Featured Post
নিবন্ধ ।। স্রষ্টা নজরুল ইসলাম ।। শেফালি সর
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সৃষ্টির ভুবনে স্বাধীন সম্রাট
রাঢ় বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের চুরুলিয়া গ্রামে মাটির ঘরে যে শিশুর জন্ম হয়েছিল -তিনি দুখুমিঞা ওরফে নজরুল ইসলাম।জন্মের পরে এক কঠিন দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের সাথে তার সাক্ষাৎ পরিচয় ঘটেছিল। এই জীবন সংগ্রামের হাতিয়ার ছিল তার গান।'বাজলো কি রে ভোরের সানাই নিদ মহলার আন্ধার পুরে,শুনছি আজান গগন তলে অতীত রাতের মিনার চূড়ে।'একটি অতীত মুখী নিদ্রিত জাতির মধ্যে জাগরণের বার্তা পৌঁছে দেয় এই গানটি।
প্রথম মহাযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তার সৈনিক জীবনের মধ্যে এক গ্রামীণ কিশোর থেকে নব ইতিহাস সচেতন যুবকে পরিণত করেছিল।নজরুলের ব্যক্তিত্ব গঠনে তার সৈনিক জীবন ই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। করাচী সেনানিবাসে রচিত 'বাধন হারা'র ছয় নম্বর কিস্তিতে তিনি লিখেছিলেন 'আগুন ঝড়,ঝঞ্ঝা,বৃষ্টি,বিদ্যুৎ,বজ্র, আঘাত,বেদনা-এই অষ্টধাতু দিয়ে আমার জীবন তৈরী হচ্ছে ,যা হবে দুর্ভেদ্য, মৃত্যঞ্জয়,অবিনাশী।আমার এ পথ শাশ্বত সত্যের পথ,বিশ্ব মানবের জনম জনম ধরে চাওয়া পথ, আমি আমার আমিত্ব কে এপথ থেকে ফেরাতে দেবো না। "নজরুলের বিদ্রোহী মনের বীজ নিহিত আছে এই বাধন হারাতেই।বলা বাহুল্য যে ভিন্ন মতাবলম্বী না হলে কেউ বিদ্রোহী হতে পারে না আর বিদ্রোহ ছাড়াও নতুন সৃষ্টি সম্ভব নয়।
নজরুল বিশ্বাস করতেন না অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে ভারতের স্বাধীনতা আসবে।সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা আসবে এই ছিল তার বিশ্বাস।কাণ্ডারী হুশিয়ার কবিতায় কাণ্ডারীর কানে কানে সাবধান বাণী প্রবেশ করাতে চেয়েছিলেন।তিনি বলেছিলেন 'আমি কোনো ধর্মের বাইরের খোলোসটাকে ধরে নেই। আমি সর্বধর্মের। সুন্দরের পূজাই আমার ধর্ম। "নতুন সৃষ্টির সাধনা ছিল নজরুলের শিল্পী সত্বার মূল প্রেরণা ও প্রবণতা। আর সেই জন্য ই সমাজ ,সংস্কৃতি,শিল্প সর্বক্ষেত্রে পুরাতণ ধ্যান ধারণা ও মূল্যবোধ ভাঙার জন্যে তিনি বিদ্রোহী। তিনি একাধারে গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার,গীতিকার ও সুরস্রষ্টা।
নজরুলের সাধনার মূল মন্ত্র ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।তাই সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে তিনি সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।নজরুল অসাম্প্রদায়িক ছিলেন কিন্তু অধার্মিক ছিলেন না।তিনি ধার্মিক ছিলেন কিন্তু ধর্মান্ধ বা পরধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু মৌলবাদী ছিলেন না।নজরুল তার কবিতায় প্রচুর মিথ বা পুরাণ ব্যবহার করেছেন কিন্তু তা অতীতের মহিমা প্রচারের জন্য ন য়।তিনি শুধু বিদ্রোহী কবি ছিলেন না বেদনার ও কবি ছিলেন।নজরুলের শিল্পী সত্তার এক অজানা রূপের পরিচয় পাওয়া যায় ১৯৪১সালের মার্চ মাসে বনগা সাহিত্য সভায় প্রদত্ত সভাপতির ভাষণ থেকে,সেদিন তিনি বলেছিলেন "আমার সাহিত্য সাধনায় কখনও বিলাস ছিলনা।আমি আমার জন্ম থেকে যেন আমার শক্তি আমার অস্তিত্ব কে খুজে ফিরেছি।জীবনে কোনোদিন কোনো বন্ধনকে স্বীকার করতে পারলাম না।কোনো স্নেহ ভালবাসা আমায় বুকে টেনে রাখতে পারলো না।এই পরম তৃষ্ণা যে কোন পরম সুন্দরের তা বুঝতে পারিনি।একে খোঁজার পথেই যে কদিন কেদেঁছি,যে গান গেয়েছি যে সুর সৃষ্টি করেছি,যে কবিতা লিখেছি তা যদি কবিতা হয়ে থাকে তবে তা সেই সুন্দরের ই কৃপা।,আমি কবি যশপ্রার্থী হয়ে জন্মগ্রহণ করিনি।আমি আমার অস্তিত্ব কে,আমার শক্তি কে খুজতে এসেছিলাম এই পৃথিবীতে।"
তিনি আরও বলেছিলেন -"যদি আর বাশি না বাজে,আমি কবি বলে বলছি নে,আমি আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম সেই অধিকারে বলছি - আমায় ক্ষমা করবেন,আমায় ভুলে যাবেন।বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি-আমি নেতা হতে আসিনি - আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম,প্রেম পেতে এসেছিলাম -সে প্রেম পেলাম না বলে আমি প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।" তার প্রবণতা ও আনন্দ ছিল নিজের জন্য আলাদা পথ তৈরী করে নেওয়া,তাই তিনি তার সৃষ্টির ভুবনে স্বাতন্ত্রের স্রষ্টা কাজী নজরুল ইসলাম।
------------------------:----------------
শেফালি সর, জনাদাড়ি, গোপীনাথপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, ৭২১৬৩৩
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন