একগুচ্ছ কবিতা ।। বিদ্যুৎ ভৌমিক
১) আজনবী অশরীর মৃত্যু
মুক স্তব্ধ হলে নিজস্বী স্মৃতি স্তবকেরা ছায়ার ভেতর পায়ে পায়ে কাছে চলে এলে ; ইথার ভাষ্যে আজনবী শিতারিষ্ট যন্ত্রের কান মোলে নিপুন প্রণয়ে !
রোজ যাকে দেখি চেনা রাস্তায় ; চোখের মধ্যে রাখি সঞ্চিত পাপ , তাপ , মায়াবী অভিমান , এসব ভেতরেই চুপ একই অদৃশ্যতায় বিশ্রামহীন ; অপটু আদর্শে দর্পণের কাছে ঋণস্বীকার করে !
মৃত্যুর পর অন্য এক অদেখা অশরীর ছদ্মবেশ ; এই চেনা চৌরাস্তায় আমাকেও অচেনা দেখি গল্পের ফাঁদে ব্যথাতুর বিবর্ণ পাঁচালি নিয়ে এপাড়া - ওপাড়া অজ্ঞাত অবিচল শূন্যতায় ক্লেডিয়াস ঢেউয়ের ভেতর !
বহুদিন পর নিজে নিজেই নিখোঁজ হলাম ,----- এই ঘরে আমার আত্মগোপনের হদিশ পায়নি নিজের প্রিয়জন এবং স্ত্রী ও সন্তান ; তবুও এভাবেই মৃত্যু মৃত্যু উদাস অন্তরে ভিজে ওঠে মনের দু'চোখ !
কথা হয়েছিল এক যুগ আগে ; তোমার সাথে ! তখন কবিতার ভেতর দূর্দান্ত মুগ্ধতায় আগুনের কথা ভুলেই গেছি ,----- সময়টা আপাদমস্তক উড়ণচন্ডি ছিল ; প্রেম ছিল , প্রার্থনা ছিল , সুগন্ধ ছিল চারপাশ ঘিরে ..... তবুও এই মন ভালোবাসার দৃশ্যমানতা প্রত্যন্তে কতবার হিসেবহীন এঁকেছে স্বযত্নে ; সেটা মন বোঝেনি !
এভাবেই কতবার তোমার জন্য সখ করে মিথ্যেই মরেছি, সেটাও নাবুঝে এ-ভা-বে-ই নবনীতা!
এই যে এই ঘরে আমার উচ্ছ্বিষ্ট অতীত ; তারাও অবিবেচক , তা না হলে কেনোইবা ওরা মৃত্যুর পর স্মৃতিস্বপ্ন মেলে ধরে কথা না বাড়িয়ে ,-----
শ্মশান থেকে ওরা ফিরে এসে ছিল আমাকে দাহ করে ! নিম পাতা - লোহা - আগুন ছুঁয়ে এ বাড়ির চৌকাঠ ডিঙিয়ে ছিল ; ওদের ঠিক পিছন পিছন আমিও চলে এসেছিলাম এই ঘরে অযান্ত্রিক একক ! অথচ প্রিয় মুখগুলোর বিমূর্ত নাটক দেখে সব হারানো রাত রাত গন্ধে অনির্দিষ্ট মোচড় খেলাম ..... !
যখন এই শরীরটা পুড়ে উঠছিল ; স্মৃতিবাস স্বপ্ন গুলো একবার বাঁচার ইচ্ছাতে চিৎকার করে আমার অভ্যন্তরে তোমার নাম করে কেঁদে উঠেছিল নবনীতা !
সেদিনের সন্ধ্যায় শিলাবৃষ্টির ভেতর এই ঘরে প্রথম স্পর্শের ছোঁয়ায় আঁধার বিগ্রহের বুকে ফাঁটল দেখেছিলাম !
তুমি তোমার হাত এগিয়ে দিয়েছিলে ভালোবাসতে,---- অথচ আজ হঠাৎ বাতাসে উড়ে গেল কবিতার খাতার শেষ তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতা ; নবনীতা !
কতদিন কেটেছে এভাবে তুমিহীন দহনে - পীড়ণে - দুঃখে ও জ্বালায় ,----- এই ঘরে স্বপ্নরা এসে খোঁজ নিয়ে গেছে ; আমি আর ফিরবো না কোন ভাবে !!
________________________________________
২ স্মৃতি দর্পণে হাত এগোলাম
কিছু একটা অন্য রকম লাগছিল ; তাই শরীরের বিপরীতে মন পিছিয়ে রয়েছে ! কথা গুলো কাঁপছে ভীষণ ভীরুতায়, ---- তবু যেন উল্টো হয়ে অন্য সময় ধরে আমার রাস্তা পাড় হওয়া.....
যদিও তোর শরীর ছুঁয়ে কতবার বলেছি ; তোর নদীতে বুকসাঁতার দেবার গল্প , যদিও না - না করে লাজুক গাম্ভীর্যে চেখেতে মিথ্যে এঁকেছি ভয় ; কতবার !
ওধারের তারা ফোঁটা আকাশটায় অন্য রকম রঙ মেখে ছিল ,---- দূরে অকৃপণ জিজ্ঞাসায় চোখ ছিল স্থির ! এভাবেই উল্টো পৃষ্ঠায় আবছা - আবছা শব্দগুলো প্রতিদিনের দুর্ভাবনায় আরও অস্পষ্ট হয়ে চোখের ভিতর কপালমন্দ হয়েছিল !
তোর চোখের মধ্যে যেই রেখেছি চোখ ; অন্য রকম সতর্ক হয়ে ছিল মন ! যদি তুই সহজ আচ্ছিল্যে মুখ ঘুরিয়ে নিস ,-----
অন্তরালে দুঃখ পোড়া হাসি স্নান ঘরের দর্পণে আমাকে প্রত্যন্তে জ্বালায় - পোড়ায় ! যদি ভাসি হারিয়ে যাবার ঘুশিতে , মৃত্যুর মত অবুঝ কিছু নিঃশব্দ আমাকে চারপাশ থেকে ঢেকে রাখে অথৈ নির্জনে !
অন্য এক আঁধার করা নির্জনতা বারমাসের গল্প গুলো গুছিয়ে রেখেছে সুকৌশলে ,----- এর পরেও হাত এগিয়ে দিয়েছি ব্যাকুল আবেগে ; একমাত্র তোকেই ভালোবেসে !
নতুন কিছু স্বপ্ন ; ঘুমন্তে আদিগন্ত ভালোবাসা ছাড়া ভীষণ কাঙল ,---- বৃষ্টির গন্ধ মেখে আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিল নিজেদের ; কতবার কতভাবে .....
এই একবার হারিয়ে যেতে যেতে আড়াল করতে চেষ্টা করছিলাম ; আমাকে নিজেই ! একই রাস্তায় অপার্থিব হয়ে চলতে চলতে যোগ - ভাগ - গুণের শেষে জেগে ওঠে তোর ভালোবাসা না পাওয়ার কঠিন ব্যর্থতা ,-----
অদূরে পুড়ছি আমি নির্ঘুম একক ! মুগ্ধ কিছু স্মৃতির ভিতর ধূসরতায় ঢাকা আমার সবটুকু আমিত্ব ; সেটাও নিস্পৃহতার আভরণে ঢাকা ...... অথচ পরবর্তী রাস্তাটা পেরিয়ে যেতে স্বরচিত সময় কিছুটা দেরি করতেই ; এক হুতাশ দীর্ঘশ্বাস বুক ভেঙে বেরিয়ে এলো স্বপ্নভ্রষ্ট স্মৃতি গুলোকে নিয়ে !
শেষ বারের মত পুড়ছি শ্মশানে ! অন্য এক চিতার মধ্যে নিভৃতে ডুবে যাওয়া আমিটা নীরব চোখের জলে ভেসেছে অন্য এক স্বপ্ন দেখে !!
________________________________________
৩ ) অনুপস্থিত উচ্চারণ
শব্দের ইমোশনে অবসেশন না থাক ; একটু গুছানো স্বপ্নে ভুল হয়ে গেছে দৃশ্যের ঘ্রাণ ছড়াতে ! যেটুকু মনন ; হারিয়ে পাওয়া হঠাৎ দুঃখ ভোগ ,----
কথা ছুঁয়ে মন পাব বলে অলীক ভাষ্কর্যে রূপ খোলে অদেখা আবেগ ...... তাই অদূরের রিলেশন দিয়েছি কলাপস করে অপছন্দের দোষে !
উদ্ভিন্ন চেনা সময়ে স্নায়ুতে ঈর্ষা জমে ; তবুও বৃষ্টি নামেনি বলে কথা হাসে আমার নগ্নতা দেখে !
ওদিকে অক্ষর গুলো শব্দ তৈরি করে নিছক বর্ণে বর্ণে ; শুক্রাণু ঝরে পড়ে মানচিত্র জুড়ে , ------ কবিতায় আমিতো সত্য ! তবু সর্বনাশের ভেতর দর্পণ স্বভাব নষ্ট করে বেমালুম শ্রাবণে ! এইতো পুনশ্চ হদয় এগিয়ে দিতেই নির্বাসিত স্মৃতিগুলো জন্ম লজ্জায় আব্ছা ভাসমান ; যদিও আমার মতন করে নীরবতা ছড়াই স্বপ্নকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে !
এই চিরকালীন না ভালোবাসায় নানাবিধ অভিমান গুলো গুপ্ত অথচ একক একত্রিত ৷ এক রাস্তায় নিষ্ঠুর অতীত বহুকালের ব্যাথার দাগ নিয়ে অনির্দিষ্ট শবীর রচনা করে আমার আড়ালে !
সঙ্গোপনে ব্যর্থ নিশ্বাস শিশির শব্দে বেমালুম নির্বাক ; একান্ত প্রতীক্ষায় সিগারেট নিভে যায় প্রত্যন্তে বিষজ্বলায় , ----- রোজ এই ঘরের দেওয়ালে কতকালের বিচ্ছেদ গুলো ব্যক্তিগত অন্তহীন ! যদিও এই ঘরেতে সঙ্গোপনে ঝুলন্ত ক্যালেন্ডার দোলে সাতাশটা বছর একইভাবে ..... !
এই হাতের মুষ্ঠিতে একটা আকাশ ধরে রেখেছি ; তুমি যদি চাও শরীর থেকে শ্মশানের চিতা নিবিয়ে দেব প্রত্যন্ত আভরণ খুলে ..... তুমি যদি সখ করে আমাকে মারবে বলে নতুন কেন আয়নার প্রতিবিম্বে অর্ধনগ্ন হও ; তাহলে আকন্ঠ অন্ধকার নিয়ে রোজ মরতে পারি !
কেউ দেওয়ান বিহীন অন্তর্গত নিঃসঙ্গ থাকে ; এই অলীক ছদ্মবেশ বাতাসেও অশরীরী ..... দিনরাত পোশাকের ভেতর মধ্যরাতের চাঁদ খেলা করে অবশেষ কৃষ্ণপক্ষে !
যদি এভাবেই পুরুষ হয়ে জন্মাই অন্তহীন তপস্যায় ; তাহলে না ফেরার পথে সর্ত রাখবো অন্যমনা মেঘেদের কাছে ! শেষটুকু চোখের মধ্যে ঠিকঠাক বিবর্ণ ধোওয়াময় অপার্থিব অসহবাসে !!
________________________________________
৪ ) অভ্যন্তরে ডেকেছে পথ
পথ থেকে মধ্যরাতের পংক্তি ; স্তবকের সরণিতে শব্দের বীজমন্ত্রের ব্রহ্মধ্যান বৃষ্টিপাতে পঞ্চভূত একক এভাবেই চেয়েছে আদরিনী বাতাস ! প্রশ্ন বান্ডিল ছিঁড়ে মৃদু পরিবর্তন ; তথাপি শরীরে কিশোরী স্পর্শ ছুঁয়ে নিতে চায় জন্মের প্রার্থনা !
বয়ঃসন্ধি যেখানে অক্ষর মনে ডুবে ছিল ; সেই পথে রোদ্দুর বেলায় স্বপ্নের উড়নচন্ডি ঘুড়িটা বেমালুম তথাকথিত ঢঙে আকাশ হারিয়ে ফেলেছে অকাল প্রয়াণে !
রাস্তা ধরবো বলে যাবতীয় সমৃতি গুলো দূষণের আকাশে সোপে দিলাম !
কিছু একটা নিরর্থক চলায় সুতরাং নামক প্রাচীরটা দৃশ্য আটকে গেলে ; নীরবতা মাখা শহরের ফুল গুলো দেবতার কাছে নির্দ্বিধায় বলেছে পয়ার ছন্দের ইতিহাস !
এভাবেই রাস্তা ধরে চলে যেতে যেতে দীর্ঘশ্বাসের ভেতর মাটি হারানোর দুঃখ অরণ্যচারিনীর শাড়ির আঁচলে গিঁট বেঁধে দেয় ! তবু এই চৌকাঠে অনেকখানি রাত্রি এসে মিশেছে বহুবার ,------ শেষ একবার সমস্ত অসুবিধা পেরিয়ে চিরকালীন স্তব্ধতাকে মননে নদী হতে বলি ; যদিও ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে গেছে গোপনে গোপনে !
মন , এভাবে চাঁদের আলো মেখে ছিল ! ঘুম হারিয়ে সেও স্মৃতিসঙ্গী ; তবুও এই পথে হেঁটে ছিল তিন জন্মের মৃত্যু ! ঘোরতর দুঃখে হতাশ নীরবতায় বিছানার চাদর শরীর ও দেহের কাছে শেষ বারের মত কবিতাকে রেখে গেছে ,----- যেভাবে চেয়েছি প্রেম ; সহপাঠীর কাছে চাঁদের আলোতে অসবাসের জ্বালা স্বপ্নাতুর আর্তরব করে !
এই হাতের মুঠিতে দুঃখ পোড়া ভাগ্য সমস্ত মননে চোখ পেতে চেয়ে নেয় নতুন জন্ম ! রোজ এই পথে ভিখারী হয়ে ঘুরি ..... ! রোজ অন্য এক আমির মধ্যে ভালোবাসার ভুল উচ্চারণ ; পরতে পরতে সময় শূন্য হয় !
যদিও শেষ বারের মত রাস্তা ধরে চলার সময় ; জন্মের দরজা রাখি বন্ধ ! এই পথ দিয়ে অন্য আমিটার কথা সব ভুলে গেলে প্রাচীন জন্মের স্মৃতি আমাকে স্পর্শ করে উল্টো দর্পণের না ভালো লাগার মধ্যে ! যদিও এভারেই প্রতিবার মরণের পর আমার কবিতারা না ফেরার কথা ভুলে যায় ; অভিন্ন জীবন পেতে ৷ সাদা পৃষ্ঠার ভেতর প্রতিবার আমার নতুন নাম লিখি !!
________________________________________
৫ ) মেঘ পালক ও বৃষ্টি ধ্বনি
চোখ বিছিয়ে অন্তর্হিত ; হাত এগিয়ে যেইনা ধরতে যাব , স্বপ্ন যেন সাদা পৃষ্ঠায় এ'ভাবেই কুপোকাত্ ! তবুও যেন এই ঘুমন্তে শ্রবণ দেখা ; নেহাতি হাজার কথার বর্ণিত আঁকিবুকি ,----
আকাশটা ঠিক আগের মতোই এক শারীরীক রঙ বদলে ঐতিহাসিক ! মনের ভেতর মন রাঙিয়ে আনন্দে ডুবু-ডুবু ,----
আকাশটা সে-ই পদ্য পাড়ায় ইচ্ছে করেই বুক পেতেছে সোহাগ দিতে আমার কাছে ! ও-ই আকাশের সুদূর থেকে বৃষ্টি ঝরে একই ধারায় ; হঠাৎ যেন কি হচ্ছিল সেই ধ্বনিতে মন ডুবিয়ে এই আমিটার অতলান্তে !
মেঘ পালকে ভাসছি আমি ; অতীত এবং ভবিষ্যতে ! অন্য কোন ইচ্ছা গুলো ভরদুপুরে তোর এঁকেছে জ্যোৎস্না শরীর , এই জন্যেই ভেতরশুদ্ধ ঋণী রইলাম প্রিয়ংবদা ; সবটুকুই পাগল আবেগে !
কতবারযে তোকে পেয়েছি মেঘ সরিয়ে ; গভীর থেকে স্বভাবতই এভাবে ঠিক মন পুড়েছে ,----- অসুখটা যে পরমুখোপেক্ষী ; এটাওতো আগে বুঝিনি !
বৃষ্টি বৃষ্টি চোখ খানি তোর ; বেশি বললে বিশ্বব্যাপী ! ওই চোখেতে সারা বছরই আমার কাছে আষাঢ় - শ্রাবণ ,---- যদিও ঠিক এই সময়ে বাতাস হতে ইচ্ছা করে ; একমাত্র তোর জন্যে প্রিয়ংবদা !
এইতো আমার ভিতরশুদ্ধ তুই ছাড়া কেউ নেই ,----- আমার যত দোষগুলোকে আকাশ তারায় গুণন্তি করে মিলিয়ে নিলাম ; হেয়ালী নয় , সত্যি বলছি প্রিয়ংবদা ! এবার আমায় ক্ষমা করে দে ; তোর শরীরে ভাসার জন্য পুণ্যবান হতে দে !
গোটা রাতটা আমার মতোই অর্ধেক অবিশ্বস্ত ; তবু আমায় ক্ষমা করিশ ঘুম হারানো নির্ঘুমেতে এমনি ভাবে ,----- মেঘ যেন সেই তেপান্তরে উড়তে উড়তে অনেকটা দূ-র প্রেম প্রবাহে ; অস্পষ্ট কুমারী ! এই ঘরেরই এই বিছানায় অহরাত্রি তোরই স্মৃতি ; কি করে যে ভুলতে পরি প্রিয়ংবদা ? বন্ধ চোখের ভেতর থেকে ক্রমাগত একই ধ্বনি ; সঙ্গী কিম্বা সহপাঠী ,----
যদিও আমার এই চিঠিতে আসা যাওয়ার চেনা পথটা বৃষ্টির শব্দে শব্দে কি ভাবে যে দুঃস্বপ্নের ভেতর মুছে গেল ! একমাত্র তুই সাক্ষী থাকলি ওরে পাগলী !!
________________________________________
৬ ) এবং নির্বাসন
শেষটুকু শব্দশ্বাস ফেলে তবেই শরীর ছেড়ে আমার আত্মগোপন; এহেন এক্ষণে জোনাক প্রহর! সমস্ত সস্তা বৈভব, কিছু কিছু উল্টো সময়ের বিমূর্ত ধ্বনী; জরুরী মনে করে ফেলে আসা সন্ধ্যার ওই রাস্তাতে রাতটাকে কাছে টেনে নিতে , ----- অশরীর এভাবে !
এই ঘরে আমার তেইশটা বছর ; একই নিঃসঙ্গ যাপন .... তবুও সহজ সত্য নিরবতায় প্রাচীন দর্পণ থেকে অবশেষ নিঃশব্দে আমার ইচ্ছাকৃত নির্বাসন !
দু'চোখে ডুবে আছে যাবতীয় স্বপ্নের স্মৃতি; মৃত্যুর প্রত্যন্ত গভীরে চেনা মুখগুলো এই নীরবতামাখা দেহটাকে কতযে আবেগ শৈলী দিতে চারপাশ ছেঁয়ে ফেলে !
বহু কালের কথার চেহারা গুলো এভাবেই দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে দেয় ফুল-চন্দন বৃত আমার শরীরে ----
সব সত্য এভাবেই মেনে নিতে নিতে ভোরের আজানে আমি শ্মশানে জ্বলি বহতী নীরবতায় !
যদিও আত্মঘাতী কিছু স্মৃতি ; যাদের জন্য আমি মৃত্যুর পরবর্তী সময়েও সতত যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুর ভেতর থেকে চড়ম অস্থিরতায় নতুন করে বেঁচে উঠি !
এভাবেই শরীরহীন অদ্ভুত শিহরণ ওঠে অপছন্দের কিছু ছদ্ম আদর্শ দেখে ; নিজের জ্বলে ওঠা শরীরের উপর বসে স্বপ্নে ভাসা দূরে মিলিয়ে যাওয়া অতীত গুলোকে নিঃশব্দ মাখা মৌন চিৎকারে বলি ; বিদায় বন্ধু , শেষ হোক প্রাণহীন অন্তরে যাবতীয় স্তব্ধতা ! দূরে ব-হু দূ--রে আয়নার তেপান্তর ; অথবা স্মৃতিশূন্য হোক আমার নির্নিমেষ নির্বাসন ! !
________________________________________
৭ ) শব্দ পোকাদের দেহ মিছিল
ফাঁদ পেতেছে চাঁদ
সে-ই অতিরিক্ত আকশে ; অন্য এক অজ্ঞাত শূন্যে নিছক ডাবলবেডে ,----- লালন প্রহর হয়তো কিছু রাত জল বিলাসি দর্পণ , গান গাওয়া ফেরিওয়ালা নির্জন নাবালক বাতাস নিয়ে যাচে !
ওধারে মেতেছে স্বপ্নবিরোধী কথাহীন অপটু সময় ; নষ্ট নিঃশ্বাস থেকে ক্লোরিয়াস ঢেউ , ---- কেউ কেউ সারস্বত সৃজনে সিড়ি বেয়ে উঠে চলে যায় সমবেত তারাদের পাসে !
চেহারা লুকিয়ে অভ্যন্তরে আত্মহারা জিন্দা লাশেরা ! নীচে আরও তলায় বাইপাস দিয়ে হেঁটে চলে যায় কন্ফুসিয়াস প্রজাতির কিছু প্রচীন শয়তান, ----- শহরের শেষ সীমান্তে ভবঘুরে এক মাতাল "ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর এখনি অন্ধ বন্ধ"--- বলে চিৎকার করে ২৫ শে বৈশাখের স্তবগান করে ! এই ভাবে জ্বলছে সময় ; তবু ভষ্ম হয়ে ঝরে যায় মান-অভিমান , প্রীতি-সম্প্রীতি , অথবা অন্য পৃথিবীর নিহত ইতিহাস ! চোখেরে ভেতর থেকে ডেকে ওঠে ব্যর্থ কিছু পথ ; বিবর্ণ বৃষ্টিরা দিনরাত দলছুট হলে স্বরচিত স্বপ্নের মধ্যে আমিও ফেরার একজন !
সেই; সেই যে কালনিসিন্দা গাছের নিচে নিখোঁজ হয়ে ধ্যান সমাধিতে কতকালের জীবন ছেড়ে যাওয়া আমার কঙ্কাল; সেও চিরনিদ্রায় এভাবেই সাধক গম্ভীর !
রোজ এভাবেই আঁকি কতশত নারীর শরীর,---- রোজ এই অতলান্তে ডুবে যেতে যেতে রাতটাকে মাখাই পীড়ণের জ্বালা !
হঠাৎ দুয়ার খুলে দেখি ঘুম হারানো আমার সর্বনাশ,----- এইটুকু যদি ছুঁয়ে বেঁচে ওঠে ; শেষবার বৃষ্টিবিন্দুদের সাথে কথা বলি !
এই ঘুম মৃত্যুর দরজায় জেগে বসে আছে ; কিছু কিছু সুখ সমৃতিসঙ্গী , তবুও কবিতার আলো ঢেলে চাঁদ ভাসে অন্য বিছানায় !
এভাবেই পুণ্যবান হব ; এভাবেই নিজের শরীর থেকে ছায়া সরিয়ে রেখে সাদা পৃষ্ঠায় আঁকবো অন্তরীক্ষ্য ! কথা শেষ হলে চোখের পাতায় ভরে ছিঁড়ে যাওয়া প্রেমের স্মৃতি সোহাগ ,-----
গর্ভের ভেতর থেকে অন্য এক আমির ভবিষ্যৎ উকি মারে ..... !
শেষের কবিতা পড়ে কতশত ভূত-প্রেত ; কতশত রাতের মধ্যে বিছানায় নগ্ন হয়ে বসে থাকে বঙ্কিমের কপালকুণ্ডলা !
স-মা-প্ত
________________________________________
কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক :
বাংলা কাব্য সাহিত্যকে যিনি ৪১ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সাথে সেবা করে চলেছেন , তিনি দু'ই বাংলার প্রখ্যাত কবি ব্যক্তিত্ব বিদ্যুৎ ভৌমিক ৷ যিনি ২০২২ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্য সম্মান"- লাভ করেন ৷ অনেকটা পথ একমাত্র কবিতার রাস্তায় চলতে - চলতে হিসেব থাকেনা অনেক কিছুরই ....... এই ঈশ্বর সত্য আমোঘ অনুভূতি কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক'- এর জীবনকে আদ্যোপান্ত অহর্নিশ ঘিরে রেখেছে ! সেই অতীত থেকে বহতা বর্তমান নিয়ে কবির কবিতা যাপন , কবিতার সাথে সহবাস ৷ সব মিলিয়ে আমিত্বভরা কবিতা বলা যেতে পারে ৷ ১৬ ই জুন ১৯৬৪ হুগলী জেলার ঐতিহাসিক শহর শ্রীরামপুর আমাদের প্রিয় কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক'- এর জন্ম! এই কবিতাগুলি ৮০ র শেষ এবং ৯০ এর শুরুতে কবির কলমে রচিত হয় ৷
ঠিকানা:
ছায়ানীড়
ফিরিঙ্গি ডাঙা রোড, মল্লিকপাড়া , সূচক ৭১২২০৩ শ্রীরামপুর, হুগলি,
ভারত, পশ্চিমবঙ্গ
________________________________________
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন