জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে,সুনীল আকাশে উড়ছে যে তিরঙ্গা পতাকা,
এরই নাম কি স্বাধীনতা ?
নাকি লালকেল্লার লাহোরি গেটে
আড়ম্বরপূর্ণ কুচকাওয়াজের মাঝে
গগনভেদী ঐ 'জয় হিন্দ' হুঙ্কার ধ্বনি
তার নাম স্বাধীনতা?
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে
ঘুমভাঙা ঐ নিষ্পাপ কচি চোখের জিজ্ঞাসা,
বিচলিত করেছে প্রাণমন।
সত্যিই তো স্বাধীনতা কোথায় ?
স্বদেশে হয়েছে কি তার যথার্থ রূপায়ণ ?
আকাশ বাতাস গুঞ্জরিত আজ ও
অভুক্ত শিশুর ক্রন্দনে
ভূলুণ্ঠিত আজও নারীর সম্মান
নিজের ই দেশের অঙ্গনে।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের সাথে সাথে ,
অস্তমিত হয়েছিল যে স্বাধীনতার সূর্য
তা স্বমহিমায় পুনরুদ্ধার করতে কি পেরেছি আমরা?
মহামারী, দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ কবলিত ভারতবাসীর
তখন একটিই স্বপ্ন :"স্বাধীন ভারতবর্ষ"
শোষণের নাগপাশ থেকে দেশকে মুক্ত করাই
হয়ে ওঠে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে
সকল মানুষের অঙ্গীকার।
স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহীদ মঙ্গল পান্ডে
ব্যারাকপুরের সেনাছাউনিতে
যে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন
তার লেলিহান শিখায়
দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে সমগ্র ভারত বর্ষ
দেশপ্রেমের এই অগ্নিশিখায়
আত্মাহুতি দেন অসংখ্য তরতাজা প্রাণ ।
স্বাধীন ভারতের স্বপ্নে বিভোর
কনিষ্ঠতম বাঙালি বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু
বা প্রফুল্ল চাকী কে তাই টলাতে পারেনি মৃত্যুভয় ।
অগ্নিযুগের তিন মৃত্যুঞ্জয়ী বীর বিপ্লবী
বিনয়, বাদল ,দীনেশ
প্রাণের বিনিময়ে দেশবাসীকে মুক্ত করেন
পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে।
অলিন্দ যুদ্ধে তাদের দুঃসাহসিক আত্ম বলিদান
কাঁপিয়ে দিয়েছিল সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত
ফাঁসির মঞ্চে মাস্টারদার
রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত অচৈতন্য দেহ
সঞ্জীবনীর মতোই উজ্জীবিত করেছিল ভারতবাসীর আত্মসম্মান,
তাই মৃত্যুকে পরম বন্ধু হিসাবে আলিঙ্গন করতেও
দ্বিধাবোধ করেননি তিনি
শহীদ-ই- আজ্ম বীর বিপ্লবী ভগৎ সিং
তাই ডাক দিয়েছিলেন ;
'ইনক্লাব জিন্দাবাদ'
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
দেশবাসীকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে
নিজের অস্তিত্বকে ঘন প্রহেলিকায়
আচ্ছন্ন করেছেন যে বীর দেবতা ,নেতাজি
আমরা কি তাঁর যোগ্য সম্মান তাঁকে দিতে পেরেছি?
নিজের সমস্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে দেশের স্বার্থে বিসর্জন দিতে,
যে মানুষটি বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেননি।
আত্মকেন্দ্রিক জীবনের বাইরে গিয়ে
তার এই অমূল্য আত্মত্যাগের মূল্য
কি দিতে পেরেছি আমারা ?
বিদ্রোহী কবির গান,কবিতা ,ছন্দ
অগ্নিস্ফুলিঙ্গ সঞ্চারিত করেছিল যে উষ্ণ ধমনী স্রোতে
তার উত্তাপ কি এখনও আমারা অনুভব করি শিরায় শিরায়
বাল গঙ্গাধর তিলক,মাতঙ্গিনী হাজরা,কি আজ ও সাড়া জাগায়
আমাদের স্বার্থ সর্বস্ব যান্ত্রিক জীবন যাত্রায়।
ঝাঁসির রানীর সেই তলোয়ারের ঝল্কানি
যা একদা ফিরিঙ্গিদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল,
তা কি এখনো আমাদের মনে শিহরণ জাগায়?
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার বা কল্পনা দত্ত
আছেন কি আমাদের হৃদয়ের মনিকোঠায়?
অসহযোগ, ভারত ছাড়ো বা আইন অমান্য আন্দোলনের হাত ধরে
গুটি গুটি পায়ে আমরা পৌছে গিয়েছি
আমাদের বহু কাঙ্খিত লক্ষ্যে।
স্বাধীনতা অর্জন করেছে আমাদের দেশ।
কিন্ত ঐ শোনো কার বজ্রগম্ভীর কণ্ঠ নিনাদ
বায়ুমণ্ডলের প্রতিটি স্তর ভেদ করে প্রশ্ন করছে আমাদের
কেমন আছো দেশবাসী?
সুখে আছ তো?
কিন্তু বিশ্বাস কর আমরা ভালো নেই
যে স্বাধীন ভারত বর্ষ গড়ব বলে আমাদের এই আত্মত্যাগ
আমাদের এই মহাপ্রস্থান
আজ যেন তা অর্থহীন হয়ে পড়েছে
বিশ্বাস করো জরাজীর্ণ অনাহারক্লিষ্ট
এই ভারতবর্ষ আমরা গড়তে চাইনি
যার প্রতিটি কোষে কোষে পরিব্যাপ্ত হয়েছে দুর্নীতির আস্ফালন
আজ ও যেখানে সুবিচার পেতে কেটে যায় সারাজীবন
কোথাও আবার বিচারের নামে চলে শুধুই প্রহসন ।
ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ করে যেথা ধর্মের মুখোশ পরে
বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতায় আমার এ দেশ উঠলো ভরে।
কিন্তু একজনের অতিরিক্ত স্বাধীনতা
যে হয অন্যজনের পরাধীনতার কারণ
তাই সমাজে সাম্যতা আনতে
চাই আইনের কঠোর অনুশাসন ।
স্বাধীনতা মানে বিশৃঙ্খলা নয়, শৃংখলারই নামান্তর;
আদর্শ দেশ গড়তে চাইলে, বুঝতে হবে এই অন্তর।
সময় বয়ে চলে আপন গতিতে,
ইতিহাস পুনরাবৃত্ত হয় বার বার।
তাই দেশপ্রেমের বহ্নিশিখা বুকে প্রজ্বলিত করে ,
এগিয়ে যেতে হবে মানবতার মহামন্ত্রের সাথে
তাছাড়া এই স্বাধীনতা দিবস পরিণত হবে আড়ম্বরপূর্ণ উৎসবে।
পুনরায় এগিয়ে যাব মোরা পরাধীনতার পথে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন