ভালোবাসা ও বন্ধনের গল্প
এই
গল্প অতি সামান্য এক বস্তুতে নিয়ে মগ আর বালতি । তবে গল্পের কেন্দ্রে
আছে অতি সাধারন,নরম ও আবেগপূর্ণ একটি মেয়ের কথা। গল্পের শুরু, শেষ কিভাবে
করতে হয় তা আমার জানা নেই । কিন্তু এই লেখার দ্বারা কিছু কিছু অজানা ,
অলৌকিক অনুভূতি ও আবেগকে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম মাত্র। মেয়েটার কথা তো
বলবোই ,তবে মগ-বালতির কাহিনীটা তার আগে বলি । একটি অচেনা সাধারণ পরিবারে
অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে এই দুটি জিনিসও আছে অনেকদিন থেকে ,মেয়েটির ঠাকুমার
আমল থেকে ।এমন মজবুত ও সুন্দর মগ-বালতি বোধ হয় ওই আমলেই হত ,এখনকার
সময়ের হলে দু'দিনই কাজের চাপে তার প্রাণ হয়ে যেত ওষ্ঠাগত । এই মগ-বালতিটি
পরম্পরা ধরে ব্যবহার করা হলেও তার জৌলুস এবং কাজ করার দক্ষতার মধ্যে
এতোটুকু ঘাটতি পড়েনি । সাধারণত সামান্য মগ-বালতিকে নিয়ে ভাববার বা
কিছুক্ষণ দেখার সময় কারোর কাছেই নেই।সেই সময়কালেও ছিল না আর এখন তো
মানুষ নিজের কথা ভাববে বলে সময়ের সন্ধান করে। তবে সেই মেয়েটি লক্ষ্য করতো,
সেটা তার ঠাকুমার আমল থেকেই।বালতি আর মগ যেন একই সূত্রে বাঁধা। কেউ
কোনোদিন কাউকে ছেড়ে যায়নি। একজন গেলে অন্যজন ঠিকই তার পিছু পিছু যেত।
যাইহোক এখন অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে, সেই মেয়েটিও বড় হয়েছে ।এখন সেও
লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমের গল্প পড়ে। আর আধুনিক চলতি কথায় ঠাকুমা আর দাদুকে
খুব মিস করে। ও বুঝতে পারলেন না? তাই তো। বললাম না অনেকদিন হয়ে গেছে,
ঠাকুমা-দাদু কেউই আর বেঁচে নেই।দুজনেই তাদের প্রিয় বুনুকে ছেড়ে অনেক দূরে
চলে গেছে।কেন গেল? যাবে কেন? স্বার্থপর ,বাজে এই কথাগুলো মেয়েটি বারবার
ভাবে। বলেও মাঝে মধ্যে মা-বাবাকে।সারাক্ষণ কোথাও না কোথাও মনকে বোঝাই যারা
মরে যায় তারা আর কোনদিন ফিরে আসে না। এত পড়াশুনা ,এত তত্ত্ব ,এত আধুনিক
হয়েও রাত্রে স্বপ্নে তাদের দেখে, জেগে ওঠে, মনে মনে ভাবে হয়তো কোথাও আছে
কিন্তু না ,তেমনটা হবেনা কোনদিন ।কেন বারবার তারা স্বপ্নে আসে, এর উত্তর সে
পেয়েছিল একটা ঘটনার সম্মুখীন হয়ে ।একদিন মেয়েটি পড়ছিল, হঠাৎ তাকে কে
যেন স্পষ্ট গলায় বুনু বলে ডাকলো। বুনু কেমন আছিস ? কষ্ট পাস না , কেঁদে
আমাদের মুক্তি দে ।আমরা যে বন্দী হয়ে আছি যেতে পারছিনা । কষ্ট হচ্ছে,
সকলের মায়া কাটালেও তোর বন্ধন যে কাটছে না। একবার বল তোমরা আবার এসো
অন্যরূপে, অন্যভাবে আমার কাছে।কেউ যেন বলছে আর মেয়েটি ঘোরের মত শুনছে ।
হঠাৎ মেয়েটির তাকালো বাইরের মগ-বালতিটির দিকে ,তারা যেন বলে উঠল ,পাগলি
বুনু আমার। তুই হয়তো ভাবিস আমরা স্বার্থপর ,বাজে, হয়তো তাই কিন্তু তোর
ভালোবাসা আর আকুতি আমাদের স্বার্থপর, বাজে হতে দেয়নি। মরেও আমরা রয়ে গেছি
এই জিনিস দুটির মধ্যে। তুই হয়তো ভাবছিস এত জিনিস থাকতে মগ-বালতিতে কেন?
কারণটা তোকে বলি আমি তোর ঠাকুমা , সারা জীবন শুধু দিয়ে গেলাম আর সবাইকে
বালতির মতো ধারন করলাম। বালতিতে সবথেকে বেশী কি থাকে জানিস বুনু? 'জল'
।সেটা যে সবার কাছে প্রানের রস রে। তবুও বালতি অতি সামান্য একটা জিনিস।আর
মগ না থাকলে বালতি থেকে জল তুলবে কি করে । তবে তুই প্রথম যে সব কিছুর
মধ্যেই আমাদের খোঁজার চেষ্টা করেছিস।এতো ব্যস্ততাও তোকে ,আমাদের ভুলতে
দেয়নি। তাই আমরাও যেতে পারছি না।কেন এত ভালবাসিস আমাদের ? আমাদের মুক্ত কর
বুনু। আমরা দেখতে পাচ্ছি তুই একদিন অনেক বড়ো হবি।নাম করবি, তোরও
নাতি-নাতনি হবে, তুই ও তাদের টানে আমাদের মতন এমন কোনো জিনিসে আবদ্ধ থাকবি।
তাদের টানকে উপেক্ষা করতে পারবি না ,কেন জানিস? কারন ভগবানের লীলায় আমি
আর তোর দাদুই হব পরজন্মে তোর নাতি নাতনি।আমরা কেউ কোনোদিন কাউকে ছেড়ে
যেতে পারবো না রে। মেয়েটি কেঁদে উঠল ,এতদিনকার মজবুত মগ- বালতিতে একসাথে
ধরল ফাটল ।বারবার মন বলতে লাগল কাঁদ , কাঁদ , আরো কাঁদ। এরপর ভাবছেন কি হলো
? হঠাৎ এমন গল্প কেনই বা লিখলাম ? এটা কি গল্প হলো? শুনুন এটাকে গল্প
হিসাবে না ভেবে অন্যভাবে ভাবুন । মগ- বালতি তো এখানে প্রতীকী । জানিনা আমার
মতন করে ক'জন তাদের দাদু ঠাকুমাকে ভুলতে পারেনা আর লেখার বিষয়বস্তুে তারা
চলে আসে।বাস্তবে এমন দৃষ্টান্ত হয় কিনা বলতে পারব না তবে আমার জীবনের
সাথে কিছু উদাহরণ একেবারে মিলে যায় । শুধু মগ ও বালতি কেন , ঠাকুমা-দাদুর
পড়া পুরোনো জামাকাপড়ে চেনা গন্ধটা পেতে ভালোই লাগে, অজানা, অচেনা এক
আনন্দ মনের মধ্যে উঁকি দেয় ।জানিনা আর কোনদিন এমন আবেগ মুখরিত কোনো
দাদু-ঠাকুমার কথা ,অন্য কোনো বুনুর হাতের স্পর্শে ভালোবাসা ও বন্ধনের গল্প
তৈরি হবে কিনা।