আগষ্ট মাস স্বাধীনতার জন্ম মাস, আগষ্ট মাস বিপ্লবের মাস,আগষ্ট মাস আমাদের অতিবড় প্রিয়জনেদের শহীদ হওয়ার মাস, আগষ্ট মাস আমাদের স্নায়ুর তন্ত্রীগুলোকে তড়িৎ গতিতে তরান্বিত করার মাস। আমাদের ভারতবর্ষের স্বাধীনতা এসেছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট। তাই আগষ্ট এলেই মনে পড়ে যায় সেই সেদিনের কথা।যদিও চোখে দেখিনি সেই সেদিনের বর্ণ গন্ধ কেমন ছিল।তবুও তো আন্দাজ করতে পারি সেদিনটা ছিল ভারি উজ্জ্বল বর্ণময়। আবারও আমরা আমাদের ৭৪তম স্বাধীনতার জন্মদিনের উৎসব পালন করবো মহা সমারোহে। সারাদেশের আকাশে বাতাসে তখন স্বাধীনতার গান।মোড়ে মোড়ে,রকে রকে,গলিতে গলিতে,ময়দানে সর্বত্র গল্প হবে কত প্রাণ স্বাধীনতার জন্য বলিদান করেছে।তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
আবারও আমরা উঠে দাঁড়াবো ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকার সামনে চিবুক উঁচু করে,জাতীয় সঙ্গীতের মূর্ছনায় গায়ে কাঁটা দেবে।গলার কাছটায় যেন দলা পাকিয়ে উঠবে স্কুলের দিদিমণির,যিনি হারমোনিয়ম ধরে কচি -কাঁচাদের কোরাসে বেজে উঠবে-"সকল দেশের রানী সে-যে আমার জন্মভূমি---"।শতশত শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা ভারতবাসীরা স্বাধীনতার মুখ দেখেছি -, এই স্বাধীনতা প্রাপ্তির পূর্বে কারা কারা ষড়যন্ত্র করে দেশ মা-কে পরাধীনতার শৃঙ্খল পরিয়ে রেখেছিল-সে সব ইতিহাস ব্যাখ্যা করে কচি-কাঁচাদের সামনে সরব হবেন স্কুলের মাষ্টারমশাই দিদিমণিরা।সবাই সেইসব ইতিহাস তুলে ধরবেন আর সেইসব চক্রান্ত কে ব্যর্থ করে অবশেষে কেমন করে এলো আমাদের বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্টে। স্বাধীনতা সংগ্রামে মৃত্যুঞ্জয়ী বীরদের স্মরণ করবেন তো অবশ্যই। স্মৃতিতে ভেসে উঠবে সেদিনের সেই রোমাঞ্চকর চিত্র।
১৯১৯ সালে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়,কিন্তু ইংরেজ তাদের শোষন নীতি চালিয়ে যায়।এভাবেই নানান ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অনড় থাকে স্বাধীনতার দাবি।গান্ধীজীর মতাদর্শ ও অসামান্য বুকের বল নিয়ে ভারতবাসীও ভেবেছিল-যখন হতাশা আসে তখন স্মরণ হয় সমগ্র ইতিহাসেই সত্য ও ভালোবাসার জয় হয়েছে।দুঃশাসক ও হত্যাকারীদের কখনও অপরাজেয় মনে হলেও শেষে সব সময়ই তাদের পতন অনিবার্য। একসময় ইংরেজও বোঝে আর সম্ভব নয়। অবশেষে ১৯৪৭সালের ১৫ই আগষ্ট ভারতের স্বাধীনতা আসে।প্রশ্ন জাগে মনে-এই একটি দিনই কি এই স্বাধীনতা দিবসের আবেগ?নাকি আমরা ছুটি কাটাই ১৫ই আগষ্টে?কিংবা অন্য সবদিন- যখন জীবন -যুদ্ধে নাকাল, মনেও কি পড়ে না সেই সব যুদ্ধ কালের কথা? আমরা কি সেই সব বাণী থেকে অনুপ্রেরণা নিই না প্রতিদিন? ধরুন কেউ আপনাকে খুব দুঃখ দিয়েছে, ঠকিয়েছে, সেই ঘা এখনও দগদগ করছে, রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে -সেই সময় চোখে পড়লো-'The weak can never forgive '-বেশ একটা শক্তি আসে মনে? মনীষী,দার্শনিক, ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে। তাঁর বিখ্যাত উক্তি 'My life is my message 'আজ ও একশ তিরিশ কোটির এই দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বহু মানুষের এগিয়ে চলার মন্ত্র। সে এক সময় ছিল ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেটা ছিল এক চূড়ান্ত আবেগের সময়। সকলের জ্বালাযন্ত্রণা-দুঃখ কষ্ট মিলে এক হয়েছিল তখন। সকলে সংঘবদ্ধ হয়ে জয় মা বলে তরী ভাসিয়েছিল সেইদিন।পূজোর মন্ত্র এক সুরে সেদিন ধ্বনিত হয়েছিল -'বন্দেমাতরম'।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা এখন ৭৪ বছরে পদার্পন করেছে।কিন্তু দেশের অগ্রগতি কতখানি হয়েছে তা অবশ্য পর্যালোচনার বিষয়।স্বাধীনতার আগে সবাই জানতো দুঃখ, দারিদ্র, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যহীনতা,নিরাপত্তাহীন জীবন যাপন - এই সব কিছুর একমাত্র কারণ পরাধীনতা। দেশটা স্বাধীন হলেই সব দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যাবে।দেশের জাতীয় নেতারা সবাইকে আহ্বান জানাতেন-,জীবন উৎসর্গ করে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য।তখন স্বাধীনতা বলতে সবাই জানতো-,স্বাধীনতা হ'ল ক্ষুধার অন্ন, লজ্জা নিবারণের বস্ত্র,শিক্ষা,সুচিকিৎসা,মাথার উপর আচ্ছাদন,জীবনের নিরাপত্তা। এছাড়া বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার নাম হ'ল স্বাধীনতা।কিন্তু প্রশ্ন জাগে-স্বাধীনতার এতো বছর পরে স্বাধীনতার সুফল আমরা কতটাই বা পেয়েছি? এখনও তো দেশ নানাবিধ সংকটের সম্মুখীন। সংকট দেশের সার্বভৌমত্বের।
ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষে আজও সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রাবল্য প্রতিরোধে সংগ্রাম অব্যাহত। আজও আমরা নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কিন্তু কেন? প্রশ্ন জাগে মনে!
---------------:----------------
শেফালি সর
জনাদাঁড়ি
গোপীনাথপুর
পূর্ব মেদিনীপুর
৭২১৬৩৩
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন