বাঘ
চন্দন মিত্র
মার্চের শেষ সপ্তাহ। খান তিনেক পলিশি জমা না-করলে মান বাঁচানো মুশকিল। মুশকিল আসান
হয়ে এল সুব্রত, আমার অন্যতম প্রিয় বন্ধু। সে নিয়ে চলল তার পিসির বাড়িতে। একেবারে সুন্দরবনের
গর্ভে গ্রাম। গ্রাম ছুঁয়ে বয়ে চলেছে মৃদঙ্গভাঙা নদী। দুপুরে বেরিয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে
প্রায় রাত হয়ে গেল। পিসিদের শুটকি মাছের ব্যবসা। পলিশি নিয়ে সুব্রতর পিসেমশাই আশ্বাস
দিলেন। খাওয়া-দাওয়ার পরে আমাদের শোবার ব্যবস্থা করে দেওয়া হল উঠানের একটি তক্তাপোষে।
গরমের সময় বেশ ভালোই ব্যবস্থা। কদিন আগের এক ঝড়ে গাছপালা ভেঙে পড়ায় বেশ কয়েকদিন কারেন্ট
অফ। ফলে ঘরের মধ্যে শোয়াটা আমাদের মতো শহুরে ছেলেদের পক্ষে নিদারুণ কষ্টের।
শোয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লান্তিতে চোখ জুড়ে এল। ঘুমের মধ্যে বাঘের গর্জন শুনে ধড়মড় করে জেগে উঠলাম। আমাদের বিছানা থেকে হাত কুড়ি দূরে নানান গাছের জঙ্গল, তারপরেই খাঁড়ি। আওয়াজটা আসছে ওই জঙ্গল থেকে। তবে কী খাঁড়ি পেরিয়ে বাঘ ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে! আড়াল বলতে সামান্য এক নাইলনের মশারি। সুব্রত সমানে সেই গর্জনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাক ডাকিয়ে চলেছে। একবার ভাবলাম প্রাণপণে চেঁচিয়ে উঠি। তারপর ভাবলাম তাতে ভালোর থেকে মন্দ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। চিৎকার শুনে বাড়ির লোকজন বেরোনোর আগেই হয়তো বাঘটা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। অগত্যা, নট নড়নচড়ন হয়ে বসে থাকি।
ভোরের আলো ফুটতে থাকে। গর্জন কিন্তু থামে না। আরও একটু আলো ফুটতে দেখি— আমাদের তক্তাপোষ থেকে দশ-পনেরো হাত দূরে একটি কুকুর পা দিয়ে মাটি আঁকড়াচ্ছে আর মুখ দিয়ে গোঁ-গোঁ আওয়াজ করে চলেছে। আসলে আমি এতটাই আতঙ্কিত ছিলাম যে, কুকুরের গোঙানিকে বাঘের গর্জন ভেবে নিয়েছিলাম; ঠিক যেমন অরাজকতার আলো-আঁধারিতে চারপাশের অনেক কুকুরকে আমরা বাঘ ভেবে সমীহ করে চলি।
========================
চন্দন মিত্র
ভগবানপুর (হরিণডাঙা)
ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
সূচক- ৭৪৩৩৩১
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন