Featured Post
ছোটগল্প ।। হ্যাপি বার্থডে ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
হ্যাপি বার্থডে
পরেশ চন্দ্র মাহাত
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত্রি বারোটা বাজে। নীলিমার মুঠোফোনে মেসেজ রিসিভ হওয়ার আওয়াজ হতেই নীলিমা মুঠোফোন হাতে নিয়ে পাসওয়ার্ড এন্টার করেই দেখতে পেল -
শুভ আবির্ভাব দিবসের শুভ শুভেচ্ছা সঙ্গে এক আকাশ সবুজ আর অফুরন্ত অশেষ ভালোবাসা।
ইতি
পচমা
আজ জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখ। পচমার সঙ্গে নীলিমার দ্বিতীয় প্রেমবার্ষিকী পূর্ণ হল‚ সেই সঙ্গে আজকের এই দিনটি সবিশেষভাবে গুরুত্বপুর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ। কেননা আজকের এই তারিখে নীলিমার পৃথিবীতে পদার্পণ - আগমন - আবির্ভাব অর্থাৎ আজকের এই তারিখে নীলিমা তার মায়ের গর্ভাশয় থেকে বেরিয়ে পৃথিবী পৃষ্ঠে ওয়াঁ ওয়াঁ করুন সুরের মধ্য দিয়ে পৃথিবী পৃষ্ঠে স্খলিত হয়ে ভূমন্ডলে আত্মপ্রতিষ্ঠা পাওয়ার সৌভাগ্যে সৌভাগ্যবতী। আর সেইজন্যেই নীলিমার বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে এই শুভ সুগন্ধি মেসেজ প্রাপ্তি। স্বাভাবিকভাবেই নীলিমা এই মেসেজ পেয়ে খুব খুশি‚ তার চিত্ত সুনীল বাতাসের সঞ্জীবনী ঔষধে সঞ্জীবিত উজ্জীবিত। কেনই বা খুশি হবে না নীলিমা? খুশি হওয়ারই তো কথা। যখন কাউকে মনে প্রাণে কেউ ভালোবাসে আর সেই মনের মানুষের কাছ থেকে যখন এই ধরনের শুভকামনার ও শুভ আকাঙ্খার মেসেজ এসে পৌঁছায়।
আর এদিকে নীলিমাও তার বয়ফ্রেন্ড পচমাকে অত্যন্ত এবং প্রবলভাবে ভালোবাসে আর কেয়ার করে। ভালোবাসা আর কেয়ার দুটোর মধ্যে কোনোটারই বিন্দুমাত্র ত্রুটি বিচ্যুতি ঘটতে দেয়নি এই দুই বছরে সম্পর্কের মধ্যে। সকালে ঘুম থেকে তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে‚ ব্রেকফাস্ট করল কিনা বা ব্রেকফাস্টে কি ছিল‚ তারপরে দুপুরের আহার হল কিনা‚ বিকালবেলায় হাঁটতে যাওয়া বা শরীরচর্চা করল কিনা‚ তারপরে শরীরচর্চা করে রুমে ফিরল কিনা‚ রাত্রে বেলায় ঠিক সময়ে ডিনার করল কিনা - এই সমস্ত যাবতীয় খবর রাখে নীলিমা। আবার এই সমস্তের পাশাপাশি নিয়মিত এবং মন দিয়ে পড়াশুনাও করছে কিনা সেদিকের প্রতিও সমানভাবে খবর রাখে। কেননা শুধু খাওয়া আর শরীরচর্চার পাশাপাশি একটা চাকরির দরকার বাকি জীবনটাকে সেই সঙ্গে মানসলোকে প্রস্ফুটিত পরিকল্পিত দাম্পত্যজীবনকে আরো মধুর থেকে মধুরতম এবং বৈচিত্র্যময় করে তোলার জন্যে।
আর এই সমস্তর জন্যেই তো প্রেমিক পচমার সেই গভীর রাতে মেসেজ রূপি অশরীরী আত্মার উপস্থিতি নীলিমার কর্ণকুহরকে সজাগ করে তার হৃদয়কে করে তুলেছে আনন্দিত। তার চোখে মুখে সেই খুশির ভাব সহজেই দৃশ্যমান ও প্রকাশমান। গভীর রাত্রে মেসের সেই ছোটো ঘরে আর একা থাকার অভাব আর বুঝতে পারেনি। তার মনে হল সেই রুমে তার প্রেমিক পচমার সশরীরে আবির্ভাব ঘটেছে এবং সেই ঘরকে আনন্দের আলোয় আলোকিত করে তুলেছে। সেই আলোয় পচমা আর নীলিমা দুজনের মৃদু হাসির মুখমণ্ডল দৃশ্যায়িত। পরস্পর পরস্পরকে অপলক নয়নে তাকিয়ে রয়েছে এবং দুজনেই তাদের হৃদয়ের সেই চাওয়া পাওয়ার কল্পনায় লীন। নীলিমার মনে হচ্ছে এখনই তাকে জড়িয়ে ধরে একটা লম্বা লিপ টু লিপ কিস করতে। এই সমস্ত আকাশ কুসুম চিন্তায় নিমজ্জিত ও মগ্ন থাকার কিছুক্ষণ পরে নিজের দুরন্ত মনে ব্রেক কষে মনের মধ্যে প্রবহমান স্রোতে ভেসে না গিয়ে‚ সামলে নিয়ে মুগ্ধতার সঙ্গে ভালোবাসার মধুর সুরে সেও রিপ্লাই করে লিখল -
আমি খুব খুশি তোমার শুভেচ্ছার শুভ মেসেজ পেয়ে …ধন্যবাদের সঙ্গে সঙ্গে তোমার প্রতিও রইল আমার গভীর থেকে গভীরতম সংখ্যাহীন ভালোবাসা।
ইতি
নীলিমা
এদিকে মেসেজের রিপ্লাই নীলিমার মনের মানুষ সেই সঙ্গে প্রেমিক পচমাও একই সঙ্গে বহুত বহুত খুশি এবং তার হৃদয়েও আনন্দের জোয়ার প্রবাহিত হয়ে গেল। সেই আনন্দের জোয়ারে ভেসে গেল তার সেই আদর্শ প্রেমিকের আদর্শ মেসেজের ঢেউয়ের স্রোত। তার মনও সঙ্গে সঙ্গে ঢেউয়ের মতো প্রবাহিত হয়ে পৌঁছে গেল প্রিয়তমার কোমল হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে। তার মন আজ খুব খুশিতে পূর্ণ। সিঙ্গেল রুমে একা থাকলেও সেই মুহূর্তে তার মনে প্রেমিকার উপস্থিতি‚ মানসলোকে প্রিয়ার আবির্ভাব সেই একা থাকার অভাব দূর করতে সক্ষম হয়েছে। সেও তো চাই নীলিমাও যেন তাকে মনে প্রাণে ভালোবাসে এবং সেই ভালোবাসা যেন জীবনের শেষ নিশ্বাস ফেলার আগে মুহূর্ত বজায় থাকে। আর সেই ভালোবাসাকে দীর্ঘস্থায়ী এবং চিরস্থায়ী করে তোলার জন্য সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রিয়া নীলিমাকে কেয়ার করার পাশাপাশি তার খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে ঘুমানো পর্যন্ত যাবতীয় সংবাদ সেও রাখে। নীলিমা যেমন যাবতীয় কার্যকলাপের খবর রাখে‚ তেমনই পচমাও প্রিয়া নীলিমার এ টু জেড কার্যকলাপ মনের মণিকোঠায় থাকে। তাকেও বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। নীলিমাকে যেন তার মতো চাকরির জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে না হয়। পচমা যখন বি.এড করে সেই ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ‚ তখন সরকারের অবস্থা ভালো ছিল না। পচমার স্বপ্ন ছিল ভবিষ্যতে শিক্ষকতার পেশায় বাকি জীবনটা অতিবাহিত করা। কিন্তু এই মুহূর্তে বি.এড পাশ করার পাঁচ বছর সময় অতিক্রান্ত হলেও সেই স্বপ্নের পেশায় প্রবেশ করার জন্য আয়োজিত পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়নি। কিন্তু এখন সময় আর পরিস্থিতির বদল ঘটেছে। তাই সরকারও চেষ্টা করবে শিক্ষাবিভাগের উপরে। আর সরকারের এই রণকৌশলকে যাতে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে‚ সেই মতোই প্রেমিকা নীলিমাকে উপদেশ দেয়। সরকারের এই কৌশলকে লাস্ট এণ্ড ফাস্ট সুযোগ করে‚ সেইজন্য পড়াশুনা করছে কিনা সে সম্পর্কেও প্রেমিক পচমা নীলিমাকে উৎসাহিত করছে‚ বিভিন্ন ধরনের কথা বলে মোটিভেশন করে। সে নীলিমাকে বুঝিয়ে শান্ত এবং ধীর সুরে বলে –
বুঝলে গো‚ সময়কে ফাঁকি দিও না। সময়কে গুরুত্ব দিও। সময়কে অবহেলা কখনোই কর না। জানো তো সময়কে গুরুত্ব না দিলে‚ সময়ও দেখবে একসময় তোমাকে গুরুত্ব দেবে না।
নীলিমাও তার মনের এবং হৃদয়ের মানুষের কথায় অসম্মতি প্রকাশ করে না। কারন সেও তো যথেষ্ট শিক্ষিতা- শিক্ষাবিজ্ঞানে ট্রেনিং প্রাপ্ত স্নাতকোত্তর ডিগ্রপ্রাপ্ত‚ বোঝে — পড়াশুনায় একমাত্র পথ যেখানে আছে জীবনকে চারিত্রিক দিক দিয়ে এবং মানসিকভাবে আদর্শরূপে গড়ে তোমার পাশাপাশি আত্মজীবনকে এবং পরিবারের জন্মদাতাদ্বয়ের মুখে হাসি ফোটাতে আর জনসমাজে তাদের মুখ উজ্জ্বল করতে। তার মা বাবা তার সাফল্যকর্মে আনন্দিত হতে পারে । যেন তার মা গর্ব করে বলতে পারে যে —
নীলি তুই আমার গর্ব। তোর মতন মেয়েকে গর্ভে ধারণ করে আজ আমি গর্বিত।
সকালে অন্যদিনের তুলনায় একটু লেট ঘুম থেকে উঠে বিছানা ত্যাগ করে পচমা। দেরিতে ঘুম থেকে উঠলেও তার মন কিন্তু অত্যন্ত প্রফুল্ল‚ ঘুমও বেশ ভালো হয়েছে। কারণ গতরাত্রে নীলিমার সাথে মনের-হৃদয়ের কথা বলতে বলতে একটু দেরি হয়েছিল নিদ্রায় যেতে। বিছানা ত্যাগ করে প্রক্ষালন পর্ব শেষ করে পড়াশুনা করার উদ্দেশে যাবতীয় কাজ শেষ করে বসে পড়ে। পড়তে বসে তার মন প্রশান্তিতে ভরে আছে। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পড়াশুনা করার পর রান্নার কাজে মনোযোগ দেয়। তারপরে স্নানের পর দুপুরের লাঞ্চ শেষ করে বেডে বসে বসে অপেক্ষা করছে সেই বহুপ্রতীক্ষিত সন্ধ্যেবেলাকে। গতরাত্রে নীলিমার সঙ্গে কথা হয়েছে যে‚ আজ সন্ধ্যেবেলায় তারা এক নির্জন নিরিবিলি জায়গায় মিলিত হবে। যাতে তাদের মনের কথা বলতে আরও সুবিধা হয়। এর মধ্যে দুজনেই পরস্পর পরস্পরকে আলিঙ্গন করার সুযোগও যেন পায়। ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যে পাঁচটা বাজতেই প্রস্তুতি করে দেয় প্রিয়ার সঙ্গে মিলিত হতে যাওয়ার জন্য। গতরাত্রের শুভেচ্ছা উইশের পর আজ প্রেমিকাকে সামান্য কিছু উপহার স্বরূপ একটা ডাইরি ( প্রচ্ছদে স্বামীজির চিত্র চিত্রিত)‚ শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত তুঙ্গভদ্রার তীরে নামক উপন্যাস (এখানে পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখা ভালো যে‚ নীলিমার প্রেমিকও বাংলা সাহিত্যে ট্রেনিং প্রাপ্ত স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী)‚ একটা শিক্ষাবিজ্ঞানের উপরে বই এবং একটি কলম নিয়ে ছয়টা বাজতেই অভিসারে বেরিয়ে পড়ে। হেড পোস্ট অফিস মোড়ে চা খেতে খেতে ফোনে রিং হতেই পকেট থেকে বের করে কানের নিকটে নিয়ে গিয়ে হেলো বলতেই ওদের থেকে মিষ্টি মধুরযুক্ত স্বর ভেসে উঠল –
---তুমি কোথায় গো?
---এইতো চা খাছি।
---তুমি?
---আমি ভারতীতে।
---আচ্ছা।
---এসো চকবাজারের কাছে।
---বেশ যাচ্ছি।
ফোন রেখে দিয়ে পচমা আবার রেঞ্জার সাইকেলে চেপে বেরিয়ে পড়ল প্রিয়তমার সঙ্গলাভের উদ্দেশে। চকবাজারে পৌঁছে গিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখতে পেল প্রিয়াকে। আবার নীলিমার চোখেও লক্ষ করে ফেলেছে লক্ষিত ব্যক্তির মুখায়ব। পচমা কাছে পৌঁছতেই নীলিমা লজ্জিত নয়নে দৃষ্টি রেখেই আবার তৎক্ষণাৎ ঘুরিয়ে নিল। প্রেমিক পচমায় প্রথম কথা বলল —
---চলো।
নীলিমাও সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি জানিয়ে বলল
---চলো।
দুজনেই সাইকেল ঠেলে ঠেলে এগিয়ে যেতে লাগল অজানা গন্তব্যস্থলে। হাঁটতে হাঁটতে তারা কথোপকথনে ব্যস্ত। নীলিমায় প্রথমে বলল
---কোথায় যাব…?
---চলো না… যেখানে একটু নির্জনে বসে গল্প করা যেতে পারে?
---বলো তো কোথায়?
পচমা কিছুক্ষণ ভেবে বলল—
---চলো ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের মাঠ… সেখানে হয়তো নিরিবিলি জায়গা পেতে পারি।
---আচ্ছা … তবে চলো।
বলে নীলিমা সাইকেলে উঠে পড়ে। এদিকে নীলিমার প্রেমিকও উঠে পড়ে। দুজনেই চলতে লাগল। প্রেমিক পচমা আনন্দে চলতে চলতে ভাবছে তার প্রিয়ার সঙ্গে আজ একটু বসে বসে তার উষ্ণতা উপভোগ করবে। সেই গত দুর্গাপূজার আগে এক সন্ধ্যেবেলা কিছুক্ষণের জন্য উভয়ের সাক্ষাৎ হয়েছিল। সাক্ষাৎ হলে কি হবে? সেই সাক্ষাৎ শুধু পরস্পর পরস্পরকে দেখার। তারপরে যদিও কিছু কথা হতে পারত —-কিন্তু না হওয়ার হেতু ছিল সঙ্গে নীলিমার রুমমেট তমালির উপস্থিতি। অগত্যা তাই কিছু করার নেই — এটা দুজনের কাছে একদম জলের মতো স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার। সেদিন দুজনেই একপ্রকার বাধ্য হয়ে বিদেয় নিয়েছিল।
গত তিন মাসের সেদিনের সেই অপূর্ণ অতৃপ্ত আশা আকাঙ্ক্ষা‚ মনের চাওয়া পাওয়া পূরণের উদ্দেশ্যেই আজকের এই অভিসারে বেরিয়ে পড়া। ওদিকে নীলিমার মনেও প্রেমিকের হাতের ছোঁয়া লাগার আশায় শরীর একেবারে উত্তেজনায় পরিপূর্ণ হলেও মনের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ দ্বিধামুক্ত হতে পারেনি। তারও ইচ্ছা প্রেমিকের সঙ্গে আড্ডা কাম হৃদয়ের উষ্ণতা পরিমাপ করা। কিন্তু তার মনে বাসা বেঁধে আছে সেই লোক লজ্জার ভয়। এই রকম জটিল পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার বিষয়ে মেয়েরা তাদের উত্তেজনাকে কন্ট্রোল করতে সক্ষম‚ সফল সেই সঙ্গে অব্যর্থ। — ছেলেরা কিন্তু অক্ষম‚ অসফল এবং একেবারে ব্যর্থ। সে যেতে যেতে বার দুয়েকবার প্রেমিককে না তাকিয়ে তার উদ্দেশ্যে বলেও ফেলেছে—
---জানো আমার কিন্তু কেমন কেমন লাগছে! আমি যাব নাই।
নীলিমার কথা শুনেও না শোনার ভান করে কোনো উত্তর না দিয়ে প্রেমিকাকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে পচমা। — তাদের নানা আকাঙ্ক্ষিত এবং বহু প্রতীক্ষিত সেই গন্তব্যস্থলের দিকে।
অবশেষে সেই নির্ধারিত নির্দিষ্ট ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশনে এসে পৌঁছাল। গেটের দরজায় দাড়িয়েই যা দেখল তাতে তাদের মনোভাব হল এই —-
---এই এত লোক আছে‚ আমি পারব নাই বসতে…। — নীলিমা প্রথমে কথা বলে উঠল।
পচমার মন খারাপ। সেখানে নির্জন নিরিবিলি না থাকায় সেও কিন্তু আর জোর করে বলতে পারছে নাই। মনে প্রাণে তো সে চাইছে বসলে ভালো। কিন্তু আবার এত লোকের মাঝে কি করে সম্ভব ? আবার বসা যদি সম্ভব হয়‚ কিন্তু জড়িয়ে ধরা তো দূরের কল্পনা‚ লিপ টু লিপ কিস করাও একপ্রকার অসম্ভব। ফলে সেও মনের যে অভীপ্সা তাকেও একপ্রকার কন্ট্রোল করতে বাধ্য হয়ে যায়।
চলো এই হুচুক পাড়া গলি দিয়ে বেরিয়ে যায়। — এই কথা বলে নীলিমা সাইকেলের দিক পরিবর্তন করে। নীলিমার প্রেমিকের ইচ্ছা না থাকলেও একপ্রকার বাধ্য হয়ে তাকেও তার পথানুসরণ করতে হয়। পিছনে পিছনে আসতে আসতে পচমার মাথায় আরেকটা স্থান মাথায় চলে এল। —-- জেলা ডি আই অফিসের সামনে আর হিলভিউ মাঠে প্রবেশের একশ মিটার আগে যে একটা স্থান আছে সেইখানে হয়তো এই সন্ধ্যে বেলায় ফাঁকা থাকতে পারে। যথারীতি নীলিমাকে জানাই –
অন্য আরেকটা জায়গায় চল … যাওয়া যাক।
---কোথায়?
---জেলা ডি আই অফিসের সামনে।
নীলিমারও মনে ইচ্ছে রয়েছে বসে একটু আড্ডা কাম জড়িয়ে ধরতে। তাই সেও কিন্তু কোনো প্রশ্ন না করে বলে উঠে —
…চলো
আবার দুজনেই সাইকেলিং করতে লাগল সেই দ্বিতীয় জায়গায় পৌঁছানোর উদ্দেশে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে মধ্যে পুরুলিয়া জিলা স্কুলের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে পৌছাল দ্বিতীয় গন্তব্যস্থলে। সেখানকার পরিবেশ লক্ষ করে দুজনের মন একেবারে বিষণ্ণ আর বিষাদগ্রস্থ। প্রেমিক প্রেমিকা যুগলের জন্যে আড্ডা দেওয়ার অনুকূল পরিবেশ নয় — একেবারে প্রতিকূল পরিবেশ।
অবশেষে তারা সেই কাঙ্খিত আশায় জল ঢেলে দিতে একপ্রকার বাধ্য। দুজনেই নিজের আশাকে অপূর্ণ রেখে জেলা প্রাথমিক সংসদ অফিসের গেট দিয়ে বেরিয়ে পড়ে তাদের নিজ নিজ মেসের উদ্দেশে। দুলমী নডিহা রোডে উঠেই কিছুদূর অগ্রসর হয়ে নডিহা দুর্গা মন্দিরে কাছ পৌঁছানোর পর কিছুক্ষণ দাড়িয়ে সেই অপূর্ণ অতৃপ্তির ভাবলোক থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়ে‚ পরস্পর পরস্পরের প্রতি চোখে আর মুখে বিদায় ঘণ্টা বাজাতে নিরুপায় হতে হল।
==============================
পরেশ চন্দ্র মাহাত
গ্রাম – বড়কিটাঁড়
ডাকঘর – কর্মাটাঁড়
থানা – জয়পুর
জেলা – পুরুলিয়া
পিনকোড- ৭২৩২১৩
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন