আহ্লাদীর জুতোপেটা
প্রদীপ কুমার দে
রোদে গা জ্বলে পুড়ে খাক!
আমার আবার বাজারে ব্যাজার নেই। যতবার গিন্নি আমার একমাত্র আহ্লাদী আমাকে টনক নড়িয়ে দেয়,
-- কিহে কানে ঢুকছে?
-- কেন কানের ফুঁটো তো বড়োই আছে? ঢুকিয়ে দেখোই না একবার ...
-- কতবার তাহলে বলতে হয় আদা পিঁয়াজ নাই?
-- আরে তুমি বলে যাও গড়গড় করে, আমি আবার যাবো, আবার যাবো, বারবার যাবো আর কিনবো আর ফেরত আসবো।
-- সেতো ভালো জানি। বারম্বার বাজারে যাওয়ার অছিলায় বন্ধুদের সাথে রোয়াকে বসে চা গেলা আর বাজার ফেরত মহিলাদের গতর দেখা, এইতো কাজ তোমাদের।
চুপিচুপি বলি, একদম সত্যি কথাটা টেনে বার করে ফেলেছে গিন্নি আহ্লাদী। আড্ডা আর চায়ের সাথে সাথে....
তবুও কায়দা মারি,
-- কি যে বলো তুমি?
বৌ তো রেগে লাল। কাজ করতে করতে ও গেমে ভিজে গেছে। মুখে গালাগাল,
-- তোমার গুষ্টির কাজ করতে করতে আমি মরেই যাবো। এতো গরমে এতো কাজ করছি আর তুমি বাজারের নামে ফুর্তি করতে বের হচ্ছো? লজ্জা করে না?
তাড়াতাড়ি বাজারে বেরিয়ে গিয়েও লাভ হল না কেনাকেনাকাটা মাথায় উঠলো। সত্যিই তো ঘরের কাজ করতে করতে আহ্লাদী যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মন খারাপ হল। কিছু একটা করতেই হবে। কিন্তু আমিতো কোনো কাজই পারি না। ভেবে দেখতেই হবে কিবকরে বৌকে এত কাজ থেকে হালকা করে দেওয়া যায়?
তাড়াতাড়ি কয়েকটা জিনিস নিয়ে আড্ডা ছেড়ে বাড়িতে গিয়ে বৌয়ের সেবায় লাগবো ভেবে বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে গৃহের অভ্যন্তর হলাম।
আহ্লাদী ঘেমে নেয়ে একশা। আমি গিয়ে ওর সামনে দাঁড়াতেই ও স্বাভাবিক ছন্দে মুখ ঝামতা দিয়ে উঠল,
-- কি মতলব? চা চাই? নাকি অন্য নেশা উঠেছে?
-- দ্যাখো কথা? আমি তো তোমায় একটা সল্যুউষণ দিতে এলাম। যাতে তুমি একটু হালকা হও।
-- আরে মিনসে, আমি আবার কবে মোটা হলাম? ঢ্যামনামো হচ্ছে? তোর মুরোদ আছে ভালো প্রোটিন দিয়ে বৌকে মোটা করার?
- আহা! কি মুশকিল! একথা সে কথা নয়। এ একেবারে অন্য কথা, তোমাকে এতো কাজও থেকে হালকা করে দেওয়া?
-- তা বুঝেছি। আমার মিনসের কি সে মুরোদ আছে নাকি যে কাজের লোক আসবে?
-- আসবে... আসবে...
বউ তেড়ে এল। আমি ওর হাত ধরে ওকে ঠান্ডা করানোর যতটা চেষ্টা করি ও আরো ততোতাই রেগে যায়। অনেক কষ্টে ওকে একবারের জন্য অন্ততঃ আমার কথা শুনতে রাজি করিয়ে ফেললাম। আমার বাপের ভাগ্যি এটা।
দেখলাম বৌয়ের মুখে লাল আভা। ও ভাবলে আমি বুঝি কোনো আধুনিক যন্ত্র কিনতে চাইছি। যেমন এখন সব কিছুরই মেশিন বেরিয়ে গেছে।
আহ্লাদী শান্ত। এবার আমি অশান্ত, গিন্নিকে বোঝাতে হবে। পারলে আমারো লাভ। চালাকির বিষয় কিন্ত আমিতো আর চালাক নই। যাক চেষ্টা শুরু করলাম।
আহ্লাদী আনন্দে আট খানা।
আমি শুরু করে দিলাম,
-- দেখো আহ্লাদী, তুমি যে কাজ করো, যা পরিশ্রম করো, অনেক করো। কিন্তু ভেবে দেখো দেশের প্রধান মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী কত কাজে ব্যস্ত থাকে। ওদের কাজের মূল অংশের দায়ভার নেই কিন্তু অন্য অনেক জন। প্রেসিডেন্টেরও ভাইস প্রেসিডেন্ট আপ্ত সহায়ক ইত্যাদি প্রভৃতি কত সাহায্য করাতর লোক থাকে। কিন্তু ঘরে ঘরে মহিলাদের সাহায্যকারী কেউ নেই।
গিন্নি আহ্লাদী মুখ ক্রমশ লাল আভা ছেড়ে এবারে রক্তিম হতে চাইছে। আন্দাজ করেছে নাকি?
ঝেড়ে কেসে দিলাম,
-- ভেবো না অন্য কিছু। শুধু তোমার জন্য যে কোনো ভয়ের কাজেও আমি পিছপা হই না। আমি না হয় আরো কয়েকটা বিয়ে কিরে নিই। খরচ খরচা অনেকটাই বাড়বে আর আমাকে বেশী বেশী আয়ের জন্য অনেক কাজ করতে হবে। কিন্তু কি করা যাবে?
তোমার মুখের দিকেও তো চেয়ে আমাকে কিছু করতে হবে, না কি?
বুঝতে দেরি হল, একপাটি জুতো ছুটে চলে এলো আমার দিকে আর আমি চমকে মাথা সরিয়ে নিয়েও নিজেকে শেষ রক্ষা করতে ব্যর্থ হলাম।
জুতো পেটা করেও আমার আহ্লাদীর আহ্লাদ মিটলো না, আমাকে মাটিতে ফেলে আমার বুকে দাঁড়িয়ে চিৎকার শুরু করে পাড়ার সকলকে ডেকে জানিয়ে দিলো আমার নাকি আবার বিয়ে করার রোগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।
-- রোগের ওষুধ দরকার হয়ে পড়েছিলো, তাই এই শাস্তি!
------------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন