পচার ফাঁসি
আর্য্য ভট্টাচার্য্য
আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে কোনো এক শনিবার রাত তখন তিনটে। আসামিকে স্নান করানো হয়েছে। তার শেষ ইচ্ছে দামি সিগারেট খেতে দেওয়া হয়েছে। পন্ডিতমশাই উদাত্ত কন্ঠে গীতা পড়ছেন ''নৈনং ছিন্দতি শস্ত্রানি নৈনং দহতি পাবক......"। আসামী পচা গোঁসাইয়ের কানে ঢুকছেই না। আর ঘন্টাখানেকের মধ্যে তার ফাঁসি কার্যকর হবে। সে পুরনো স্মৃতিতে আচ্ছন্ন। তার বাবা ছিল জুয়ারী, নেশাখোর, জালিয়াত। কাকাকে ঠকিয়ে দলিল জাল করে তার সম্পত্তি দখল করেছিল। কখনো কখনো তার বাবাকে চুল্লু খেয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে দেখা গেছে। তাদের মুদি দোকানের বেশিরভাগ জিনিস যেমন পাউরুটি ,কেক ,বিস্কুট, সর্ষের তেল ছিল খুব নিম্নমানের , খদ্দেররা তার দোকানে একবার এসে ঠকে গেলে দ্বিতীয়বার আসত না। অভাব ,দারিদ্র্য ছিল নিত্য সঙ্গী। ছোটবেলা থেকে সে মিথ্যে কথা বলা, লোক ঠকানো, নেশা করা অভ্যাস করেছিল। সে একবার ভোটে দাঁড়িয়েছিল। মাত্র দু ভোট পেয়েছিল তার আর তার বউ সুপ্রিয়ার। টাকা পয়সা নয়ছয়ের অভিযোগে তার পার্টি তাকে তাড়িয়ে দিল।
তার মুখে গাঁজা মদের দুর্গন্ধে তিতিবিরক্ত তার বউ সিমেন্টের দোকানদার সুমনের সাথে পালিয়ে গেল। চরম খারাপ সময়ে তাকে সুপথে আনার চেষ্টা করেছিল তার বন্ধু গগন সে একজন শিক্ষকের পুত্র। প্রায় গগনের বাড়িতে সে খাওয়া দাওয়া করত।
নেশার চূড়ান্ত অবস্থায় একদিন সে সুমন ও সুপ্রিয়াকে খুন করে ধরা পড়ল। বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হলো সে ভাবতে থাকলো তার সব বন্ধু আজ সুপ্রতিষ্ঠিত কেবল সে আবাল্য খারাপ কাজের জন্য আজ মৃত্যুর প্রতীক্ষায়। সে ভয়ের চোটে দরদর করে ঘামতে লাগলো।
========================
আর্য্য ভট্টাচার্য্য
রামকানাই গোস্বামী রোড শান্তিপুর, নদীয়া-৭৪১৪০৪
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন