google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re প্রবন্ধ ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

প্রবন্ধ ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা

শ্যামল হুদাতী


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই) কী?  মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তি নির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে। সহজ কথায়, এটি মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত বুদ্ধি।

২০২৪ সালে AI গবেষণা ও প্রযুক্তিতে শীর্ষস্থানীয় ১০টা দেশ:

2024-এ আমরা যখন পা রাখছি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) গবেষণা ও প্রযুক্তির বৈশ্বিক ল্যান্ডস্কেপ দ্রুত বিকশিত হতে চলেছে, বেশ কয়েকটি দেশ উদ্ভাবনের অগ্রভাগে রয়েছে। এই দেশগুলি কেবল AI গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিই করছে না বরং প্রযুক্তিগত অগ্রগতিও চালাচ্ছে যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। AI-তে নেতৃত্ব দিচ্ছে এমন শীর্ষ 10টি দেশগুলির কথা বলি-

1. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: সিলিকন ভ্যালির রাজত্ব অব্যাহত রয়েছে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এআই গবেষণা এবং প্রযুক্তিতে একটি পাওয়ার হাউস হিসাবে রয়ে গেছে ।সিলিকন ভ্যালির কেন্দ্রস্থল হিসেবে, আমেরিকান কোম্পানি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বায়ত্তশাসিত সিস্টেমের মতো শিল্পে যুগান্তকারী AI অ্যাপ্লিকেশন বিকাশে নেতৃত্ব দেয়।

2. চীন: এআই সুপার পাওয়ার

চীন এআই এক বিরাট শক্তি হিসেবে তার অবস্থানকে দৃঢ় করে চলেছে। একটি সমৃদ্ধ প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমের সাথে মিলিত AI গবেষণায় দেশের ব্যাপক বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ফলে হয়েছে। সমস্ত কাজের স্বীকৃতি থেকে স্বায়ত্তশাসিত যানবাহন পর্যন্ত এআই অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে চীনের কোম্পানিগুলো এগিয়ে রয়েছে।

3. কানাডা: এআই উদ্ভাবনের কেন্দ্র

AI এর প্রতি কানাডার প্রতিশ্রুতি তার প্রাণবন্ত গবেষণা সম্প্রদায় এবং সহায়ক সরকারী নীতিতে স্পষ্ট। টরন্টো এবং মন্ট্রিলের মতো শহরগুলি এআই গবেষণার জন্য বিশ্বব্যাপী কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, একাডেমিয়া এবং শিল্পের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে, উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

4. যুক্তরাজ্য: গবেষণা ও উন্নয়নে অগ্রগতি

ইউনাইটেড কিংডম এআই গবেষণায় একটি শক্তিশালী উপস্থিতি বজায় রাখে, শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি মেশিন লার্নিং, প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ এবং রোবোটিক্সের অগ্রগতিতে অবদান রাখে। সরকারী উদ্যোগ বিভিন্ন খাতে AI এর বৃদ্ধিকে আরও সমর্থন করে।

5. জার্মানি: এআই-তে ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সিলেন্স

জার্মানি এআই গবেষণা এবং প্রয়োগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করছে। শিল্প AI এর উপর দেশের ফোকাস, একটি শক্তিশালী উৎপাদন খাতের সাথে মিলিত।  AI প্রযুক্তির বিকাশে একটি মূল খেলোয়াড় হিসাবে অবস্থান করে।

6. ফ্রান্স: এআই ড্রাইভিং উদ্ভাবন

উদ্ভাবন এবং সহযোগিতার উপর ফোকাস রেখে ফ্রান্স AI-তে একটি প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। প্যারিস AI স্টার্টআপ এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলির বৃদ্ধি দেখেছে, যা বিশ্বব্যাপী AI ল্যান্ডস্কেপে দেশের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে অবদান রাখছে।

7. দক্ষিণ কোরিয়া: AI-তে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তিগত অগ্রগতি AI পর্যন্ত প্রসারিত, গবেষণা এবং উন্নয়নের উপর জোর দিয়ে। এআই-চালিত উদ্ভাবনের প্রতি দেশটির প্রতিশ্রুতি রোবোটিক্স, স্মার্ট শহর এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রে স্পষ্ট।

8. ইজরায়েল: স্টার্ট-আপ নেশনস এআই প্রয়াস

"স্টার্ট-আপ নেশন" হিসাবে ইসরায়েলের খ্যাতি AI পর্যন্ত প্রসারিত, AI স্টার্টআপগুলির একটি প্রাণবন্ত ইকোসিস্টেম এবং সামরিক প্রয়োগের উপর জোর দেওয়া। সাইবার নিরাপত্তা এবং স্বায়ত্তশাসিত সিস্টেমের উপর দেশটির ফোকাস এটিকে এআই প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দেয়।

9. সুইডেন: টেকসই উন্নয়নের জন্য এআই

সুইডেন টেকসই উন্নয়নের জন্য AI ব্যবহার করার প্রতিশ্রুতির জন্য দাঁড়িয়েছে। দেশটি এনার্জি দক্ষতা, জলবায়ু গবেষণা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রগুলিতে AI ব্যবহার করে, প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত ।

10. সিঙ্গাপুর: এআই ড্রাইভিং ইকোনমিক গ্রোথ

AI-তে সিঙ্গাপুরের কৌশলগত বিনিয়োগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনকে চালিত করছে। এআই গবেষণা ও উন্নয়নে দেশটির ফোকাস, সরকারী সহায়তার সাথে, এটিকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি মূল খেলোয়াড় হিসাবে অবস্থান করে।

উপসংহার

2024 সালে, এই দশটি দেশ এআই গবেষণা এবং প্রযুক্তির অগ্রভাগে দাঁড়িয়েছে, এই রূপান্তরমূলক ক্ষেত্রের ভবিষ্যতকে গঠন করছে। সিলিকন ভ্যালির ক্রমাগত আধিপত্য থেকে শুরু করে চীনের দ্রুত অগ্রগতি পর্যন্ত, প্রতিটি জাতি বিশ্ব এআই ল্যান্ডস্কেপে অনন্য শক্তির অবদান রাখে। যেহেতু আমরা AI এর চলমান বিবর্তনের সাক্ষী, এই দেশগুলি থেকে উদ্ভূত সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা এবং উদ্ভাবন আগামী বছরগুলিতে আমাদের জীবনযাপন, কাজ এবং প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগের পদ্ধতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর।

উন্নত দেশগুলিতে চিকিৎসা জগতে গবেষণা প্রভূত উন্নতি ঘটেছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগীর বেডে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে যন্ত্রমানবী নার্স। এ দৃশ্য ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে জাপানে। টেক্সাসে তৈরি হচ্ছে রোবট স্বাস্থ্যকর্মী 'মক্সি'। ভার্জিনিয়ার একটি সংস্থা এমন এক মোবাইল রোবট তৈরি করেছে, যে নার্সিং, ফার্মাসি ও গবেষণাগারের কাজে সাহায্য করে। কিন্তু যন্ত্র-চিকিৎসক! না, তার দেখা এখনও মেলেনি। তবে সে দিন আর বেশি দূরেও নেই। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে একটি চিকিৎসা পরিচালন ব্যবস্থা তৈরি করেছেন সাউথ ফ্লরিডার একদল বিজ্ঞানী, যা কি না চিকিৎসকদের ভার লাঘব করে দেবে অনেকটাই। যন্ত্রই বলে দেবে, রোগী কেমন আছেন, কতটা বিপজ্জনক পরিস্থিতি, মৃত্যুর ঝুঁকি আছে না নেই। এই গবেষণার নাম ভূমিকায় রয়েছেন ফ্লরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটির বাঙালি গবেষক দেবর্ষি দত্ত ও শুভসিত রায়। তাঁদের গবেষণাপত্রটি 'ফ্রন্টিয়ার্স' নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

এই গবেষণাটি হয়েছে কোভিড-রোগীদের নিয়ে। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভবিষ্যতে যে কোনও অতিমারি বা মহামারি সামলাতে এআই-পরিচালিত এই চিকিৎসা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। কোভিডের সময়ে দেখা গিয়েছে রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসপাতালের নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের ডাক্তার-নার্সরাও সংক্রমিত। কিন্তু রোগ যতই সংক্রামক হোক না কেন, যন্ত্র-স্বাস্থ্যকর্মীকে কাবু করতে পারবে না সে।

চন্দননগরের ছেলে দেবর্ষি বর্তমানে ফ্লরিডাবাসী। দীর্ঘ গবেষণার ফলাফল নিয়ে তিনি উচ্ছ্বসিত। বললেন, ''একটা যন্ত্রের মধ্যে ধরুন একশো ডাক্তারের মস্তিষ্ক যদি ভরে দেওয়া যায়... এমনটাই করা হয়েছে। এই অ্যাপলিকেশন বলে দিতে পারবে, কোন রোগীর ঝুঁকি বেশি, কার অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন, আবার কার ভয়ের কিছু নেই। এর ফলে যাঁর বেশি প্রয়োজন, তাঁর চিকিৎসা জরুরী ভিত্তিতে শুরু করা যাবে। মৃত্যুর সংখ্যা কমবে।'' গোটা দুনিয়াই এখন এআই-মুখী। নয়া গবেষণায় রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও তাই এআই-এর পথ বেছে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ভারতের মতো জনবহুল দেশে জরুরী পরিস্থিতিতে রোগ ও রোগীর সংখ্যার ভার সামলাতে এই ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।

দেবর্ষি ও শুভসিত জানাচ্ছেন, ২০২০ সালের ১৪ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত 'সাউথ ফ্লরিডা মেমোরিয়াল হেল্থ কেয়ার সিস্টেম'-এর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫৩৭১ জন কোভিড রোগীকে ধারাবাহিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাঁরা। একটি তথ্য-ব্যাঙ্ক তৈরি করা হয়। এই তথ্য ভান্ডারে রোগীর সামাজিক ও জনসংখ্যাভিত্তিক বৈশিষ্ট্যও উল্লেখ করা হয়। তা ছাড়া, কোনও রোগীর পুরনো জটিল অসুখের ইতিহাস রয়েছে কি না, কোনও দীর্ঘস্থায়ী রোগ রয়েছে কি না, নিয়মিত তিনি কী কী ওষুধ খান, সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে রোগীর বয়সকে। দেখা গিয়েছে, ৬৫-র উপর পুরুষ রোগীর ঝুঁকি বেশি। তা ছাড়া, রোগীর ডায়েরিয়া হয়েছিল কি না, ডায়াবিটিস ও হাইপারটেনশন আছে নাকি, বিএমআই কত, কিডনির অসুখ রয়েছে নাকি, রোগী ধূমপান করেন কি না, নিউমোনিয়া হয়েছে নাকি ইত্যাদি। রোগীর কোন জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত, তা-ও পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে। এর পরে 'র‌্যানডম ফরেস্ট' ক্লাসিফায়ার মডেলের সাহায্যে এগুলি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা কতটা, তা নির্ণয় করেন। দেবর্ষি বলেন, ''যখন হাসপাতালে বিপুল সংখ্যক রোগী সংক্রামক রোগ নিয়ে ভর্তি হতে থাকেন, তখন এটা জানা জরুরী হয়ে পড়ে, কার জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন।''

বিজ্ঞানী শুভসিত রায়ের দাবি, তাঁরা কোভিডের উপরে গবেষণা চালালেও এই এআই-চিকিৎসা ব্যবস্থা অ্যালঝাইমার্স, হার্টের অসুখের মতো ব্যাধীতেও কাজ দেবে। এআই-কে শুধু নির্দিষ্ট রোগের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তা হলেই 'ডাক্তার' হয়ে উঠবে সে।

--------------------------
শ্যামল হুদাতী
৩৫৭/১/১৩/১, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড
কলকাতা ৭০০০৬৮





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন