একটি অসহ্য রম্যরচনা:
ভোটকর্মী নামক প্রাণী বিশেষের নিবেদন
-------------------------------------------------------------------------------
'ভোটকর্মী ' এটি বিশেষ এক প্রকার মনুষ্য বংসোদ্ভূত প্রাণীর নাম । চিকিত্সা বিজ্ঞানে যেমন গিনিপিগ এক প্রকার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নব নব ঔষধ, ইংজেকশন খেকো প্রাণী বিশেষ, তেমনি ভোটকর্মী হলো ইলেকশন নামক চিকিত্সাহীন কাজের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রাণী। হাজার সাংবিধানিক স্বশাসিত উচ্চ ব্যাপক নাম সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান থাক, বিশাল বিশাল অস্ত্রধারী সেনা আধাসেনা যাই যত সংখ্যায় থাক, ভোটকর্মীরাই প্রকৃত অ্যাপলিকেশনের মূল গিনিপিগ । যাদের সুস্থ সাবলীল ভোটবাক্স সহ ফিরে আসার উপর নির্ভর করছে নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্টাল নির্বাচন প্রক্রিয়া কতটা সফল। পাশাপাশি তথৈবচ গবেষণা জাত নতুন বোতলে পুরনো মদ্য সম পরিচিত ইলেকশন প্রসেসে ঐ তথাকথিত ভোটকর্মীরাই কয়েক দফা ট্রেনিং সহ পুনর্বহাল । অর্থাত্ কিনা এই বিশেষ প্রকার প্রাণীগুলির এক জাতীয় নির্দেশ মান্য অভ্যাসের স্বতন্ত্র সিনড্রোম হ্যাব অলরেডি ইন।
কেউ কি কখনও মনে রাখে,কোন ল্যাবে কোন মহৎ গবেষণা কালে কতজন শ্রী ব্যাঙ, শ্রী গিনিপিগ মারা গিয়েছে ? সে হিসাব কেউ মনে রাখে না, রাখলে নব নব উদ্ভাবনী প্রক্রিয়াটি যে মাঠে মারা যায়। সমস্ত পৃথিবীর দিকে ধোয়া মুখে তাকিয়ে গর্বিত ঘোষণা হয়, এটা পার্থিব বৃহত্তম গণতান্ত্রিক মহাকাব্যের পীঠস্থান । অতএব এখানে বৃহত্তর কুরুক্ষেত্র থাকাটা অতীব বাস্তব ও যুক্তি সম্মত।
অথচ সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের ন্যায়, বহুমুখি ভোটতন্ত্রের একের পর এক পালা আসে। কখনও পালা বদল হয়, কখনও হয় না । অথচ এর মাঝে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হলো, এই তথাকথিত ভোটকর্মী গুলো রীতিমতো সজাগ !অর্থাত্ কিনা নড়েচড়ে, কথা বলে জোরে ! বলে, আমাদের ব্যক্তিগত জীবন আছে । বলে, আমাদের ছেলে পুলে স্ত্রী পরিবার নিয়ে বেঁচে বর্তে থাকার অধিকার আছে । বলে, ডিউটি মানে কি বাঁচার গ্যারান্টি থাকবে না ?
কিন্তু এমন কথা বলা ভোটকর্মীদের আকস্মিক প্রতিবাদী নড়াচড়া বা উত্তেজনায় সাড়া দেওয়া দেখে মহাভারতের নিয়ন্ত্রক শ্রীকৃষ্ণ থেকে ব্যাসদেব তো বটেই এমনকি যুধিষ্ঠির থেকে দুর্যোধন মায় শকুনি পর্যন্ত ক্ষেপে লাল। হায় হায় শেষে কিনা নিরীহ যন্ত্রবৎ ভোটকর্মীর দল বাঁচা নিয়ে, নিরাপত্তা নিয়ে আওয়াজ তোলে ? জবাবদিহির ভয় দাও মুখে ছুড়ে ! ওমা, তাতেও থামে না !
নেহাত দশটা পাঁচটার ট্রেনে বাসে ঝোলা, খসে খসে করে কাগজে কলম ঠেলা আর ছাত্র সামলানো শ্রেণী থেকে ধরে ধরে আনা। মাত্র এইটুকু যোগ্যতায়, ছা-পোষা আলুভাজা-গরম ভাতের প্রতিনিধিদের হঠাত্ সুস্থ ভাবে ঘরে ফেরার সাধ জাগিলো ক্যান ? আরে গবেটের দল ভোট প্রক্রিয়া কি এক্কেবারে জলের মতো কথা ! এই যে এতো শ্লোগান, লড়াই লড়াই লড়াই চাই ! সে কি শুধুই কথার কথা ? যার যেখানে যত জোর, তার সেখানে একটা দখল লড়াই লাল চোখ বাঁশ লাঠি প্রভৃতি উপাদান সমূহ ব্যবহার হবে না ? তবে আর গণতান্ত্রিক অধিকারের মানে রইল কী ? আর এই সকল প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের নীরব ও দাঁত ম্যালানো সাক্ষী হবি কেবল তোরা, মানে এই ভোটকর্মীরা। তবেই সেই ইলকশন ফ্রি ও ফেয়ার ।
তবে প্রসঙ্গ যতই ব্যবস্থাপকদের কাছে 'কোনও ঘটনাই নয়' জাতীয় হোক, ভোটকর্মী নামক প্রাণীদের কিন্তু দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় অভিযোজনের পরিবর্তে অভিযোগই বৃদ্ধি পেয়েছে । বরং মহামান্য ব্যাসদেবের কাছে তাদের স্লাইট রিকোয়েস্ট, হুজুর এই সনাতন ভোট প্রক্রিয়া এবার পরিবর্তন করলে কি জাত যায় ! আর যদি জাত রক্ষার এটাই একমাত্র পথ হয়, তবে স্য়ংক্রিয় বন্দুকধারী রক্ষাকবচ পর্যাপ্ত বিধি ব্যবস্থা করে এই অধম ভোটকর্মী নামক প্রাণীদের এই রণক্ষেত্রে ডাকুন নতুবা এমন শাস্তি দিন যাতে সপরিবারে ইহ লীলা সাঙ্গ হয় । আপনাদের এক্সপেরিমেন্টাল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আমাদের চোখে সব গৃহই দুর্গ আর সকল ভোটকেন্দ্রই অতি স্পর্শকাতর বলেই উপলব্ধ হয় । এ ধারণা নহে, একান্ত বিশ্বাস । আপনি বলুন গিনিপিগ হলেও আমাদের কি দুটি জ্বল জ্বলে জ্যান্ত চক্ষু নাই ??
==============
---------------- অ-নিরুদ্ধ সুব্রত
গ্রাম ও পোস্ট-ধর্মপুকুরিয়া
বনগাঁ, উত্তর ২৪পরগণা
পিন-৭৪৩২৩৫