Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

ছবি
সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

অণুগল্প ।। নেই কেন ব্যারোমিটার ।। সুচন্দ্রা বসু

নেই কেন ব্যারোমিটার

সুচন্দ্রা বসু 


আমি ক্লাস টেনে পড়ি। মাকে বলেছিলাম স্কুল থেকে সবাই বেড়াতে যাচ্ছে আমিও বন্ধুদের সাথে একটু বেড়াতে যেতে চাই!
মা শুনে বললেন না,তোর যাওয়া হবে না। বড় হয়েছিস ঘরে থাক।
এখন ঘুরে কাজ নেই বিয়ে হলে বরের সাথে ঘুরতে যাস।
বাবাকে গিয়ে বলতেই বাবা বললেন পড়াশোনা ছেড়ে দাও।আমি বরং পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দিই।
বিয়ের পর দুজনেই বেড়াতে যেতে পারবে।
আমি ওনাদের মতামত শুনে অবাক হলাম।
বললাম, এখন বিয়ে করতে চাই না,পড়াশোনা করতে চাই!
ওনারা বললেন বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে পড়াশোনা করবে।
আমি বললাম বিয়ের পর পড়াশোনা করাবে তারা আমায়?
বাবা ও মা বললেন বিয়ের পর স্বামীর সংসারই মেয়েদের সব,তারা যা বলবে সেটাই মেনে নেবে।
বুঝলাম মেয়েদের দায়িত্ব সংসার করা।
তখন আমি ওদের জয়ালক্ষ্মীর স্বপ্নের কথা শোনালাম।
একটি সরকারি স্কুলের ছাত্রী  জয়ালক্ষ্মী।একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। সায়েন্সের উপর বরাবরই তার আগ্রহ রয়েছে।বাবা থেকেও নেই। ছোট মেয়েটার ঘাড়ে সংসারের দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছেন তিনি ।বাদাম বিক্রি করে ,ছেলে মেয়ে পড়িয়ে সংসার চালায়, মেধাবী সেই মেয়ে।মানসিক রোগী মা আর ভাইয়ের দেখভালের ভার এখন সবটাই সামলাতে হয় তাকে। তার উপর যত্ন করে এগিয়ে নিয়ে চলেছে নিজের পড়াশোনা।মেধাবী এই ছাত্রী এ বার নিজের চেষ্টায় যেতে চায় নাসা।মহাকাশচারীদের সঙ্গে দেখা করতে চায়।
কী ভাবে যোগাযোগ করবে সেই সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। এই আমাদের আজকের নারী। অসুস্থ মা আর ভাইয়ের যাবতীয় খরচ টানতে পড়াশোনার ফাঁকে সে জন্য বাদাম বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে সে। গৃহত্যাগী বাবা কখনও কখনও মন হলে টাকা পাঠায়। বাকিটা তাকেই উপার্জন করতে হয় বাদাম বিক্রির পাশাপাশি অষ্টম আর নবম শ্রেণির ছেলেমেয়েদের টিউশন পড়িয়ে ।পড়াতে গিয়ে হঠাৎই একদিন
এক ছাত্রীর বাড়িতে খবরের কাগজের একটা খবর তার নজরে আসে । সে মন দিয়ে পড়ে দেখল, একটি সংস্থা নাসা যাওয়ার জন্য সব পড়ুয়াদের সুযোগ দিতে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এই খবরটা পড়েই আর চুপ করে বসে থাকতে পারেনি সে। তাড়াতাড়ি পড়ানো শেষ করে বাড়ি না গিয়ে প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার জন্য ফর্মের খোঁজ করে তা ফিলাপ করে।প্রতিযোগিতার জন্য নিজের মতো করে বাড়িতেই প্রস্তুতি নেয়। আর সেই পরীক্ষায় সফলও হয় সে। সমস্যা এবার অন্য জায়গায়। নাসায় যাওয়ার টিকিট পেয়ে গেলেও যাতায়াত খরচ প্রচুর। কোত্থেকে এতো টাকা পাবে সে। খুব চিন্তায় পড়ে যায় জয়ালক্ষ্মী ।
তার স্বপ্ন বোধ হয় আর পূরণ হবে না। তার স্বপ্ন
সফল করতে তার পাশে এসে তাকে ভরসা দেয় কয়েকজন শিক্ষক আর তার সহপাঠীরা। শিক্ষক ও সহপাঠিরা মিলে তার পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দিয়েছে । পাসপোর্ট অফিসারও তার আগ্রহ দেখে তাকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করবে আশ্বাস দিয়েছে।কিন্তু সেটাও তার কাছে যথেষ্ট নয়। অনেকেই তাকে জানিয়েছে জেলা শাসকের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করলে যদি সাহায্য পাওয়া যায়। আজকের নারী যাচ্ছে নাসায়।
শুনে ওনারা বললেন ও তো স্বপ্ন দেখছে।তা পূরণ
নাও হতে পারে। মেয়েদের স্বপ্ন দেখতে দোষ নেই।
তুমি কি ভাবছ তোমার ইচ্ছে মতো তুমি চলবে?
ঠিক আছে আমি বিয়ের ব্যবস্থা করছি।সেখানে
গিয়ে তোমার ইচ্ছেমতো চলাফেরা করবে।
বিয়ের পর বরকে বললাম আজ কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবে আমায়?
সে বলল আমার সময় নেই, শোন বউকে নিয়ে
ঘোরার শখ আমার নেই। যাও নিজের কাজ করো।
আমি বললাম বেশ ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে না। আমি পড়াশোনা করতে চাই!
বর বলল পড়াশোনা করে আর কাজ নেই এখন সংসারে মন দাও।
আমি বললাম কেন অনেকেই এখন চাকরি করছে।আমিও চাকরি করতে চাই!
বর বলল তুমি চাকরি করলে পাড়ার লোকেরা আমাকে কি বলবে ভেবেছো? যাও বাচ্চা সামলাও মা বাবার সেবা কর, চাকরি করতে হবে না।
বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে একটা মেয়ের জীবন বোধ হয় আমার মতোই। বাপের বাড়ির মানুষ বলে সব শখ-আহ্লাদ স্বামীর বাড়ি গিয়ে করো আর স্বামীর বাড়ির লোক বলে বাপের বাড়িতে যা করেছো করে নিয়েছো এখন সংসার সামলাও।
মনে নানা প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি মারে।একটা মেয়ের স্বাধীনতা, তার মনের শখ,স্বপ্ন পূরণ করার দায়িত্ব কার? মেয়েরা এখনো অনেক শিক্ষিত পরিবারে যেন আজন্মকালের বোঝা।শুধু মানিয়ে নিয়ে আর ত্যাগ করাই মেয়েদের জীবনের আদর্শ। প্রতিবাদ করা নারীর অপরাধ?।নারীরা কি কোনদিন সম্পূর্ণ
স্বাধীন হবে? কেন নেই সংসারের দায়িত্ব ব্যারোমিটার?
এর পরেও মনে এলো এলিজার কথা। পৃথিবী থেকে মিলিয়ন মাইল দূরের ভিন্ন গ্রহের নাগরিক হওয়ার নেশায় মত্ত এলিজা। এলিজা কার্সন নাসার কনিষ্ঠতম সদস্যা।
এলিজার যখন নয় বছর বয়স তখন তার সাথে দেখা হয় নাসার এক মহাকাশচারী সান্ড্রা ম্যাগনাসের। এই নারী মহাকাশচারী তাকে জানিয়েছিলেন ছোটবেলাতেই তিনি মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এই কথা ছোট্ট এলিজার মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্নকে গাঢ় ও দৃঢ় করেছিলো। ছোটবেলাতেই মাকে হারায় এলিজা। বাবার হাত ধরেই তার বেড়ে ওঠা। মাত্র সাত বছর বয়সে এলিজা স্পেস ক্যাম্পে যায়, আর সেখান থেকেই স্বপ্ন বুনতে শেখে ছোট্ট কিশোরী।
এলিজা জানে, সে হয়তো আর ফিরে আসবেনা এই পৃথিবীতে। মঙ্গলে গেলে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম তাই নাসার কাছে যৌনতা, বিয়ে বা সন্তানধারণের নিষেধাজ্ঞাপত্রতে সাক্ষর করেছে এলিজা।সে বিশ্বাস করে এই স্বপ্নপূরণ করা তার দুঃসাধ্য নয়। তার কথায়- Always Follow Your Dream and Dont let Anyone Take it From You 
এলিজা জানে না বা ভাবতেও পারে না
সংসারের সবাইকে খাওয়ানোর পর বাড়ির বৌদের খেতে হয় , এই নিয়মটা সেই ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছিল আমার পরিবার।
আর আমিও সে নিয়মটা বিয়ের পরে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে এসেছি আজীবন ধরেই।ক্ষিদে পেলেও ভাতের হাঁড়ি আগলে বসে থাকতে হয়েছে , অপেক্ষা করেছি সকলের খাওয়া শেষ অবধি।
কিন্তু তারপর ? এলিজাও বুঝতে পারে না আমার কথা। সকলে পেট ভরে খাওয়া শেষ করে , ব্যস্ত হয়ে যে যার নিজের কাজে গেছে । কেউ আমায় জিজ্ঞাসা করেনি আমি খেলাম কিনা। দুই নারীর তফাৎ আজ এখনও।
আমি সাধারণ , মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে। তাই আমাদের নিয়ম মেনে চলতে হয় । ঘরের মানুষের ঘরে ফিরতে দেরি হলে ,সদোর আগলে বসে অপেক্ষা করতে হয় তার জন্য । সে না এলে ঘুমিয়ে পড়তে নেই। আমি সে নিয়মের অন্যথা করিনি কখনো। সে ফেরার পরে তাকে খাইয়ে ,তার শোয়ার পরেই শুতে গেছি সবসময়। কাকভোরে উঠে আবার লেগে পড়েছি সংসারের নানা কাজে। আমায় কেউ জিজ্ঞাসা করেনি আমার রাতের ঘুম ঠিকমতো হয়েছিল কিনা। কেউ আমার চোখমুখের দিকে তাকিয়ে বলেনি তোমার আরও একটু বিশ্রাম দরকার।
জয়ালক্ষ্মী,এলিজা ও আমি একই সময়ের নারী
হয়েও জীবন যাপনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য।
একজন ছেঁড়া পোশাক মলিন দেহের ভিক্ষুক নারীকে কেউ সম্মানিত করেছে?
দেখলাম মা মাকড়সার ডিম ফুটে শত শত ক্ষুদে বাচ্চা বের হল।বাচ্চাগুলো পৃথিবীতে আসার পরই ক্ষুধার্ত। মা ভাবে এবার তাদের খাবার দরকার।
কিন্তু মা মাকড়সা বাচ্চাদের ছেড়ে খাবার আনতে যেতে ভয় পায়। একটাই ভয় কেউ যদি এসে বাচ্চার কোন ক্ষতি যদি করে দেয়।
নিরুপায় মা মাকড়সা শেষমেশ নিজ দেহটাকে বাচ্চাদের খাদ্য বানায়।বাচ্চারা খুঁটে খুঁটে মায়ের দেহ খেয়ে একসময় চলে যায়, যে যার পথে।
পড়ে থাকে মায়ের শরীরের খোলস। পৃথিবীতে
মেয়েদের দায়িত্ব পরিমাপ করার মত নেই কেন কোন ব্যারোমিটার?

মন্তব্যসমূহ

সূচিপত্র

আরও দেখান

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল