এ লড়াই বাঁচার লড়াই, করোনা থেকে মুক্তির লড়াই
(ইগো ছাড়ুন,আসুন হাতে হাত মিলিয়ে করোনা সহ সমস্ত রোগের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করি)
এলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে উন্নত দেশগুলো যেখানে করোনার থাবায় জর্জরিত। বারবার করোনার নির্দিষ্ট ঔষধ ও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে গিয়ে হচ্ছে না।আইসোলাসন ও লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা যেখানে প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি বলে বিশেষজ্ঞরা মেনে নিয়েছেন।WHO এর মতে,কোন নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক ঔষধ ও ভ্যাকসিন আপাতত নেই তবে আবিষ্কারের চেস্টা চলছে।সেখানে কিছু পশ্চিমী(western), ট্রাডিশনাল(traditional)ও গৃহস্ত(Home) চিকিৎসা পদ্ধতি করোনা ম্যানেজমেন্টে হয়তো কাজে লাগতে পারে?। সেভাবেই চলছে করোনার চিকিৎসা।
ভারতের এখনও পর্যন্ত করোনার বাড়বাড়ন্ত অনেকটাই রোধ করা গেছে জনতা কারফিউ এর পর লক ডাউনের মাধ্যমে।যা সেলফ আইসোলাসন নামে জনপ্রিয় হয়েছে।অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় এখানে সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত।তবু দিন দিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে,যা জনমানসে দুশ্চিন্তার ছায়া ফেলেছে।সেই সঙ্গে চলছে পরষ্পরের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা,বারবার হাত ধোয়া সহ নানান প্রচার।কিছু এলাকার মানুষজন এখনও লক ডাউন মানছে না বলে খবরে দেখতে পাচ্ছি, প্রশাসন সেই এলাকা গুলোতে বেশী নজর অবশ্যই দেবে এই আশা রাখি।
আমার মনে হয়, রোগের প্রকোপ আরো কমানোর জন্য এলোপ্যাথি,আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথি একসাথে কাজ করুক। সম্প্রতি খবরে এসেছে যে,চীন,শ্রীলঙ্কা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে করোনার মোকাবিলায় অনেকটাই সফল হয়েছে।
ইতিমধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বশাসিত AYUSH দপ্তর এর হোমিওপ্যাথিক বিভাগ CCH Arsenicum album 30 মেডিসিন টিকে করোনা প্রতিষেধক ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ঔষধে হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে অনেকেই নানান কথা বলছেন, বিরুদ্ধাচরণ করছেন।প্রথমত বলে রাখি, এই মেডিসিনটি প্রতিটি চেম্বারে, হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল, হোমিওপ্যাথিক OPD গুলোতে বহুল ব্যবহৃত মেডিসিন।যা প্রতিদিন কোন না কোন রুগীর কাজে লাগে। বিশেষ করে ফ্লু জাতীয় জ্বর,রাইনাইটিস, ম্যালেরিয়া,ডেঙ্গু জ্বর,হাঁচি, সর্দি-কাশি,তে খুবই ভালো কাজ দেয়। কিছুদিন আগে সোয়াইন ফ্লুয়ের সময় প্রতিষেধক হিসেবে ভালো সাড়া দিয়েছিল।আমি চেম্বারে কমপ্লিকেটেড জ্বরে অনেকবার ব্যবহার করে সুফল পেয়েছি। পোলট্রি ফর্মে ব্যবহার করে বার্ড ফ্লুয়ের ক্ষেত্রে অনেক ফার্ম মালিক উপকৃত হয়েছেন,এখনও নিয়মিত অনেক ফার্ম মালিক আমার চেম্বার থেকে নিয়ে যান।যদি Arsenicum album 30 প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয় কোন ক্ষতি হবে কি? হোমিওপ্যাথিক মতে,পোটেন্সিতে কোন সাইড এফেক্ট নেই,Arsenicum album 30 এর কার্যকাল ১ থেকে ৭ দিন।এই সময় যাদের এলার্জি আছে তাদের এলার্জি কিছু বেরোতে পারে যা আপনা থেকেই সেরে যাবে।এর পর মেডিসিনটি তার কাজ শেষ করে দেবে।আবার পুনরায় পরপর তিন দিন করে প্রতি মাসে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আয়ুশ মন্ত্রক। ডোজ ১ ফোঁটা বা গ্লোবিউলসে চারটি করে দানা ।শিশুদের ডোজ এ চারভাগের এক ভাগ,৫-১৪ বছর বয়সীদের অর্ধেক।সাইড এফেক্ট বিহীন হোমিওপ্যাথিক প্রপার ডোজে কয়েক ডোজ খেতে কোন অসুবিধা নেই।তবে অবশ্যই কোয়ালিফায়েড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক(DMS,DHMS,BHMS,MD) এর সাথে আলোচনা করে প্রপার ডোজ(১ফোঁটা) এ খাওয়া যেতে পারে।তাহলে মেডিসিনটি ব্যবহার করতে অসুবিধা কোথায়?
ইতিমধ্যে কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট,দিল্লি সরকার সরকারি ভাবে Arsenicum album 30 হোমিওপ্যাথিক মেডিসিনটি করোনা প্রতিষেধক ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বর্ধক হিসেবে বিতরণ করছে।পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা পুরসভা,ক্যালকাটা হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতাল,ডি এন দে হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতাল, মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতাল এই মেডিসিন টি বিতরণ শুরু করেছে। আমিও আমার চেম্বারে রুগীদের অনুমতি নিয়ে তার পরিবারের সবার জন্য বিতরণ করছি।বিভিন্ন সংবাদপত্র, খবরের চ্যানেলে খবরটি প্রচারের পর থেকে অনেকেই নিজে এসে মেডিসিনটি নিয়ে যাচ্ছেন।
আশা রাখছি,অন্যান্য রাজ্য গুলোও সরকারি ভাবে মানুষের কথা ভেবে কেন্দ্র সরকারের আয়ুশ মন্ত্রকের ঘোষিত পরিকল্পনা কাজে লাগাবে।
এদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হোমিওপ্যাথির গ্রূপ,ওয়েবসাইট Hpathy(আমিও ওখানে নানান সফল কেস নিয়ে লিখি,আলোচনা করি,পড়ি।সারা বিশ্বের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক,কিছু এলোপ্যাথিক চিকিৎসক, সাধারণ মানুষ যুক্ত আছেন) এর মতে ইরানে Camphor 1M মেডিসিনটি করোনা রোগের চিকিৎসায় কাজ
করেছে। বাংলাদেশে ইসকনের কিছু সন্ন্যাসীর করোনা সংক্রমণে ভালো ফল পাওয়া গিয়েছে বলে খবর, ইতালির একজন চিকিৎসক ৫০ জন করোনা রোগীর ওপর আর্সেনিকাম এলবাম ৩০ হোমিওপ্যাথিক ঔষধটি প্রয়োগ করে পজিটিভ রেজাল্ট পেয়েছেন।ভারতের গুজরাট সরকারের তত্ত্বাবধানে হোমিওপ্যাথিক ঔষধটি ও আয়ুর্বেদিক ঔষধ ব্যবহারে খুবই ভালো রেজাল্ট পাওয়া গিয়েছে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আবার AYUSH এর আয়ুর্বেদিক বিভাগ প্রতিষেধক হিসেবে কিছু রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।যেমন,নাকে কয়েকবার তিল তেল বা ঘি লাগাতে বলেছে।সকালে দশ গ্রাম চবানপ্রাশ খেতে বলেছে।এছাড়াও মসলা চা, তুলসী পাতা,আদা,মধু,হলুদ খেতে বলেছে।সাধারণ বুদ্ধিতে বলুন,এগুলো ব্যবহার করলে কি কোন সাইড এফেক্ট হবে?না,বরং শরীরের রোগ প্রাতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।এছাড়াও গোলমরিচ,লবঙ্গ,দারচিনি সামান্য পরিমাণে খেতে নির্দেশ দিয়েছে। তবে অবশ্যই পাশ করা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক(BAMS,MD) এর সাথে আলোচনা করে খেতে হবে। সংবাদ প্রতিদিনের রিপোর্ট অনুযায়ী, চীন করোনাকে আয়ুর্বেদিক মেডিসিন ব্যবহার করে অনেকটাই সুফল পেয়েছে। এখন কিন্তু চীনে করোনার দাপট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
আমার কিছু ক্লিনিক্যাল রেজাল্ট অন্যান্য চিকিৎসকদের সাথে শেয়ার করার জন্য একটি পেজ খুলেছি,Dr.Mallick's clinical knowledge in Homoeopathy নামে। যেখানে ভালো অনেক
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার রেজাল্ট শেয়ার করা আছে। পেজটি গুগল ও ফেসবুক থেকে সার্চ করা যায়।
ইগো ছাড়ুন। ভাবুন ভারত সরকার ও WHO স্বীকৃত সমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীর চিকিৎসার জন্য। এমনি এমনি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এত কলেজ খুলে রাখেনি। শুধু ঔষদের বইগুলো বাদে এলোপ্যাথিক হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক, ইউনানী,সিদ্ধা চিকিৎসক গন সবাই সাড়ে পাঁচ বছরে একই বই পড়ে চিকিৎসক হয়ে ওঠেন। একথা সবার আগে ও শেষে মাথায় রাখুন। আমরা করব জয়।
============
ডাঃ সঞ্জয় কুমার মল্লিক
পাল্ট্যাগড়, পশ্চিম মেদিনীপুর