পারমিতা আজও দাঁড়িয়ে
অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ
পারমিতা আজ,ও দাঁড়িয়ে । ওই কৃষ্ণচূড়ার নীচে। সে বলেছিল, "আমি ঠিক আসব ফিরে। একটু অপেক্ষা করো। দোল উৎসবের দিনে রঙ মাখাবো গালে। তোমার ওই কুসুমকলির মতো মুখখানি রাঙিয়ে দেব রঙে।"
পারমিতা, তাই আজো দাঁড়িয়ে। আনমনে বারবার ফিরে ফিরে তাকায় দূর ওই রাস্তার দিকে।
দিন যায়, মাস যায়।বছর ঘুরে আসে। তবু তার কোন খবর এল না। আজ আবার একটা বসন্ত। আবির ভর্তি থালা সাজিয়ে অপেক্ষায় পারমিতা। সে আসবেই। আসতে তাকে হবেই। এক পা ও সরবে না ওই গাছের নীচ থেকে। এখানেই প্রথম দেখা হয়েছিল দুজনের।
খুঁনসুটিতে কেটে যেত সারাদিন। এমনি করেই ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা। দেখতে দেখতে কেটে গেছে চার চার টি বছর।
হঠাৎ একদিন এসে বলল, এবার আমার যাবার পালা, পারু। আমাকে বিদেশ যেতে হবে। চিন্তা করো না। ঠিক ফিরে আসব।"
তোমার উপযুক্ত হয়ে ফিরে আসবে ।
এদিন ই শেষ দেখা ওর সাথে। পারমিতার হাতে তুলে দিয়েছিল একটা নতুন এক স্মার্ট ফোন।
বলেছিল,যেদিন ফিরব, সেদিন তোমার প্রিয় গান টা বেজে উঠবে ফোনে।
সেই গান টা,"দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার, প্রাণেরওপারে।"
হাতে সেই ফোন টা আজ ও শক্ত করে ধরে রেখেছে৷ বাজে না কোনো গান। আসে না কোনো মেসেজ। আসে না কোনো কল। ফোন টা তার সুইচ অফ। তবু তার বিশ্বাস, সে ফিরবে।
ক্লান্ত নয়ন, জীর্ণ শরীর। মুখে তবু মৃদু হাসি।
ওর দেওয়া শাড়িটি আজ ও পরেছে।
সন্ধ্যা হবো হবো। হঠাৎ বেজে উঠল ফোন টা। সেই গানের রিং টোন টা।
পারমিতা, উদভ্রান্তের মতো উত্তর দিল, তুমি আসছ ফিরে? আমি জানতাম, দেরি হলেও তুমি আসবে।
ওপার থেকে উত্তর এল, না পারু, আমি আর ফিরব না। ফিরিয়ে নিলাম আমার কথা। নতুন সংসার পাতো। আর অপেক্ষায় থেকো না। আমি বিদেশে ঘর বেঁধেছি। আর ফিরব না।
কিছু বলার আগেই কেটে গেল ফোন টা। সঙ্গে সঙ্গে সুইচ অফ। আর বাজল না গান টা।
তবু সে নড়ল না এক চুল। ফোন হাতে দাঁড়িয়ে। যদি আবার কল আসে।
হয়তো এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে।
জানতেই পারবে না কোনো দিন, এমন এক বসন্ত উৎসবের দিন বিদেশ থেকে ফেরার সময় এক গাড়ি দুর্ঘটনায় চিরকালের জন্য বিদায় নিয়েছে। মারা যাবার আগে, ফোন টা তার অতিপ্রিয় এক বন্ধুর কাছে দিয়ে বলেছিল,"পারমিতা, কোনো দিন যেন জানতে না পারে, আমি আর নেই। ও তাহলে আর বাঁঁচবে না ।
ওকে বাঁচতেই হবে। ওকে ঘর বাঁধতে হবে ওর নিজের মনের মতো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন