নিবন্ধ ।। স্বাতন্ত্রের স্রষ্টা কাজী নজরুল ইসলাম ।। শেফালি সর - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Tuesday, May 17, 2022

নিবন্ধ ।। স্বাতন্ত্রের স্রষ্টা কাজী নজরুল ইসলাম ।। শেফালি সর




স্বাতন্ত্রের স্রষ্টা  কাজী নজরুল  ইসলাম

শেফালি সর



         নতুন  সৃষ্টির সাধনা  ছিল নজরুলের শিল্পী  সত্তার মূল  প্রেরণা  ও প্রবণতা। আর ঠিক  সেইজন‍্যই সমাজ, সংস্কৃতি, শিল্প সর্ব ক্ষেত্রে পুরাতন ধ‍্যান ধারণা ও মূল‍্যবোধ ভাঙার  জন্যে  তিনি  বিদ্রোহী।কবি,গল্পকার,ঔপন‍্যাসিক, নাট‍্যকার, গীতিকার, সুরস্রষ্টা সকলেই মূলতঃ সৃজনশীল  শিল্পী।নজরুলের শিল্পী  সত্তা প্রচলিত  পরিচিত গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছন্দ  ছিল না।তার প্রবণতা  ও আনন্দ  ছিল -'নিজের জন্যে  আলাদা  পথ তৈরী করে নেওয়া।' অর্থাৎ  নব নব সৃষ্টিতে  নতুন  ঐতিহ্য  ও মূল‍্যবোধের সৃষ্টি  করা।নজরুল করেছিলেনও তাই-সেই জন‍্যেই নজরুলের  আগের  ও পরের বাংলা সাহিত‍্য বা সংস্কৃতি  এক  নয়,বরং স্বতন্ত্র,আর সেই  জন‍্যেই কাজী নজরুল  হলেন  স্বাতন্ত্রের স্রষ্টা।
            নজরুলের  শিল্পী সত্তার  এক অজানা  রূপের পরিচয়  পাওয়া যায় -১৯৪১সালের মার্চ মাসে বনগাঁ সাহিত‍্য সভায় প্রদত্ত  এক ভাষণ থেকে।তিনি বলেছিলেন -"আমার সাহিত্য  সাধনাতে কোনো বিলাস ছিল  না।আমি আমার  জন্মক্ষণ থেকে  যেন  আমার শক্তি  আর  আমার  অস্তিত্বকে সর্বদা খুঁজে  ফিরেছি।জীবনে কোনোদিন কোনো  বন্ধনকে স্বীকার  করতে  পারলাম  না।কোনো স্নেহ ভালোবাসা  আমায় বুকে  টেনে  রাখতে  পারলো না। এই  পরম তৃষ্ণা  যে কোনো পরমসুন্দরের তা বুঝতে  পারিনি।  এঁকে খোঁজার পথেই যে ক'দিন কেঁদেছি,যে গান  গেয়েছি,যে সুর সৃষ্টি  করেছি,যে কবিতা  লিখেছি -তা যদি  কবিতা  হয়ে  থাকে তবে তা সেই  সুন্দর   মুখ খানিরই কৃপা,আমি কবি যশ প্রার্থী  হয়ে  জন্মগ্রহণ করিনি। আমি  আমার  অস্তিত্বকে-আমার শক্তিকে  খুঁজতে এসেছিলাম  পৃথিবীতে।"

     তাঁর ওই  ভাষণটি 'মধুরম' শিরোনামে পরিচিত। নজরুলের "বাঁধন হারা" থেকে "মধুরম" এর সময়ের ব‍্যবধান কুড়ি  বছর। এই  দুই দশকের  মধ্যে নজরুল  বাংলা  কবিতা  ও গান কে নতুন  জীবন দিয়েছেন। আধুনিক  বাংলা  কবিতা  ও আধুনিক  বাংলা  গানের পথিকৃতের ভূমিকা পালন  করেছেন  তিনি। এটা  সম্ভবপর হ'ত না যদি  তিনি  সাহিত্য  ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিদ্রোহী  না হ'তেন। ১৯৪১ সালের  এপ্রিল  মাসে নজরুল বঙ্গীয় মুসলমান  সাহিত‍্য সমিতির এক বিশেষ  অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে  বলেছিলেন -"যদি আর বাঁশি না বাজে,-আমি কবি  বলে বলছিনে,আমি আপনাদের ভালোবাসা  পেয়েছিলাম সেই  অধিকারে বলছি-আমায় ক্ষমা করবেন, আমায় ভুলে যাবেন।বিশ্বাস করুন,আমি কবি হ'তে আসিনি-আমি নেতা  হ'তে আসিনি-আমি প্রেম দিতে  এসেছিলাম -প্রেম পেতে  এসেছিলাম -সে প্রেম পেলাম  না বলে আমি  এই  প্রেমহীন নীরস পৃথিবী  থেকে  নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায়  নিলাম।"

 নজরুলের শিল্পী সত্ত্বার মূল প্রবণতা পুরাতনের চর্বিতচর্বন বা প্রচলিত  ঐতিহ‍্যের অনুসরণ  বা অনুকরণ নয় বরং নবসৃষ্টি।
            কাজী নজরুল  ইসলাম সাহিত্য  ও সঙ্গীত  সাধনা  করেছিলেন পরাধীন দেশে -যে পরাধীনতার বিরুদ্ধে   সংগ্রাম  করার জন্য তাঁর লেখা  গ্রন্থ  বাজেয়াপ্ত হয়  একের পর এক-কবিকে গ্রেপ্তার করা  হয়, আদালতের  কাঠগড়ায়  দাঁড়াতে হয়,জেল হয়,জেল জুলুমের  প্রতিবাদে অনশন করতে হয়  আর কিংবদন্তির  নায়কে পরিনত হন।কিন্তু পরাধীন যুগের  ওই  কবির  মন মানসিকতা ও সৃষ্টি কর্মে পরাধীনতার কোনো  ছোঁয়া  নেই।নজরুলের সৃষ্টির  ভুবনে তিনি  ছিলেন  সম্পূর্ণ  স্বাধীন।
 
---------------------:-------------------
 
                         শেফালি  সর
                            জনাদাঁড়ি
                         গোপীনাথপুর
                       পূর্ব মেদিনীপুর 
                            ৭২১৬৩৩

No comments:

Post a Comment