ভেই তাই তাকে পুঁজিবাদের একটা ধরন বলে মনে করা হয় এই পিরিতের পুঁজিবাদ একধরনের দুর্বৃত্তের অর্থনীতি যা পুঁজিবাদের সদর্থক দিকগুলি অস্বীকার করে বিভিন্ন ধরনের দুর্বৃত্ত মূলক কাজকে সমর্থন করেরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা দলের মিলন বন্ধনের মাধ্যম এই পিরিতের অর্থনীতি গড়ে ওঠে নানা ধরনের দুর্বৃত্তমূলক কাজকে কেন্দ্র করেই এই অর্থনীতি গড়ে ওঠে

 রাষ্ট্র কর্পোরেট দুনিয়ার মধ্যে গাঁট বন্ধন এই ধরনের ভয়ঙ্কর  অর্থনীতির জন্ম দিয়েছে উল্লেখযোগ্য যে এই ধরনের অর্থনীতিতে পুঁজিবাদের তথা বাজার অর্থনীতির সদর্থক বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায় না রাষ্ট্র আর তাকে কেন্দ্র করে রাজনীতি কোন স্বাধীন সত্তা হিসেবে থাকে না অর্থনীতির স্বার্থের সঙ্গে রাজনৈতিক স্বার্থের এক মিশ্রণ ঘটে উভয় জগতের ক্ষমতাশীল গোষ্ঠীর মধ্যে গলায় গলায় এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে দুই গোষ্ঠী একাকার হয়ে ওঠে একের স্বার্থ অন্যের স্বার্থের পরিপূরক হয়ে যায় এই ধরনের অর্থনীতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো কর্পোরেট জগতকে তার স্বার্থে কাজ করার অবাধ সুযোগ দেওয়া হয় আর এর সঙ্গে এক অন্তত্র আবদ্ধ হয়  রাষ্ট্র রাজনৈতিক দল

  দলীয় নেতা কর্মীরা নানা আর্থিক সুবিধা পায় রাষ্ট্রের প্রতিনিধি ক্ষমতাশীল সরকার আর দলের সঙ্গে অর্থনীতির প্রভুদের গলায় গলায় সম্পর্ক দেখা যায় যার জোরে অর্থনীতির কাজকর্ম চলে তার স্বার্থে আইন বিচার প্রশাসন সংবাদ মাধ্যম সবই চলে গণতন্ত্রের চার স্তম্ভ যাকে বলা হয় তা ধ্বংস হয় আর এই আঁতাত ধরে রাখতে কর্পোরেট জগতের স্বার্থে একের পর এক তথাকথিত সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় যা  ভারতে বিশ্বায়নের কর্মসূচি গ্রহণ করার সময় কাল থেকে দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রের কোন অনাকাঙ্খিত কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদীর কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে শ্রম সময়ের নিয়ম ভঙ্গ করে শ্রমিক কর্মচারীদের নীয়ম বহির্ভূত ভাবে খাটানো হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বিভিন্ন সময়ে যে অধিকারগুলো মানুষ অর্জন করেছে সেগুলো একের পর এক খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে অযাচিত ভাবে বিভিন্ন ধরনের অনুদান দিয়ে মানুষের শ্রমের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে মানুষের অধিকার বোধ দমন করার জন্য খয়রাতির মাধ্যমে  অনুগ্রহের একধরনের অনুৎপাদনশীল  ব্যবস্থার মধ্যে সমাজটাকে ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে এর জন্য সরকারের মাধ্যমে কর্পোরেট জগৎ অর্থ ব্যয় করছে যা তারা ব্যাংকের ঋণের মাধ্যমে পায় সংগৃহীত হয় কর থেকে ব্যাংক ঋণ রয়ে যায় অনাদায়ী হলো  এক ধরনের লুঠ এই পিরিতের অর্থনীতির এটাই বৈশিষ্ট্য এটা বলা চলে যে পিরিতের অর্থনীতির সাফল্য নির্ভর করে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আর রাষ্ট্রের প্রতিনিধি সরকারের  মধ্যে অশুভ আঁতাতের ওপরএই আঁতাতের উদ্দেশ্য হল অর্থনীতি আর রাজনীতির জগতের প্রভাবশালীদের লুঠের পথ খুলে দেওয়া

খুবই দুঃখজনক যে রাষ্ট্রের গরীব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সমাজে তাঁদের মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করা, তাঁদের মধ্যে যে সুপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে তার বিকাশ ঘটিয়ে তাকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানো, বিপুল জনশক্তিকে সংস্কৃতিবান করে তোলার সঠিক বিষয়টার অপব্যবহার ঘটায় এটা  আজ ভারতের মত তথাকথিত সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনে শাসকগোষ্ঠীর হাতে হাতিয়ার হয়ে উঠেছেস্বাধীন আত্মনির্ভর ভারত তৈরির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেগরীব সাধারণ মানুষের শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়ে তাকে অনুৎপাদনশীল খাতে প্রবাহিত করে দেওয়া হচ্ছেএটা শুধু ব্যক্তি মানুষকে জাহান্নামে পাঠাচ্ছে তাই নয় সমাজও জাহান্নামে যাচ্ছে মানুষের অধিকার বোধ আত্মসম্মানবোধ ধ্বংস হচ্ছে মানুষ নিজের ওপর ভরসা না করে পরজীবী অনুৎপাদনশীল জীবে পরিণত হচ্ছে একে কেন্দ্র করে লুঠ চুরি দাঙ্গা বেড়ে চলেছে দেশের অর্থনীতি একধরনের খয়রাতির অর্থনীতিতে পরিণত হচ্ছে যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছেমেহনত করে নিজের অধিকার বজায় রেখে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ লোপ পাচ্ছে একেই আমরা একধরনের উপগ্রহ অর্থনীতির একটা ধরন তথা অনুগ্রহের অর্থনীতি বলতে পারি মানুষের ইজ্জত বলে কিছু থাকছে নাসঠিক পথে উন্নয়নের দিশা থাকছে না, তা বিপথে চালিত হচ্ছে শাসকের ধমকানিতে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে উন্নত দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে আর সবই হচ্ছে তথাকথিত  সাংবিধানিক গণতন্ত্রের নীতি মেনে

আজ পশ্চিমবঙ্গসহ সারা ভারতে এক সর্বগ্রাসী অনুদান তথা খয়রাতির অর্থনীতি চালু হয়েছে যা ভারতকে একটা উপগ্রহ অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তোলার সর্বশেষ পরিণতি ভারতে পিরিতের অর্থনীতির স্বরূপটা আমরা তুলে ধরতে পারি যেটা কার্যত একটা অনুৎপাদনশীল খয়রাতি বা অনুগ্রহের অর্থনীতি আজের ভারতে এই খয়রাতি অর্থনীতির ওপর আমরা কিছুটা আলোচনা করব এই খয়রাতি অর্থনীতির  ওপর দাঁড়িয়ে দেশের রাজনীতি সংস্কৃতিতে এক বিকৃতি এসেছে এই বিকৃত অর্থনীতির সূত্রপাত অনেক আগেই, কার্যত কংগ্রেস আমল থেকেইআজ পশ্চিমবঙ্গসহ সাড়া ভারতে একে আরও উলংগ নির্মম করে তোলা হয়েছে যার ওপর দাঁড়িয়ে এক স্বৈরাচারী শাসন চলছেকার্যত এই খয়রাতির অর্থনীতিই শাসকগোষ্ঠীকে ক্ষমতা ধরে রাখার মদত যোগাচ্ছেহ্যাঁ বলছি কংগ্রেস আমলেই এর সূত্রপাত তবে সূত্রপাতটা হয়েছিল রেখে ঢেকে একটা নীতিকে সামনে রেখে নীতিগত ভাবে এর গ্রহণযোগ্যতা বজায় রেখে ঠিক স্বাধীনতার পর যখন ব্যাপক মানুষ এই নীতিগুলোকে প্রগতিশীল বলে মনে করতেন কিন্তু এর অপব্যবহার, একে কেন্দ্র করে সুবিধাবাদকে সরকার প্রশ্রয় দিয়ে কার্যত এক ধরনের অনুগ্রহের খয়রাতির নীতিকে কার্যকরী করে তুলেছে যা আজ শাসকের হাতে বিষবৃক্ষ হয়ে উঠেছে কিছু উন্নয়নের কর্মসূচির মুখোশে কংগ্রেস আমলে গৃহীত কিছু নীতি আমরা তুলে ধরছি উদাহরণ হিসেবে শুরু করা যাক অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দিয়ে আর তার সঙ্গে সরকারি বিভাগে সরকারী চাকুরীর সুযোগ বৃদ্ধি নিয়ে যখন রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে পরিকল্পনার অর্থনীতি ভারতে চালু হয় ১৯৫১ সালে তখন তা ব্যাপক জনসমর্থন পায় প্রয়াত জহরলাল নেহেরু তখন ভারতের প্রধান মন্ত্রী যদিও নিজেদের বেসরকারি বিভাগে কাঠামো তৈরির স্বার্থে ভারতে টাটা বিড়লারাও পরিকল্পনার অর্থনীতি চেয়েছিলেন তার রূপ রেখ নির্ণয়ে (বোম্বে পরিকল্পনা যেটা গৃহীত হয়) সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছিলেন, তাও জনসমর্থনের ঘাটতি ছিল না এর ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বিভাগ গড়ে ওঠে অর্থনীতির কাঠামো তৈরিতে সাধারণ মানুষের টাকা রাষ্ট্রীয় পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত হয় পরে ব্যাংক ইন্সুরেন্স সবই এই পুঁজি যোগানের উৎসক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায় নীতিগত ভাবে একে বিরোধিতা করা যায় না এর সঙ্গে সরকারি বিভাগে প্রচুর নিয়োগ বাড়ে কিন্তু দেখা যায় কালক্রমে এর অপব্যবহার ঘটে নিপুণভাবে একে চালাবার কোন প্রয়াস দেখা যায় না, একে রাষ্ট্রের তত্বাবধানে রেখে নৈপুণ্য দেওয়ার চেষ্টা হয় না একধরনের সুবিধেভোগী দুর্নীতিপরায়ণ সরকারি কর্মচারী একে নিজেদের মোশাহেবির জায়গা, ফাঁকি মেরে ঘুষ খেয়ে আখের গোছানোর জায়গা করে তোলে এর ফলে এখানে বিনিয়োজিত সাধারণ মানুষের পুঁজির নিষ্কাশন (drain) হতে থাকেসরকারি বিভাগ ক্ষতির সম্মুখীন হতে থাকে সরকারি উদ্যোগের ওপর অনীহা বাড়ে কার্যত সরকারি বিভাগ আজকের অনুদানের অর্থনীতির পূর্বসূরি হয়ে দাঁড়ায় আজ বেসরকারিকরণের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সরকারি ক্ষেত্রগুলো একের পর এক বেসরকারি কর্পোরেট বিভাগ জলের দামে কিনে নিচ্ছে এই বিভাগগুলো সুবিধেবাদি একধরনের কর্মচারীর কাছে যেমন অনুদানের অর্থনীতি হয়ে দাঁড়ায় আজ বেসরকারি কর্পোরেট বিভাগেরও এই কম দামে কিনে নেওয়াটা একধরনের অনুদানের বা খয়রাতির অর্থনীতি বি এস এন এল কয়লা ব্যাংক উড়ান বীমা কোম্পানির বেসরকারিকরন এই বার্তাই বহন করে এমন কি শিক্ষা স্বাস্থ্য বিভাগে বেসরকারি বিভাগ থাবা বাড়ায় দেখা যাবে হয়তো সরকারি স্কুল হাসপাতাল বড় পরিকাঠামো সহ বিক্রি  হয়ে যাবে জলের দামে রাজনীতিতে অধিষ্ঠিত কাউন্সিলর থেকে আরম্ভ করে এম এল এম পি সবাই এর অঢেল সুযোগ পাচ্ছে তাদের আকাশ ছোঁয়া মাইনে নানা ধরনের অঢেল সুবিধা তার সঙ্গে কাট মানি এরাই জনদরদী বন্ধু পশ্চিম বঙ্গে ত্রিশ বছরের বাম রাজত্বও একে নিয়ন্ত্রন করতে পারে নি বা পাড়ার চেষ্টা করেনি দেখা যাচ্ছে এককালের অনুসৃত জনপ্রিয় কল্যাণমূলক নীতিগুলো অপব্যবহারের ফলে তা সময়কালে অনাকাঙ্খিত অনুৎপাদনশীল খয়রাতি নীতিতে পরিণত হয়েছে

এবার আসা যাক সংরক্ষণের নীতিতে সরকারের নেতৃত্বে কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে গরীব মানুষের নিজের অধিকারে নিজেকে দাঁড়াবার জন্য অসম প্রতিযোগিতার মুখে বর্ণ ভিত্তিক ভারতীয় সমাজে কেবল গরীব নিম্ন বর্গের মানুষের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য   সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল সন্দেহ নেই কিন্তু সেটা বংশ পরম্পরায় চালু করে তাকে একটা সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর আখড়া বানিয়ে তোলা হয়েছে দেখা হয়নি যে নিম্ন বর্ণের মানুষের মধ্যেও ধনী সুবিধেভোগী একটা সম্প্রদায় আছে কার্যত সংরক্ষণের সুবিধা এরাই মূলত ভোগ করেছে করছে নিম্নবিত্ত বনে যাওয়ার হাতিয়ার বানানো হয়েছে তপশিলিভুক্ত  মানুষদের  জন্য তৈরি হওয়া সরকারি অফিসকে যেখানে কার্যত নিম্নবর্ণের শংসা পত্র বিক্রি হয় আমার পরিচিত কয়েকটি ব্যবসায়ী পরিবার নিম্ন বর্গ না হয়েও এই শংসা পত্র জোগাড় করে বলা ভালো কিনে নিয়ে  বংশপরম্পরায় এর সুযোগ নিয়ে চলেছেএটা ব্যতিক্রম নয় এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ দলিতদের অধিকারের নামেও সারা ভারতে এটা চলছে ফলে প্রকৃত গরিবদের সুবিধা হচ্ছে না কার্যত একে সামনে রেখে এক ধরনের খয়রাতির অর্থনীতির বীজ বপন হয়েছে যার শিকড় বহু তলে বিস্তৃত আর তাতে গরীব সমাজে বিভেদের বীজ বপন করা হচ্ছে ধর্ম বর্ণকে কেন্দ্র করেএর ফলে মানুষের আত্মমর্যাদা থাকে না গরিবদের মধ্যে বিভাজন দেখা যায় মানুষ মেহনতের মর্যাদার কথা ভুলে যায় নিম্ন মধ্যবিত্ত উচ্চবর্ণের মধ্যেও কাজের সুযোগের অভাবে দারিদ্র বাড়ছে এরাও সুযোগ পাওয়ার দাবিদার হয়ে উঠছে সরকার ধরনের সাহায্য করার প্রকল্পে মানুষের অর্থনৈতিক বিষয়টা তেমন গুরুত্ব দেয় না বলে বর্ণ ধর্ম নিয়ে বিভেদের পথ খুলে যাচ্ছে আজ এই নীতিগুলোর অপব্যবহার হয়ে চলেছে, এগুলো অপরাধের প্রযোজন ক্ষেত্র  হয়ে উঠেছে যা পশ্চিমবঙ্গে উলংগ রাজার জন্ম দিয়েছে গণতন্ত্র সংবিধান সবকিছুকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে এক স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে এর সুযোগ নিচ্ছে করপরেট দুনিয়া আর আজকের শাসক গোষ্ঠী আর তার দল। দেশকে কার্যত বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বিদেশি ঋণে জর্জরিত হয়ে

কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গ বিভিন্ন রাজ্য সরকার মানুষকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করার নামে খাদ্য শিক্ষা স্বাস্থ্য প্রভৃতি খাতে বিভিন্ন  প্রকল্প  চালু করেছে ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে গোটা চল্লিশ প্রকল্প চালু হয়েছে শুধু পশ্চিমবঙ্গে যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাইকে কোন না কোন ভাবে বেষ্টন করে আছে এদের মধ্যে বেশিটাই ন্যুনতম নগদ দিয়ে সাহায্য করা মেয়েদের সাইকেল দেওয়া ঘরে ঘরে রেশন পৌঁছে দেওয়া রোগীর চিকিৎসায় সাহায্য করা সরকারি নিয়োগ সংস্থায় নাম থাকা যুবকদের চাকুরী না পেলে আর্থিক সাহায্য করা গরীব ঘরের মেয়েদের টাকা দিয়েলক্ষীর ভান্ডারপূর্ন করা ইত্যাদি এর সঙ্গে আছে ক্লাবকে বা বারোয়ারি  পূজায় অর্থ সাহায্য দেওয়া

উল্লেখযোগ্য রাজ্য প্রকল্পগুলো  কতকগুলো কেন্দ্রের প্রকল্পের অনুরূপ তাদের সহযোগিতায় গড়ে ওঠে কিন্তু কোন প্রকল্পই মানুষকে  উপযুক্ত মজুরি দিয়ে  কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে না অর্থাৎ মানুষের খেটে রোজগার করে খাওয়া পরার তাগিদকে সন্মান দেয় না সরকারি অনুগ্রহে কোনমতে  বেঁচে থাকার ওপর জোর দেওয়া হয় অথচ এর জন্য অঢেল টাকা খরচ দেশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য খরচ হয় না এই বিপুল টাকা পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত হয় না সেই অর্থে খরচটা আর্থিক নিষ্কাশন আর মানুষকে ক্ষমতার তাবেতে রাখার চেষ্টা যাতে নির্বাচনে ভোট পাওয়া যায় এর পরে প্রশ্ন ওঠে টাকাটা সত্যি কতটা কার কাছে পৌঁছয় এর থেকে আঞ্চলিক স্তরে রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা বখরা পায় কি নাএই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন কর্মী নেতাদের মধ্যে বাদ বিবাদ খুনোখুনি আমরা প্রায়ই দেখি, খবর পাই তারপরও প্রশ্ন সবকটা প্রকল্প কিভাবে কার্যকরী হয় বা আদৌ হয় কি না যেমন ধরুন পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্য সাথী  প্রকল্প কার্যত সরকারি হাসপাতালে গরীব মানুষের জন্য বিনা পয়সায় চকিৎসা ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই আছে এটা নতুন নয় অর্থাৎ এটাকে নতুন স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প বলা চলে না তবে প্রয়োজনের তুলনায় হাসপাতাল খুব কম থাকায় বিনা খরচায় চিকিৎসার সুযোগ খুব কম মানুষ পেয়ে থাকে গ্রামে গঞ্জে যতটুকু স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে সেখানে কঠিন রোগের চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই যেতে হয় শহরে শহরে রোগীকে নিয়ে চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা প্রান্তিক মানুষের নেই চকিৎসা অধরাই থাকে তাছাড়া হাসপতালে ভালো চিকিৎসা হয় না বলে প্রচার আছে আর সরকারি অফিসের গাফিলতির কথা আমরা আগেই বলেছি তাই যারা ঘটি বাটি বিক্রি করে হলেও ভালো চিকিৎসা  চায় তারা নার্সিং হোমে যায় আর আর্থিক সঙ্গতি যাদের যথেষ্ট তারা হাসপাতাল বর্জন করেছে এখানেই স্বাস্থ্য সাথীর কার্যকারিতাস্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলে সরকার স্বীকৃত নার্সিং হোমে চিকিৎসা বিনামূল্যে করানো যায় সরকার নার্সিং হোমকে টাকা দিয়ে দেয় এখানে প্রশ্নটা থেকে যায় নার্সিং হোম যেগুলো এই প্রকল্পের আওতায় আসে তারা খুব কম আসন স্বাস্থ্য সাথীর জন্য রাখেআর দেখা গেছে যাদের যোগাযোগ আছে একটু উচ্চবিত্ত তারাই এর সুযোগ পাচ্ছে আমাদের বক্তব্য হলো যাদের অর্থ আছে আর সামাজিক মর্যাদার জন্য হাসপাতালে যায় না তাদের এই সুযোগ দেওয়া মানে গরীব মানুষদের বঞ্চিত করা আর সরকার থেকে টাকা পাবার সুবিধা পায় নার্সিং হোমগুলোএকে হাসপাতাল বেসরকারিকরণের প্রথম পদক্ষেপ বলা যেতে পারে এতে হাসপাতালের ওপর আস্থা আরও কমবে আর সরকারি পুঁজি তথা জনগণের টাকায় লাভবান হবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগরীব মানুষের উপকার হবে না বিভিন্ন প্রকল্পগুলো বিশ্লেষণ করলে এই ধরনের নানা ছিদ্র ধরা পড়বে যার ভেতর দিয়ে বয়ে চলবে মুনাফার ফল্গুধারা, সমাজের দুর্নীতি আর রাষ্ট্রের ফাঁকা আওয়াজ নিষ্কাশিত হয়ে চলবে সামাজিক পুঁজি যা উন্নয়ণের কাজে লাগতে পারতআর এই প্রকল্পগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নগদে অনুদান দেওয়ার দিকটা গুরুত্ব পায় তাই দেখা যায় মানুষের পরিশ্রম করে রোজগারের গুরুত্বকে অমান্য করা হয় মানুষের সংস্কৃতিতে  বিনা পরিশ্রমে খাওয়াযর প্রবণতা বাড়ে তার মর্যাদা বোধ  হারায়

দেখা যায় যে আজ আমাদের দেশে খোরাকি দিয়ে জনগণের মঙ্গলের নামে এই চাহিদা বজায় রাখার নীতি কেন্দ্র রাজ্য উভয় পক্ষই চাইছে দুটো কারণে সরকার চায় এইভাবে অনুৎপাদনশীল  খাতে খরচ করে মানুষকে খোরাকি দিয়ে নিজের ভোট ব্যাংক বজায় রাখতে এতে মানুষকে আনুগত্যে বেঁধে রাখতে পারে বলে ক্ষমতাসীন দল মনে করে সরকার জানে তাদের পক্ষে আজ বিশ্বায়নের নিদান বেসরকারিকরণ ঘটিয়ে কর্মসংস্থান বাড়িয়ে চাহিদা বজায় রাখা সম্ভব নয় কারণ বেসরকারি সংস্থা কমখরচে শ্রমের নিয়োগ না বাড়িয়ে উৎপাদনে বিশ্বাসীআর কর্পোরেট দুনিয়া আজ উন্নত শ্রম বাঁচানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাভ বাড়াতে চাইছে কিন্তু তাতে চাহিদার সংকট তৈরি হয় সেটা মেটাতে সরকার যদি খয়রাতির অর্থনীতি চালায় তবে তাদের চাহিদা সংকট কিছুটা হলেও মেটে আর  সেটা  ঘটে সরকার তথা সাধারণ মানুষের টাকায় এর ফলে মানুষের কোমর ভেংগে যায় সে শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলতে পারে না মানুষের অধিকারের দাবিতে জীবন জীবিকার তাগিদে লড়াই দানা বাঁধতে পারে না এটা কর্পোরেট হাউস সরকার উভয়েরই বড় প্রাপ্তি আজ যেটা আমরা দেখছি আর এখন রোবট কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে উৎপাদন ব্যবস্থার সাংগঠনিক চেহারাটা বদলে গেছে উৎপাদন সংগঠন অল্প শ্রমে ছোট পরিসরে উন্নত প্রযুক্তিতে চলে সেখানে নিয়োগ সুযোগ খুবই সীমিত বাজারের সীমাবদ্ধতার জন্য সেইভাবে উৎপাদন আর যোগানকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা চলে উন্নত প্রযুক্তিকে প্রয়োজনে ব্যবহার করেও আরো শ্রম নিয়োগের ব্যবস্থা কি করে করা যায় তা নিয়ে ভাবা হয় না এই বিষয়ে আমি দুচারটে কথা বলছি কিন্তু বিষয়টা বড় পরিসরে বিস্তৃত আলোচনা দাবি করে উন্নত প্রযুক্তিতে শ্রম কমিয়ে উৎপাদন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শ্রমিককে দিয়ে অল্প সময়ে বেশি উৎপাদন করানো যায় এতে মার্কসের ভাষায় উদ্বৃত্ত মূল্য বাড়ে যেমন উন্নত প্রযুক্তিতে আগে ১০ ঘণ্টায় যা উৎপাদন করা যেত আজ সাতঘনটায় তাই করানো যায় কিন্তু শ্রমিককে আগে সে চার ঘণ্টায় যে উৎপাদন করত তার বাজারমূল্য ধরে মজুরি দিত ফলে ঘণ্টার উৎপাদন উদ্বৃত্ত মূল্য বলে বিবেচিত হত এখন উন্নত প্রযুক্তিতে অনেক কম সময়ে সমান উৎপাদন করে বলে আর তার মজুরি তেমন বাড়ে না বলে উদ্বৃত্ত উৎপাদন মূল্য বাড়ে যার মালিক কোম্পানি অর্থনীতিতে বণ্টন বৈষম্য বাড়ে ফলে গরীব মানুষের বাজারে ক্রয় ক্ষমতা বাড়তে পরে না একদিকে কর্মসংস্থানের অভাব অন্যদিকে সমাজের বৃহদাংশ গরীব মানুষের স্বল্প ক্রয় ক্ষমতা বাজার সংকটকে ঘনীভূত করে এই অবস্থায় স্বল্প সংখ্যক বিত্তশালীদের চাহিদা মিটিয়ে টিকে থাকতে হয় কোম্পানি মালিক সম্প্রদায়কে আমরা দেখি তাঁদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর উৎপাদন বাড়ে সে সব দ্রব্য আধুনিক প্রযুক্তিতে উৎপাদিত অভিজাত পণ্য সামগ্রীগাড়ি আধুনিক ফ্ল্যাট নানা ধরনের সাজগোজের পণ্যসামগ্রী দামী রেস্তোরায় বাজার ভরে যায় এছাড়া আছে আজের স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ভিত্তিক উৎপাদনকিন্তু সাধারণ মানুষের দৈনিক প্রয়োজনের পণ্য উৎপাদনে তেমন নজর থাকে না সে সব পণ্যের দাম বাড়তে থাকেএর চাপ সহ্য করতে হয় প্রধানত গরীব মানুষকে অনুদানের অর্থনীতিতে টাকার যোগান বেড়ে যায় বলে চাহিদা যা বাড়ে তাতে মুদ্রাস্ফীতি দেখা যায় কারণ নিয়োগ বাড়িয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটে না অনুদানের অর্থনীতিতে এর সঙ্গে বৈদেশিক বানিজ্যে ঘাটতি বাড়ে দেশের ঋণ বাড়েকার্যত দেশের অর্থনীতির এক নির্ভরশীল উপগ্রহ অর্থনীতিতে পরিণত করা হয়


উপসংহার :

আমরা ওপরের আলোচনায় দেখলাম যে আজকের দুনিয়ায় একচেটিয়া পূঁজিবাদ এক ধরনের অর্থনীতির রূপ ধারন করেছে যাকে সোহাগের অর্থনীতি বা chrony economy বলা  হয়  পুঁজিবাদের সঙ্কট থেকে বাঁচার জন্য এই ধরনের অর্থনীতির প্রবর্তনএই ধরনের অর্থনীতিতে কিছু সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচীর নামে অনুদানের কর্মসূচী গ্রহন করা হয় যাতে অতিউৎপদন চাহিদার সঙ্কটের মোকাবিলা করা যায় ভারতের মত পশ্চাতপদ দেশে সমস্যার ধরণটা আলাদা  হলেও এখানেও এক ধরণের অনুগ্রহের অর্থনীতি চালু  করা  হয়েছে যাকে  ঠিক Crony Economy না বলে  দুর্বিত্তের অর্থনীতি  বলা ভালো রাষ্ট্রের উদ্যোগে অনুগ্রহ করে মানুষকে অর্থ পাইয়ে দেওয়া হয় জনগণের সেবার নামে  পুঁজির বিকাশ ঘটিয়ে নিয়োগ বাড়িয়ে যোগান বাড়িয়ে অর্থনীতিকে উন্নত  করে অর্থনীতির সার্বিক উন্নতির প্রয়াস দেখা যায় নাবৃহৎ শক্তির ওপর নির্ভরশীলতার ফলে ভারতে পুঁজিবাদের স্বাধীন বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় দেশ পুঁজি স্বল্প রয়ে গেছে যতটুকু পুঁজির বিকাশ ঘটেছে তার মোটা অংশ ব্যাংক পুঁজি যা জনগণের সঞ্চিত অর্থ দেখা যায় বেসরকারি ব্যবসায়ী পুঁজিপতিরা এর বড় অংশ লুঠ করে ঋণ শোধ করে না সাধারণ মানুষের করের টাকায় অনুদানের অর্থনীতি গড়ে তোলা হয় যাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে অর্থ লিপ্স ক্ষমতার লুঠের রাজত্ব সব মিলিয়ে জনস্বার্থের নামে পুঁজির বিকাশের নামে এক অনুগ্রহের অর্থনীতি তথা দুর্বৃত্তের অর্থনীতি গড়ে ওঠে যা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিঅথচ ভারত পশ্চিমী দেশের মত অতিউৎপদন ক্ষমতার সমস্যায় ভোগে না এখানে পুঁজির বিকাশ ঘটিয়ে বিনিয়োগ বাড়িয়ে নিয়োগ বাড়িয়ে যোগান তাড়িত উন্নয়নের সুযোগ আছে অনুৎপাদনশীল খাতে পুঁজির অপব্যাবহার ঘটিয়ে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টির দরকার হয় না যেটা উন্নত দেশে কেনসিয় নীতি বলে পরিচিতভারতের মত দেশ অধাসমন্ততন্ত্রিক আমলাপুঁজি নির্ভর একধরনের  নয়া ঔপনিবেশিক দেশ হওয়ায় সেই সুযোগ নেওয়া যায় না তাছাড়া প্রযুক্তির জন্য বৃহৎ শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা সমস্যাকে জটিল করে তোলে

আমরা এই প্রসঙ্গে আমাদের বিকল্প ভাবনাটা তুলে ধরতে পারি যাকে কার্যকরী করতে হলে অর্থনীতির দিক নির্দেশটা বদলাতে হয়সরাসরি কোন কাজ না করে কিছু নগদ অর্থ লক্ষী ভান্ডারের নামে পাইয়ে দেওয়ার অনুগ্রহের বিষয়টা আমরা তুলে ধরেছি এই টাকাকে সরকারের উদ্যোগে কোন সংগঠন গড়ে তুলে সেখানে গরীব মানুষের কর্মসংস্থান ঘটিয়ে তাদের আয়ের ব্যবস্থা করলে গরীব মানুষের সম্মানটাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় বিনিয়োজিত অর্থটা রাষ্ট্রীয় পুঁজি হিসেবে উৎপাদন খাতে খরচ হয় যা অর্থনীতির সুস্থ স্বাস্থ্যটা বজায় রাখতে পারে অনুরূপভাবে বিনে পয়সায় সাইকেল না দিয়ে গ্রামে গঞ্জে ছোট ছোট সাইকেল তৈরির সরকারি সংগঠন গড়ে তোলা যেতে পারে যেখানে গরীব মানুষ কাজ করে যা আয় করবে টা দিয়ে সাইকেল কিনে নিতে পারে তাতে তাদের মেহনত মর্যাদা পায় অর্থনীতি উৎপাদনশীল হয়ে উঠতে পারে এই ধরনের সংগঠন গড়তে রাষ্ট্রীয় পুঁজি ব্যবহৃত হতে পারে সেক্ষেত্রে করদাতার করে টাকা পুঁজিতে পর্যবসিত হয় নেহাত অনুদান থাকে না ভারতের মত দেশে উন্নত পুঁজিবাদী দেশের মত চাহিদার অভাবে অর্থনীতি নুবজো হয়ে পড়ে না সেখানে পুজিবিনিয়োগের সুযোগ অবাধঅর্থনীতিতে সরকারি উদ্যোগ কে মদত করে সেটা করা যায়এতে রাজনীতি করা ক্ষমতাবানদের অবাধ লুঠের পথ বন্ধ হয় যেটা আজ পশিম বঙ্গ সহ সো রাজ্যে ঘটে চলেছে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায়

তবে মনে রাখা দরকার বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এই বিকল্প ভাবনাটা কাজে লাগানো অসম্ভব  এর জন্যে দরকার অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন  একটা সমাজতান্ত্রিক কাঠামোতে ব্যবস্থাটার পুনর্গঠন করা যেখানে বিনা পরিশ্রমে জুলুম করে আখের গোছাবার সুযোগ থাকে না সেটা কিভাবে আসতে পারে সেটা বিস্তারিত আলোচনার বিষয়

 

 

 

 

 


মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩