দেশ সেবক
ভবতোষ বাবু রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখেন না। তবে দেশের ভাল মন্দ তিনি বোঝেন। তাঁর মতে দেশ কেমন চলছে তার ছবি দেখতে হলে সরকারি হাসপাতালগুলিতে একবার ঢু মেরে আসতে হয়। খারাপ জিনিস তাঁরও খারাপ লাগে, ভালো জিনিস তার মনকেও ভালো করে দেয়।
অনেক সময় দেখা যায় দেশের সত্তা পরিবর্তন হতে হতেই তার চাল-চলন পাল্টে যায়। তাঁর চোখেও পড়ে রাজনৈতিক সত্তার অপব্যবহার। আচার আচরণের মধ্যে ধৃষ্টতা লক্ষ্য করা যায়, সর্বোপরি সততার বড় অভাব দেখতে পাওয়া যায়। এ পরিবর্তনে রাজনৈতিক দলের স্বভাবজাত ছবিটুকুই ফুটে ওঠে, এটা ভবতোষ বাবু জানেন।
সে দিন ভবতোষ বাবু ভাবলেন, এটা তো একদমই ভালো লাগে না। দিনে দুপুরে পথে জয়ের উল্লাস চলছে, প্রকাশ্যে মদের ফোয়ারা, হোই-হুল্লোড়, খেমটা নাচ চলছে। ভবতোষ বাবু সে দিকটা আর মাড়ালেন না। অন্য পথ দিয়ে ঘুরে তিনি বাড়ি ফিরলেন। তিনি জানেন, এ ব্যাপারে তার কিছু করার নেই। তিনি দুপুরের ঘুম দেবেন বলে লেপের তলে গিয়ে ঢুকলেন, কিন্তু ঘুম কই? যে অধঃপতনের দৃশ্য তিনি রাস্তায় দেখে এলেন--এই যদি দেশের চরিত্র-চিত্রন হয় তাহলে দেশের সুস্থ নাগরিকরা বাঁচবে কি করে ?
না, ঘুম আসছিল না তাঁর। হাতের কাছে মোবাইলটা তিনি টেনে নিলেন। অনেক দিন ধরে মোবাইলটাই তার সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের খবর, কোন বড় লেখকের বিখ্যাত বই সবই মোবাইলের মধ্যে দিয়েই পাওয়া যাবে। এতে কি নাই? জী মেইল, ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ইত্যাদি ইত্যাদিতে তো ছেয়ে গেছে। প্রতিদিনের খবর, মোবাইলে পাওয়া যাবে। রাজনীতি দলের কোন্দল এতে পাওয়া যাবে। একবার গুগোলে এ টিপ দাও--সব, সবকিছু পাওয়া যাবে।
মোবাইলের কথা ভাবতে ভাবতে ভবতোষ বাবুর হঠাৎই একটা কথা মনে এলো। আচ্ছা, তিনি তো দেশের জন্য কিছুই করেন না। কোন দলে জড়িয়ে পড়লেও পক্ষপাতিত্বের ভয় থাকে, মিল-অমিলের লফড়া থেকেই যায়। ফেসবুক কিংবা টুইটারে কিছু মন্তব্য তুলে ধরা যায় বটে, তবে কি দেশের কিঞ্চিৎ হলেও সুধার হতে পারে? হ্যাঁ, হয়ত হতে পারে, অনেকেই তো সে সব জাগায় নিজেদের মতামতের পুলিন্দা খুলে ধরেন।
তিনি আজকের দেখা ঘটনাটা হুবহু টুইটারে তুলে ধরলেন। শেষে লিখলেন, এমনি ভাবেই বুঝি আমাদের দেশ একদিন মদে চুর হয়ে যাবে--সারা বিশ্বে মাতাল দেশ বলে পরিচিত হবে। বর্তমান সরকার পরিবর্তনের এমনি চিত্র যদি দিন দুপুরে দেখতে পাওয়া যায় তাহলে সে দেশের ভবিষ্যৎ কি সর্বনাশা নয় ?
ভবতোষ বাবুর এমনি মন্তব্য করার পর তিন দিন পার হয়ে গেল। তারপর দিন হঠাৎ তাঁর ঘরের কলিং বেলটা বেজে উঠলো। তিনি দরজা খুলে দেখলেন তিনজন ষণ্ডা-গুন্ডা মার্কা লোক দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলতেই ওরা বিনয়ের সঙ্গে দাঁত বের করে বলে উঠলো, আপনি কি ভবতোষ রায় ?
--হ্যাঁ--
একজন বলে উঠলো, ঘরের ভেতর আসতে পারি ? তাদের মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছিল যেন বিনয় গলে গলে ঝরছে।
ভবতোষ বাবু যেন একটু ভয় পেয়ে বলে উঠলেন, আসুন না--
লোকগুলি বৈঠক ঘরের সোফায় গেঁট হয়ে বসে পড়ল। ওদের একজন বলল, আপনি অমুক দলের লোক না ?
ভবতোষ বাবু সংকোচের সঙ্গে বলে উঠলেন, না আমি কোন দলেরই লোক না--
লোকগুলোর মধ্যে থেকে হঠাৎ একজন বেশ মেজাজ নিয়ে বলে উঠল, আপনি যে বিরুদ্ধ পার্টির এটা আমরা বুঝতে পেরেছি--
--না না--ভবতোষ তাঁর কথা শেষ করতে পারলেন না। ওই তিন জন লোকের মধ্যে একজন ধমকের সুরে দাঁত চেপে বলে উঠলো, চোপ! আমাদের মদ খাওয়ার কথা ফলাও করে বেড়াচ্ছ--
এবার শুরুতে কথা বলা লোকটা ঝট করে তার পকেট থেকে একটা মদের বোতল বের করল। ওদের আগের পরিকল্পনা মতই হবে অন্য দু'জন ভবতোষ বাবুকে জোর করে ধরে থাকল, আর তিনজনে মিলে জোরজবরদস্তি তাঁর মুখ হাঁ করিয়ে মদের বোতল খুলে ধরল ভবতোষ বাবুর মুখে--
ব্যাস, জাপটাজাপটির শব্দে ভবতোষ বাবুর স্ত্রী ছুটে এলেন বৈঠকখানা ঘরে। ততক্ষণ বোতলের অনেকখানি মদ ভবতোষ বাবুকে গিলিয়ে দেওয়া হয়ে গেছে। লোকগুলোর কাজ এবার বুঝি শেষ হল। ওরা ঘরের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিল। একটা কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে ভেবে ভবতোষ বাবুর স্ত্রী চিৎকার করে উঠলেন, কি হল ? কি ব্যাপার কি?
ভবতোষ বাবু কথা বলতে পারছিলেন না। ঐ লোকগুলির মধ্যে একজন বলে উঠল, কিছু না, সোনা বৌদি, দাদাকে একটু আপ্যায়ন করে গেলাম।
সমাপ্ত