ভরসার রাত্রি যাপন
এক ভিন্ন নতুন নামের বীজানুতে নাকাল হয়ে নাকানি চোবানি খাওয়ার প্রতিনিয়ত দৃশ্য সকাল সন্ধ্যা সারা বিশ্বকে তোলপাড় করে ছাড়ছে।
আজকাল কি দেখছি আমরা,হাতে গরম তাজা বিষয় মারণ বীজানুর দীর্ঘস্থায়ী দাপট। এই মাস খানেক আগে জাস্ট অন্যান্য খবরের মতোই ভাসছিল এই নতুন এক ভাইরাসের আগমন। তাও সেগুলো ছিল বহুদূরের দেশ গুলোতে,তাই ভ্রূক্ষেপ হীন ভাবে আমরাও এত শত কিছুই ভাবি নি।আমেরিকা,ইতালি ঠিক এমনই বাঁকা চোখে ভেবেছিল ধুর,চীন তো সেই কোন দূরে ,সেখান থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার মানুষের মাধ্যমে যে আজকের ধরাশায়ী পরিস্থিতির জন্ম দেবে ভেবেছিলো আর কে!
তখন কে ভেবেছিল দেশের সীমানা ছাড়িয়ে হানা দেবে একদম আমাদের পাড়া মহল্লা এমনকি এখন যেভাবে কি হয় কি হয় কড়া নাড়লো কার বাড়িতে এই দুশ্চিন্তা রাতের ঘুম পর্যন্ত উড়িয়ে দিচ্ছে। মনের কোণে সেঁধিয়েছে এক খামচা ভয়,আতঙ্ক ,এক গুচ্ছ নির্দেশিকা ।বাড়ির বাইরে রক্ত চক্ষুর কড়া প্রহরা ঠিক ঠাক নিয়ম পালন করছে তো নিয়ম ভেঙে জীবন শৈলীতে অভ্যস্ত মানুষজন ।সাধারণ সিধে সাধা মানুষ কিন্তু সমাজ রাষ্ট্র যা চায় মেনে চলার চেষ্টা করে কিন্তু এক শ্রেণী নিয়ম ভেঙে চলতেই অভ্যস্ত।স্কুলের ক্লাসে সবাই পড়াশোনা করে না,সবাই নিয়ম শৃঙ্খলা যেমন মানে না কেউ মানতে গিয়ে হোঁচট খায় আবার কিছু অংশ আছে যারা ওসব ধার ধারে না কিন্তু তাদের জন্য পুরো ক্লাসের বদনাম হয়।রাষ্ট্রের হাতে তো ক্ষমতা কি মনে হয় লক ডাউনই যখন একমাত্র পথ এভাবে বা আরো একটু কড়া হওয়া কি আগে থেকে দরকার ছিল না?শুধু আশায় বুক বাঁধছি,আমরা জিতবই এ এক দৃঢ় ।তাছাড়া আছেই আর কি আমাদের! মন্দির মসজিদ গির্জা সব প্রার্থনা সভা বন্ধ আমাদের ভালোর জন্যই,পাছে বীজানুর দাপট বাড়ে।
বিদেশে যখন এই মারণ ভাইরাসের বেশ প্রকোপ,লক ডাউন শুরু হলো সেই সব থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি রাষ্ট্র তৎক্ষণাৎ কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিতো আজ এমন পরিস্থিতি হয়তো হতো না। তখনো কিন্তু বিদেশ থেকে এসেছে উড়ান,বন্ধ হওয়া তো দূর,বিদেশে বসবাসকারী মানুষ জন ভয়ে পালিয়ে এসেছে প্রাণ বাঁচাতে যারা অলরেডি সংক্রমিত।তবে কি এলিট শ্রেণীকে খুশি করতে উড়ান আসতেই থাকলো?যখন বন্ধ হলো ভারতে প্রায় সব রাজ্যে অতিথি ভাইরাস হাজির শুধু নয় দাপট দেখাতে শুরু করেছে। যারা বিদেশ থেকে এলেন তেনারা উচ্চ শ্রেণীতে অবস্থান কারী লোকজন তাদের আবার নিয়ম মানতে আছে নাকি তাই তারা কিন্তু গৃহবন্দি না থেকে ভারতে এসে দেদার ঘুরলো রাস্তা বাজার মল অফিস সর্বত্র।কেন ওই আক্রান্ত দেশ থেকে আসা মানুষদের গতিবিধির ব্যাপারে কোনো খবরই থাকলো না রাষ্ট্রের-রাজ্যের প্রশাসনের কাছে,কেন এমন ঢিলে ঢালা ব্যবস্থা।আজকের পরিণতির পেছনে এই গুরুত্ব না দেওয়া আখেরে কতখানি দায়ী তা নিশ্চয়ই বুঝতে কারুর বাকি নেই! আজ আমাদের রাজ্যেও হাজার হাজার মানুষ এই মারণ রোগের কবলে পড়ে কোয়ারেন্টাইনে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। খেসারত দিচ্ছে আমাদের রাজ্য,শহর গ্রামের সাধারণ মানুষজন যারা কোনোদিন হয়তো বাইরে যায় নি,অন্য রাজ্যেও তবু বীজানুতে আজ তারা সংশয়ে।জীবন্ত ভগবান স্বরূপ যে সকল ডাক্তার,নার্স আজ সরাসরি এই সংক্রমনিত মানুষজন দের সেবা করছেন,যে সকল স্বাস্থ্য কর্মী,পুলিশ সিভিক ভলান্টিয়ার,
স্বেচ্ছাসেবী প্রশাসনের দায়িত্বশীল লোকজন আজ নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের জন্য তাদের পরিবারের সুরক্ষা সত্যিই আছে তো এ প্রশ্নও যথেষ্ট চিন্তার উদ্রেক করে।তবু ওনাদের সামনে থেকে লড়াই করার মানসিকতা,হার না মানা জীবনযুদ্ধে সরকারের পাশে থাকার বার্তা মনের কোণে ভরসা যোগাচ্ছে যে এ মারণ জীবাণু ঘুমিয়ে পড়বে ভ্যাকসিন এলো বলে হাতের মুঠোয়।
যখন দেখা গেল পরিস্থিতি প্রায় আয়ত্বের বাইরে একের পর কড়া দাওয়াই,নিয়মের শেকল আসতে লাগলো রাষ্ট্র নেতাদের কাছ থেকে আম আদমির পালনের জন্য।সাধারণ মানুষ তো গিনিপিগ নিয়ম মেনে চলাতেই জন্ম ,শুধু তাই নয় বিজ্ঞান ছাড়িয়ে কুসংস্কারকে আঁকড়ে ধরতেও পিছুপা হতে দেখা গেল না উচ্চতমের নির্দেশে সাধারণ জনতাকে।
কেউ কেউ বলছে শুনছি এ নাকি মনোবল চাঙ্গা করার দাওয়াই সত্যিই কি তাই না এর পেছনেও অন্য কিছু রাজনীতি পরিকল্লনা ছিল,এ বীজানু চলে যাক সিদ্ধান্তের কাটাছেঁড়া করে ক্রমশ প্রকাশ্য আসবে সব কিছু।
লকডাউনে সবরকম পরিবহন বন্ধ।অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া গরীব খেটে খাওয়া শ্রমিক মজুরেরা আজও অপেক্ষায় কবে বাড়ি ফিরবে এ চিন্তায়। আদৌ কি ফিরতে পারবে এ কোটি টাকার প্রশ্ন তাদের কাছে।এক চরম কষ্ট,দুর্দশা,খাবারের অপ্রতুলতা তাদের শুধু নয় বাড়িতে আপনজনদেরও চিন্তায় কুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে। এ এক মরণ যন্ত্রণা,নেই খাবার নেই বাড়ি ফেরার উপায় ।এদিকে এত করে প্রচার,সরকারী নির্দেশ বারংবার সচেতনতা বার্তা তবু এখনও কিছু মানুষ নির্দেশ অমান্য করে ঘুরে বেড়াচ্ছে বেশ করেছি রোয়াবে।মুক্তি কবে মুক্তি কিভাবে মারণ রোগ থেকে জানিনা আমরা ,সে তার বিষাক্ত ছোবলে অস্থির করেই চলছে এ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা অহংবোধের আধুনিক সমাজ জীবনকে।শুধু এর মধ্যে যে উপকার টা হলো মানুষের আধুনিক শিক্ষিত মনের দর্প চূর্ণ,আমাদের সব ছিল কিন্তু ছিল না ম্যানার্স,গা ঘেঁষে টপকে এগিয়ে যাওয়াটাই আমাদের নিয়ম ছিল।মুখের সামনে হেঁচে, কেশে,থুতু ফেলে, ধুমপান করে আবার রোয়াব দেখিয়ে ঝগড়া।আজ বাধ্য হয়েছে মানুষ শৃঙ্খলিত হতে ঠেকায় পরে কিন্তু কত দিন তা জানিনা। গাড়ি ট্রেন বাস সর্বত্র বন্ধ,দূষণের ভারে ধুঁকছিল যে শহর জীবন আজ এসেছে সবুজের প্রলেপ।কানে আসছে পাখির কল কাকলি।চলে গেছে বসন্ত তবু দুবেলা শুনছি কোকিলের কুহুতান,নিশ্চিন্ত মনে কাঠ বেড়ালি খেলছে পাশের কার্নিশে। প্রকৃতির এই সজীব আলোকিত হওয়া যেন মনের মধ্যে বার্তা দিচ্ছে
আমাদের দেখা হোক মহামারী শেষে,
আমাদের দেখা হোক জিতে ফিরে এসে,
আমাদের দেখা হোকজীবাণু ঘুমালে
আমাদের দেখা হোক সবুজ সকালে।