google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প ।। পেয়ারাতলা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২

গল্প ।। পেয়ারাতলা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া



দুটো বাড়ির  মাঝখানে একটা পুরনো  পেয়ারা গাছ।
 ঠাকুরদার দুই ছেলের এখন দুই বাড়ি।
 সুখ শান্তি ফিরিয়ে আনতে দুই ভাই আলাদা হলো।  ভায়েরা লুকিয়ে একসাথে গল্প করে। কিন্তু বউদের দেখতে পেলে ই মুখ ভার করে  চলে যায় যেযার পথে।
 দুই ভায়ের আবার দুই ছেলে। তবু কেউ কারোর সাথে কথা বলতে দেয় না। 
খেলতে দেয় না। সব সময়  নিজের ছেলেকে আগলে রাখে দুই বাড়ির গিন্নী। 
 এখন সমস্যা হলো  এই গাছ টা  নিয়ে।
 ঠিক উঠানের মাঝখানে।দুই বাড়ির  মানুষজন  সমস্যায় আছে গাছ টা  নিয়ে।  দুটো পরিবার  আলাদা হলো। বাড়ি উঠান ভাগ হলো।  এবার তোলা হবে পাঁচিল। 

 বড় উঠানের মাঝখান দিয়ে তোলা হবে ইঁটের দেওয়াল।আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়েছে  দুই ভায়ের মধ্যে।  পেয়ারাগাছটা তাই কাটা পড়বে। কাটতেই  হবে। নইলে পাঁচিল তুলতে  অসুবিধা । কচি কচি পেয়ারায় ভরে গেছে  গাছ।
 পাড়ার  যত ছোটো  সদস্য আছে।।দাদুর আবদারে প্রতিবছর  ছেলে পুলেরা ইচ্ছে মতো  পেয়ারা পেড়ে খায়। যেমন  মিষ্টি  তেমন ই  সুস্বাদু খেতে। 
 সারা উঠানটা সবুজে  ভরিয়ে রাখে।
 বাড়ির  সৌন্দর্য ছিল এই গাছ।
মুখুজ্জে বাড়ির  দাদু সেই কবে বসিয়ে ছিল গাছ টা।  শুনেছি রথের মেলায়  গিয়ে মাংস না  কিনে এনেছিল গাছ। সেই নিয়ে  সেদিন  বাড়িতে  তুমুল অশান্তি হয়েছিল। মুখুজ্জে দাদু কোনো কিছু কান না করে উঠানের মাঝখানে  বসিয়ে দিল গাছ। প্রতিদিন  নিয়মিত জল দিয়ে  বড় করেছে।  পেয়ারায় ভরে গেছে।  কেটে গেছে ৪০ বছর।  মুখুজ্জে দাদু আর নেই।  তবু ছেলেদের বারবার বলে গিয়ে ছিল এ গাছ টা  আমার প্রাণ। যতদিন  বেঁচে থাকবে, জানবি আমিও  আছি বেঁচে।  
গাছটা এখন বুড়ো  হয়েছে।  শুকনো পাতা ঝরে ঝরে উঠান ভর্তি করে।  দাদূর নাতবৌরা রাগে গজগজ করে।  এখন বাড়ি টাও ভাগাভাগি।  দুই ছেলে আলাদা। তবু কেউ চায় না গাছ টা  কাটা হোক।
দিন রাত বউদের মধ্যে  অশান্তি  গালিগালাজ  আর সহ্য হচ্ছে না।  কাঠুরে  ডাকা হলো।  কেটে ফেলা হবে পেয়ারা গাছ টা।  তোরজোড় শুরু হলো। 
এবার কাটা হবে। সবে মাত্র  করাতের একটা  ঘা দিয়েছে। 
গাছের বাঁকা ডাল থেকে  কে যেন চেঁচিয়ে বলে, খবর দার গাছ কাটবে না।
এ আমার গাছ। যে গাছে হাত দেবে তার ঘাড় মুটকে দেব।
শুকনো পাতা গুলো  ঝনঝন করে পড়তে লাগলো।  কাঠুরিয়ারা প্রচন্ড ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল।

বাড়ির লোকজন এসে খোঁজাখুঁজি শুরু 
করলো।  না কাউকে দেখা গেল না।
আবার কিছু দিন পর উদ্যোগ নেওয়া হলো গাছ টা কাটার জন্য।
সমস্ত প্রস্তুত।  এবার ঘা দেওয়া হবে  গাছে। কে যেন চেঁচিয়ে উঠল, আমার আত্মা এখানেই  আছে। যে কাটবে তার রেহাই নেই। 
কেঁপে উঠলো গাছ। ঝরে পরল পাতা। কেউ আর এগোতে পারল না।  পাড়া সুদ্ধ রটে গেল মুখুজ্জে  দাদু এ গাছে ই আছে।    দুই  নাতবৌ কিছু তে ই বিশ্বাস করে নি। এ নিশ্চয়  কেউ বদমাইশি করছে। গাছ টা  না কাটার জন্য।
 বাড়ির  কর্তাদের বলল,আরও  একবার  চেষ্টা করতে। গাছের জন্য উঠানে পাঁচিল দেওয়া  যাচ্ছে না। পাঁচিল না তুললে বাড়ির মানান হয় নাকি? 
 বাইরে থেকে আনা হলো  কাঠুরিয়ার দল। আজ কাটতেই হবে।  সবাই পাহারায়।  কে বা কারা এমন করে বাধা দিচ্ছে। আজ দেখবে ই।
 মোটা দড়ি আর  করাত।
 হঠাৎ  আকাশ মেঘে ছেয়ে গেল। কড়কড়  বাজ পড়ার শব্দ।
 প্রবল ঝড় উঠলো।  সবাই  বাড়ির ভেতর  যেতে চাইল। কিন্তু  ছোট নাতবৌ এর এক কথা।  আজ গাছ টা  কাটতে ই হবে।
 অনেক  টাকা দেওয়া হবে।
  কাঠুরিয়া কে রাজী করালো। 
   গাছে দিল এক কোপ। সঙ্গে  সঙ্গে একটা বাজ পড়ার শব্দ। 
   তারপর  সব শেষ। 
   ঝড় থামল। বাজ পড়া বন্ধ  হলো।   উঠানে পড়ে রইল  বাড়ির  ছোট  নাতবৌ। 
   তবে কি সত্যিই  মুখুজ্জে দাদু  এখনো  আছে??? 
   
==============


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন