।। গল্প লেখার গল্প ।।
অনেক স্বপ্ন আর অনেক ইচ্ছা নিয়ে জন্মেছিলাম কিন্তু তারা থমকে গেছে আমার বাস্তবে ঠাসা পারিবারিক পরিবেশের জন্য।এর ই মাঝে কিছু লেখা এলোমেলো ভাবে লিখেছি পত্র পত্রিকায়। সেগুলির মধ্যে আছে আমার কিছু গল্প। সেই সব গল্পের সম্পর্কিত কিছু কথা দিয়ে আমার আজকের এই গল্পের অবতারণা। কখনো কখনো মনে হয়েছে আমার মতো একজন সামান্য ক্ষুদে লেখিকা গল্প লেখার স্পর্ধা রাখে কী করে! বৈচিত্র্যময় জীবনে কত ঘটনা ই তো ঘটে যেগুলো নিয়ে অনেক গল্প হয়তো লেখা হয়নি। শুধু ভয়!ভাবি,ভয় কেন? কাকে ই বা এতো ভয়! মনে হয় ,যদি এমন কিছু লিখে ফেলি-যা আমার সম্পর্কিত কাছের মানুষদের নিয়ে লিখে সমালোচিত হ ই। গল্পটা পড়ে যদি কেউ বলে-তোমার মনে এই ছিল জানলে তাহলে হয়তো-! কিন্তু তাহলে হয়তো টা কি? তাহলে সে অন্য রকম ব্যবহার করতো আমার সঙ্গে।ততবার জীবনের সব সত্যি কথা গুলো নিয়ে গল্প লিখতে বসেছি ততবারই একটা অদৃশ্য বাধা এসে আমার কলমটাকে থামিয়ে দিয়েছে।যেন বলছে লিখো না-তোমায় সমালোচিত হতে হবে, মৃত্যুর পরে নয়তো এই জীবিত কালেই।ভাবি, মৃত্যুর পরে হলে কোনো কথা ছিল না। কিন্তু বেঁচে থাকতে যদি আমার কাছে বা কার ও কাছে আমার সমালোচনা করে কোনো মন্তব্য করে তখন সহ্য করবো কেমন করে!
এই তেমন সেদিন সকালে চায়ের পর্বটা শেষ করে সবে খাতা কলম টা নিয়ে বসেছি কিছু লিখবো বলে এমন সময় এমন একজন আমার সঙ্গে দেখা করতে এলো-আমি তো প্রথমে বুঝতেই পারিনি দেখা করার কারণ টা কি? দিদিমণি,আপনি গল্প লেখেন আমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখুন না। আমি প্রথমে অবাক হলাম-আমি তো এমন কিছু নাম করা লেখিকা নয় তবে কেন এমন বলছেন উনি! উনি নিজের থেকে ই বললেন ,নাকি কোনো পত্রিকায় আমার একটা লেখা পড়েছে খুব ভালো লেগেছে তাই। আমি তার কথা শুনে বেশ একটু ঘাবড়ে গেলাম। কারণ তে ব্যক্তিটি তাকে নিয়ে গল্প লেখার কথা বললেন তিনি আমার মোটেই প্রিয় মানুষ নন। সাধারণত গল্প লেখার মধ্যে যেটি আদর্শ চরিত্র হয় সেটিকে কেন্দ্র করে ই তো লেখা আবর্তিত হয়। আপাতত পাঠক গল্প টি পাঠ করে অন্তত একটা সুখকর অনুভূতি অনুভব করতে পারবে। বললাম -দেখা যাক।
আবার ও একদিন একটা ফোন এলো এক ভদ্র মহিলার। তিনি আমার লেখার খুব প্রশংসা করলেন।নাকি আমার একটা গল্পের বই পড়েছেন। খুব খুশি হলাম। আমার মাত্র দু'একটা গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে।তার মধ্যে ই তাঁর ভাললাগা জানিয়েছেন। তিনি জানালেন-তিনি অবিবাহিতা। সারাজীবন ভায়ের সংসারে জীবনের রোজগারের সিংহ ভাগ টা দিয়েও আজ অবহেলিত হয়ে সংসারে কোন ঠাসা হয়ে থাকে। তাঁর এই দুঃখময় জীবনের গল্প লিখতে বললেন তাঁকে নিয়ে। ভাবলাম সমাজে এমন কত সুখ দুঃখ আন্দোলিত হয় প্রতিটি সংসারে যা ব্যক্ত করতে গিয়ে কারো না কারো অপ্রীতিভাজন হতে হয়।
এই যেমন সেদিন এক ভদ্র লোক আমাদের ই এক প্রতিবেশীর বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসে নাকি আমার খোঁজ করছেন। বিশেষতঃ আমার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে ঐ প্রতিবেশীর বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছেন।শুনে খুব অবাক হলাম। আমার মতো একজন সামান্য লেখিকা এতো বড়ো সম্মানের অধিকারিণী!এক সান্ধ্য চায়ের আসরে ভদ্র লোকটিকে আমন্ত্রণ জানালাম।চা পান করতে করতে এক সময় তিনি বললেন-দিদিমণি, সেদিন আপনার লেখা একটি গল্প পড়লাম একটি নামী পত্রিকায়। আপনার ঐ গল্পের যে মুখ্য চরিত্র টি কাকে নিয়ে লেখা? চরিত্র টি খুব সুন্দর! মনে হয় ঐটা আপনার ই চরিত্র হবে। আমি তখন হতচকিত হয়ে বললাম-ঠিক মনে পড়ছেনা তো? বর্তমানে একটি নতুন গল্প মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ,ওটার কথা এক্কেবারে মনে নেই। আমার মতো সামান্য একজন লেখিকার গল্প লেখা নিয়ে এতসব ভালো ভালো কথা শুনে খুশি তে মনটা ভরে গেল। তিনি সেই গল্পের নানান চরিত্র বিশ্লেষণ করছেন গল্পটি মনে করানোর জন্য। আমি যত হু হাঁ দিচ্ছি, উনি তত ই সন্দিগ্ধ হয়ে পড়ছেন। একসময় তিনি হেসে ই বলে ফেললেন-গল্পটা আপনার লেখা ক…
আমি আমার অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে গল্প লিখি তাই কার ও ভালো লাগে আবার কারও ভালো লাগে না। আমার সে অভিজ্ঞতা কোন্ গলিপথ দিয়ে আনাগোনা করে তা খালি চোখে দেখা যায় না।এতে শুধু আমার সৃষ্টির আনন্দটাই থাকে।সব লেখক ই আমার মতোই যে যার নিজস্ব গন্ডীর ভিতর থেকে গল্পের উপাদান পেয়ে যায়। হয়তো একজন কে নিয়ে লিখতে বসলাম অথচ তার সাথে অন্য একটা চরিত্র কেমন অদ্ভুতভাবে মিশে যায়। নিজের স্বভাবকে বুঝে নিয়ে নিজের প্রবৃত্তিকে স্বীকার করেই শুধু ভালোবাসার গল্পই লিখেছি এতদিন। শুধু ভালোবাসা ছাড়া আর কিচ্ছু নয়!
--------------------:---------------------
শেফালি সর,জনাদাড়ি, গোপীনাথপুর, পূর্ব মেদিনীপুর। ৭২১৬৩৩