google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। বিজয়া দেব - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৬ মে, ২০২০

অণুগল্প ।। বিজয়া দেব

অচেনা


ছাদ থেকে নাকি অনেকদূরের হাওড়া ব্রিজ দেখা যায় । সাততলার ছাদে উঠে চোখে বাইনোকুলার লাগিয়ে সুদূরকে কাছে আনার আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে একসময় দেখতে পেল শ্রাবন্তী ঝাপসা রেখার মতো হাওড়া ব্রিজ। তার হাতের বাইনোকুলারটি মোটেই উচ্চমানের নয়, বুবুনের জন্যে কিনেছিল ঊটি থেকে ।বুবুন দেখেছে হাওড়া ব্রিজ।ও নাকি সাফ সাফ দেখতে পাচ্ছে ।আজ ভোরবেলাতেই বুবুন টানতে টানতে তাকে ছাদে এনেছে হাওড়া ব্রিজ দেখাবে বলে। হাওড়া ব্রিজের একটা অতি অস্পষ্ট রেখায়িত উপস্থিতি দৃশ্যমান বটে কিন্তু তার সাথে একটা হালকা বেলুনের মত উড়ন্ত কিছু একটাকে ভাসতে দেখল শ্রাবন্তী ।ভেসে ভেসে এটা এদিকেই আসছে, কিছুদূর আসার পর আকৃতি বদলালো, মনে হল একঝাঁক পাখি, মনে হল একঝাঁক পতঙ্গ, তারপর মনে হল মুকুটের মত কিছু একটা। ভেসে উঠছে যেন কালো গহ্বর থেকে আবার ডুবে যাচ্ছে, মনে হল এর গতি এদিকেই, এই কৌণিক দূরত্বেই। শ্রাবন্তী স্হির হয়ে দাঁড়িয়ে। বুবুন বলেই চলেছে - কী মা, কিছু বলছ না যে! হাওড়া ব্রিজ দেখতে পেলে? ধুর, তুমি কিছু দেখতে পাও না, আমি ত দেখি একদম সাফ সাফ। তুমি একটা বোকা। টুকটুকি পায়েলরা তো খালি চোখে দেখেছে। আমাকে বাইনোকুলারটা দাও তো। তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। যাও।- আসলে বুবুন নিজে যা দেখে, দেখে খুশি হয়, তাই মাকে দেখাতে চায়। কালরাত থেকে বলছিল আজ ভোরে সে উঠবে, মাকে ছাদ থেকে হাওড়া ব্রিজ দেখাবে। ভোর ভোর ঠিক উঠে পড়েছে। কত বোঝে ছোট্ট বুবুন। বলছিল - মা, এখান থেকে তো হাওড়া ব্রিজ অনেক দূর। কিন্তু এরিয়েল ডিস্ট্যান্সে তেমন দূর নয়, তাই না মা? ধরো আমরা যদি পাখি হতাম. তাহলে ডানা মেলে উড়ে উড়ে ঐ হাওড়া ব্রিজের রেলিং ঘেঁষে ঘেঁষে কোথা থেকে কোথায় চলে যেতাম, তাই না মা? সত্যি মানুষের কত কষ্ট! - শ্রাবন্তী বাইনোকুলারটি চোখ থেকে সরাতে গিয়েও সরাতে পারছিল না। ঐ অচেনা বস্তুটি যেন এদিকেই ধেয়ে আসছে, আবার দিকবদল করছে আবার কালো গহ্বরে ডুবে যাচ্ছে, আবার ভেসে উঠছে। এমন অদ্ভুত এর গতিবেগ, কখনও মনে হচ্ছে দ্রুত, কখনও শ্লথ....এবারে রঙবদল করতে শুরু করল... লাল নীল হলুদ সবুজ... এদিকে বুবুন অস্হির হয়ে উঠেছে। তার বাইনোকুলারটি চাই। শ্রাবন্তীর চোখ গতিশীল ভাসমান অগ্রসরমান এবং খুবই অচেনা এই বস্তুটিতে স্হির, এক অদ্ভুত আকর্ষণ তাকে স্হির করে রেখেছে, তার চোখ মন পাখির চোখের দিকে দৃষ্টিস্হাপনার মনোসংযোগে। বুবুনের অস্হিরতা সে আর দেখতেই পাচ্ছে না।
 'দাও' বলে বুবুন এবার সজোরে ঠেলে দিল শ্রাবন্তীকে। হাত থেকে বাইনোকুলারটি পড়েই যাচ্ছে, বুবুন লুফে নিল। এতক্ষণে সম্বিত ফিরল শ্রাবন্তীর। বলল-বেশ, এবার এটা তোমার চোখে বসাও তো! - বুবুন খুব খুশি। বলল-তোমাকে দেখাব হাওড়া ব্রিজ? আমার পাশে বসো। তোমাকে ঠিক দেখাব। - আনমনা শ্রাবন্তী বলে-হাওড়া ব্রিজ? সে দেখা যাবে। কিন্তু তুমি বলোতো, একঝাঁক পাখি কি ভেসে আসছে?
-পাখি? না মা।
-তাহলে বেলুন?
-না মা।
-তাহলে মেঘ?
-কোথায় মেঘ! আজ তো নীল আকাশ।
-কোনও উড়ন্ত বস্তু? তার রঙবদল হচ্ছে?
বুবুন দারুণ উত্তেজনায় শ্রাবন্তীর হাত চেপে ধরে বলে-ইউ এফ ও? কোথায়? আমি তো দেখতে পাচ্ছি না। তুমি দেখেছ তাহলে? আমাকে দেখাতে হবে তোমায়। কোথায় ইউ এফ ও?-
শ্রাবন্তীও খালি চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। শুধু মনে হচ্ছিল ভীষণ অচেনা কিছু একটা অনেককিছু দখল করে নেবে। শান্তির ঘুম উজাড় হয়ে যাবে। কৃষ্ণগহ্বরে ডুবে যাবে স্বস্তির অভ্যেস। আরও কী কী হবে ঠিক ধারণা করা যাচ্ছে না।

—-------------------------—-----------------------------------
 বিজয়া দেব,
 225, Purbachal Road North. 
Kolkata - 78.