ইঁদুর কল
স্মরজিৎ ব্যানার্জি
দাদা একটা ইঁদুর কল দেবেন তো। প্রশ্ন শুনে দোকানে জিজ্ঞেস করলেন কিরকম নেবেন আঠা না অন্য কিছু , আমি বললাম ভালো কিছু একটা দিন। একটু পরে দোকানে একটা খাঁচা আমার হাতে দিয়ে বলল এটা নিয়ে যান দাদা খুব মজবুত আর টেকসই জিনিস। খাঁচাটা সত্যিই ভালো। একদিকে একটা চাকার মত লাগানো, জিজ্ঞেস করাতেই দোকানদার বলল এটা দিয়ে ইঁদুর উপরে উঠতে চাইলেও উপরে উঠতে পারবে না , খাঁচাটা নিয়ে বাড়ি চলে এলাম। আসলে কদিন ধরে বাড়িতে ইঁদুরের উৎপাত খুব বেড়েছে খাবার দাবার ফেলে ছড়িয়ে নষ্ট করছে জামা কাপড় কেটে কুটো কুটি করছে সেদিন বাড়িতে অতিথি আসবে বলে মিষ্টি এনেছিলাম আগের দিন মা দিতে গিয়ে দেখল তার মধ্যে বেশিরভাগই আধ খাওয়া। সে সেই চা বিস্কুট দিয়ে অবস্থা সামলালো মা, আজ অফিস থেকে ফেরার পথে ঠিক করেছিলাম ইঁদুর কল কিনবই। বাড়ি ফিরে মাকে জিনিসটা দেখাতেই মা বললো খুব ভালো করেছিস বাবু আমি তোকে বলতেই যাচ্ছিলাম। রাতে খাওয়ার পর রান্নাঘরের এক কোণে কলটা পেতে শুতে চলে গেলাম। কাল থেকে সব ঝামেলা শেষ সকালে মায়ের ডাকাডাকি শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল, রান্নাঘরে গিয়ে দেখি একটা বড় ইঁদুর কলে আটকা পড়েছে মা বলল রেখে দে বাবু। টুকু এলে ওর সামনে এটা ছেড়ে দেব ব্যাটা ধাড়ি গেছো মা অন্যদিকে চলে গেল আমি প্রাণীটাকে দেখার জন্য ঝুঁকে পড়লাম। কিন্তু একি খাঁচার ভেতরে ওটা কি? ইঁদুর কলে প্রাণপণে ছুটছে আমার প্রতিরূপ, দুপাশ দিয়ে সরে যাচ্ছে শৈশব পরিসরের ফেলে আসা দিনগুলো। আমি প্রাণপণে ছুটছি থামতে চাইছি কিন্তু কিছুতেই থামতে পারছি না মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো, ইঁদুর কলটা খুলে দিলাম ছাড়া পেয়ে ইঁদুরটা ছুটে পালালো মুখ তুলে দেখি একটা অদৃশ্য কলে যেন আটকা পড়েছি। এর থেকে আমার মুক্তি নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন