Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

পিনাকী চক্রবর্তী

মহাকালেশ্বর রহস্য  
(একটি  স্মার্ট সিটি  বা  আদর্শ নগরীর  রূপকথা )

                      

-দিনকাল আর আগের মতন নেই রে...  নগরের গোষ্ঠী   সংঘর্ষ   থামবার  নাম নেই ! 
-এমনটা  আগে  ছিল না  । আমরা  শান্তিতেই  থাকতাম  !
- আগে আমরা সবাই  একসাথে থাকতাম      এখন  কিছুতেই  মন  ভরছে  না  । মনে হচ্ছে  আরও  চাই ।   এই  বাড়তি  চাহিদার  জন্য  পরিশ্রম করতেও  মন   সায়  দেয় না    
-এটা  ইদানীং আমার  মধ্যেও  হচ্ছে ।  কিছু  বুঝতে  পারছিস ? আমিতো  কিছুই  পারছিনা  বুঝতে।
-আমিও ছাই  কিছুই  বুঝিনি । আসলে    আশ্রমে  গিয়েছিলাম   ফল আর যজ্ঞের কাঠ  দিতে  । দেখলাম  সেখানকার  ঋষিরা  খুবই  চিন্তায় । তাদের  মুখ  শুকিয়ে  গিয়েছে ।  মনে হল  কোন  বিপদ  আসছে !
-বিপদ !খুলে বল  , তুশ ...
-হ্যাঁ ।  আমি  বটগাছের  তলায়  কাপড় পেতে  শুয়ে  আছি , দুপুরবেলা  । কিছুটা  দূরে এক বৃদ্ধ  ব্রাক্ষ্মণ  আর তাঁর  চার ছেলে  বসে  গল্প করছিলেন ।  তাঁদের কথা কান পেতে শুনলাম । কথা খুব আস্তে  হচ্ছিল না , তবে হ্যাঁ  মুখের   শব্দ  থেমে –থেমে আসছিল   তাঁরা বুঝতেও পারেননি , কেউ সেই কথা  শুনছে !
-কী  শুনলি ? তোর মুখ দেখে মনে হচ্ছে  খুব চিন্তায় আছিস ।
 বিকেল ভেঙে  সন্ধ্যা হচ্ছে   জলাশয়ের ধারে   ওরা  দু’জনে  বসেছে । তখনই  সূর্য ডুবে  গেল । 

জঙ্গলের মাথায়   কেউ যেন   চাদর  চাপা দিয়ে গেল !  এই জঙ্গলে  অনেকের  মতন  ওরা  দু’জনেও  কাঠ , ফল – সংগ্রহ করতে  আসে ।  এইসব  কিছু   আশ্রমে পৌঁছিয়ে  দেয় নিজেদের হাতেই    এটা  তাদের  জীবিকা । এই কাজের  বিনিময়ে  তারা  খাবার পায় ।  কাপড় পায় , ব্যবহার করবার জন্য  
জঙ্গলে  বসে , তাদের  ভিতর  কথা   হচ্ছিল । রোগা  দু’জনেই  । যে  খুব চিন্তায় রয়েছে , অপেক্ষাকৃত  দুর্বল  স্বাস্থ্যের অধিকারী ;  তুশ বলল 
-আমি কান পেতে শুনলাম ।  আমাদের  অবন্তীর   অবস্থা  বেশ  চিন্তার ।
উল্টো  দিকে  বসে  থাকা  , লম্বা রোগা  আর  ভারী  গলায় লোকটি  বৃকোদর । বলে উঠল – আরে  , অত  পুঁথিবাক্য  না ঝেড়ে  পরিষ্কার ভাবে  বল –

দু’জনেই মধ্যবয়স্ক ।  সমবয়সী । তুশ বলল  -  ওঁরা  একটা  গল্প   বলল ।
-গল্প !
-মন  দিয়ে   শুনলেই  সব  পরিষ্কার হয়ে যাবে ।
-থামবি না    বল ...  
চারজন পুত্রের  মধ্যে  প্রথমে  বড়  ছেলে  বলল -  পিতা , আপনি  বলছিলেন , আমাদের এই  নগরটি আগের  মতন  সুরক্ষিত  নয় । এখানে  অনেক  পরিবর্তন  আসতে  চলেছে ।  এইসব  পরিবর্তন  গুলো  সম্বন্ধে  আমাদের  জানাবেন । 
আরেকজন  , সে   মেজো ছেলে , বলল -  আমরা  এত দিন  বেশ  শান্তিতেই  ছিলাম এখন আবার  নতুন  করে  কিছু  উপদ্রব  দেখা  দিচ্ছে ।  আমরা যে  পরিকল্পনা  করেছিলাম  তাতে  বেশ  সমস্যা ।
এত  কিছু শুনে  ছোট  ছেলে  বলল – পিতা  আপনি জানেন ,  বেশ কিছু  নিম্ম বর্গীয়  মানুষেরা  বিক্ষোভ  দেখাচ্ছিল । তাদের  বিরোধ  ছিল আমাদের  উপর । তাদের  কথায় , আমরা  তাদের  উন্নতির  পথে অন্তরায় । আমরাই  তাদের  হত দারিদ্রতার  জন্য  দায়ী এমনটা   হলে  আমরা  উন্নয়নের  কাজ  করতে পারব না ?
পিতা  বললেন – তারমানে  এই সমস্যার  আভাস  পেয়ে  গিয়েছো । আজ  এখানে  আমরা  মিলিত  হয়েছি , এই  বিষয়টির জন্যই ।  আমি  তোমাদের  একটা  ঘটনার  কথা  বলব । মন  দিয়ে  শুনবে ... 


                   ২ 
সদ্য সূর্য  উঠেছে । খুব  ভোরেই  নগরের মুখে  যাত্রা  শুরু  করলাম ।  শুনেছি শিপ্রা নদীতে  জল   নিয়ে  গণ্ডগোল  শুরু  হয়েছে  এখনাকার সমস্যা  হচ্ছে  , আমরা  সবাই  জল পান করি , জমিতে চাষের  জন্য  জলের   ব্যবহার  করি , ফসলের  সবুজ  রঙে  যখন নদীর   পাশের  অঞ্চল ভরে  যায় – উৎসব করি ।  এই  নদীর  প্রতি যে  আমাদের  মানুষের  দায়িত্ব  রয়েছে , ভুলেই  গিয়েছি !  ভগবানের  প্রতি দায়িত্ব  পালন  করছি । শুধু   প্রকৃতির ক্ষেত্রেই    উদাসীন !
আমার অনুচরেরা  এসে খবর  দিয়েছিল ,  শিপ্রা  নদীর  চড়  ক্রমশই  দূষণে  ভরে  উঠেছে ।   কয়েকদিন  ধরেই , নতুন  ফসল  উৎপাদনের  জন্য  পুজো  করা  হয়েছিল ।   সেই সামগ্রী ,  ব্যবহৃত  জিনিস – সমস্ত  কিছু  নদীতে  বিসর্জন  করা  হয়েছে । সেখান থেকেই এই  সমস্যা ।
আমি  খুব তাড়াতাড়ি নদীর  দিকে  হেঁটে  চলেছি । কেননা এখানকার  অবস্থা  খুব একটা  ভালো  নয় । আমাদের  বিরোধী  শিবির  যে কোন  সুযোগে  ঝামেলা  করতে পারে  । শুধু ঝামেলা নয় , এই ঝগড়া  দেখতে  - দেখতে  গোষ্ঠী লড়াইয়ের  আকার    নেবে    আমি তাই খুব  দ্রুতই  পা চালিয়ে  যাচ্ছিলাম

নগর  পেরিয়েছি  মাঝে  খুব ছোট্ট জঙ্গলের  সরু  রাস্তা  ধরেছি , খুব তাড়াতাড়ি  যাব  বলেই  এই  পথে   এলাম । আচমকাই  তিনজন  আগন্তুক  আমার  সামনে এসে দাঁড়ালো । আমি  বিরক্তই  হলাম ।
তাদের চোখ  দেখে  মনে হচ্ছিল , খুব সাধারণ ।
-আপনি মহাকালেশ্বর   দর্শন  নিয়ে  চর্চা  করছেন ?
আমি বেশ  কিছুটা  অবাক   হয়ে  গিয়েছিলাম  !  এই   চর্চা  আমাদের  একান্ত ।   দীর্ঘ পাঁচ  বছর  ধরে  গবেষণা  করে  আসছি । এর  রহস্য  সবটাই  এখনো  আমাদের কাছে অজানা। তবে  এটাও  ঠিক  আমাদের  অনুসন্ধান  বেশ এগিয়েছে ।  আর এর  সুফল  আমরা  পেতে পারি অদূর  ভবিষ্যতে ।  আমাদের এই গোপন বিদ্যার  কথা  , আমাদের  খুব কাছের  লোকজন ছাড়া কেউ জানেনা ।  এনারা  কোন  তরফের ? আমাদের এই  দর্শন  এখনো  প্রয়োগ করিনি , অথচ এই  গুপ্ত বিদ্যা  নিয়ে  ইতিমধ্যে  যে  বিকল্প  শিবির  তৈরী  হচ্ছে  , টের  পেলাম 
-হ্যাঁ । আপনারা !
আমি জানতাম  লুকিয়ে  লাভ নেই ।  বরঞ্চ  এই লোক  গুলোকে  চিনবার  চেষ্টা  করি । আমার  কথা  শুনে   তাদের  মধ্যে  থাকা  একজন  যুবক  বলল – ব্রাক্ষ্মণ , আমাদের সাথে  আসুন ।
-কোথায় ?
-আপনি  আমাদের  বিশ্বাস  করতে  পারেন । আমরা দস্যু  নই । আপনার  ক্ষতি করব  না ।  শুধু  চোখ  দুটো  কালো  কাপড়ে  বেঁধে  দেব । জঙ্গলের  দূরেই  আমাদের  রথ । কষ্ট  হবে না । এইবার  অনুমতি দিন ।
কিছুটা  ঘাবড়ে  গিয়েছিলাম । তাদের গলায়   এমন   দৃঢ়চেতা   ভাব , মনে  হল  আমার  অনুমতির অপেক্ষা  শুধু মাত্র  নিয়ম মাফিক ।  আমি বললাম –এখন আমাকে শিপ্রা  নদীতে  যেতে  হবে সেখানে   সকাল  থেকেই ঝামেলা শুরু হয়েছে ।
-আপনি এত ভাববেন  না । সেই ঝামেলা এখন  আর নেই । আপনি আমাদের সাথে আসুন ।
-মানে ?
-ঝামেলা আমরাই  বাধাই । আবার আমরাই  মিটিয়ে  দিয়েছি । আপনাকে    অপহরণ করব  বলেই  এই সব  কিছু আয়োজন । আপনার  আশ্রম  থেকে  এখানে  আসতে   জঙ্গলের পথ  রয়েছে  , পাছে  আপনি এই  পথ দিয়ে  আসেন , আমরাও  অপেক্ষা  করছিলাম । শিপ্রা  নদীর তীরেও  আরেক দল রয়েছে ।
-আমি  কিছুই  বুঝতে পারছিনা ! তোমরা নিজেদের  পরিচয় দাও ।
-আমরা  অনুচর  দূষণের । এখন  আপনি  আমাদের  সাথেই  যাবেন ।
-দূষণ  কে ?
-মাপ  করবেন , এই  বিষয়ে  আর  প্রশ্ন  ক্রা যাবেনা ।
আমার  কিছু  বলবার আগেই , একজন  কালো  কাপড়  আমার  দুই  চোখের  পাতার উপর  রেখে  মাথার  পিছনে  বেঁধে  দিল । আরেকজন  হাত  দুটো   বেঁধে  দিয়েছে ।
আমি  বুঝলাম এখন  আমার  কাজ  ওদের  অনুসরণ  করা ।

চোখ  যখন খুলল , মনে  হয়েছে ,    দীর্ঘক্ষণ  সুড়ঙ্গের  ভিতর  যে  আলোর  খোঁজ  চলছিল , তারই  সন্ধান     অনেকক্ষণ  আলো  ছিল না ।  তাই প্রথমে  চোখ  ঝাপসা লাগছিল ।  দু’হাতে  চোখ  মুছে  দেখলাম ,  চারপাশটা  অন্ধকার । আমি  নিজে  সেই  অন্ধকারের  ভিতর  ছোট্ট   বিন্দু !   বুঝতে পারছিনা , রথের  উপর  জখন যখন দাঁড়িয়ে  ছিলাম  , টের পাচ্ছিলাম  পথ সমতল  নয় ।     রথ  থামল ।  বেশ  কিছুটা  হেঁটে   এলাম    চোখ  খুলতেই  অন্ধকার !

-আসুন  ব্রাক্ষ্মণ ...
 গলাটা  বেশ ভারী ।  কানে  ছুঁয়ে গেল ! ঘাড়  ঘুরিয়ে বক্তাকে  খুঁজবার  চেষ্টা  করছি । আবার  হাসি  শুনতে  পেলাম 
-আপনি আমাকে  দেখতে  পাবেন  না । আমি  অদৃশ্য , এমন ভাবেই   আমাদের  মধ্যে  কথাবার্তা হবে    অসুবিধা  নেই  তো ?
-না নেই ।
‘না  নেই’ --  , কথাটা  বলেও ,  নিজেকে  বিশ্বাস করতে পাচ্ছিনা !  এমন পরিবেশ  এর আগে   আমি উপলব্ধি  করিনি ।  প্রাণের ভয়  নেই ।  একটা  অস্বস্থি   ,নাভি  থেকে  গলা অব্দি   দম  বন্ধ ভাব  উঠে  আসছিল ।  নিঃশ্বাস  নিতে  কষ্ট  হচ্ছে । 
আমি বললাম – আপনি কে  ?  এমন  ভাবে আড়ালে  থেকে  কথা  বলবেন !
লোকটির  তীব্র  হাসির  স্বর  শুনতে  পেলাম    মনে  হচ্ছে ,  বুকে   ধাক্কা  মারল   
আমি  বললাম – আপনি সামনে  আসুন ।  আমি  নিরস্ত্র  আর  আপনাকে  আক্রমণ করবার সামর্থ্য  নেই ।
-থাকলেও  মারতে  পারতেন না । আমি   গুপ্ত বিদ্যার  চর্চা  করি । 
-তাই  নিজেকে  আত্মগোপনেই  রেখে  দেবেন  ?
-প্রয়োজনে ।
-আপনার  এমন  লুকিয়ে  থাকবার  দরকার কী ?
-আছে  । এর  উত্তর   পড়ে দেব    তবে  আপনার  নিজের  জন্যও  আমার  বীভৎস মুখ দেখার  দরকার  নেই    অহেতুক  আতঙ্কিত হবেন 
-একদম  নয় । ব্রাক্ষ্মণরা  সহনশীল  হয় । আপনি  দেখান  , আমার  ক্ষতি  হবে না ।
-আমি  দূষণ । একটা  বিশেষ  কারণে আপনাকে  এখানে   নিয়ে  এসেছি , এমন  ভাবে  নিয়ে  আসবার জন্য  , পারলে  ক্ষমা  করবেন । 
আমি  খানিক  অবাক  হয়ে  গেলাম    বললাম – আপনি  কোথায় ?
-এই  গুহার  ভিতর  এমন  জায়গা  রয়েছে , আমি  আপনাকে  দেখতে  পাচ্ছি । আপনি  আমার গলার  স্বর  শুনলেও । দেখতে পাবেন না
-এই লুকোচুরির  দরকার  আছে  ?
-এটা  ভবিষ্যৎ  বলবে । এখন  এই  নিয়ে সময়  নষ্ট  করে  লাভ  নেই । সময়  আপনার কাছেও  দামী । আমার কাছেও ।  আসুন আমরা  আলোচনা  করি ।
-কোন  বিষয়ে ?
-আপনি  অবন্তী  নগরকে  আদর্শ  নগর  হিসেবে  গড়ে  তুলতে  চাইছেন ।  এখনাকার অধিবাসীদের   বিদ্রোহী  করে  তুলছেন ।  আপনার নগরে  শুধু ব্রাক্ষ্মণ  নয় ক্ষত্রিয় , শূদ্ররাও   রয়েছে । এদের  ভিতর  থেকে  আপনি   ভয় ,  নিয়ম তুলে  দেবেন  ?
-আমি  বুঝতে  পাচ্ছিনা    আমার  নগরে  সব  শ্রেণীর  মানুষ  নিজের  মতন  থাকেন  । তাদের একত্রে  থাকবার  কোন সমস্যা  নেই     থাকলেও  খুব  সামান্য ।  আমি তাদের  সকলকে  নিয়ে শুধুমাত্র  গবেষণা করছি । বলতে  পারেন  অবন্তী   নগরকে   মানব সম্পদের  উন্নয়নের  জন্য  পরীক্ষাগার  হিসেবে  ব্যবহার  করা  হচ্ছে ।
-এখানেই  আমার আপত্তি । আমি চাইছি  আপনি এই কাজ থেকে  দূরে থাকুন । এইধরনের  পরীক্ষা  বেশ  বিপদজনক ।
-কেন  ?
-দীর্ঘদিন  যে  ব্যবস্থায়   মানুষ  বসবাস করে , সেই  ব্যবস্থাই তার  নিজের  । সেখানে  সে  সবচেয়ে  বেশী  মানিয়ে   নেয় ।  স্রোতের  বিপক্ষে  সাঁতার  দিতে  গেলেও ,  স্রোতের খানিক  সহযোগিতা  দরকার ।
-  দক্ষ সাতারুর  আত্মবিশ্বাস  থাকলে  বিপক্ষ  স্রোতকেও ,  নিজের   জন্য              ব্যবহার  করা  যায় ।
- ব্যবহার  ! আমি এই কথাই বলছিলাম । মানুষকে  ব্যবহার  করছেন  ভালো , তবে  নিজের  উন্নতির  জন্য  করাটাই  বুদ্ধিমানের  কাজ 
-আমি  নিজের স্বার্থেই তাঁদের  ব্যবহার করছি ।  দেখুন   আদর্শ  নগরীর  স্বপ্ন  সফল  হলে ,  আমাদের  পরের  প্রজন্ম  সুস্থ থাকবে  । এটা  আমাদের কাছে  বড়  পাওনা ।  ভবিষ্যৎ  প্রজন্ম রক্ষা  করতে পারাটাই  আমার স্বার্থ । 
-আপনি আমাদের হয়ে  কাজ  করুন ।  নদীর  জলে  সকলের  উপর  অধিকার  ঠিকাছে । তাইবলে  নিঃশুল্ক   করে  দেওয়া  ঠিক  নয় ।
-একটা  আদর্শ  নগরীতে  জল  আর খাদ্য  সকলের  কাছে  পৌঁছাতে  হয় । শিশু মৃত্যুর  হার যেন  কমে  । অপুষ্ট   শিশু  যেন  না  জন্মায় । আমি সেই চেষ্টাই  করছি । এই সব  কিছুর আগে  দরকার  শ্রেণীমুক্ত  সমাজ । এখন  সমাজে  যারা পিছনে  রয়েছেন তাদের  ভর্তুকি  দিয়ে  একটা  নির্দিষ্ট  সময়ের  মধ্যে   তাদের  মধ্যে  আর্থিক  বৈষম্য  মিটিয়ে দেব   এরজন্য  অবশ্য  নগরের  প্রাকৃতিক  উপাদান  গুলোর  দায়িত্ব  নগর  প্রধানের  হাতেই । সেই   উপাদান  সকলের  জন্য  ব্যবহার  করা  হবে    নির্দিষ্ট  সময়ের  জন্য  সকলকে  সুযোগ দেওয়া  হবে    এর  বদলে  অবশ্য  নগরের জন্যও নাগরিকদের  সেবা  দিতে  হবে  । এমন ভাবেই  দেওয়া  -নেওয়ার  মাধ্যমে  চলবে  সমাজ ।
-এই  ব্যবস্থায়  যদি  কেউ  ভালো কাজ  করে ।
-নিঃসন্দেহে  সে  এগিয়ে থাকবে । 
-তাতে  শ্রেণী বিভাজন  কমবে ?
-যদি  আপনি  নিজের  দু’ হাতকে ব্যবহার   করতে না  পারেন  ,  পিছিয়ে  পড়বেন ।  প্রতিযোগিতা হবে  নিজের  সামর্থ্যের  সাথে  অন্য  সামর্থ্যের    সমাজ  কোন  স্তর  আরোপিত  করবে না  । এটাই  আমার  শ্রেণীমুক্ত  সমাজের  পদ্ধতি 
-আমি প্রকৃত অর্থে এমন নগর তৈরী করতে চাই , যেখানে  নগরের  হাতে  কোন দায়িত্ব থাকবেনা    প্রাকৃতিক সম্পদ  ব্যবহারের ।  নাগরিকরা   অসীম  সুখ  ভোগ  করবে । তারা   স্বাধীন । যে  যেমন ভাবে   নিজেদের  দায়িত্ব  নেবে     নগর  কোন  কিছুতেই  মাথা    গলাবেনা ।
-এমন  ভাবে  ক্ষতি  শুরু  হবে  । এক  পক্ষের  হাতে   প্রচুর   সম্পদ  আর  অন্য পক্ষ  সমাজের  প্রান্তিক  সীমায়  থাকবে   
-তাইতো  বলছি  , সভ্যতা  কখনই  শোষণ মুক্ত  হবে  না । কেননা  মানুষের  ভিতরে  অন্যের উপর   কর্তৃত্ব করবার   যে  প্রবণতা , তা  শাশ্বত  শোষণ  থাকলেই  শ্রেণী সৃষ্টি  হবে । শ্রেণীহীন   সমাজের কল্পনা  অলীক ,  মিথ্যা   চিন্তা  
-আমি  শ্রেণী বিলুপ্ত  সমাজের  কথা  বলিনি । আমি   বলেছি  মানুষ যেন নিজের  সামর্থ্যেই  সমাজের  শ্রেণীগত  অবস্থানের  পরিবর্তনে  সক্ষম হয় ।
-দেখুন , নগরের  শাসক  নিজের স্বার্থেই  এমনটা  হতে  দেবেনা     কারণ  যে  সমাজে শ্রেণী  থাকেনা  , সেখানে   শাসকের  বিরুদ্ধে লড়াই  সরাসরি করা  যায় ।  এটাই মহাকালের  বিধান ।  
-খুবই  বিপদজনক ।   এই  বিধানে  আদর্শ  সমাজ  তৈরী  হতে পারেনা ।
-মানে  ? আদর্শ  সমাজ বলে  কিছুই  নেই  ! যা অনেক  সময়  পর্যন্ত টিকে  থাকে  , তাই  আদর্শ হয়ে  ওঠে ।  আমরা  দু’জনে  মিলে  একটা  নতুন  নগরের  নির্মাণ করব । 
-সেই  নগর  পরিচালনার  দর্শন  কী  হবে  ?
-আমি   যেই দর্শন  এতক্ষণ  আপনাকে  বললাম ।  অবাধ   ভোগ –বিলাসে  দিন  কাটানো । 
-আপনি   আদর্শ  সমাজ বলতে   এমনটাই   বোঝেন ?
-যেখানে ,  মানুষের চাহিদা শাসকের উপর নির্ভরশীল  না  থেকেও  নির্ভর  করবে । এমন  স্বাধীনতা দেওয়া  হবে  , যাতে নিজেদের   চিন্তার আর   মুক্তির  পরিসীমা যাবে   !  সে  ভুলে  যাবে  কতটুকু  তার  চাহিদা  । এই  কৃত্রিম  আকাঙ্খাই  , চাহিদা আর   লোভের  জন্ম দেয় ।   আমরা কেউই  ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা । নাগরিকদের চাহিদার দিকে তাকিয়ে কখনোই  শাসক চলতে পারবে না।  কেননা চাহিদাকে কখনই একটি নির্দিষ্ট  সীমায় আটকে রাখা সম্ভব  নয় । তাই তাদের নিজেদের ভিতরেই  নিজেদের আটকে রাখতে হবে । ভেদাভেদ সেই      অমোঘ অস্ত্র – যা ব্যবহার করলে  নাগরিকরা নিজেদের সাথে নিজেরাই  বিবাদে মত্ত থাকে । শাসকের সুবিধা হয় । আমি এই  দর্শনেই  ভরসা  রাখছি ।

-এই চিন্তা অসুর চিন্তা । নাস্তিক চিন্তা । যা প্রকৃতির বিপরীত , তাকে  নিয়ে সমাজে                    মানব সম্পদের উন্নয়ন সম্ভব নয় ।
-কেন  সম্ভব নয় ? আমাদের পথ আলাদা । আমি কখনই বলিনি নাগরিকদের  বিকাশের থেকে সরে আসব । আমি বলছি , তাদের  উন্নয়নের পরিমাপ  হবে শাসকের  পারগতা  সে অপারগ হলে  শাসন  চলবে  কেমন  করে ? অনেকে অনেক  কিছু চাইবে , সমস্যা  হচ্ছে সেই   চাওয়ার নিয়ন্ত্রণ নাগরিকদের হাতে থাকবার  দরকার  আছে  কি  ?
-আকাঙ্খার গোলক ধাঁধায় ঘুরবে !
-মানুষের ভূমিকাকে স্বীকার না করলে , মনের বিকাশ ঘটবে না । সৃষ্টি থেমে যাবে ।  মহাকালেশ্বর তথ্যে – পৃথিবীর সেই  বিপদের কথাই বলতে  চেয়েছি ।
-আমি সব জেনেছি , তাই আপনাকে আমার দলে আসবার জন্য অনুরোধ  করছি । 
-মানে  ?
-আপনি  খুব  বিদ্ব্যান  আর  পণ্ডিত  । এত গুপ্ত  বিষয়  নিয়ে   গবেষণা  করে  চলেছেন । সফল  হয়েছেন , এইটুকু অন্তত  বুঝে গিয়েছেন যে   আপনার  এই  গবেষণা  আমার  কাছে  স্বর্গরাজ্য  দখলের  চেয়েও  বেশী  গুরুত্বপূর্ণ । কেননা , মানুষের   মধ্যে  কর্তৃত্ব  করবার  মজাই  আলাদা ।  আসল  কথা  হচ্ছে , আমি চাইব  আপনি  এই  গবেষণার প্রয়োগ  না  করেন । কেননা  আপনার  শাসন  করবার  পদ্ধতি  মানুষ  গ্রহণ করবে  দ্রুত । আর  এমনটা  হলে , কেউ  আমাদের  গুরুত্ব দেবে  না । শুধু তাই  নয়  তাদের  দখল  করতে পারব না  । এমনটা  মানা  যায়না   তারা  বিদ্রোহ করতে  পারে ।
-জনগণকে  নিজের  সুবিধা  দেখতে  দেবেন না !
-সবাই  নিজেরটা  দেখে  , আমিও  দেখব ।
-আমিও দেখছি...
কিছুক্ষণ  দু’জনের  কণ্ঠস্বর  থেমে  গেল  । আমি  কিছু  বুঝতে পারছি না  । এতটুকু টের  পেলাম  ,  এতক্ষণ  যে  আমার  সাথে  কথা  বলছিলেন । তিনি কিছুটা  হলেও রেগে      রয়েছেন । আমাকে  বললেন – দেখুন  , আপনাকে   এইকথা  গুলো  বলবার  জন্যই  এখানে  আনা  হয়েছিল । চিন্তা  নেই  নিরাপদেই  যেখান থেকে  নিয়ে  এসেছিল  , সেখানেই  আপনাকে  ছেড়ে  দেওয়া  হবে    তবে  আজকের  পর  থেকে  নিজের  নগরের  দায়িত্ব  আপনি  নিলেন । আমি  কিন্তু   আপনার    দর্শনের  বিকল্প  রাখব ।  তখন  আমাকে  দোষ  দিতে  পারবেন না।  

চোখ  দুটো  কেউ  পুনরায় বেঁধে  দিল ! আমাকে নিয়ে  যাবে । 

গল্প শেষ হতেই  ,  পিতা  পুত্রদের  উদ্দেশ্যে  বললেন -   আমাদের  সজাগ  হওয়ার সময় এসেছে     কোন  ভাবেই  দূষণের  পরিকল্পনাকে  সফল হতে  দেওয়া  যাবে  না   
ছোট  ছেলে  বলল – পিতা  আপনি  বলুন  আমরা  কেমন  ভাবে  আদর্শ  নগরী  নির্মাণ করব ? জনগণের  জীবনে  স্বাচ্ছন্দ্য  দিতে  হলে  কোন  পথ  গ্রহণ করতে  হবে  ?
পিতা  হাসছেন ।  বললেন -  পুত্র ,  জনগণের  জীবনে    স্বাচ্ছন্দ্য   দিতে  গিয়ে  কোনদিনই  সফল  হবে  না    কেননা  বিনাপরিশ্রমে   কিছু  পেলে  ,  মানুষ অকর্মণ্য  হয়ে  ওঠে । সে  সমাজকে কিছুই  দিতে  পারেনা ।  মনে  রেখো  আদর্শ  নগরী  , আদর্শ  নাগরিক  তৈরী  করে । যে  নিজে  স্বনির্ভর ।   তাদের  ব্যবহারের  জন্য  উপযুক্ত  বাসস্থান ,   পোশাক  , খাদ্য  দিচ্ছ , অথচ  তাদের  জীবিকার  দিকে  খেয়াল  নেই , এমন উন্নয়ন  শুধু  মাত্র  শাসকপন্থী  উন্নয়ন ।  দূষণের  পরিকল্পনা  এমনটাই  ,  জনগণকে  কর্মবিমুখ  উন্নয়নের  স্বপ্নে  বিভোর  করে ,  নিজেদের  ক্ষমতা কায়েম রাখা  । এটা  সুস্থ  সমাজের  জন্ম দিতে  পারেনা ।


                      
গল্প  থেমে  গেলে ।  যিনি  এতক্ষণ  পিতা আর  পুত্রদের  গল্প  শোনাচ্ছিল ,  তুশ  থেমে  গিয়েছে  পাশে  বসে  থাকা  উল্টো  দিকের   লম্বা , রোগা   লোকটি  বৃকোদর  ভারী  গলায় বলে উঠল  -  তোমার  গল্প  শুনলাম ।  বেশ  ভালো ।
-শুধু  ভালো ?
-না  এটা  ঠিক ,  কাজ  না  করলে  মানুষ  অলস হয়ে ওঠে । আমি তাই  সবসময়  কাজের  পক্ষে । 
-অবন্তী  নগরীতে  খুব ঝামেলা  চলছে ।  যারা  এতদিন   পরিশ্রমের পক্ষে  ছিল , আজ  তারাই  বিদ্রোহ করছে ! তাদের  কথা    নগরের  প্রধানরা  তাদের   পরিবারের  দায়িত্ব  নিক ।   এতদিন  দেওয়া  -নেওয়ার মাধ্যমে  পরস্পরের  উপর নির্ভর  করতাম । এখন  বিদ্রোহীরা  বলছে  সম্পূর্ণ  জীবন  ধারণের  দায়িত্ব  নিতে  হবে  । শুধু তাই  নয়  তারা  ক্রমশই  নগরী  ত্যাগ  করছে ।
বৃকোদর বিশেষ  কিছু  বলল  না    হাই  তুলল । মাথা চুলকিয়ে  বলল 
-ভাই , আজ  উঠছি ।  জানিনা  আবার  কবে  দেখা  হবে  ?
তুশ  বেশ  কিছুটা   অবাক  হয়ে  বললেন -  কেন ?
ইতস্তত    মুখ  নিয়ে  বলল  -  আসলে  , কাল  খুব  ভোরেই  পরিবারকে  নিয়ে  অবন্তী ত্যাগ  করব ।
-কেন ?
- পাহাড়ের   ওইদিকে  এক  নতুন  নগর তৈরী   হচ্ছে । সেখানে   নাগরিকদের  সব  দায়িত্ব নগর  প্রধানের ।  নাগরিকদের  কোন  পরিশ্রম করতে  হবে  না 
-তাহলে  এমনি  -এমনিই ...
-না , মানে বদলে  নগর  প্রধানের  কথা  শুনে  চলতে  হবে    নিজের স্বাধীনতা  থাকবে , সেই  স্বাধীনতার  পরিমাণটাও  অবশ্য শাসকই   নির্ধারণ  করবে । এই  অনেক  রাত  হল  আসছি...


তুশ  দেখছে  , হেলতে  -দুলতে  তার  বন্ধু    ক্রমশই  জঙ্গলের ছায়া  মাখা    পথ  ধরে    এগিয়ে  চলেছে ।
 ছোট্ট  নিঃশ্বাস  ছেড়ে  তুশ  বলল -  মানুষ  শত  চেষ্টা  করলেও  নিজের  প্রবৃত্তির  কাছে  হেরে  যায় ! 
 =========০০০==========














পিনাকী চক্রবর্তী
যাদবপুর, কলকাতা
 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক