Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

ছবি
সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

প্রবন্ধ ।। স্বতন্ত্র ভারত ।। পারমিতা রাহা হালদার (বিজয়া)

স্বতন্ত্র ভারত 

 পারমিতা রাহা হালদার (বিজয়া)


    "স্যার,ইন্টেলিজেন্স বলছে, অরুণাচল প্রদেশের বর্ডারে চাইনিজ সৈন্যরা লুকিয়ে রয়েছে।"

       "সে কী !! ওই বর্ডারে ভারতীয় সৈন্যশিবির নেই।" সৈন্যশিবির না থাকার অর্থ,আমাদের ভারতীয় কোন সৈন্যদল ওখানে উপস্থিত নেই। এই পরিস্থিতি বেশ বিপজ্জনক। তাকে কাটিয়ে ওঠা যাবে কি করে,তা নিয়ে চিন্তিত বায়ুসেনা বাহিনী। 

      "তাহলে উপায়?এমনিতেও স্যার ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের কিছু বর্ডার রয়েছে যেখানে ভারতীয় সৈন্যশিবির এখনো গড়ে তোলা সম্ভবপর নয়।"
         "এক্ষেত্রে আমাদের এক্ষুনি ব্যবস্থা না নিলে অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে।  JW সিনহা, আপনি আর্মি কন্ট্রোল রুমে খবর পৌঁছান।"
     উনিশশো বাষট্টি সালে ভারতীয় বায়ু সেনাবাহিনীর দপ্তরে একটি অতি গোপনীয় কথোপকথন চলছে।

আমাদের দেশ এই ভারতবর্ষ, বিশাল তার পরিব্যাপ্তি। এশিয়ার দক্ষিণ ভাগে অবস্থিত ভারতীয় উপমহাদেশে অসংখ্য মানুষের বাস। সমুদ্র ও পর্বতের মতো প্রাকৃতিক সীমারেখা ভারতকে অন্যান্য দেশ থেকে পৃথক করেছে। ভৌগলিক,ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এমনকি  সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভারতবর্ষের এক নিজস্ব স্বকীয় স্বত্তা কেবল ভারতবাসীকেই নয়, সমগ্র বিশ্বকে সমৃদ্ধ করে আসছে। এই বিশাল ভূখণ্ডের মধ্যে যেমন রয়েছে নানা রাজ্য তেমনি নাগরিকদের মধ্যে নানা ভাষা নানা পরিধান। সংস্কৃতি গত ফারাক তবু "বিবিধের মাঝে এক মিলন মহান" অর্থাৎ বৈচিত্র্যে র মধ্যে নিহিত অটুট সংহতি,ঐক্য যা ভারতের অন্যতম শক্তি।
       
       ভারতকে ঘিরে যেমন রয়েছে দূর্গম পাহাড়ী পথ তেমনই রয়েছে সমুদ্র, নদী, মরুভূমি। উপমহাদেশের উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা, পশ্চিম প্রান্ত থেকে ক্রমশ দক্ষিণমুখী কারাকোরাম হিন্দুকুশ ও ক্ষীরথর পর্বতমালা ভারতের পশ্চিম সীমান্তে সৃষ্টি করেছে অলঙ্ঘনীয় প্রাকৃতিক সীমারেখা যা ভারতকে বিচ্ছিন্ন করেছে পশ্চিম এশিয়া থেকে। উত্তরের নগাধিরাজ হিমালয় ভারত ও চীনের মধ্যে সৃষ্টি করেছে অলঙ্ঘনীয় দুর্ভেদ্য প্রচীর। হিমালয়ের পূর্বপ্রান্তে আসাম ও লুসাই পর্বতমালা,পার্বত্য চট্টগ্রাম ও আরাকানের পর্বতশ্রেণী ভারতকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে মায়ানমার দেশ থেকেও। এত কিছু বলার আসল উদ্দেশ্য হলো একটি দেশের ভৌগলিক অবস্থান,পরিমণ্ডল, সীমারেখা, এগুলি সেই দেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া, পররাষ্ট্র, বৈদেশিক নীতি সমুহ তৈরি করতে যথেষ্ট ভাবে প্রভাবিত করে এবং দেশের সুরক্ষা, সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে ভীষন রকম স্পর্শকাতর বিষয়।

      প্রতিটি দেশই বহির্বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ থেকে নিজেদের নাগরিকদের সুরক্ষিত করার জন্য  বদ্ধপরিকর তাই রাষ্ট্র প্রধানগণ ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করে সেই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী ,আর্মি, বায়ুসেনা,নৌবাহিনী সহ বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করে আসা গোয়েন্দা বাহিনীকে যারা অতন্দ্র প্রহরীর মতো দেশ কে সুরক্ষিত রাখার প্রয়াসে রত হয়।

         অতীত থেকে আজ সাম্প্রতিক সময়েও বিশ্বে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা শক্তিধর দেশ গুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার ভারতবর্ষ ও চীন দুই শক্তিশালী দেশ হিসাবে পরিগণিত। দুই দেশের মধ্যেকার নরম গরম সমীকরণ আজও চর্চার বিষয় ও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে কৌশলগত পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টিতে চীন ও ভারতের প্রতিযোগিতা আজকের নয়। ভারত ও চীন দুই ক্ষমতাধর প্রতিযোগী দেশ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক নিজেদের সুবিধার্থে বজায় রাখার চেষ্টা করে। এর একটাই উদ্দেশ্য যদি সংঘাত বাধে,যেন বাকি দেশ গুলো সমর্থন যোগায়। এইভাবে সেই অতীত থেকে চলে আসছে একটা চাপান উতোর,টক্কর দেওয়ার গোপন খেলা যা প্রায়শই প্রকাশ্যে এসে পড়ে।পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হলে ভারতের দক্ষ সেনারা কড়া হাতে তার মোকাবিলা করে, যা ভারতবাসীর কাছে বেশ গর্বের।

ভারতবর্ষের উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলির মধ্যে মিজোরাম ত্রিপুরা মেঘালয় অরুণাচল নাগাল্যান্ড আসাম সহ ত্রিপুরা রাজ্য কে বলা হয় সেভেন সিস্টারস। ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এই সাতটি রাজ্যের যোগাযোগ রাখার একমাত্র মাধ্যম একটি "চিকেন নেক করিডর"- সংকীর্ণ একটি স্থলভাগ, যার দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার
প্রস্থ ৪০ কিলোমিটার।ফলে যোগাযোগ সময় সাপেক্ষ ও ব্যায় বহুল। 
       অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই সরু সংকীর্ণ করিডোরটির এক প্রান্তে বাংলাদেশ এবং ওপর প্রান্তে নেপাল,ভুটান ও ভারতের অঙ্গ রাজ্য সিকিম।প্রতিবেশী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এ সাতটি রাজ্যের সাথে সড়ক রেল ও নৌ-পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভারত আগ্রহী। 
       অন্যদিকে শক্তিশালী চীন দেশ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নানাভাবে অর্থনৈতিক সহায়তা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশগুলোর উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অংশীদার হচ্ছে।এই অর্থনৈতিক শক্তি কে ব্যবহার করে তারা দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ,আফগানিস্তান,নেপাল, ভুটান, মায়ানমার,শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক সৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। 

দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখতে ভারত অগ্রণী। এক দিকে নিজেদের ভাবমূর্তি ও অন্য দিকে শক্তি- এ দুটোর ভারসাম্য ভারত বরাবরই রক্ষা করে চলে।দেশের সুরক্ষার প্রশ্নে কোন রকম আপোষ না করে ভারতবর্ষ আজ বিশ্বের তাবড় শক্তিধর দেশ গুলোর কাছ থেকে সমীহ আদায় করছে। তা সত্ত্বেও মাঝেই সংযমী হওয়ার শিক্ষা ভুলে চিন ভারতীয় ভূখণ্ডের ওপর হাত বাড়িয়েছে। কৌশলে,প্রাকৃতিক দূর্গমতার সুযোগ দুই দেশের সীমারেখা লঙ্ঘন করেছে। সঙ্গে সঙ্গেই ভারত আগ্রাসনের যোগ্য জবাব দিয়েছে ও দেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষত রেখেছে।

সদ্য স্বাধীন হওয়ার পর স্বভাবতই ভারত কিছুটা সময় নিয়েছিল নিজেকে গুছিয়ে নিতে। বিরাট আয়তনের দেশ, তাছাড়া সীমানায় এমন কিছু অঞ্চল আছে যেখানে সেনাশিবির গড়ে তোলা বেশ কঠিন। সদ্য স্বাধীন একটি দেশের পক্ষে সীমিত সেনাবাহিনী নিয়ে উওর পূর্ব ভারতের পাহাড়ী দূর্গম পথে প্রতিটি বর্ডারে সৈন্যদল প্রেরণ করা সম্ভব ছিল না। উওর-পূর্বের প্রতিবেশীদের মধ্যে চীন অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ চার হাজার কিলোমিটারের মতো জায়গা জুড়ে সীমান্তরেখা রয়েছে।

     ভারত কে দূর্বল ভেবে নিয়ে সেই সুযোগে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে তাদের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করে।ভারতবর্ষের অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যটি চীনের সীমানার অত্যন্ত কাছে। এ রাজ্যের মানুষের সঙ্গে চীন দেশীয় মানুষের চেহারার মিল পাওয়া যায়। এমন কি তাদের আচার আচরণ, ধর্মকর্মের মধ্যেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে চীনা সংস্কৃতির দেখা মেলে। অরুণাচল প্রদেশের সীমানায় ভারতীয় সৈন্যদল না থাকায় সুবিধা হয়ে যায়,বিশালাকার চীনদেশীয় সৈন্যদল সেখানে লুকিয়ে বসে থাকে সময়মতো আক্রমণের অপেক্ষায়। এখন থেকেই আমাদের কাহিনী শুরু।
      উনিশশো বাষট্টি সালে ইন্টেলিজেন্স সূত্রে ভারতীয় বায়ুসেনা বাহিনীর কাছে খবর আসে,চীন দেশের সৈন্যরা অরুণাচল প্রদেশের সীমানায় লুকিয়ে আছে।অরুণাচল প্রদেশের সীমানায় সেসময় ভারতীয় সৈন্যশিবির নেই। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামনে কঠিন পরিস্থিতি। চিন্তিত হলেন ফাইট লেফটেন্যান্ট অরুণ সহ পুরো বায়ুসেনা বাহিনী। সীমানায় বড় ক্ষতি আটকানোর উপায় খুঁজতে সেনা ও বায়ুসেনা বাহিনী একসাথে মিশন প্ল্যান করে।বায়ুসেনার অফিসারের নির্দেশেই JW সিনহা আর্মি কন্ট্রোল রুমে এই খবর পৌঁছে দেন। সমস্ত খবরাখবর বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়,ভারতীয় সেনাদলের টিম যাবে সড়কপথে,বেশ কিছু সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র সমেত। আর বায়ুসেনার দল আগেই গিয়ে কিছু অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছে দিয়ে আসবে বর্ডারে। 
     এই দায়িত্ব পড়ল বায়ুসেনার লেফটেন্যান্ট অরুণের উপর।পাঁচজন বায়ুসেনার সঙ্গে বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হেলিকপ্টারে অরুণ পৌঁছালেন বর্ডারে। নামতে গিয়েই আচমকাই শত্রু সৈন্যের মুখোমুখি।সংখ্যায় তারা অনেক, বিরাট দল।মাত্র পাঁচজন সৈন্য নিয়ে এদের মোকাবিলা করা অসম্ভব বুঝতে পেরে অরুণ বাকি পাঁচ বায়ুসেনাকে নির্দেশ দেন,"আপনারা কোন পরিস্থিতিতেই হেলিকপ্টারের থেকে নামবেন না,আমি একাই নামব।"

      স্বাভাবতই পাঁচ বায়ুসেনার চোখেমুখে প্রশ্নচিহ্ন আর কপালে চিন্তার বলিরেখা।"স্যার আপনি একা পারবেন এতবড় সৈন্যদলের মোকাবিলা করতে? কী করে তা সম্ভব?"

     বিপদের সময় কিভাবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে হয় সেই মুহূর্তে তারই জীবন্ত প্রদর্শন দিতে চললেন লেফটেন্যান্ট অরুণ। ইশারায় চুপ করতে বললেন নিজের পাঁচজন সঙ্গীকে। হেলিকপ্টারের পাখাটা কিছু পরিমাণ ঘুরিয়ে নীচে নামলেন। শত্রু সৈন্যের কাছে বার্তা দিলেন,সারেন্ডার করবেন। আমরা আত্মসমর্পণ করব কিন্ত আপনারা তার আগে হেলিকপ্টার ঠিক মতো দাঁড় করাবার জায়গা ছেড়ে দিন।"

   লেফটেন্যান্ট অরুণের কথামত চীনা সৈন্যদল কিছু দূরত্বে সরে যায় লেফটেন্যান্ট অরুণ ঠিক এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। হেলিকপ্টারে উঠে পাখাটা অতি দ্রুত গতিতে ঘুরিয়ে তিনি একটা ধুলোর ঝড়ের সৃষ্টি করেন। প্রবল ধুলোর ঝড়ে চীনা সৈন্যদের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে,দৃষ্টি চলে না।সেই ফাঁকে লেফটেন্যান্ট অরুণ হেলিকপ্টার নিয়ে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। 
     ইউনিটে নিরাপদে ফিরে এসে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে লেফটেন্যান্ট অরুণ বলেছিলেন,"এই মুহূর্তেই আমাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে,নাহলে সীমানায় শত্রুদের আক্রমণ আমরা আটকাতে পারব না।" তারই কথামত যুদ্ধের জোরদার প্রস্তুতি শুরু হয়।

           একদিকে যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে,ঠিক তখনই অন্য দিকে চীন তাদের বিশালাকার সৈন্যদল ও প্রচুর পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সীমানা আক্রমণ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী সড়ক পথে সীমানায় পৌঁছায়।কিন্ত ততক্ষণে চীনা সৈন্যদল পুরোপুরিই ঢুকে পড়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনা মিলিত হয়ে শত্রুসৈন্যের বিরুদ্ধে প্রাণপণ যুদ্ধ করে। কিন্ত চীনের সৈন্য সংখ্যা ও বুলেটের পরিমাণ তখন ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। তুমুল যুদ্ধ চালিয়েও সংখ্যালঘু ভারতীয় সৈন্যবাহিনী একসময় হেরে যায়। অরুণাচল প্রদেশের বেশ কিছুটা অংশ চলে যায় চীনের দখলে। শত চেষ্টাতেও সেদিন শেষরক্ষা হয়নি।

     তারপর অনেক বছর কেটেছে। ভারত ও চীন,দুই দেশই ক্রমাগত শক্তিসঞ্চয় করেছে,দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সমীকরণের বিষয়টি মাথায় রেখে ভারত খুব তাড়াতাড়িই সমস্ত দেশের সীমানা কড়া প্রহরার মধ্যে নিয়ে এসেছে। হিমাঙ্কের বহু নিচে চলে যাওয়া তাপমাত্রায়,দূর্গম,কঠিন প্রাকৃতিক পরিবেশেও ভারতীয় সেনা জওয়ানরা আজ অতন্দ্র প্রহরী। ভারত ও চীনদেশে যেমন রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস আর সংস্কৃতি,তেমনই এই দুই দেশেই জনসংখ্যা,জনপদের আয়তন উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। উত্তপ্ত ভারত-চীন সীমান্তে সহিংস যুদ্ধ শেষে দুই দেশই শান্তির পথে পা বাড়ায়, নিজেদের মধ্যে 'হিন্দু-চীন ভাই ভাই' চুক্তিবদ্ধতায় হাত মেলায়। ধীরে ধীরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাণিজ্যিক দিকেও কার্যকরী হয়। প্রতি বছর দুই দেশের মধ্যে প্রায় ১৭০-১৮০ বিলিয়ন ডলার বানিজ্য হয়ে থাকে। সম্প্রতি কৌশলগতভাবে চীনের প্রতি অসন্তোষের কারণে বাণিজ্য,রপ্তানি সহ কাঁচামাল আমদানিতে ভারতবর্ষ কড়া অবস্থান নিয়েছে।শুধু এশিয়া নয়, বিশ্ব জুড়ে আজ যুদ্ধের দামামা, আবহাওয়ায় বারুদের গন্ধ। সত্যিই কি এতে মানবজাতির ভালো হয়? কোনদিনও হওয়া সম্ভব? তবুও রাষ্ট্রপ্রধানরা নিজের অধিকার, ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য লক্ষ লক্ষ সাধারণ নাগরিকের প্রাণ বাজি রেখে একের পর এক দেশ,ঐতিহ্য ধ্বংস করে দিতে পিছপা হচ্ছে না।

     আজকের এই পৃথিবীতে হানাহানির এই আবহে লেফটেন্যান্ট অরুণ এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও সেদিন অসাধারণ উপস্থিত বুদ্ধির  পরিচয় দিয়ে তিনি পাঁচজন সেনাসহ নবজন্ম লাভে সক্ষম হন। পরবর্তী সময় ভারতীয় সৈন্যদল যুদ্ধে পরাজিত হলেও বিপদের সম্মুখীন হয়ে অরুণের এই সাহস ও বুদ্ধিমত্তার কাহিনী ভারতীয়দের কাছে আজও এক বিরল দৃষ্টান্ত স্বরূপ।
 
=====================

Paromita Raha Halder
C/O Bimal Kumar Halder
Noapara, Ogg Rd. Bye lane,
Land Mark : Near Taltala Math,
PO: Garulia,
Dist: 24 Pagns(N),
743133






মন্তব্যসমূহ

সূচিপত্র

আরও দেখান

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল