সিগন্যাল
অনিন্দ্য পাল
লাল চোখ জ্বলে উঠল হঠাৎ
যাদুদন্ড ছাড়াই কে যেন থামিয়ে দিলো
প্রবাহ
চাকার বিশ্রাম হতে পারে দরকারি কিন্তু
রাস্তার দু-পাশে স্তূপীকৃত জনতার?
ওই যারা মাটিতে কিংবা কালো পিচের পিঠে
ময়লা বস্তায় বেঁধে রেখেছে বিক্রির 'মাল'
অথবা যাদের সকাল থেকে সন্ধ্যা
সন্ধ্যা থেকে রাত কেটে যায় পাকস্থলীর
বায়না মেটাতে
কিংবা যারা বিক্রি হয় আনাচে কানাচে গৃহকোণে
যাদের প্রতিটা পেশিতে লেগে থাকে
সিমেন্ট-বালির আদর
তাদের জন্য বিশ্রাম একটা অশ্লীল শব্দ
তবু থামতে তো হয় আবার
চোখের রং বদল হলে গড়াতে থাকে চাকার দেহ
সময়ের বল্কল জড়িয়ে যায় শরীরে
শুধু যাদের জন্য সময় একটা বাতিল ঘড়ি
যাদের জন্য জীবন একটা না লেখা হেঁয়ালি
তাদের প্রতিনিধি ওই জন্মের শংসাপত্র ছাড়াই
বেঁচে থাকা নিম গাছের
নিশ্চিন্ত দৃষ্টি চলে যায় চল্লিশতলার দুই বাই দুই জানালার ভিতরে
সেখানে তখন পিঠোপিঠি আশি আর সত্তর
কি-প্যাড ফোনের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায়
অনেক দিন বাজেনি সেই রিং-টোন আর
ছেলের গলার শব্দ
আত্মা কি যেতে পারে আমেরিকা কিংবা লন্ডনে?
নিমগাছ জানে না, যেমন জানে না অন্ধগলির
শেষ ঘুপচিটার মালিক অথবা বাইপাসের ধারে
আড়াই হাত জমি নিয়ে যে মানুষটা রোজ চা খাওয়ায়
কয়েকশো মানুষকে,
কেউ জানি না আমরা কতদূরে যেতে চাই আমরা
যাবোই বা কতটা কত ঢেউ কত মরু মেরু পেরিয়ে
শেষ স্বেদবিন্দুটা পড়বে কোন কৃষ্ণপদে...
তবু ছুটতে হয়
তবু লাল আলো সবুজ হলে ইঞ্জিন বেঁচে ওঠে আবার
সকালের প্রশ্বাস ঘুরে আসে রাতের বিছানায়
নিভন্ত নিঃশ্বাস হয়ে,
চালচুলোহীন রাত-প্যাঁচারা তারের উপরে বসে
একে অন্যের চোখে চোখ রেখে বসে থাকে
ল্যাম্পপোস্ট জানে তার আয়ু আর মাত্র কয়েক ঘন্টা
তবু বয়ে চলে অন্ধকারের শরীরে ভেসে যায়
চিরন্তন প্রেমিকের মত
আকাশের সিগন্যাল সাদা হলে আবার শুরু হবে
খাদ্য আর খাদকের লড়াই ...
=====================
অনিন্দ্য পাল, চাম্পাহাটি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন