Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

গল্প ।। সত্যমেব জয়তে ।। মিঠুন মুখার্জী

সত্যমেব জয়তে

মিঠুন মুখার্জী


"তোমার যেটুকু আছে তাই নিয়েই সুখী থাকো"-- অর্জুনের মা অর্জুনকে একথাই বলেছিলেন। রায় পরিবারের ছোট ছেলে অর্জুন ছাড়া সকল ভাই-ই প্রতিষ্ঠিত। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও একখানা চাকরি পাননি। বাড়িতে স্টুডেন্ট পড়িয়ে তেমন কিছুই করতে পারেননি। পেয়েছেন শুধু দাদা ও বৌদিদের গঞ্জনা ও ভর্ৎসনা। মনের ভিতরটা প্রতিনিয়ত যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ওঠে তার। একমাত্র মায়ের সমর্থন ও আশীর্বাদ ছিল তার মাথার উপর।
         আজ দেখতে দেখতে ত্রিশ বছরে পড়েছেন অর্জুন। ভেবেছিলেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হলে চাকরি অবশ্যই পাবেন। কিন্তু তার ধারণা যে ভুল তা আজ বুঝেছেন। সমাজসেবামূলক কাজ করেন কখনো কখনো। নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করেন। কিন্তু তার কথা কেউ ভাবেন না। মনে মনে সংকল্প করেন, 'কিছু একটা করে দেখাতে হবে। নতুবা কারো কাছে মূল্য পাওয়া যাবে না। এ সমাজে টাকা ছাড়া কোন মূল্য নেই। যার যত টাকা আছে, শত অন্যায় করলেও তার গুরুত্ব বেশি। টাকার চাপে অন্যায় যেমন ঢাকা পড়ে যায়, তেমনি সমালোচকদের মুখও বন্ধ করে দেওয়া যায়।' অর্জুন অনুভব করেন, সৎ মানুষের এ সমাজে কোন মূল্য নেই। তাই বলে সৎ পথ ছেড়ে অসৎ পথে যাওয়ার চিন্তা তিনি করেন না। হয়তো কষ্ট হবে, দেরি হবে, কিন্তু জয় সতেরই হবে।
        অর্জুন তাদের বাজারে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ছোটখাটো প্লাই ও কাঁচের দোকান দেয়। ওই চত্বরে এই দোকান নেই বললেই চলে। কথায় বলে, 'কাঁছা খুলতে সময় লাগে কিন্তু ভাগ্য খুলতে সময় লাগে না।' কোনো জায়গায় খাবার পেলে যেমন ঝাঁকে ঝাঁকে কাক নেমে আসে, ঠিক তেমনি সঠিক দামে মাল পাওয়ায় খরিদ্দারের  লাইন লেগে যায় তার দোকানে। পাঁচ বছরের মধ্যে লোন নেওয়া মাত্র চার লক্ষ টাকার ব্যবসা দশ লক্ষ টাকায় পরিণত হয়। ছোট ভাড়ার দোকান ছেড়ে বড় একটা দোকান ভাড়া নেন অর্জুন। আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি অর্জুনকে। দশ বছরের মধ্যে নিজের বাড়ি, দোকান তৈরি করে ফেলেন সে। প্লাই-এর পাশাপাশি মোটরসাইকেলের শোরুম করেন। চার জন কর্মচারী রাখেন। সব বাদ দিয়েও মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় হয়। এই দেখে যারা তাকে সর্বদা নিন্দা করতেন, তাদের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তার সংস্পর্শে এসে সু-ব্যবহার দেখান তাঁরা। কুকুর মানুষকে কামরালেও মানুষ কুকুরকে কামরায় না। অর্জুন সকলের সাথে সুব্যবহার বজায় রাখে। দুঃসময় প্রকৃত মানুষকে বোঝা যায়।
       অর্জুন সুভদ্রা নামের একটি মেয়ের সঙ্গে শুভপরিণয়ে আবদ্ধ হন । সুভদ্রা খুবই নম্র-ভদ্র, শিক্ষিতা ও কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত। গলায় তুলসির মালা, নিরামিশহারী, সদা সত্য কথা বলেন। বেশ আড়ম্ভরের সঙ্গে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়েতে অন্যান্য ভাইরা সক্রিয়ভাবে উপস্থিত ছিলেন। যারা ভাইকে এক সময় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন, তাদের কাছে আজ টাকার গুণে ভাই নয়নের মনি হয়ে ওঠেন।
          অর্জুনের দাদারা বিভিন্ন প্রয়োজনে তার কাছ থেকে টাকা ধার নেন। কিন্তু কথামতো টাকা পরিশোধ করেন না। ব্যাপারটা অর্জুন মেনে নিলেও সুভদ্রা ও অর্জুনের মা উমা দেবী মেনে নেন না। বড়দা রমেশ দুই লক্ষ টাকা, মেজ দা সুরেশ এক লক্ষ টাকা ও সেজদা রাকেশ পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। কারো মানসিকতা ভালো না। সুভদ্রা অর্জুনকে টাকা চাইতে বললে অর্জুন বলেন--- "ছাড়না, ভগবান আমায় অনেক দিয়েছেন। ওই টাকার জন্য আমি চিন্তা করি না। আমি যখন বেকার ছিলাম, তখন ওদের সংসারে অনেক খেয়েছি। সেই ঋণটাই শোধ করলাম ধরো।"
     অর্জুনরা চার ভাই আলাদা হয়ে গেছেন প্রায় আট বছর। অর্জুন মা উমা দেবীকে বাবা চলে যাওয়ার পর থেকেই নিজের সঙ্গে রেখেছেন। এত টাকা হলেও তার এতটুকু অহংকার হয়নি। প্রতিদিন মাকে না খাইয়ে তিনি অন্ন গ্রহণ করেন না। তিনি বলেন--- "মাতৃঋণ কোনদিন শোধ করা যায় না। মা আমাদের  যেভাবে মানুষ করেছেন, এই আশি বছর বয়সে তাকে সেভাবেই দেখাশোনা করতে চাই।" রাত আটটার মধ্যে দোকান থেকে বাড়ি ফিরে অর্জুন, সুভদ্রা ও উমা দেবী মন্দিরে গোপালের সামনে বসে কৃষ্ণ নাম করেন। অর্জুন বিশ্বাস করেন--- 'জীবনকে প্রভুর হাতে ছেড়ে দিয়ে কর্ম করতে হবে। তিনি আমাদের সঠিক পথে নিয়ে যাবেন। সত্যের পথে চললে হয়তো কষ্ট আসবে, কিন্তু সত্যের জয় সর্বদা।'
     ভাগ্য চাকার মতো ঘোড়ে। সময় সমস্ত অপমানের প্রতিশোধ নেয়। মেজ দা  অসৎ উপায় অবলম্বন করে এতোদিন অনেক টাকা উপার্জন করেছিলেন। অফিসারদের হাতে ধরা পড়ে চাকরি চলে যায়। বড় দা পথ দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে বাড়িতে বসে গেছেন। কথায় বলে বসে খেলে রাজার ধনও শেষ হয়ে যায়। অর্জুনের দাদাদের সাংসারিক অবস্থা ধীরে ধীরে খুবই খারাপ হয়ে যায়। সকলেই অর্জুনের কাছে হাত পাতে। অর্জুন সমস্ত অপমানের কথা ভুলে গিয়ে মায়ের মুখের দিকে চেয়ে সকলের পাশে দাঁড়ান। সেই প্রকৃত দাঁতা যার দানে কোনো স্বার্থ থাকে না। অর্জুন প্রকৃতই দাঁতা ছিলেন। তিনি কখনো লেন-দেনের হিসাব করতেন না। সুভদ্রা কখনো তার কাজে বাঁধা দিতেন না। এই জোড়ি যেন একেবারে দ্বাপরের অর্জুন-সুভদ্রা। 
           দুবছর পর অর্জুন-সুভদ্রের ঘরে একটি পুত্র সন্তানের আবির্ভাব ঘটে। পুরো মায়ের মুখ বসানো। সবাই বলেন এ সন্তান খুবই ভাগ্যবান হবেন। ভবিষ্যত এ কথার যথাযথ উত্তর দেবে। ছয়ষষ্টিতে ঠাকুমা নাতির নাম দেন কৃষ্ণ। এ ছেলে যেন অলৌকিক ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিল।মুখ দর্শনে সকলের সমস্ত মনোবাঞ্ছা পুরণ হতো। বাবা অর্জুনের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল বাবার নামে একটা হাসপাতাল করবেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় সে স্বপ্নপূরণ হচ্ছিল না। কৃষ্ণের জন্মের মাস খানিকের মধ্যে আইনি জটিলতা কেটে যায়। অর্জুনের দাদাদের অবস্থা আবার ভালোর দিকে যেতে থাকে। ব্যাঙ্ক থেকে হাসপাতালের জন্য লোন মঞ্জুর হয়। সকলে ভালোবেসে সুভদ্রাকে বলেন--- "দ্বাপরের শ্রীকৃষ্ণ কলিতে তোমার ঘরে এসেছেগো সুভদ্রা। ওর প্রতি যত্নশীল হয়েও ।"
        পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায়। ছোট্ট কৃষ্ণ সকলের নয়নের মণি হয়ে ওঠে। হাসপাতাল তৈরি করে ফেলেছেন অর্জুন। নাম দিয়েছেন ' শ্রী দীননাথ রায় হাসপাতাল '। শহর থেকে খুব ভালো ভালো ডাক্তার বসান তিনি। মায়ের হাত দিয়ে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। সকলে অর্জুনকে ধন্যধন্য করেন। সকল ভাইরা অর্জুনের মধ্যস্ততায় এক হয়ে যান। হাড়ি আলাদা হলেও যে কোনো বিপদে সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কৃষ্ণ সকলের প্রিয় হয়ে ওঠে। এক মুহুর্ত না দেখে কেউ থাকতে পারেন না।

==========================

মিঠুন মুখার্জী
গ্ৰাম -- নবজীবন পল্লী
পোস্ট + থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগনা


           














মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক