সেই মধুর ক্ষণ
আজ অনেক দিন পর আবার আমার চোখে কন্জাংটিভাইটিস হয়েছে। খুব মনে পড়ছে সেই দিনটার কথা। ঠিক বিয়ের সময়ই আমার চোখে হয়েছিল ঠিক এইরকমই কন্জাংটিভাইটিস, যাকে গোদা বাংলায় আমারা জয় বাংলা বলি। আইবুড়োভাতের দিন তো দারুণ বাড়াবাড়ি! চোখের জলে, নাকের জলে নাকাল হয়ে তো আইবুড়ীভাত খেলাম। পরের দিন বিয়ে, সেদিনও চোখ লাল টকটকে, ফোলা ফোলা। সবাই আহা, উহু করছে। মায়ের কি চিন্তা, মেয়ে শ্বশুরবাড়ি যাবে কিনা একটা ছোঁয়াচে রোগ নিয়ে! বাবা ওষুধ এনে দিয়েছেন। জামাইবাবু রসিকতা করে ছড়া কাটছেন,
"রমুরাণী প্যানপ্যানানী শ্বশুরবাড়ি গিয়ে -
সব্বাইকে কাৎ করবে জয়বাংলা দিয়ে।"
খুব রাগ হচ্ছে, চোখ টনটন, মাথা ভনভন। গালের চন্দন চোখের জলে আউট। কপালে দু-চারটে ফোঁটা লেগে রইল বিয়ের ধ্বজা ধরে।
বর এল, সবাই ছুটল বর দেখতে। আমি দুরুদুরু বক্ষে বসে আছি, ভাবছি কিভাবে তাকাবো বরের দিকে, আগে থেকে তো কোন ইএ টিএ ছিল না, সম্বন্ধ করে বিয়ে। আমার বোন ছুটতে ছুটতে এসে বলল, "ওরে দিদিভাই, কি রাজজোটক মিল রে তোদের, জামাইবাবুর চোখেও জয় বাংলা।দুজনেরই তো রক্তচক্ষু, শুভদৃষ্টি ভালই জমবে তোদের।"
আমি তো হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। মনে মনে ভাবলাম,"যাক বাবা,বিষে বিষে বিষক্ষয়।"
ফাজিল চুড়ামনি জামাইবাবুটি আমার পাশ থেকে চেঁচিয়ে উঠল উঠল,"জয় বাংলা কি জয়।"
অমনি আমার সব তুতো ভাইবোনরাও ওই কথাটাই বার বার স্লোগানের মত বলে এমন মজা করছিল যে বরপক্ষ তো প্রথমে রেগেই আগুন, ভাবছিল বুঝি বরকে অপমান করছে লাল চোখ দেখে! তারপর সব ব্যাপারটা বুঝে, ওরাও জামাইবাবুর সাথে গলা মিলিয়ে একেবারে হাসির প্লাবন বইয়ে দিয়েছিল। আজ আমাদের বিয়ের পুরনো এলবামটা খুলে আবার সেই সমস্ত কথা মনে পড়ছে; বার বার স্মৃতি পথে উঠে আসছে দুজনের পিচুটি মাখা চোখে চোখ পিট পিট করে রোমান্টিক শুভদৃষ্টির কথা।
======================
======================
রচনা: ডঃ রমলা মুখার্জী, বৈঁচী, হুগলী।
চিত্র: অভিজিৎ রায় , কল্যাণ গ্রাম, পলতা, উত্তর ২৪ পরগনা।