আমি একান্ত ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি স্বপ্ন হল বাঁধনহারা কল্পনার অলীক সুখের সামান্য ফলাফল মাত্র ,তা সত্যিই করা মুসকিল হলেও অসম্ভব নয় একেবারে ৷উদাহরণ সরূপ যদি ধরি কোন এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যসদস্যা সংখ্যা পাঁচজন,কর্তা,গিন্নি,কর্তার বুড়ো পিতা আর দুটি ছেলেমেয়ে,এখন এইসব মানুষগুলোর স্বপ্ন কেমন হবে?
প্রথমেই আসে কর্তার পিতা,বয়স নব্বইয়ের কাছাকাছিই ,হাঁটাচলা ,কাজকর্ম করতে সম্পূর্ণ অক্ষম,শুধু ভরসা বলতে কেবল মাত্র ছেলেবৌমা,যারা তাকে ঠিক করে সেবাই করেনা৷এমনও অবস্থায় রাতের অন্ধকারে তখন তার চোখ বেয়ে নেমে আসে অন্য এক পরিবারের স্বপ্ন ,সেখানে তিনি পুরোপুরি সুস্থ ,দিব্যি হেটেচলে বেড়াচ্ছেন,নাতিনাতনীদের সঙ্গে খেলা করছেন,সকালবেলায় বৌমা চা করে দিচ্ছে,ছেলে সংসারের প্রতি কাজের আগে পরামর্শ নিচ্ছে ,দুপুরবেলা পাঁচ রকমের তরকারী সহযোগে গরম ভাত খাচ্ছেন ,বিকেলে পাড়ার মোড়ে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন আর রাত্তিরে বৌমার হাতে তৈরী ঘিয়ে ভাজা রুটি আর অড়হরের ডাল খেয়ে দিব্যি নাক ডাকিয়ে ঘুমচ্ছেন ৷ কিন্তু এ স্বপ্নকি আদপে সত্যি হয় নাকি হবে?সম্ভবনা একটাই যদি ছেলেবৌমার হুশ ফেরে তবে তা হতে পারে বৈকি৷এবারে আসি কর্তার কথায়, কর্মষ্ঠ মানুষ ,সামান্য কেরানীগিরি করে দিন কেটে যায় বেসরকারী আপিসে ৷বছর কুঁড়ি ওখানেই কাজ করছেন৷ছেলেমেয়ের স্কুলের ফিজ দিতে ,বাবার ওষুধ কিনতে ,পরিবারের ঘানি টানতে টানতে গলদঘর্ম অবস্থা একেবারে ৷ কিন্তু অবসর মেলে না,সময়ে অসময়ে বউয়ের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি ,উচ্চ পদস্থ অফিসারের চোখ রাঙানি, এইরকম একজন মানুষের স্বপ্নটা অনেকটা হবে এরকম ,রাতারাতি ঔই অফিসের বড়বাবু পদে সে উন্নীত হয়েছে ,যারা তাকে এতদিন চোখ রাঙিয়ে এসেছে তাদের ওপর একচোট বকাবকি করলেন তিনি ৷মাসের শেষে মোটা মাইনের একাংশে ছেলেমেয়ের স্কুলকলেজের ফিজ মিটিয়ে ,গিন্নীর জন্যে নতুন শাড়ি কিনে রান্নাঘরে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি৷সপ্তাহে দু একবার বাইরে মুভি আর ডিনার রীতিমত বিলাসভবনে সুখের দিন যাপন৷এটাও সত্যি হতে পারে,যদি দুএকটি ডিগ্রী নিয়ে বরাত জোরে কিংবা পকেটের কল্যাণে রেকমেনটেশানের হাত ধরে কিছু একটা হয়,পত্যশা ক্ষীণ তবুও দেখতে ক্ষতি নেই ৷কর্তার পরই আসে গিন্নীর কথা,স্থূলকায় দেহ ,বয়স ৪০ কিংবা ৪২৷সারাদিন ঘরের কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকেন,জলআনা,মশলাবাটা ,ছেলেমেয়ের জন্যে টিফিন তৈরী থেকে শুরু করে সবশেষে ঘাটের মড়া বুড়ো শশুরটাকেও সেবা করতে হয়,এককথায় যাকে বলে তিতিবিরক্ত! আর কি৷সেই গিন্নী যখন ঘুমের দেশে পাড়ি দেন তখন তার স্বপ্নে ধরা দেয় এক বিচিত্র দুনিয়া ,সেখানে সবকিছুর মালিক সে নিজেই,স্বামীর পদোন্নতিতে মাসে মাসে গায়ে উঠছে তসর থেকে ঢাকাই,সারাদিন পায়ের ওপর পা তুলে সিরিয়াল আর পাশের ফ্যল্টের মহিলামন্ডলীর সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা ,যার বেশিরভাগটাই পরনিন্দা তবুও ৷এই স্বপ্নটাও মোটেও অমুলক নয়,এটাও সত্যি হতে পারে একমাত্র স্বামী কর্তৃক সুতরাং স্বামীর ভরসা৷তো যাইহোক এবারে আসি দুই কনিষ্ঠ ভবিষ্যত মূলধনের কাছে,একজন সবেমাত্র বি.এ সেকেন্ড ইয়ার অপরটি সায়েন্স নিয়ে ক্লাস টুয়েভ৷বি.এ পড়া সদ্যস সবেমাত্র প্রেমে পড়েছে ডিপার্টমেণ্টের কোনএক জৌলুষ চেহারা সম্পন্ন কোন এক মেয়ের সাথে সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই দিন হোক বা রাত্রি চোখে শুধুই প্রেমের স্বপ্নই দেখে,এটা আপনি বয়সের দোষ বলুন আর ভালবাসার অনুভূতি স্বপ্নটাও কিন্তু মোটেও মূল্যহীন নয়৷বাকী থাকা খুদে সদস্যার স্বপ্ন খুবই স্বাভাবিক আর সহজ সরল৷ পরীক্ষায় ভালো রেঙ্কিং আর বি.টেক করে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ওঠা৷এ স্বপ্নের গভীরতা অনেক আর প্রবণতা ও খুব বেশি যদি সে খুব ভালো করে স্টাডি করে আর মন দিয়ে পরীক্ষাগুলো দেয়৷
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন