ভোরের শিশির
নিরঞ্জন মণ্ডল
মা বলে রোজ ইস্কুলে চল, বাবার হুকুম--পড়,
হঠাৎ জোটে এটাই নিয়ে বকার পরে চড়ও!
বাবা মায়ের মন খারাপের কথার কোলাহল
আমার ভালোর জন্যে জেনে পাই না ভেবে তল।
মা বলে রোজ নাচটা শেখ, বাবার হুকুম--আঁক,
চার দেয়ালের মধ্যে এখন লক্ষ্মী হয়েই থাক।
গড়তে হবে জীবন তোমার,হতেই হবে বড়
সবার মাঝে সকল কাজে থাকতে সড়গড়!
বাবা মায়ের ইচ্ছে বয়েই নিত্য চলাচল
করতে গিয়ে মন ভেঙে যায়,গড়ায় চোখে জল।
মা বলে রোজ রেওয়াজ কর,মিষ্টি গানের গলা
তৈরি কি আর একদিনে হয়? একটু অবহেলা
নষ্ট করে দিতেই পারে তোমার ভবিষ্যত;
বাবার হুকুম--সাঁতার শেখ,ওটাই বাঁচার পথ।
বাবা মায়ের হতাশ মুখে আনতে গিয়ে হাসি
দমকা হাওয়ায় সুর ভুলে যায় আমার গানের বাঁশি।
ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘুমের থেকে উঠি
বাবা মায়ের স্বপ্ন ছুঁয়ে সারাটা দিন ছুটি!
স্কুল-বাড়ি-বই, কোচিং ক্লাসে--কখন নামে রাত
দেখার বোঝার আগেই ঘুমের শীতল কালো হাত
দুমড়ে যে দেয় বুকের মাঝের ইচ্ছে-পাখির ডানা,
কাঁপন তুলে এলিয়ে পড়ে ক্লান্ত শরীর খানা।
এমনি করেই তরতরিয়ে গড়ায় বছর মাস,
বাবা মায়ের তাকিয়ে দেখার হয়নি অবকাশ
একটি বারও আমার দিকে সোহাগ ভরা চোখে,
উপচে পড়ে খুশি তাদের--বলছে ভালো লোকে!
আমার সুনাম ছুঁয়েই তাদের সুখ-পাখিটার ডানা
ঢাকছে আকাশ বাউল বাতাস আসতে সেথায় মানা।
এত কিছুর মাঝেও তবু চুপটি আমি রই,
বোশেখ ঝড়ে উধাও হব তেমন সাহস কই?
তবু আজও স্বপ্ন জাগে,পাহাড়-নদী-বন
পাখির গানে,ফুলের বাসে উদাস করে মন।
যেদিন আমি উঠব গেয়ে দাঁড়িয়ে তাদের পাশে
জমাট ব্যথা শিশির হয়ে ঝরবে সবুজ ঘাসে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন