কালো কোকুন
ফাল্গুন মাস। সজনে গাছের নিচে বসে এলোচুলে ঝরা সজনের ফুল কুড়াচ্ছিল মাধবী। এমনসময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল এক আনাড়ি যুবক। হড়পা বানের মতো মাধবীর এলো চুলের বাহার দেখে ওর মাথা এলোমেলো হয়ে গেল। সে ঝুঁকেপড়া সজনের ডাল ধরে বাঁদরের মতো ঝুল খেয়ে উঠল। আর ঠিক তখন একথোকা শুঁয়োপোয়া থপ করে খসে পড়ল মাধবীর মাথায়। মাধবী কোচড় ভরে ফুল কুড়িয়ে টানপায়ে ঘরে উঠল।
বিকাল হলে ওর শাশুড়ি মাধবীর চুলের গোছা ধরে টেনে টেনে বেড়াবিনুনি বাঁধেন। আজ চুলের মুঠি ধরে টান দিতেই হাতের মধ্যে খচ করে একখান খোঁচা খেলেন, “ও বউ কী বিষাক্ত আলকুশি পুঁতে রেখেছিস খোঁপায়! মা গো মা, দিলি তো আমার হাতখানা জখম করে!”
শাশুড়ি পয়মন্তীর হাতে সত্যি সত্যি একসময় পচন ধরল। ব্যথা যন্ত্রণায় পয়মন্তী এখন সকাল সন্ধ্যে মাধবীকে শাপশাপান্ত করে। এমন অভিযোগে মাধবী বোকার মতো চেয়ে থাকে। ওর স্বামী মনোরঞ্জন। মায়ের অসুখ শুনে বিদেশ থেকে পড়িমরি করে ছুটে এল। স্বামীকে সামনে পেয়ে প্রথম রাতে মাধবী ঘোমটার আড়ালে একটুখানি হাসল। মাধ্বীকে কাছে পেয়ে মনোরঞ্জন সারারাত ধরে তার পায়ের ক্ষত দেখল! ক্ষতস্থানে ফুঁ দিয়ে দিয়ে মাধবী মনোরঞ্জনকে ঘুম পাড়াল। পরদিন রাতে মাধবীর কাছে শুয়ে ওর নরম রেশম চুলে মনোরঞ্জন যখন নাক ডুবিয়ে দিয়ে আদর করতে গেল, তখন সেও তার মায়ের মতো একই ভাবে আঁতকে উঠল, “আঃ! জ্বলে গেল!”
এমনটা কেন হচ্ছে মাধবী আজও কিছু বুঝে উঠতে পারল না। পরদিন সকাল হতে না হতেই মনোরঞ্জনের চোয়ালে, চিবুকে,.. গন্ডদেশে চাকা চাকা ঘা দেখা দিল। ডাক্তার বললেন ইনসেক্ট পয়জনিং! দিনে দিনে মা ছেলের ক্ষত বিশ্ৰীরকম বাড়তে লাগল। সমস্ত আক্রোশ গিয়ে পড়ল সেই মাধবীর চুলে। একদিন পয়মন্তী এক ভাণ্ড কেরোসিন এনে মাধবীকে ডাক দিলেন, “বউমা, বাইরে এসো!”
মাধবী মাথায় কাপড় টেনে সিঁড়ির ধাপে পা রাখল।
মনোরঞ্জন ফস করে দেশলাই কাঠি ঠুকে বলল, 'ঘোমটা খসাও।'
এমনসময় কালবৈশাখী মেঘের মতো ওদের উঠোনে এসে দাঁড়াল সেই যুবকটি। ছাইরঙা পাহাড়ের মতো অদুল গা আর জলভরা মেঘের মতো টলটলে চাহনি! মাধবী ঘোমটা উড়িয়ে দিল। আর ঠিক তখনই মাধবীর খোঁপার থেকে একটা হলুদ প্রজাপতি উড়ে এসে যুবকটির বুকের ওপরে বসল।
=======================
উত্তম বিশ্বাস
দত্তপুকুর ব্যায়াম সমিতি
দত্তপুকুর, উত্তর 24 পরগনা
পিন 743248
মোবাইল 9831359655