google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। চুনোপুঁটি ।। তনুশ্রী সরকার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২

অণুগল্প ।। চুনোপুঁটি ।। তনুশ্রী সরকার

        

ফুরফুরা গাঁয়ের মাঝখানেই ধরতে গেলে কয়েক ঘর কায়েতের বাস।আর্থিক সঙ্গতি সকলের সমান নয়।কমল বোস বাড়ির মেজো ছেলে আর তার বউ সেমতির তিন মেয়ে জোনাকি, পিনাকী আর ঊর্মি।কমল প্রাইভেট টিউশন করে ,সেমতিও ওই  দু-চার জনকে পড়ায় আর কি।সংসারে খুব টানাটানি ।গোরু কেনার টাকা আপাতত নেই। তাই কমল গোটা কয়েক হাঁস-মুরগি কিনে এনেছে ওই রান্না দাওয়ার এক পাশে রাখবে বলে।তিন মেয়ে জেঠু আর ছোট্কার ছেলে মেয়েদের ডাকতে ছোটে দালান বাড়ির দিকে।বাড়ির এই অংশটায় তাদের যখন তখন প্রবেশের অধিকার নেই।সেমতি তাদের থামাতে পারেনা।
---আরে তোরা যাস্ না।
কে কার কথা শোনে।
কমল বলে
---ও কিছু হবেনা।ওরা কি আর করবে?আমায় দুটি মুড়ি দাও দিকিনি।একটু লিকার চা দাও।
     সেমতিও যতটুকু মুড়ি ছিল সবটাই থালায় ঢেলে  চা করে অমলকে দিয়ে দেয়।
 ---- একটা বাটি দাও।
---না তুমি , খেয়ে নাও।আমি পান্তা খেয়ে নেব।
কমল কোন কথায় কান না দিয়ে বলে----আমার যতটা খিদে ততটাই তো,আশ্চর্য!
 এদিকে ছোটবউ পৃথা  কমলের তিন মেয়েকে অকথ্য ভাষায় কুকথা বলতে বলতে দালানের  দরজা দিয়ে  বার করে দিয়ে বলতে থাকে
    ----তুমি না শিক্ষিতা, এই না তোমার  শিক্ষা ।নিজেরা খেতে পাওনা বলে আমার তাতাই-তুতানের খাবারে নজর দিতে পাঠিয়েছো।ছি! ছি!ভদ্দরলোকের বাড়িতে আবার  হাঁস -মুরগি পুষবে।
কমল থাকতে না পেরে বলে ওঠে ---তুমি আমার  মেয়েদের সাথে এই ব্যবহার কর কি করে?
বড় বউ লীনা বেরিয়ে এসে বলে---অনেক  হয়েছে ।এবার ঘরে যা পৃথা।
তোকে বলি সেমি---দালান বাড়িতে পাঠাস কেন, শুধু  শুধু অশান্তি ।
সেমতি কোন উত্তর দেয় না।এসব সয়ে সয়ে তার অভ্যেস হয়ে গেছে।
 অনতিদূরে  দত্ত দের ছোট মেয়ের আজ বিয়ে।গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে  সেমতিকে যেতে বলেছে।বছর পাঁচেকের ঊর্মি কিছুতেই  মাকে  ছাড়তে চাইছেনা।তার একটা গোটা মিষ্টি চাই।অনেক কষ্টে দিদিরা তাকে ভুলিয়ে নতুন পোষ্য দেখাতে নিয়ে গেল। সেমতি তাল পুকুরের পাশে কখন এসে পড়েছে  খেয়াল করেনি।পড়াশোনায় সে ভালোই ছিল আর্থিক অনটনে মাধ্যমিকের বেশি এগোতে পারেনি ।শুনেছে বাবাকে দেখভাল করার জন্য কমলকে মোটা অঙ্কের চাকরি ছাড়তে  হয়েছে।
হঠাৎ নজরে পড়ে মাছ ধরার পড়ে কটা চুনোপুঁটি পড়ে আছে ।মনে মনে সে আশা করেছিল গোটা কায়েত পাড়ায় আজ সেও মেয়েদের নিয়ে আসবে । ও বাড়ির বড়দি তাকে খুব ভালোবাসে।সেমতি যখন পৌঁছোলো তখন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। সে হেসে বলল,--- ছোড়দি আমার একটু দেরি হয়ে গেছে।
----সবাই এসে গেছে।তোমার জন্য তো আর কাজ আটকে পড়ে নেই।
সবাই এমন হেসে এ ওকে  ঠেলতে লাগল।রায় গিন্নি বলে উঠল,---ম্যাগো !ছ্যা!বাড়িতে হাঁস মুরগি! 
সেমতির মাটির সাথে মিশে যেতে করছিল।এত অবহেলার পাত্রী সে। এবার সকলকে মুড়ি-মুড়কি আর মিষ্টি দেওয়ার পালা।দত্তদের ছোট বউ পৃথাকে
---দাও সবাইকে ভাগ করে।আর শোনো মেজো বৌ তোমাদের আবার যা কাপড় -চোপড়ের ছিড়ি, হ্যাঁঙলামো করে আবার সকলকে নিয়ে চলে এসো না।আমাদের নতুন কুটুমের কাছে মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে যাবে।তোমার কত্তার হাতে কিছু খাবার দিয়ে  দেব এখন।
কাপড়ে চোখ মুছতে মুছতে সেমতি ফেরার পথে তালপুকুরের পাড় থেকে লোক চোখের আড়ালে চুনোপুঁটি  বেঁধে নিল মেয়েদের রান্না করে দেবে বলে।শুধু  ভাবতে লাগল তিনজোড়া কচিকাঁচা অল্প সন্তুষ্ট  হাতে সে কি তুলে  দেবে??

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন