রমজান শব্দটি বাংলাও নয় আবার আরবী ভাষাতেও এর কোনো অস্তিত্ব নেই । তবে এ শব্দ টি প্রাধান্য পেল কেমন করে সন্দেহ জাগে । তবে শব্দ টি ফার্সী কিংবা উর্দু ভাষা থেকে যে এর উৎপত্তি তাতে কোনো সন্দেহই নেই। আরবি রমাদান থেকেই মূলত রমজানের জন্ম। সমুচ্চারিত শব্দটি রূপ পাল্টে পাল্টে রমজানে রূপান্তরিত হয়েছে এটা নিশ্চিত রূপে বলা যেতে পারে। রমজানের আরবি শব্দ সিয়াম।আর সিয়াম মানে নিজেকে পোড়ানো , শুদ্ধ করা।এর সঙ্গে আরও একটা শব্দ এর সঙ্গে উচ্চারিত হয়,(মাহে রমজান)। মাহে শব্দের অর্থ মাস, অতএব মাহে রমজান হলো রমজান মাস।
রমজান শব্দটি এসেছে আরবী রময ধাতু থেকে ।রময অর্থ দহন বা পোড়ানো।এমাসে রোজা রাখলে মানুষের মাঝে যে সকল অমনুষ্যত্ব,পাপ আছে তাকে পুড়িয়ে শেষ করে দিতে পারি। নিস্পাপ মানুষে পরিণত হওয়ার শিক্ষা এমাসের রোজা পালনে অর্জিত হয়। সারা মাসের উপবাস পালনকেই রোজা বলা হয়ে থাকে।এ মাসে রোজা রাখলে সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে অনেক অনেক বরকত আমাদের উপর নেমে আসে।
পুরো মুসলিম বিশ্বে একে যে নামেই ডাকি না কেন এটা অত্যন্ত বরকতের মাস ফজিলতের মাস ,সংযম ও ত্যাগের মাস, ইবাদতের মাস। সারা পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় এই মাসের উৎসব।এই উৎসব একান্তে নিজের। লোক দেখানোর কোনো অবকাশ এখানে নাই। ঘরের ভেতরে ঢুকে খাবার খেয়ে নিলেও কেউ দেখার নাই, স্নানের সময় এক কুল্লী পানি গিলে নিলেও কেউ দেখার নাই। একান্তে ব্যাক্তিগত ভাবে আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে পরীক্ষা দিই।শতরকম অসুবিধা মাথায় নিয়ে রোজা পালন করি হাসিমুখে।
এমাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই মাসে পবিত্র জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজা। পবিত্র কোরআন এবং হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে এ মাসেই কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে পৃথিবীতে ,আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর। এই মাসেই রোজা আমাদের উপর অবশ্যই করনীয় বলে ফরমান জারি হয়েছে (ফরজ)। এমাসে একটি ভালো ( জনহিতকর) করলে সত্তরটি ভালো কাজের সমান নেকি পাওয়া যায়। বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ (আয়াত পর পর ধাপে ধাপে ) এমাসের থেকেই অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়েছিল।
প্রতিটি রমজানের সূচনা হয় সেহেরী খাওয়া র মাধ্যমে আর শেষ হয় ইফতারের মাধ্যমে। সুরা বাকারার ১৮৭নম্বর আয়াতে বলা আছে আর (তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা পরিস্কার না দেখা যায় । অতঃপর রাত পর্যন্ত রোজা রাখো )।রোজা কে ইংরেজিতে বলে fasting করা। ইফতার কে বলে. Fasting break । এ মাসে আমরা দুটো কথার বেশ প্রচলন দেখি। একটা সাহরী বা সেহেরী অপরটি ইফতার বা এফ তার । সকালের (ফজরের) আজান শুরু হলেই সব রকমের পানাহার থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে হয়, তার মানে সেহেরী খাওয়া আজকের মতো বন্ধ। মাগরিবের আজানের সাথে সাথেই শুরু হয় রোজা ভঙ্গের পালা মানে ইফতার করা। ইফতার করাটা বেশ মজার।সবাই, বিশেষ করে বাড়ির সকলের মিলে উপবাস ( রোজা) ভঙ্গ করে আবার ফিরে আসি নতুন ছন্দে। সারা রাত ধরে আর কোনো বাধা নিষেধ রইলো না স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে।
রোজা মানে সেহেরী তে পেটপুরে চব্যচষ্য করে , আর ইফতার এর সময় বিভিন্ন রকমের ফলমূল সহযোগে পেট পুরে খাওয়ার একটা উৎসব বলা যেতে পারে।এর নাম রোজা রাখা নয়। আমরা যদি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানায় রোজার সেহেরী দেখি তবে দুটো খেজুর খেয়ে সেহেরী সমাপ্ত করেছেন। কখনো কখনো একটি খেজুর কে দুজনে ভাগাভাগি করে খেয়ে পানি পান করে নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ পড়েছেন ।এমাস হলো পুরোপুরি সংযমের মাস,ত্যাগের মাস। অথচ আমরা দেখি এমাসে খাওয়া দাওয়ার উপরই জোর দিচ্ছি বেশি বেশি করে। আমরা দিন দিন রোজা রাখার মূল স্পিরিট থেকে সরে যাচ্ছি। আসলে রোজা মানে দেহের রোজা, মনের রোজা, মাসব্যাপী কঠিন অনুশীলনে নিজেকে নিযুক্ত রাখা। বেশি বেশি করে ইবাদত করা, কোরআন পড়া,ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা।কম কথা বলার অভ্যাস গড়ে তোলা, খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকা,।সারা বছরের অর্জিত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া (প্রার্থনা) করা, আগামী দিনগুলো যাতে নিস্পাপ হয়ে অতিবাহিত করতে পারি তার জন্য কড়োজোড়ে সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহর) কাছে দোয়া করা। এমাসের আরও একটি জরুরি করনীয় বিষয় হলো তারাবীর নামায আদায় করা। ফিতরা আদায় করা । রমজানের শেষে সওয়ালের চাঁদ উঠলে (ঈদের চাঁদ) ঈদগাহ ময়দানে জামায়াতের সঙ্গে নামাজ পড়া। ঈদ মোবারক জানানো।
নবপ্রভাতের সকল কর্মকুশলীবৃন্দ ও পাঠক ভাই বোনদের অগ্রীম ঈদ মোবারক ও শুভেচ্ছা রইলো।
আবদুস সালাম
প্রয়াস শ্রীকান্তবাটি মাদারল্যান্ড
ডাক রঘুনাথগঞ্জ ,মুর্শিদাবাদ ৭৪২২২৫
৯৭৩৪৩৩২৬৫৬